ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I ব্রাইডাল ফ্যাশন উইক ২০১৯
পাশ্চাত্যের কনেরা বেরিয়ে আসছেন সাদা গাউনের প্রথা থেকে। তাদের সাজপোশাক এখন যাচ্ছে উদারতা, স্বাধীনতা ও পরিবেশসংক্রান্ত সচেতনতার দিকে
প্রতিবছর বিশ্বের ফ্যাশন-সচেতন হবু বধূরা অপেক্ষায় থাকেন এপ্রিল ও অক্টোবর মাসের জন্য। কারণ, এই সময় নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয় জাঁকজমকপূর্ণ ব্রাইডাল ফ্যাশন উইক। বিশ্বের নামজাদা ব্রাইডাল ফ্যাশন ডিজাইনাররা উপস্থিত হন তাদের নতুন কালেকশন নিয়ে। পরের বছর বিয়ের পোশাকের ট্রেন্ড কী হবে, তার আভাস পাওয়া যায় এই দুটি আয়োজনে। ৩ থেকে ৮ অক্টোবর বসেছিল এই জমকালো আয়োজন। এবারের আয়োজনে নতুন সব কালেকশন নিয়ে হাজির হন ভেরা ওয়াং, জুহাইর মুরাদ, নাইম খান, ইনেস দি সান্টো, অস্কার দে লা রেন্ট, লিলা রোজ, জ্যাক পসেনের মতো ব্রাইডাল ফ্যাশন ডিজাইনাররা।
ভেরা ওয়াং
অনেক মেয়ের স্বপ্ন থাকে তাদের ওয়্যারড্রোবে অন্তত একটা ভেরা ওয়াং থাকুক। নিদেনপক্ষে একটা ওয়েডিং গাউন! পশ্চিমে সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েডিং গাউন ডিজাইনারদের একজন ভেরা ওয়াং। অনেক সেলিব্রিটির বিয়ের গাউনের ডিজাইনারও তিনি। এ বছর তিনি উদযাপন করলেন ফ্যাশনে তাঁর ৩০ বছরের পথচলা এবং ৬০তম ব্রাইডাল কালেকশন। সব সময়ই নতুন কিছু দিয়ে চমকে দিতে ভালোবাসেন ভেরা। এবারের কালেকশনেও ছিল সেই ধাঁচ। সময়ের আগে থাকতে চান তিনি। ব্রাইডাল ফ্যাশনের চিরাচরিত গন্ডি থেকে বেরিয়ে উত্তরাধুনিক ধারার বিয়ের পোশাক ছিল তাঁর এবারের সংগ্রহে। পোশাকের রঙে ছিল নিউট্রাল, ডাস্টি প্যাস্টেল এমনকি কালোর প্রাধান্য। আর কাপড় হিসেবে ব্যবহার করেছেন লুমিনাস চারমিউস, ক্রিপ, স্লিক ফ্যাইল। ট্র্যাডিশনাল কাটের ধারেকাছে যাননি তিনি। মিনি বাবল স্কার্ট, হাই-লো গাউন, ভলিউমযুক্ত কোট ড্রেসে ছিল টুইল আর গথিক এমব্রয়ডারি। এককথায় এবারের সংগ্রহ দিয়ে বিয়ের পোশাককে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছেন ভেরা ওয়াং।
জ্যাক পসেন
জনপ্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনার ও প্রজেক্ট রানওয়ের বিচারক জ্যাক পসেন। এই প্রথম কোলাবোরেশন করলেন বার্সেলোনাভিত্তিক ব্রাইডাল ওয়্যার লেবেল হোয়াইট ওয়ান-এর সঙ্গে। যেখানে রয়েছে ১৫টি ইউনিক এবং হাইফ্যাশনেবল বিয়ের গাউন, তা-ও খুবই সাশ্রয়ী মূল্যে। জ্যাক পসেনের মতে, প্রত্যেক মেয়েই বিয়ের দিন নিজেকে রাজকন্যার মতো দেখতে চায়, কিন্তু সবার নিজের স্বপ্নের গাউন কেনার ক্ষমতা থাকে না। সেই চিন্তা থেকে তাঁর এবারের কালেকশনের গাউনগুলো অত্যন্ত যত্নসহকারে ডিজাইন করেছেন। প্রতিটি পোশাকেরই দিয়েছেন আলাদা নাম। যেমন আনা, কেটি, হেইডি, টালুলাহ ইত্যাদি।
নাইম খান
ভারতীয়-আমেরিকান ডিজাইনার নাইম খানের এবারের সংগ্রহে ছিল একসঙ্গে ক্ল্যাসিক এবং মডার্নের সংমিশ্রণ। বলগাউন, স্ট্র্যাপলেস গাউন, ব্যাকলেস গাউন যেমন ছিল, তেমনি ছিল মডার্ন মিনি ফ্রিঞ্জ গাউন, মিনি ফেদার গাউন, মিনি বিডেড গাউন। এ ছাড়া বিয়ের পোশাক হিসেবে নাইম খান তাঁর সংগ্রহে এনেছেন সিকুইন জাম্পস্যুট, সিকুইন বোটনেক টপের সঙ্গে ওয়াইড প্যান্ট, যা যেকোনো মডার্ন ব্রাইড লুফে নেবে।
অস্কার দে লা রেন্টা
এবারের অস্কার দে লা রেন্টার ওয়েডিং কালেকশনে ছিল অসাধারণ সব গাউনের বাহার। যেমন টাফেটা ককটেল ড্রেস, টাফেটা বল গাউন, ওয়ান শোল্ডার ড্রেপ ককটেল মিনি গাউন উইথ গ্যাবার্ডিন ডাবল ব্রেস্টেড কোট, স্ট্র্যাপলেস ড্রেপড টুইল বাস্টিয়ার গাউন, স্ট্র্যাপলেস রাফল টুইল ককটেল গাউন।
ইনবাল ড্রর
ইসরায়েলি ফ্যাশন ডিজাইনার ইনবাল ড্ররের সংগ্রহের বেশির ভাগ বিয়ের গাউন ছিল আনকনভেনশনাল কাট এবং কালারের। তিনি বেছে নিয়েছেন ডাস্টি লাইট ব্লু কালার। তাঁর স্পাগেটি স্ট্র্যাপ গাউন, নিউড টুইল শিথ গাউন, অ্যাসিমেট্রিক গাউন, সিকুইন মিনি ড্রেস, সিকুইন ক্রশে লেস গাউনগুলো ছিল আকর্ষণীয়।
মনিক লিউহিয়ার
আনকনভেনশনাল ওয়েডিং ড্রেসের সবচেয়ে নজরকাড়া ডিজাইনগুলো এসেছে তাঁর মাথা থেকে। প্রথমে তিনি নজর দিয়েছেন রঙের উপর। এমনকি বিয়ের পোশাকে ব্যবহার করেছেন ফ্লোরাল প্রিন্ট। পোশাকগুলোতে লাইট প্যাস্টেল শেডের আধিক্য ছিল বেশি।
রিম আক্রা
লেবানিজ ফ্যাশন ডিজাইনার রিম আক্রার ব্রাইডাল কালেকশনটি ছিল একধরনের ‘ট্রিবিউট টু নিউইয়র্ক সিটি’। পুরো সংগ্রহের নাম দিয়েছেন ‘লাভ ফ্রম নিউইয়র্ক’। আর প্রতিটি গাউনের নাম দিয়েছেন নিউইয়র্কের জনপ্রিয় লোকেশনের নামে। গাউনের পাশাপাশি ছিল জাম্পস্যুট। গাউনের জন্য ট্রাডিশনাল সাদা রঙ বেছে নিলেও বেল্ট, ক্যাপ, শোল্ডারে ব্যবহার করেছেন কালো, ধূসর ও প্যাস্টেল শেড।
লেটেস্ট ট্রেন্ড ফ্রম রানওয়ে
