বিশেষ ফিচার I বসন থেকে অসনে
বাঙালি যেমন কেনাকাটা পছন্দ করে, তেমনি খেতেও। খাওয়াতেও ভালোবাসে। শপিংয়ের সঙ্গে ইটআউট এখন বাঙালির যাপনধারার নতুন ট্রেন্ড। ফলে মলগুলোতে পোশাকের পাশাপাশি থাকছে রসনাবিলাসের আয়োজন। এ ক্ষেত্রে ফ্যাশন অন্ট্রাপ্রেনাররাও এখন এগিয়ে এসেছেন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়। অবশ্য এই ধারা নতুন নয়। বরং আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর অনেকে এই দৌড়ে আগেই শামিল হয়েছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশে বিষয়টি নতুন। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর রসনায়োজনবিষয়ক একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল জুনে। এক্সক্লুসিভ ইস্যুতে। বসন থেকে অসন শিরোনামে। এবার দেশের কয়েকটি ফ্যাশন হাউজের রেস্তোরাঁর খবর জানাচ্ছেন তৌহিদুল ইসলাম তুষার
গ্রাসরুটস ক্যাফে
দেশীয় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল পণ্যের কথা বললে প্রথমেই আসে আড়ংয়ের কথা। ব্র্যান্ডটির বিশাল পণ্যসম্ভার দেখতে গেলে একটু জিরিয়ে নিতেই হবে। এই প্রয়োজন থেকে শুরু নিজস্ব রেস্তোরাঁ ‘গ্রাসরুটস ক্যাফে’। আড়ংয়ের পাঁচটি আউটলেটেই রয়েছে রেস্তোরাঁ। পোশাকের পাশাপাশি এগুলোর খাবারেও রয়েছে বৈচিত্র্য। হালকা খাবারের পাশাপাশি ভারী খাবারের ব্যবস্থা আছে, তাতে সময়ও কাটে ভালো। প্রতিটি আউটলেটের একটি কর্নারেই ছিমছাম, পরিপাটি আয়োজন। স্যান্ডউইচ, বার্গার ও ফ্রায়েড চিকেনের পাশাপাশি চটপটি, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন নাচোস, চিকেন ললিপপসহ আছে সুস্বাদু সুপের সমাহার। মিলবে মজাদার বেশ কিছু স্যালাড। ভরপেট খাওয়ার জন্য রয়েছে তিনটি সেট মেন্যু এবং ১৬টি থাই ডিশ। নিজেকে ঠান্ডা করতে চাইলে অর্ডার করা যাবে শেক, জুস, কোল্ড ড্রিঙ্কস বা আইসক্রিম আইটেম। এ ছাড়া চকলেট ব্রাউনি আর চিজ কেক আছে ডেজার্টের তালিকায়। গুলশান, উত্তরা, ধানমন্ডি, মগবাজার ও মিরপুর আড়ংয়ে রয়েছে গ্রাসরুটস ক্যাফে।
ইয়েলো ক্যাফে
ধানমন্ডি ইয়েলোর শোরুমের উপরেই রয়েছে ব্র্যান্ডটির নিজস্ব ক্যাফে। পাশ্চাত্য ধারায় সাজানো হয়েছে ইয়েলো ক্যাফের অন্দর। প্রতিটি কর্নার দৃষ্টিনন্দন। প্রবেশমাত্র টের পাওয়া যায়, কোথায় বসতে হবে, তা যেন পূর্বনির্ধারিত। প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে থাকতে চাইলে রয়েছে বাইরের খোলা জায়গা। সবুজে ঘেরা সেখানকার পরিবেশ। আর আছে পানির ঝিরিঝিরি শব্দ। ইন্টেরিয়রের পাশাপাশি খাবার পরিবেশনেও রয়েছে ভিন্নতা। শুধু পোশাকে নয়, খাবার পরিবেশনেও ওয়েস্টার্ন ছাপ। অল্প সময়ের জন্য গেলে নিতে পারেন স্পাইসি গ্রিল্ড মাশরুম, মেরিনেট ফ্রায়েড কালামারি বা বারবিকিউর মতো স্টার্টার আইটেম। স্যুপ আর স্যালাডেও রয়েছে রকমফের। রেস্তোরাঁয় গেলে অনেকে পছন্দ করেন স্যান্ডউইচ বা বার্গারের মতো ফাস্ট ফুড। এগুলোও মিলবে ইয়েলো ক্যাফেতে। আছে পিৎজা, পাস্তা ও সিফুড। শেফ’স স্পেশালিস্ট ১২টি মজাদার স্বাদের পদ থেকেও বেছে নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া রয়েছে জুস, শেক, কফিসহ অনেক বেভারেজ।
