এই শহর এই সময় I জীবনের রঙ ও ছন্দ
সম্প্রতি গুলশান ২-এর ‘এজ গ্যালারি’তে অনুষ্ঠিত হলো শিল্পী কনকচাঁপা চাকমার একক চিত্র প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘দ্য ট্রাভেলার্স সং’। পাহাড় ও অরণ্যনিবিড় আদিবাসী যাপনের রঙ, রূপ আর সুরের মূর্ছনাকে ক্যানভাসে মূর্ত করেছিলেন কনকচাঁপা চাকমা। বহমান জীবনের অন্তর্লীন সুরকে চিত্রকল্পের ভেতর দিয়ে খুঁজতে চেয়েছেন শিল্পী, যা ‘রিদিম অব দ্য হিলস’, ‘হিস্ট্রি’, ‘অ্যাটেইনমেন্ট’-এর মতো সিরিজ পেইন্টিংয়ে ফুটে উঠেছিল। এমনকি ‘আ জয়ফুল মর্নিং-এর মতো একক ছবিগুলোর মধ্যেও। পাহাড়ি জীবন ও তার প্রকৃতি সম্পৃক্ততা, বৌদ্ধা স্মরণ, মাতৃতান্ত্রিক কৌমযাপনের মতো চিত্রকল্প এখানে প্রদর্শিত হয়েছিল।
মনুষ্যজীবন পর্যটনের মতো, মানুষ দৃশ্যমান জগতে আসে পর্যটনের জন্য, তারপর তাকে ফিরে যেতে হয়। জীবনের এই মহাপর্যটনের ভেতরে হর্ষ ও বিষাদের যে কাব্য ও সুর—তাকেই তেলরঙ আর অ্যাক্রিলিকের মাধ্যমে ক্যানভাসের ওপর চিত্রভাষায় প্রকাশ করতে চেয়েছেন কনকচাঁপা। প্রদর্শিত ছবিগুলোর সঙ্গে সংযোগ রেখে দর্শকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল এমিলি ডিকসন ও সরোজিনী নাইডুর কবিতা এবং জন কিটস ও রবার্ট ব্লেকের অনুপ্রেরণায় এজ টিমের যৌথ সৃজনে নির্মিত হাইকু। রূপময় চিত্রভাষ্যের সঙ্গে ও কবিতার বিমূর্ত অরূপের সংযোগে এই প্রদর্শনী বিশেষ মাত্রা পেয়েছিল। গত ৯ নভেম্বর এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শহরের বিশিষ্ট বেশ কিছু শিল্পী ও শিল্পবোদ্ধা এবং নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। উপস্থিত ছিলেন ক্যানভাস পত্রিকার সম্পাদক কানিজ আলমাস খান।
জীবনের এই রঙ, রূপ, ছন্দের মেলবন্ধনের আরেক মাধ্যম নৃত্যকলা। নৃত্যের নানা শাখা নিয়ে ২২ থেকে ২৪ নভেম্বর কক্সবাজারের মারমেইড ইকো রিসোর্টে অনুষ্ঠিত হলো ওশান ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল। যেখানে আমরা দেখতে পেলাম তাইওয়ানের লেই ড্যান্স থিয়েটারের পরিবেশনা ‘ইন্সপিরেশন অব আওয়ার হোম টাউন’। যেখানে টিয়াপাখির ভঙ্গিমায় নৃত্যের মধ্য দিয়ে মূর্ত হলো প্রেম। যেখানে নৃত্যের নান্দনিকতায় চুম্বন দৃশ্য হয়ে উঠেছিল স্বর্গীয়। এই উৎসবে কোরিয়া আর তাইওয়ানের তিনটি পরিবেশনায় মুগ্ধ হয়েছে দর্শক। এই উৎসবে অমিত চৌধুরী ও সুইটি দাশের পরিবেশনা ‘রূপান্তর’ দর্শককে আকৃষ্ট করেছে। মেহরাজ হক তুষারের দলের নৃত্য প্রযোজনা ‘ট্রাস্ট’ও দর্শকের মন ছুঁয়ে গেছে।
নৃত্য পরিবেশনার পাশাপাশি নৃত্যবিষয়ক আলাপ এই উৎসবের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের নৃত্যশিল্পী ও গবেষক দীপশিখা ঘোষ শান্তিনিকেতনের নৃত্যচর্চা নিয়ে আলাপ করেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে শান্তিনিকেতনের নৃত্য-উপযোগী পরিবেশের কথা। কীভাবে সেই পরিবেশ তৈরি হলো, সেই পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে কীভাবে নির্মিত হয়েছে রবীন্দ্রনৃত্য, এ নিয়েই ছিল তাঁর বক্তব্য। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনৃত্যে প্রায় সব ঘরানার নাচই আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নৃত্যকলাকে কোনো ব্যাকরণে আটকে রাখতে চাননি। নাচকে জীবনের অনুষঙ্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও চর্চা করাতে চেয়েছেন। এই আলোচনায় জুলিয়েট ও’ব্রিনের বক্তব্য শরীর, আত্মা ও মানবতার সমন্বয়ে নারীর নৃত্যচর্চা প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, নাচ সীমাহীন আনন্দের জন্য। মুখের ভাষায় যা প্রকাশ করা যাবে না, সেটা প্রকাশিত হবে শরীরের ভাষার মাধ্যমে। আগামী দিনে নারীরা কেবল নায়িকা হিসেবে নৃত্য প্রদর্শন করবে না। তারা নাচবে শরীর, আত্মা ও মানবতার সমন্বয়ে। নাচ মানুষের, বিশেষত নারীর অধিকার। ক্রিস্টিনা লুনা ডলিনিনা বলেন গুরু-শিষ্য পরম্পরা বিষয়ে। এর ভালো-মন্দ নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখান তিনি। দিল্লি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক গৌরব ঘোষ যাত্রাশিল্প বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পেশ করেন। তিনি বলেন, যাত্রাকে নাগরিক পরিসরে জনপ্রিয় করার জন্য এতে ব্যালে, অপেরা, ক্যাবারে নৃত্য যুক্ত করা হয়েছে বহু আগে। এই উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ট্যুরিজম বোর্ড। একাডেমিক সহযোগিতায় ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ভেন্যু সহযোগিতায় মারমেইড বিচ রিসোর্ট।
স্টাফ রিপোর্টার
ছবি: সংগ্রহ