এবারের ব্রাইডাল ফ্যাশনে বারবার ঘুরেফিরে এসেছে মডার্ন ব্রাইড কনসেপ্ট। আধুনিক যুগের বিয়ের পোশাক কেমন হবে, তা নিজেদের সংগ্রহের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। বিয়ের পোশাক মানেই গাউন, বিয়ের পোশাক মানেই সাদা- এই ধারণা ধীরে ধীরে চলে যাবে একসময়, এই আভাস ছিল স্পষ্ট। কিছু নতুন ট্রেন্ডও দেখা গেছে এবারের আসরে।
শোল্ডার বেয়ারিং স্লিভ, বাবল স্লিভ, পিকাবু স্প্লিট স্লিভগুলো এবারের নতুন স্লিভ ট্রেন্ড। ফুল স্লিভ বা অফ শোল্ডার স্লিভের চেয়ে এই স্লিভ ট্রেন্ড অনেক বেশি আকর্ষণীয়। আবার ছিল লং স্টেটমেন্ট স্লিভের বাহার, যা অনায়াসে বিয়ের গাউনে এনে দেবে একটি ড্রামাটিক লুক। সাদার পরিবর্তে নানা রঙের গাউন দেখা যাবে এ বছর। প্যাস্টেল শেড, ডাস্টি কালার, ফ্লোরাল প্রিন্টের দখলে থাকবে বিয়ের বাজার। ডিজাইনে এসেছে অনেক পরিবর্তন। পুরোনো সেলফ ওয়ার্ক এমব্রয়ডারির পাশাপাশি দেখা গেছে সাদা গাউনে অন্য রঙের সুতার কারুকাজ। ছিল নজরকাড়া থ্রিডি ফ্লোরাল প্রিন্ট। বাদ যায়নি ক্ল্যাসিক লেস, বিড, শিলুয়েটের ব্যবহার। তবে বিশেষ করে বলতে হবে টুইলের কথা। এ বছর এই কাটের গাউন আর মিনি ড্রেসের বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছরও এর কোনো পরিবর্তন হবে না। নেক লাইনে তেমন একটা পরিবর্তন আসেনি। ওয়ান শোল্ডার নেক লাইন, ডিপ নেক লাইন বেশি দেখা গেছে। ট্র্যাডিশনাল শ্রাগ, র্যাপকে হটিয়ে রানওয়ে দখল করেছে কেইপ স্টাইল। আর গাউনে ফেদারের ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো।
মডার্ন ব্রাইড যারা একটু অন্যভাবে নিজেকে সাজাতে চান, তাদের জন্য এসেছে ওয়েডিং জাম্পস্যুট, টপস উইথ ওয়াইড প্যান্ট, মিনি ড্রেস এমনকি ব্রাইডাল স্যুটও। এই ধরনের বিয়ের পোশাক আগে কিছু দেখা গেলেও এবার যেন এর উপস্থিতি একটু বেশিই। নতুনের সঙ্গে যোগ হয়েছে পুরোনো বিয়ের পোশাকও। যেসব ব্রাইড একদম ভিন্টেজ ফ্যাশন পছন্দ করেন, তাদের আছে ষাট ও সত্তর দশকের বিয়ের পোশাকের ধারা। ফিরে এসেছে সেই হেড ব্যান্ড। শুধু ফ্লোরাল হেড ব্যান্ড নয়, ছিল পুরোনো ফেদার, বিডস, মুক্তার হেডগিয়ার। ফ্যাশনবোদ্ধাদের মতে, এই ট্রেন্ডগুলোই ঘুরেফিরে দেখা যাবে আগামী বছর। আর এর ভেতর থেকে হবু বধূরা বেছে নেবেন তাদের স্বপ্নের বিয়ের পোশাক।
ফাহমিদা সিকদার
ছবি: ইন্টারনেট