কোনো না কোনো কাজে বেশির ভাগ মানুষেরই প্রতিদিন বাসে চড়তে হয়। বিশেষ করে যারা চাকরিজীবী। অফিস টাইমে বাসে চড়ার জন্য এক প্রকার প্রতিযোগিতা চলে। কাকে ঠেলে কার আগে কে চড়তে পারে। বাসে চড়েও রেহাই নেই। একজনের পায়ে অন্য জনের পাড়া। তার ওপর সিট নিয়ে কাড়াকাড়ি তো আছেই।
অনেক সময় পাশের যাত্রীর কিছু আচরণে আমরা বিরক্ত হই। আবার অনেক সময় আমরাই হই অন্যের বিরক্তের কারণ। একটু সচেতন হলেই আমরা আমাদের বাসযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করে তুলতে পারি।
পাবলিক বাসে আগে উঠলে আগে পাবেন ভিত্তিতেই সিট বণ্টিত হয়ে থাকে। নারী, শিশু ও বয়স্করা যাতে সামনের সিটে বসতে পারেন, সেদিকে খেয়াল রেখে বসুন। বাসের জানালা দিয়ে আবর্জনা, যেমন কলার খোসা, চিপসের প্যাকেট, থুতু বা কফ-সর্দি বাইরে ফেলা অনুচিত। এতে করে পথাচারী ঝামেলার সম্মুখীন হয়। অনেকে বাসে উঠে ঠিক ফ্যানের নিচে গিয়ে দাঁড়ান। এতে করে অন্যান্য যাত্রী বাতাস থেকে বঞ্চিত হন। বাসে এমনভাবে দাঁড়ান যাতে বাতাসের সুষম বণ্টন হয়। জানালার পাশের সিটে বসা নিয়েও যাত্রীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হতে দেখা যায়। জানালা যেন পাশের সিটে বসা মানুষের কাজে আসে সেভাবে ব্যবহার করুন। জানালার কাচ সামনে বা পেছনে টানার সময় সামনের বা পেছনের যাত্রীকে বলে নিন। বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাসে চড়ার সময় বিশেষ খেয়াল রাখুন। বেগ থেকে চুইয়ে পানি যেন অন্য কারও গায়ে না পড়ে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। বাজারের ব্যাগ ছাড়াও অন্যান্য ব্যাগ বহন করার সময় সতর্ক থাকুন। অন্যের যেন ডিস্টার্ব না হয়।
এসি বাসে একটু বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। এসি বাসে আরামের জন্য অনেকে জুতা-মোজা খুলে বসেন। জুতা মোজার দুর্গন্ধ বাসে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই জুতা মোজা না খোলাই ভালো হবে। বাসে চড়ে অপ্রয়োজনে মোবাইল ফোনে কথা না বলাই ভদ্রতা। অনেকে উচ্চ স্বরে ফোনে কথা বলে থাকেন। এতে পাশের যাত্রী বিব্রত বোধ করেন। শুধু মোবাইল ফোনই নয়, তিন-চারজন মিলে বাসে উঠে উচ্চ স্বরে কথা বলা বা হাসাহাসি করাও শোভনীয় নয়।
এবার বাসে ওঠানামার বিষয়ে আসা যাক। বাসে ওঠার জন্য লাইন ধরে থাকাই শ্রেয়। নিজে লাইন ধরুন, অন্যকেও লাইনে দাঁড়াতে উৎসাহিত করুন। এ ছাড়া বাসস্টপেজ ছাড়া বাস থেকে নামা বা ওঠা অনুচিত। এতে করে দুর্ঘটনা থেকেও পরিত্রাণ পাওয়া যায়। যানজটও কমে। বাস থেকে ওঠানামার ক্ষেত্রে আগে নামতে দিন, তারপর উঠুন। অনেক সময় বাসে করে মালামাল বহন করার প্রয়োজন পড়ে। কিংবা বড় কোনো ব্যাগও পরিবহন করতে হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে মালামাল বা ব্যাগ এমন স্থানে রাখুন, যাতে অন্যের সমস্যা না হয়। বাসের ভেতর চলাচলের পথে মালামাল বা ব্যাগ রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকুন।
আমাদের মধ্যে অনেকেই বাসে চলাচলের সময় ঘুমিয়ে পড়েন। সে ক্ষেত্রে আপনার মাথা যেন অন্যের কাঁধে হেলে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন। এমনভাবে বসুন, যাতে মাথা সামনের সিটে হেলে থাকে।
সর্বশেষ কথা হচ্ছে, বাসের স্টাফদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা উচিত নয়। বাসের ভেতরে বা বাসসেবায় কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে কর্তৃপক্ষকে জানান। প্রয়োজনে ট্রাফিক পুলিশের সহায়তা নিতে পারেন।