skip to Main Content
fashion-week-into

ফ্যাশন উইক I ফল ফ্যাশন উইক

 

এবারের ফ্যাশন উইক বেশ ঘটনাবহুল। রানওয়ে থেকে সরে গেছেন কয়েকজন বিখ্যাত ডিজাইনার। তাতে ফ্যাশন শোর জেল্লা কমে যাচ্ছে? এই ভাবনা ঘুরেফিরে এসেছে ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে

নিউইয়র্ক

ফ্যাশন উইকগুলো কি আবেদন হারাচ্ছে? এমন প্রশ্ন অনেক দিন ধরেই উঠছে। অনেকেই ট্র্যাডিশনাল উইক থেকে সরে গিয়ে নিজেদের মতো করে অন্য ভেন্যুতে শো করছেন। আবার অনেকে শো করা ছেড়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ ষোষণা দিয়ে নিউইয়র্ক ছেড়ে লন্ডন বা প্যারিসে চলে যাচ্ছেন। কিংবা উল্টোটা হচ্ছে। এবার নিউইয়র্কে তেমন ঘটনা দেখা গেছে। গেল মাসে হয়েছে অটাম-উইন্টার বা ফল উইক। প্রোয়েঞ্জা শুলার, টম ব্রাউন, আলতুজারা, রোডার্টের মতো শীর্ষ নাম এবার ছিল অনুপস্থিত। কারণ, তারা এখন পারিপ্রেমে বিভোর। তাই নিউইয়র্ক নয়, শো করবেন প্যারিসে। আবার ফ্যাশন উইকে আর মন উঠছে না কেনি ওয়েস্টের। তাই এবার তিনি রানওয়েতে নয়, ইনস্টাগ্রামকে বেছে নিয়েছেন কালেকশন লঞ্চ করার জন্য। এদিকে টমি হিলফিগার ফ্যাশন উইক নিয়ে ক্রমেই আগ্রহ হারাচ্ছিলেন। এবার পুরোই বেরিয়ে গেলেন। কারণ, গিগি হাদিদের সঙ্গে যৌথভাবে তার সাম্প্রতিক কালেকশন ফ্যাশন উইকে নয়, দেখাতে চান বিশ্বের নানা প্রান্তে নানা ভেন্যুতে।

তবে এতটা নেতিবাচক না হলেও চলে। কারণ, এরপরও সেখানে জাঁক আর জমকের সঙ্গে উদ্ভাবনের উচ্ছ্বাস কম ছিল না। টম ফোর্ড আর জেরেমি স্কট পর্দা উঠিয়েছেন। আর তা নেমেছে মার্ক জেকবসের সৃজনে। এর মধ্যে নজর কেড়েছে কেলভিন ক্লেইন। এই হাউজের তুলনায় নতুন ডিজাইনার র‌্যাফ সিমন্স এর আগে জিল স্যান্ডার্স ক্রিস্তিয়ঁ দিওয়ের হয়ে প্যারিস আর মিলান মাতিয়েছেন। তবে নিউইয়র্কে প্রথমবার সিকের জন্য যা করলেন, তাই-বা কম কী। স্টক এক্সচেঞ্জ বিল্ডিংয়ের মেঝেতে বিছালেন পঞ্চাশ হাজার গ্যালন পপকর্ন। তাতে তৈরি হলো ৬ ইঞ্চির পরত। তার উপরেই হলো নতুন কালেকশনে বিড়াল হাঁটা। রাফলড কটন ড্রেস আর ফায়ারম্যান’স কোট।

তবে রানওয়েতে শেষবারের মতো অভিবাদন গ্রহণ করলেন ক্যারোলিনা হেরেরা। যতি টানলেন সাড়ে তিন দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে। আর এই ব্যাটন তিনি তুলে দিলেন তরুণতুর্কি ওয়েস গর্ডনের হাতে। হেরেরা এখন হয়ে যাবেন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডার। সেই কিশোরবেলা থেকে নারীদের পোশাক নকশায় হাত পাকানো গর্ডন তাঁর স্বপ্ন নতুন আবহে বাস্তবায়ন করে চলবেন। গুচি, ব্যালাসিয়াগা আর সেন্ট লরাঁর মতো ব্র্যান্ডের মালিক কেরিং। এবার এর আরেকটি ব্র্যান্ড রোটেগা শো করছে না মিলানে; বরং নিউইয়র্কে সেরে নিয়েছে সাড়ম্বর শো আর পার্টি। অবশ্য এর কারণও ছিল- ম্যাডিসন স্কয়ারে ফ্ল্যাগশিপ শপের উদ্বোধন। এবার নিউইয়র্কে কালেকশন উপস্থাপন করেছেন ভারতের প্রবাল গুরুং। তবে বেশি রাতে অনুষ্ঠিত শো দর্শক টানতে পারেনি সেভাবে।

এবার নিউইয়র্কে টম ফোর্ড দেখিয়েছেন স্যাটিন কার্গো প্যান্ট। এর সঙ্গে যুগলবন্দি হয়েছে চামড়ার জ্যাকেট। কাছাকাছি ধরনের প্যান্টের সঙ্গে র‌্যাফ সিমন্স জুটি করেছেন এক বোতামের কোটের। এ ক্ষেত্রে ধরে নেয়াই যেতে পারে, এ বছর চকচকে প্যান্ট ফ্যাশনের ইন-স্টাইল হবে। এবার অবশ্য ছড়িয়ে ছিল আশির দশক। মার্ক জেকবস থেকে থিয়েরি মাগলার, ক্লদ মন্তানা থেকে উনগারো- সবার সৃষ্টিতেই স্পষ্ট আশির স্পন্দন।

লন্ডন

নিউইয়র্কের পর লন্ডন। এই ধারা ফ্যাশন উইকে অবধারিত। তবে এবার লন্ডন ফ্যাশনের নতুন বছরের প্রথম উইক চলাকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্রিটিশদের অস্কার ব্রিটিশ একাডেমি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস বা বাফটা। এবার উৎসবের রঙ ছিল কালো। তাই কালোতেই আলোকিত হয়েছে সম্মিলনকক্ষ। ছোট করে ছাঁটা স্বর্ণকেশী হ্যালি বেনেট পরেছিলেন পেছনে খোলা ক্লোয়ি ড্রেস। বারবেরি ড্রেসে উজ্জ্বল ছিলেন লিলি জেমস আর জোনাথন কোহেনে অনবদ্য গ্রেটা গারউইগ। অবশ্য সান্ত লরাঁর টাক্সেডোতে টিমোথি শালামেটকে দেখে চোখ সরানো ছিল দুষ্কর।

তবে বারবেরির কথা ভেবে মনটা যে খারাপ হয়নি তা নয়। কারণ, এবার কেন যেন অবসরের হিড়িক পড়েছে। নিউইয়র্কে যেমন ক্যারোলিনা হেরেরা সরে গেলেন, তেমনি দীর্ঘদিন পর ক্রিস্টোফার বেইলি শেষ অভিবাদন গ্রহণ করলেন র‌্যাম্প শেষে। এবার তার উপস্থাপনায় ছিল রঙধনুর ছটা। শো স্টপ করলেন এই সময়ের অন্যতম শীর্ষ মডেল কারা ডেলভি। এই কালেকশন এবং উপস্থাপনায় একটা নতুন আভাসও কি দিয়ে গেলেন না বেইলি- আগামী ফ্যাশন মডেল তাহলে কি হচ্ছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ?

এবারের লন্ডন সপ্তাহে নগরীর কৃতী ডিজাইনাররা ঠিকই মাতিয়ে দিয়ে গেছেন। বিশেষভাবে জোনাথন অ্যান্ডারসন, মেরি কাতরানজাউ, এরডেম মোরালিওগ্লু এবং সিমিওন রোচার উপস্থাপনায় ছিল চমক আর অভিনবত্ব। অভিজাত জার্সি ড্রেসের সঙ্গে প্লেফুল কনভার্স স্নিকার পুরো কালেকশনকে দিয়েছে অন্য লুক, অন্য মুড।

ঢিলেঢালা লেস ড্রেসের নিজের সিগনেচারকে ধরেছেন সিমিওন রোচা। এই সংগ্রহে বেশ একটা অনুষ্ঠান-পোশাকের আবহ তৈরি হয়েছে।

তবে কিছুটা বিপত্তি বাধে মেরি কাতরানজাউয়ের শোর আগে ও পরে। ফারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদের মুখে অতিথিদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশও ডাকতে হয়। শেষ পর্যন্ত পেছনের দরজা দিয়ে বের হন অতিথিরা। তবে মাথা বেশ ঠান্ডা রেখে নিজের শো উতরে দিয়েছেন মেরি। ২০০৯ সালে শুরু মেরির। সেই ছায়াকেই যেন জীবন্ত করেছেন এবার আরও একবার। বাউহাস-মিটস-ভিক্টোরিয়ানা থিমে ডিজাইন করা সংগ্রহ- লেদার কোট আর ট্যাপেস্ট্রি করা ড্রেস বোদ্ধাদের মন ভরিয়েছে। কিছু পোশাক অবশ্য ছিল অনেকটা ল্যাম্পশেডের মতো করে তৈরি।

তবে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন এরডেম। রাজবাড়ির উপস্থাপিত কমনওয়েলথ ডিজাইনারদের বিশেষ আয়োজনে এরডেম যেন ছিলেন মধ্যমণি। বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজবধূও। রোম্যান্টিক বৈশিষ্ট্যের ড্রেসগুলো ছিল কতকটা রাফেলড, বো-ট্রিমড। জেন অস্টিনের সময়ই হোক বা বর্তমান- অনায়াসেই পরতে আগ্রহী হবে কিরা নাইটলি। পোশাক ছিল বিশেষভাবে নজরকাড়া। ইতিহাসের উপাদানে প্রাণিত। আভিজাত্যের মাধুর্যে পূর্ণ।

কেবল রাজবধূ কেন, রিচার্ড কুইনের শোতে খোদ রানিমাকেও উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। বিখ্যাত ফ্যাশনবোদ্ধা অ্যানা উইন্টরের পাশে বসে উপভোগ করেছেন শো। তারপর কুইনের হাতে তুলে দিয়েছেন, ব্রিটিশ ডিজাইন সম্মাননা কুইন এলিজাবেথ টু। সূচনা সম্মাননায় ভূষিত হলেন কুইন। তাঁর পুরো কালেকশনেই ছিল ব্রিটিশ ফ্লোরাল প্রিন্ট। এর মধ্যে সবাইকে চমকে দিয়েছে ফ্লোরাল পাফার কোট আর জ্যাকেট।

ক্রিস্টোফার কেইন, মার্কাস আলমেইডা, রিচার্ড ম্যালোনি, ম্যাটি বোভান, রোকসান্ডারাও তাদের ফল কালেকশনে লন্ডনি ফ্যাশনিস্তাদের মন ভরাতে পেরেছেন।

 স্টাফ রিপোর্টার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top