কভারস্টোরি I সাম্যে সুন্দর
পৃথিবীকে যথার্থ সুন্দর আর বাসযোগ্য করে তোলার পূর্বশর্ত নারী-পুরুষের সমমর্যাদা নিশ্চিত করা। এটা সম্ভব হলে প্রয়োজন পড়বে না নারীর জন্য আলাদা কোনো দিবসের। বরং সমানাধিকারের সৌন্দর্যেই উজ্জ্বল হবে আমাদের পৃথিবী। লিখেছেন জোবায়দা আখতার
A gender-equal society would be one where the word `gender’ does not exist: where everyone can be themselves.
-Gloria Steinem
বিশ্ব নারী দিবসের সূচনা হয়েছিল ১৯০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। পরবর্তীকালে সিদ্ধান্ত হয় দিবসটি প্রতিবছরের ৮ মার্চ পালিত হবে। দিনটি এলেই নারীদের মধ্যে নানা ধরনের গতিশীলতার সৃষ্টি হয়; নারী ২৪ ঘণ্টার জন্য দিনটির অধিকারী ভেবে আবেগে আপ্লুত হয়; ভাবে, আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে। এই দিবসে তারা প্রিয়জনের কাছে কিছু উপহার আশা করে, রেডিও টেলিভিশনে নানা ধরনের আলোচনা হয়। তারপর যথারীতি নারী আবারও রঙবেরঙের সাজে ভুলে যায় নারী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য এবং তাদের লক্ষ্যে পৌঁছোবার প্রত্যয়। ৯ মার্চ থেকে নারী ফিরে যায় তার পশ্চাদ্গামিতায়; পুরুষতন্ত্রে পিষ্ট জীবনটাকে ভাবে, এটাই তার জন্য স্বাভাবিক। আসলে প্রতিদিনই হওয়া উচিত মানবজীবন দিবস। তবে নারী দিবসের গুরুত্বকে ছোট করে দেখার কোনো কারণ নেই; দিবসটি ঝড়ের বেগে নারীকে, সমাজকে নতুন করে জানান দিয়ে যায়- হে নারী, তুমি কি একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজে অবস্থান করছ? যদি না করে থাকো তবে জেগে উঠো, প্রগতির দিকে এগিয়ে যাও, না হলে যে তুমি মানব পরিচয় হারিয়ে ফেলবে।
এই নিবন্ধ লিখতে বসে কতগুলো প্রশ্ন জেগেছে:
শুধু একটি দিনই কি নারীদের জন্য বরাদ্দ?
আর বাকি দিনগুলো কার? মানুষের?
তবে কি নারী মানুষ নয়?
সে কি অন্য প্রজাতির?
নারী, তুমি কি এটাই চেয়েছিলে?
নারী, তুমি কি চেয়েছিলে মানুষ হিসেবে বাঁচতে?
নারী, তুমি কি চেয়েছিলে বলতে- আমিও শ্রেষ্ঠ?
নারী, তুমি কি চাও না জন্মস্বীকৃতি নিয়ে বাঁচতে?
২০১৯ সালে এসেও আমরা দাবি করি
নারীকে অধিকার দেওয়া হোক
নারীর নিরাপত্তা সুরক্ষিত থাকুক
নারীকে মর্যাদা দেওয়া হোক
নারীর মানবাধিকার স্বীকৃত হোক ইত্যাদি
আমি বলি, তুমি তো জন্মসূত্রেই মানুষ, তাহলে তোমার আর একজন সমাজপতি বা পিতৃতান্ত্রিক সমাজের কাছে অধিকার বা মর্যাদা চাইতে হবে কেন? কারণ, আমরা একই প্রজাতির আর আমরা মূলত অভিন্ন।
তুমি কি পারো না তোমার মানবসত্তার বিকাশ ঘটাতে? চেষ্টা তো তোমাকেই করতে হবে; আমি বলছি না নারীর পথ নিরঙ্কুশ, আমি বলছি তার জন্য আছে সরকার, আইন, সমাজ-সচেতন মানুষ। আগে আমি ভারসাম্যপূর্ণ চিন্তা করবো এবং সচেতন হবো আত্মমর্যাদা রক্ষায়; তারপর না হয় পুরুষকে সচেতন করা যাবে, সমাজকে সচেতন করা যাবে। তবে বলে রাখি অন্যকে সচেতন করে যেটুকু পাওয়া যাবে, তা হবে খুবই ক্ষণস্থায়ী। বরং বারবারের চেষ্টা আর আপন শক্তিতে যা অর্জিত হয় তাই টেকসই। এরপর বলতেই হয়: নারী, তুমিই সিদ্ধান্ত নাও কী চাও।
এ প্রসঙ্গে ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের উক্তিগুলো স্মরণ করতেই হয়:
স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে স্বপ্ন দেখতে হবে। আর স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন হলো সেটাই- যেটার প্রত্যাশা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না।
তুমি তোমার ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে পারবে না কিন্তু তোমার অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারবে এবং তোমার অভ্যাসই নিশ্চিতভাবে পারবে তোমার ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে।
২০১৯ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- থিঙ্ক ইকুয়াল, বিল্ড স্মার্ট অ্যান্ড ইনোভেট ফর চেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে একটা পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে; আর তা যুগোপযোগী উদ্ভাবনীর মাধ্যমে। এই পরিবর্তনের সরাসরি কর্ণধার হচ্ছে নারী নিজেই, আর পরোক্ষ সহযোগী হবে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র। ম্যারি উলস্টোনক্র্যাফটের দ্য ভিনডিকেশন অব দ্য রাইট অব উইমেন বইতে বলা হয়েছে: মিসটেকেন এডুকেশন আর দ্য মেইন কজেজ দ্যাট উইমেন আর ল্যাগিং বিহাইন্ড। এ জন্য বলতেই হয়, পরোক্ষ শক্তির মধ্যেও নারীর ভূমিকা অনেক। সাধারণত পিতৃতান্ত্রিকতা বলতে আমরা বুঝি পুরুষশাসিত সমাজ, একেবারেই নয়, পিতৃতান্ত্রিকতা হচ্ছে এমন এক ক্ষমতা যে যখন ব্যবহার করে তখনই তা হয় পিতৃতান্ত্রিকতা। সাধারণভাবে এই ক্ষমতা বাংলাদেশে নারীরা বেশি প্রয়োগ করে থাকেন। যেমন শাশুড়ি বউকে, বউ শাশুড়িকে, নারী বস নারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে, নারী সহকর্মী আর একজন নারী সহকর্মীকে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন। এর মানে এই নয় যে, পুরুষ এগুলো করে না বরং তাদের ধরন ভিন্ন।
এবার আসা যাক সাম্য বলতে আমরা কী বুঝি? এটি হলো সমতা, স্বচ্ছতা এবং ন্যায়পরায়ণতা।
সুতরাং পরিবর্তন আনতে গেলে- থিঙ্ক ইকুয়াল, বিল্ড স্মার্ট অ্যান্ড ইনোভেট ফর চেঞ্জ-এর জন্য নারীকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। কেউ কাউকে ক্ষমতা দিতে বা এমপাওয়ার করতে পারে না। বরং ক্ষমতায়নের সঠিক অর্থ জানলে নারী-পুরুষের সাম্য আসবে হাতের মুঠোয় এবং তা প্রকাশিত হবে সৌন্দর্যে; এই সৌন্দর্য নারী-পুরুষের সমতার রঙে হবে রঙিন, শ্রদ্ধা আর অনুভূতির সৌকর্যে অনন্য।
অনেক সময় কিছু বিষয় আমার কাছে খটকা লাগে। সমতা বলতে কী বোঝানো হয়? এর মানে তাহলে কি এটাই যে মেয়েরা ছেলেদের পোশাক পরবে আর ছেলেরা মেয়েদের পোশাক পরবে, মেয়েরাও সিগারেট খাবে, পার্টি করবে। ঘর-সংসার করবে না, রান্না করবে না। কারণ ছেলেদের মতো হলে তো এগুলো করা যায় না। অথচ ভুল সবই ভুল- সমতার অর্থ হলো যে যা করতে পারে, যার যে ধরনের জন্মগত বা অর্জিত ক্ষমতা আছে তার যথাযথ মূল্যায়ন করা।
ধরা যাক, একজন মানুষ বেশি খেতে পারে আর একজন মানুষ তা পারে না। দুজনকেই যদি বাধ্য করা হয় এক প্লেট বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য, তাহলে একজন উপকৃত হবে আর অন্যজন অপকৃত হবে। বলতে পারেন দুজনকেই তো সমান সুবিধা দেওয়া হলো, তাতেও সমতা হলো না কেন? সমতা অর্থ বস্তুত প্রয়োজন বা চাহিদার সমান সুবিধা। তা পাওয়ার ব্যবস্থা হলেই সাম্য নিশ্চিত হবে। সমতার অর্থ হচ্ছে নিজ ইচ্ছায় সানন্দে মানুষ যা চায় তা পাওয়ার সুযোগ, জন্মগতভাবে নারী-পুরুষের কাজের কোনো ভাগ নেই, বুদ্ধিমত্তার কোনো পার্থক্য নেই, যা আছে তা শুধু বায়োলজিক্যাল পার্থক্য। এর ভিত্তিতে নারী-পুরুষের বৈষম্য সমাজসৃষ্ট একটি ধারা। নারী-পুরুষ কখনো সমান হতে পারে না বা সমান হবার প্রয়োজনও নেই। নারী তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল হয়ে বিরাজ করবে আর পুরুষ তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে হবে পরিচিত। একটি ফুলদানিতে ছোট, বড়, বিভিন্ন রঙের, বিভিন্ন গন্ধের ফুল তাদের সৌন্দর্য বিলিয়ে দেয়, অনেক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সবই ফুল হিসেবে আমাদের কাছে বিবেচিত। মোদ্দা কথা হলো, ইউনিটি ইন ভ্যারাইটি অ্যান্ড ভ্যারাইটি ইন ইউনিটি। এখানে রবীন্দ্রনাথ যথার্থ প্রাসঙ্গিক: বিবিধের মাঝে মিলন মহান। তাহলে নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম কেন? চিত্রটা এত সহজে বোঝার বিষয় নয়। আগে জানি নারী-পুরুষের সাম্য বা ন্যায়পরায়ণতা কোন কোন প্রেক্ষাপটে আকাঙ্ক্ষিত, কোন কোন ক্ষেত্রে অনুপস্থিত এবং কেনই-বা অনুপস্থিত? নারী-পুরুষের বৈষম্যের জায়গা তৈরি হয়েছে ঘরে এবং বাইরে; এর সৃষ্টি হয়েছে সনাতন চিন্তাধারা, ধর্মের অপব্যাখ্যা এবং সঠিক জ্ঞানের অভাব থেকে। গন্ডিবদ্ধ জীবনধারা, আন্তর্জাতিক বিশ্বের খবর না রাখা এবং চিন্তার অধিকারী না হবার কারণে ২০১৯ সালে এসেও নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলতে হয়। ১৯০০ সালে নারী দিবসের সূচনা হয়েছিল নারী গার্মেন্টস কর্মীদের কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা এবং নারীবান্ধব পরিবেশের দাবি নিয়ে। এখনো চলছে একই দাবির চলমান দৃশ্য; পরিবর্তন আসছে কিন্তু খুবই ধীরে।
কর্মক্ষেত্রে এবং গৃহে নারীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সীমিত। নারী পুরুষের তুলনায় মধ্যম এবং উচ্চ পদে অনেক কম। রাজনীতিতে নারী আছে তুলনামূলকভাবে বেশি। কিন্তু তাদের স¦র উঁচু করার সাহস কম। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে সিংহভাগই পুরুষ, নারী মাত্র একজন। নারী বিচারপতির সংখ্যাও নগণ্য। আর যাঁরা আছেন তাঁদেরকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বেঞ্চ দেওয়া হয় না। অধিকাংশ শল্যবিদ পুরুষ। গার্মেন্টস কোম্পানির নারীকর্মীর সুরক্ষা করবে কে- মধ্যম থেকে উচ্চপর্যায়ে পুরুষেরা সংখ্যাগুরু। কৃষকের বউ দিনরাত পরিশ্রম করেও কৃষাণী পদবিটি অর্জন করতে পারে না। নারী কর্মজীবী হলেও পুরুষকে বলা হয় ব্রেডউইনার অব দ্য ফ্যামিলি।
নারী-পুরুষ বৈষম্যের ক্ষেত্র
ঘরে-বাইরে সবখানেই নারী বৈষম্যের শিকার। দেশে নারীনীতি আছে, আইন আছে, কোড অব কন্ডাক্ট আছে, সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম আছে, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে চেষ্টা আছে- তবু ২০১৯ সালে এসেও নারী-পুরুষের সাম্যের কথা বলতে হয়! কারণ একটাই- মানুষ এখনো তার পুরোনো ধ্যানধারণার ঘেরাটোপ থেকে বের হতে পারছে না। শক্তিশালী কৌশল হিসেবে রয়েছে ধর্মের দোহাই, কর্মের দোহাই, বাঙালি মেয়ে হওয়ার দোহাই, লোকসমাজের দোহাই- আর কত দোহাই দিয়ে নারী-পুরুষের সাম্য বিঘিœত হবে? যত দিন না নারী নিজে জেগে উঠবে, নিজের কথা ভাববে, তত দিন পরিস্থিতি বদলাবে না। এমনকি কেবল উপলব্ধি করে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা যাবে না। সমাজের এই বিধিনিষেধ পিতৃতান্ত্রিক মনোভাবের ফসল। মনে রাখতে হবে, সব ধরনের সংযোজন ও বিয়োজন থাকে মনের ভেতরে, সব ধরনের পরিবর্তনের সূচনা হয় মস্তিষ্কে।
আসুন, মনের জানালাটা খুলে দিয়ে পুরোনো ধ্যানধারণাগুলোকে বের করে দিই। নতুন বাতাস লাগুক প্রাণে। সেই আনন্দে আমরা গেয়ে উঠি সাম্যের গান: মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।/ নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,/ সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।
মিডিয়ায় নারী
মিডিয়ায় নারীর অবস্থান নতুন করে ভাবায় আমাদের। জন্ম দেয় প্রশ্নের- কোন যুগে বসবাস করছি আমরা?
বিজ্ঞাপনে নারী সবচেয়ে প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থায় বিরাজ করছে; মনে হতে পারে- বাহ্, কী সুন্দর মেয়েটি! কিন্তু এই সৌন্দর্যের পেছনেও বঞ্চনা লুকিয়ে আছে; আর এর ফল ভোগ করছে সমাজের অন্য মেয়েরা- বিয়ের বাজারে, করপোরেট জগতে।
একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কিংবা বেসরকারি কর্মকর্তার পাত্রী সন্ধানের বিজ্ঞাপন আমাদের মানসিক দৈন্য প্রতীয়মান করে। তিনি চান একের মধ্যে বহু। একাধারে তন্বী তণুলতা, যার বয়স ২০-২৪ এর মধ্যে, ফর্সা, ধার্মিক, শিক্ষিত আবার ঘরোয়া। এখনো এসব বিজ্ঞাপন আমাদের চোখে পড়ে। একইভাবে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনেও নানা অসংগতি আমাদের দৃষ্টি এড়ায় না।
কঠিনভাবে ভাবার দিন এসেছে, প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ করার দিন এসেছে। এখনই যদি না ঠেকানো না যায়- মানবতা, শিল্প, সৌন্দর্য সবই হুমকির মুখে পড়বে। থাকবে শুধু তথাকথিত সৌন্দর্যের ভারসাম্যহীন পৃথিবী। আর শিল্পের নামে অশিল্পের চর্চা?
তাই প্রশ্ন থেকে যায়, নারী কোনটাকে প্রায়োরিটি দেবে- শিক্ষা না রূপ ও শরীরচর্চা? এ ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না স্বাধীনতা এবং আত্মসম্মানকে গলা টিপে মেরে ফেলে কি তাহলে তাকে আত্মপরিচয়ে নয়, অন্যের পরিচয়ে বেঁচে থাকতে হবে? পাশাপাশি তাকে তার সব ইচ্ছার মৃত্যু ঘটাতে হবে? আর মেনে নিতে হবে এই অধস্তন অবস্থা?