এক্সট্যাসি ক্যাফে
এক্সট্যাসি তাদের খাবারের আস্তানা সাজিয়েছে একটু ভিন্নভাবে। তবে নিজস্ব শোরুমের সঙ্গে নয়, ভিন্ন জায়গায়। যমুনা ফিউচার পার্কের লেভেল ৫-এর বি-ব্লকে এর অবস্থান। লোগোর সঙ্গে মিলিয়ে ইন্টেরিয়রেও রয়েছে লালের বিস্তার। পুরো অন্দর দেখা যায়। তবে বাহুল্য নেই। ভেতরে ঢুকে ঠান্ডা হতে হতে আপনার হাতে চলে আসবে মেনু কার্ড। পরিবেশনেও রয়েছে স্বকীয়তা। এখানে রয়েছে ফাস্ট ফুড এবং মেক্সিকান, ইতালিয়ান ও থাই কুজিন। হাতে সময় কম থাকলে চেখে দেখতে পারেন কুইক বাইট আইটেম। ক্লাব স্যান্ডউইচ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং চার রকমের পিৎজা। পাস্তা, ফিশ এবং সিফুড স্টার্টার ছাড়াও রয়েছে কয়েকটি প্লাটার।
ব্রুজ অ্যান্ড বাইট
ঢাকা রিপাবলিকের নিজস্ব রেস্তোরাঁ ব্রুজ অ্যান্ড বাইট। গুলশান ২ নম্বর থেকে ১ নম্বরের দিকে যেতে বাঁ পাশে ব্র্যান্ডটির আউটলেটেই এর অবস্থান। বাইরে থেকে দেখলে কফিশপ মনে হতে পারে। কিন্তু ভেতরে ঢুকলে মিলবে মজাদার অনেক খাবার। সিঁড়ি দিয়ে উপরে গেলেই মিলবে রেস্তোরাঁটি। তবে মেনুতে প্রাধান্য পেয়েছে কফি। এক্সপ্রেসো ইতালি, ক্যাপাচিনো, লাতে, মোকা সবই আছে। মিলবে হট অথবা কোন্ড। প্রাধান্য পেয়েছে ম্যাক্সিকান খাবার। রয়েছে পিৎজা, পাস্তা, স্যুপ এমনকি বার্গারও। এ ছাড়া মিলবে মজাদার কিছু ডেজার্ট। পরিপাটি করে সাজানো এই রেস্তোরাঁর অন্দর। পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে এলে বেশ কাটবে সময়; খাওয়া আর গল্পে। বিকেলে পাওয়া যাবে ফুচকা ও চটপটি।
যাত্রাবিরতি
দিনে এক পরিবেশ, রাতে অন্য। ঢুকলে মনে হতে পারে কোনো মিউজিক্যাল শোতে চলে এসেছেন। আসলে যাত্রায় প্রতিদিনই চলে গানের আয়োজন। দেশি-বিদেশি এবং আঞ্চলিক গানের আসর জমে প্রায় রাতেই। দেশীয় পোশাকের সম্ভার যাত্রার নিজস্ব রেস্তোরাঁ যাত্রাবিরতি। বনানীর কামাল আতাতুর্ক হয়ে গুলশান ২-এর দিকে যেতে ডানে পড়বে। যাত্রা ফ্যাশন হাউসের ছাদে অবস্থান যাত্রাবিরতির। অন্দরসজ্জায় মিলবে বাঙালির গ্রামীণ জীবনের ছাপ। জাঁকালো সোফা চেয়ার টেবিল না থাকলেও বসবার স্থানটি বেশ আরামদায়ক। এখানে মেলে বাঙালি খাবারের নানা স্বাদ, পরিবেশনের ভিন্নতা।
আনোখি ক্যাফে
শুধু নিজস্ব ক্রেতাদের একটু আরাম দিতেই গড়ে তোলা হয়েছে আনোখি ক্যাফে। কেনাকাটার ফাঁকে যেন একটু জিরিয়ে নেয়া যায়- ঠিক এই আকাঙ্ক্ষা থেকেই বসানো হয়েছে চা-আড্ডা। সেখানে গুলশান শোরুমের এক কোণে সাজানো বাঁশের সোফা। সঙ্গে রয়েছে হালকা স্ন্যাক।
ক্যাফে দেশী দশ
বসুন্ধরা সিটির দেশী দশে কেনাকাটার ফাঁকে একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্য রয়েছে বসবার জায়গা। এই আউটলেটের ঠিক শেষের দিকে রয়েছে ছোট্ট একটি ক্যাফে। হালকা খাবারের সব আইটেমই আছে এখানে। জুস, স্যান্ডউইচ, বার্গার, পিঠা, মিষ্টি এমনকি শিঙাড়া-সমুচা পাওয়া যাবে। রয়েছে চা, কফি বা ঠান্ডা বেভারেজও।
ছবি: লেখক