ইভেন্ট I উইভার্স ফেস্টিভ্যাল ২০১৯
সন্ধ্যার শেষ। র্যাম্পে কৃত্রিম আলোর ঝলকানি। খাঁচায় বন্দি হলুদ পাখি নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হলেন একজন ব্যথিত প্রেমিক। ছলনাময়ী প্রেমিকার মতো পাখিটিও ছেড়ে গেছে তাকে। এমন আবহে শব্দযন্ত্রে গান বেজে উঠল, ‘হলুদিয়া পাখি, সোনারই বরণ, পাখিটি ছাড়িল কে’…। এর তালে তালে মঞ্চে পা মিলিয়ে যাচ্ছিলেন রঙিন পোশাক পরা মডেলরা। স্থান নগরীর বনানীর রাজউক মাঠ। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। শুক্রবার। সেদিন মোট ১১টি কিউতে তাঁতের বোনা পোশাকে মঞ্চ মাতিয়েছেন মডেলরা। গভীর রাত পর্যন্ত চলেছিল অনুষ্ঠান। আয়োজনের নাম উইভার্স ফেস্টিভ্যাল ২০১৯। তৃতীয়বারের মতো এই উৎসবের ব্যবস্থা করেছিলেন ডিজাইনার টুটলি রহমান।
তাঁতে বোনা পোশাক নিয়ে দেশ-বিদেশের ডিজাইনারদের উৎসাহিত করতেই এ উৎসবের আয়োজন হয়েছিল। দেশের রুগ্ণ বয়ন ও তাঁতশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা, তাঁতি সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন এবং এর মধ্য দিয়ে এ শিল্পকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তুলে ধরা এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।
ফ্যাশন শোর কিউগুলোতে দেখা যায় জে অ্যান্ড জে কালেকশন, আনোখি, চমন’স, জে এস ফ্যাশন, মুনস বুটিকস, লেবাস, বিশ্বরঙ বাই বিপ্লব সাহা, ক্যাটস আই, ফারজানা মালিক ও টাঙ্গাইল শাড়ি কুটিরের পোশাক। শোর মডেলদের রূপসজ্জায় ছিল পারসোনা। ঐতিহ্যবাহী জামদানি ও খাদিতে তৈরি পোশাক, মসলিন, গামছা, মিরপুরের বেনারসি ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার কাপড়ও প্রদর্শন করা হয় শোর কিছু কিউতে।
উৎসবে বিয়ের পোশাকের আধুনিক সংগ্রহ ছিল। তাঁতে বোনা জামদানি প্রদর্শন করেছে টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির। জামদানি ও নেটের শাড়ি দেখিয়েছে মুনস বুটিক। বাহারি রঙের শাড়ি, স্কার্ট ও কামিজ ছিল বিশ্বরঙের। অংশ নেয় ক্যাটস আইও। এই ব্র্যান্ড দেখিয়েছে শেরওয়ানি, টপ, প্রিন্ট স্যুট ও ব্লেজার। সারারা, লেহেঙ্গা ও থ্রিপিস ছিল লেবাসের সংগ্রহে। ১২টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে উৎসবে। এগুলো হলো ব্রাজিল, শ্রীলঙ্কা, মেক্সিকো, সাইপ্রাস, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ভুটান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও ইন্ডিয়া।
উৎসবে তাঁতশিল্পে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশি আদিবাসী তাঁতিদের মধ্যে বিতরণ করা হয় আজীবন সম্মাননা পুরস্কার। সম্মানিত হন প্রমিলা তঞ্চঙ্গ্যা, ডনাইপ্রু নেলী, রাংগাপতি ত্রিপুরা ও পার কি ময় বম।
ফ্যাশন শো চলাকালীন মঞ্চে আসেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দেশের তাঁতশিল্প টিকিয়ে রাখতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ত্রান ভান খোয়া, ভুটানের হাইকমিশনার সনাম তবডেন রাবঘি, ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত জোঁ আ তাবাজারা ডি অলিবেইরা জুনিয়র ও গুলশান সোসাইটির সভাপতি সাখওয়াত আবু খায়ের মোহাম্মদ।
উৎসবের শেষাংশে ফ্যাশন ফিউশন নামে একটি নাট্য পরিবেশন করা হয়। পরিচালনা করেছেন টুটলি রহমান।
রাজউক মাঠে অনুষ্ঠিত এই উৎসবে মোট ২৭টি স্টল দেখা গেছে। এগুলোর মধ্যে ১০টি ছিল বাংলাদেশ হেরিটেজ ক্র্যাফটের। স্টলে জামদানি, মসলিন, এন্ডি, হ্যান্ডপ্রিন্টসহ বাহারি সব পণ্য প্রদর্শন করা হয়। বেলা ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্টলে তাঁদের তৈরি সামগ্রী প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত ছিল।
শিবলী আহমেদ
ছবি: রনি হোসেন