নারী-পুরুষের সাম্য রক্ষায় নারীর উচ্ছৃঙ্খল হওয়ার, বহির্মুখী হওয়ার, সংসারে অমনোযোগী হওয়ার, শালীনতা বিসর্জন দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। শুধু আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হতে হবে। নিজের ইচ্ছা এবং আনন্দ থেকেই করতে হবে সবকিছু। আর অবশ্যই এ ক্ষেত্রে পরিবারকে পাশে থাকতে হবে। তাতেই রক্ষা হবে, নিশ্চিত হবে সাম্য।
থিঙ্ক ইকুয়াল, বিল্ড স্মার্ট অ্যান্ড ইনোভেট ফর চেঞ্জ
তোমার চিন্তা-চেতনায় তুমি স্বাধীন থাকবে, তোমার শরীর ও মনের ওপর তোমার নিয়ন্ত্রণ থাকবে, তুমি আধুনিক চিন্তার ধারক এবং বাহক হবে, নতুন চিন্তাধারা তোমাকে শেখাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কীভাবে ভারসাম্য আনা যায়। প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হলে যেমন পৃথিবী ধ্বংস হবে, নারী-পুরুষের ভারসাম্য না থাকলে তেমনি সমাজ পিছিয়ে যাবে। বিশ্বাস করতে হবে সাম্যই সুন্দর, বৈষম্য অসুন্দর।
ভাষা এবং নারী-পুরুষের সাম্য
আমরা সবাই জানি, ভাষা অস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী, ভাষা দিয়ে একজনকে অসম্মান করলে তা আর ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। ভাষা দিয়ে ভালোবাসা যায়, সম্মান দেওয়া যায়, মর্যাদা দেওয়া যায় আবার একই ভাষা দিয়ে মানুষকে ঘৃণা করা যায়, অনাদর করা যায়, অধস্তন করা যায়, বৈষম্য আনা যায়।
পারিবারিক শিক্ষা, প্রকৃত শিক্ষা
কথায় আছে, চ্যারিটি বিগিন্স অ্যাট হোম। এটা সর্বৈব সত্য। কারণ, পরিবার থেকেই সবকিছুর উৎপত্তি। যে শিক্ষা একটি ছেলে বা মেয়ে পেয়ে আসে, সেটাই হয়ে যায় সারা জীবনের পাথেয়। এ জন্যই ২০১৯-এর আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আবার শপথ হোক- ছেলে বা মেয়ে নয় তারা হোক আমাদের সত্যিকারের সন্তান। আমরা তাদের কোনোভাবে কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার না করি।
জীবনের সব ক্ষেত্রে এভাবে ভাবতে পারলে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীর জন্য নির্দিষ্ট করে কোনো থিমের প্রয়োজন পড়বে না। বরং এই দিনটিই হয়ে উঠবে নারী-পুরুষের সাম্যের সৌন্দর্যে উজ্জ্বল একটা দিন।
আরও একটা বিষয় এখানে উল্লেখ প্রয়োজন, নারীকে ভাবতে হবে নিজেকে নিয়ে, নিজের অবস্থান আর পরিপার্শ্ব নিয়ে। একইভাবে পুরুষকে সেটা করতে হবে। চাপিয়ে দেওয়ার, দাবিয়ে রাখার আর নিজেকে সিংহ হিসেবে প্রতীয়মান করার মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। তাহলেই নিশ্চিত হবে যথার্থ সাম্য। রক্ষা হবে পরিবার, সমাজ এবং বৃহদার্থে বিশ্বের ভারসাম্য। পৃথিবীর কোনো কিছুই একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। সচেতনতা কেবল নারীর নয়, থাকতে হবে পুরুষেরও। আর জীবনের সবক্ষেত্রে অংশগ্রহণ থাকতে হবে উভয়ের। পাশাপাশি এই উপলব্ধিও প্রয়োজন যে কেউ কারও অধস্তন নয়- এসব সত্যকে মেনে নিতে এবং নিজেদের জীবনে তার বাস্তবায়ন ঘটাতে পারলে পৃথিবী হবে যথার্থ সুন্দর আর বাসযোগ্য।
লেখক: সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, ইউনিভার্সিটি অব মালয়, কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া ও জেন্ডার অ্যান্ড ইনক্লুসিভ এডুকেশন স্পেশালিস্ট
Email:zobaida@gmail.com
মডেল: জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী
ওয়্যারড্রোব: সাহার রহমান কতুর
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন