ফিচার I প্রস্ফুটিত
ফুলের গয়নায় কনের প্রাকৃতিক সাজ। আলোঝলমল মঞ্চেও মৌলিক সুন্দরের উপস্থিতি। মনোরম এবং প্রাণবন্ত। লিখেছেন সারাহ্ দীনা
ফ্যাশনে ফ্লোরাল ট্রেন্ড চলছে। তা সে ফ্যাব্রিকে হোক বা অ্যাকসেসরিজে- সবখানেই ফুলের শোভা। গয়না এর বাইরে নয়।
তবে এতে কাঁচা ফুলের ব্যবহার সুপ্রাচীন। কানে ফুল গুঁজে বন পাহাড়ে দৌড়ে বেড়ানো যখন থেকে শুরু, তখন থেকেই এটি অলংকার হয়ে উঠল। সঙ্গে লতা আর পাতাও।
বিয়ের গয়নায় ফুলের ব্যবহার থাকবেই। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল রঙবেরঙ ফুলে ভরপুর। অ্যাপার্টমেন্ট আর ফ্ল্যাটের দুনিয়াতেও প্রকৃতিপ্রেম হারিয়ে যায়নি। দু-এক দশক আগেও বাড়ি মানেই সামনে বাগান। আর সেখানে দেশি বাহারি ফুলের উপস্থিতি। কনের সাজে পার্লার সংস্কৃতি ছিল না তখন। ভরসা তাই বাগানের ফুল। সুতায় ফুলের মালা গেঁথে কনেকে সাজিয়ে আশীর্বাদ করা হতো। আজকের হলুদ ও মেহেদির অনুষ্ঠানে এর উপস্থিতি প্রবল।
আমাদের দেশে বিয়ের কনেকে আপদমস্তক ফুলের গয়নায় সাজানোর চল রয়েছে। কনের সাজে টায়রা নজর কাড়ে। একসময় এটি তৈরি করা হতো গাঁদা ফুল আর গোলাপে। এরপর একসময় রজনীগন্ধাও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। জারবারার ব্যাপক ব্যবহারও দেখা গেছে। এখনো তা দেখা যায় কনেসাজে। অর্কিড, জিপসির জনপ্রিয়তাও বেশ। তাজা ফুলের গয়নায় ডিটেইলিং জায়গা করে নিয়েছে সরবে। মুক্তা, পুঁথি আর বিটস দ্যুতি ছড়ায়। গয়না হয়ে ওঠে আরও অভিজাত। এসব ক্ষেত্রে সব সময় তাজা ফুল ব্যবহার করা হয় এমনটা কিন্তু নয়। ফ্যাব্রিকে তৈরি ফুলও বেশ প্রাধান্য পায়। শুকনো ফুলের ব্যবহারে রয়েছে আধুনিকতার ছাপ।
টায়রার একটি বিকল্প এসেছে কয়েক বছর আগে। গোল করে তৈরি করা ফুলের মোটিফ এটি। কনে নয়, শুধু ব্রাইডসমেডদেরও দারুণ মানায় মুকুটে। তাতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের ব্যবহার দেখা যায়। জিপসিতে ডিটেইলিং। সব মিলিয়ে রূপকথার ছোঁয়া মুকুটে। চুলে ফুল গুঁজেও সাজা যায়। তবে কান্ডের কিছু অংশ রেখে তা ব্যবহৃত হতে পারে। নয়তো দ্রুত চুপসে যাবে ফুল।
পুষ্পশোভিভ চুড়ি কবজিতে পরেন কনে। কখনো দুই হাতে দুটি একই নকশা চুড়ি আবার কখনো এক হাতে দেখা যায় নকশাদার মানতাশার বাহার। ব্রোচ হিসেবেও এটি পরা যেতে পারে। ছোট ফুল ও পাতা দিয়ে তৈরি করা হয় এগুলো।
চুড়ির সঙ্গে যুক্ত আংটি শোভা পায় কনের হাতে। পায়ের মলের জায়গাটাও ফুলে ফুলে ভরে যেতে দেখা যায়। যদি এবার গয়নার ফ্লোরাল স্টেটমেন্ট থাকতে পারে তিনভাবে। কানে, গলায় ও মাথায়। এর মাঝে গলার গয়নার গুরুত্ব কিছুটা বেশি। কারণ, কনের পোশাক অনেকটাই আবৃত থাকে গয়নায়। আর সামনে থেকে নজর তাই গয়নাতেই সই। গলায় এখন নানান রকম ফুলের গয়নার চল। চোকার, সীতাহার, এক লহরি, তিন লহরি ট্রেন্ডি। ফুলের ট্রেইলের ব্রেসলেট বা মোম ফ্লাওয়ার এবং স্প্রে গোলাপের তৈরি ডিজাইন বেশ ভিন্নতা এনেছে গয়নার ফ্যাশনে।
কোনো একটি রঙকে কেন্দ্র করেই পোশাক নির্বাচনের প্রথায় এসেছে পরিবর্তন। গয়নাতেও তাই। আগের মতো হলুদ গাঁদা, লাল গোলাপ আর সাদা রজনীতে আটকে নেই কনের গয়না। এখন সব রঙ ট্রেন্ডি। কনেকে ফুলের একক রঙেও সাজতে দেখা যায়। শুধু লাল গোলাপ, অথবা দুধ সাদা বেলি কিংবা জুঁই, রজনীগন্ধায় সাজেন কনে।
ফুলের সঙ্গে ঋতুর সরাসরি যোগাযোগ। তাই কনে কোনটিতে সাজবেন, তা অনেকটাই প্রকৃতি ঠিক করে দেয়। কিন্তু এর বাইরে আলাদা করে বিশেষ চাহিদা থাকলে ফরমায়েশি ফুলের গয়না বেছে নিতে হবে। কারিগরের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করে নেওয়া যেতে পারে রঙ ও কৃত্রিম ফুল তৈরির ফ্যাব্রিক। প্রাকৃতিক নকশার বাইরেও ফুল তৈরি করতে পারেন অনেক কারিগর। চাইলে নিজের পক্ষেই সম্ভব ডিজাইন করা। সার্চ ইঞ্জিন আর পিন্টারেস্ট তো আছেই।
মডেল: নিকি
ওয়্যারড্রোব: রিলা’স
ফ্লোরাল জুয়েলারি: ফ্লাওয়ার ব্লুমস্
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন