ফিচার I স্বর্ণে বুনন
উৎসবে বিশেষ পোশাক পরার রীতি প্রাচীন। পরিধেয়র বিশেষত্বে সে সময় থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে নানা অনুষঙ্গ। জারদৌসি সেগুলোর একটি। এই সূচিকর্ম কতটা পুরোনো, তার সঠিক ইতিহাস পাওয়া না গেলেও ঋগ্বেদে এর উল্লেখ রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ ও ১২০০ অব্দে পোশাকে জারদৌসির মতো সূচিকর্ম হতো। ইতিহাসবিদদের ধারণা, এটির উৎসস্থল পারস্য। জারদৌসি শব্দের ব্যুৎপত্তি পারসিয়ান শব্দ ‘জার’ মানে সোনা এবং ‘দৌসি’ হলো সূচিকর্ম বা সেলাই। মোগল আমলে ভারতবর্ষে এটি বিশেষ স্থান অধিকার করে নেয়। সে সময় তাঁবুর প্রাচীরের সঙ্গে সঙ্গে মহারাজা-মহারানিদের রাজকীয় পোশাকে এই সেলাইয়ের বিশদ প্রচলন ছিল।
পরবর্তী সময়ে লক্ষ্ণৌর নবাব পরিবারে জারদৌসির চাহিদা তৈরি হয়। ফলে এই সূচিকর্মের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে শহরটি। ২০১৩ সালে ‘লক্ষ্ণৌ জারদৌসি’ জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন অর্জন করে। মোগল আমলে সূচিকর্মটিতে সোনার জরি ব্যবহৃত হতো। যেটি সোনার সংকর থেকে তৈরি হতো। প্রথমে ধাতুপিন্ড গলিয়ে সূক্ষ্ম তার তৈরি করা হতো। ছিদ্রসহ ধাতব পাতের মধ্য দিয়ে সেটি পেষণ করে, পুনরায় হাতুড়ি দিয়ে চ্যাপ্টা করা হতো। তারপর মোটা, স্প্রিংয়ের মতো জারদৌসি জরি তৈরি করতে এই তারগুলোকে সিল্কের মধ্য দিয়ে পাকানো হতো। বিশেষ মাত্রা যোগ করতে ওই তারে স্বর্ণমুদ্রা ও পুঁতির মতো সোনার অলংকরণ যোগ হতো। যদিও বর্তমানে আধুনিক মেশিন এই প্রথাগত পদ্ধতির স্থান দখল করেছে। এখন তার বা সুতা তৈরিতে স্বর্ণ ব্যবহৃত হয় না। তবে লক্ষ্ণৌর জারদৌসিশিল্পীরা বংশপরম্পরায় তাদের দক্ষতা ধরে রেখেছেন এবং নতুন প্রজন্মকেও এর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। বাংলাদেশে মূলত বিহারিরাই জারদৌসির কাজ করেন। ঢাকার মোহাম্মদপুরে ও চট্টগ্রামের আমবাগানের ঝাউতলায় বিহারি কলোনিতে এ সূচিশিল্পের কাজ দেখা যায়।
ফ্যাশন ডিজাইনার নিমলা আহমেদ মুসা প্রায় বিশ বছর ধরে পোশাকে জারদৌসির ডিজাইন করছেন। এর বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাঁচ-ছয় বছর আগেও অন্তত ২৫ জন জারদৌসিশিল্পী ছিলেন। এখন তা কমে এসেছে। একসময় এর বিপুল চাহিদা ছিল। অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও অর্ডার দিতেন। ঈদ ও বিয়ের উৎসব ছাড়া জারদৌসির এখন তেমন চাহিদা নেই। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে আসা প্রচুর পোশাক এখানকার বাজার দখল করেছে। দামেও সস্তা। শুধু জারদৌসি নয়, দেশের সব ধরনের কারুশিল্প বাঁচাতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
জাহিদুল হক পাভেল
মডেল: এফা
ওয়্যারড্রোব: রিলা’স
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন