skip to Main Content

ফিচার I সার্কাস সার্কাস

প্রসেনিয়াম শিল্প হিসেবে, বিনোদনের গ্র্যান্ড ইভেন্ট হিসেবে সার্কাস আমাদের পপুলার কালচারের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তবে স্মার্ট টেকনোলজির যুগে সার্কাসের সেই জৌলুশ আর নেই। কিন্তু শীতকাল মানেই সার্কাস। যা আমাদের স্মৃতির চিত্রমালায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। এমনকি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সার্কাস চিররঙিন। লিখেছেন অতনু সিংহ

এখন স্মার্টফোন কিংবা ডেস্কটপ-ল্যাপটপের স্ক্রিনে কেটে যায় শৈশব, কৈশোর। যা ছিল রঙ-ঢঙ-হাসি-আহ্লাদের রিয়্যালিটি, আজ সেই সব বিজাতীয় ভাষায় ও আঙ্গিকে—সবকিছুই স্ক্রিনের ভেতর। তবু আজও মফস্বলে অথবা কোনো গ্রামে, কোনো নদীর চরে, শীতের মিঠিরোদে জেগে ওঠে সার্কাসের তাঁবু। ট্রাপিজ, জাগলিং, জোকারের রঙ-ঢঙ, রিং মাস্টারের শাসন আর জীবজন্তুর সমাহারে হাসিকান্না-হীরাপান্নার সার্কাস-তাঁবু উঁকি দেয় কোথাও কোথাও।
শীতের বর্ণনায় আজও উঠে আসে সার্কাসের প্রসঙ্গ। সেই তাঁবুতে শীতের একটা দুপুর কিংবা সন্ধ্যা প্রিয়জনদের সঙ্গে, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কিংবা পরিবারের কচি-কাঁচাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা মেতে উঠতাম শীতের একটা গ্র্যান্ড ইভেন্টে। আর সার্কাসের রাজকীয় আয়োজনের স্মৃতি নিয়ে কেটে যেত বছরের বাকি দিনগুলো। মঞ্চের কলাকুশলীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ভাবতে আগ্রহবোধ করতাম। হেমন্তের শেষ থেকে গোটা শীতকালব্যাপী সার্কাসের তাঁবুর ভেতরে কলাকুশলীদের হাসিকান্নার জীবনে উঁকি দেওয়ার ইচ্ছে হতো আমাদের। তাতে বন্য প্রাণীকে আটকে রাখা, কলাকুশলীদের মানবাধিকার, তাদের নিরাপত্তাহীনতা, জীবনের তুচ্ছ মূল্য—এসব অমীমাংসিত থেকে যেত। তবু দুরন্ত ট্রাপিজ, জোকারের হাসিঠাট্টা, পোষমানা প্রাণীদের খেলাধুলা, জিমন্যাস্টিকস আর জাগলিংয়ে সার্কাসের বিনোদন অতুলনীয়।
সার্কাস ল্যাটিন শব্দ। গ্রিক κίρκος থেকে সার্কাস শব্দটি উদ্ভূত। ইংরেজি ভাষায় ১৪ শতকে এই শব্দ ব্যবহৃত হয়। খেলাধুলা ও মনোরঞ্জনের জন্য গ্রিকরা বিভিন্ন গ্র্যান্ড ইভেন্টের আয়োজন করত। তেমনই একটি আয়োজন সার্কাস। তবে রাশিয়াতেও এর অভিজাত আয়োজন বহু যুগ ধরেই। পরে সার্কাস বাণিজ্যিক চেহারা নেয়। প্রসেনিয়াম থিয়েটারের হাইপাররিয়্যাল ভার্সনও বলা যেতে পারে একে। সে জন্য সার্কাসে নাট্যকলা, সংগীত, নৃত্য ও ব্যালের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে।
রিয়্যালিটি শোর আদি মাধ্যম হিসেবেও সার্কাসকে দেখা যেতে পারে। উপনিবেশবাদের হাত ধরে গোটা বিশ্বে এটি ছড়িয়ে পড়ে। বোহিমিয়ান জীবনযাপনে অভ্যস্ত জিপসিরা যেভাবে সংগীত, নৃত্য, ম্যাজিক, জরিবুটিসহ নানা চমক নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়ায়, সার্কাসের আয়োজন তেমনই। কিন্তু তা জিপসিদের থেকে অনেক গুণ বড়।
মাঠে, ময়দানে মাসের পর মাস বিরাট বিরাট তাঁবু ফেলে সার্কাস চলে। ম্যানেজার থেকে রিং মাস্টার, ক্লাউন, ঝুঁকিপূর্ণ শারীরিক কসরতের মহিলা শিল্পী, স্টান্টম্যান, হাতি-ঘোড়া-উট, বাঘ-সিংহ-ভালুক-জিরাফ-জেব্রা নিয়ে অন্য একটা সমান্তরাল জগৎ তৈরি করে ফেলে সার্কাস কোম্পানিগুলো। এখন অনেক রাষ্ট্রেই বন্য প্রাণী ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিন্তু কিছুদিন আগেও সেসব দেশে সার্কাসের মূল আকর্ষণ ছিল বন্য প্রাণীরাই। বাংলাদেশের হাতি-বাঘ-ভালুক-সিংহের ব্যবহার না দেখা গেলেও বাকি সব আয়োজনে সার্কাসের তাঁবু হয়ে উঠত মনোরঞ্জনের একটা আস্ত পৃথিবী। তবে প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গে কয়েক বছর আগেও সার্কাসে দেখা মিলত বন্য প্রাণীদের। রিং মাস্টারের কথায় তারা খেলা দেখাত হাজার হাজার দর্শককে, তাদের সঙ্গে অবলীলায় হাসি-ঠাট্টাতেও মেতে উঠত ক্লাউনরা।
বিশ্বের সবচেয়ে সেরা সার্কাস কোম্পানি
 সার্কাস ভার্গাস: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬০ সালে এই সার্কাস কোম্পানির প্রতিষ্ঠা হয়। আজও এটি তাঁবুর মধ্যে সার্কাসের আসর বসায়। যদিও ইউরোপ-আমেরিকায় তাঁবুতে সার্কাস প্রায় অপ্রচলিত হয়ে গেছে বলা চলে।
 ক্রিক দ্য সোলেইল: কানাডার এই সার্কাস কোম্পানি এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় থিয়েট্রিক্যাল পারফরম্যান্সের আখড়া। বিশ্বের নানা ধরনের থিয়েট্রিক্যাল ও সার্কাস স্টাইলের মেলবন্ধন এদের উপস্থাপনায় ধরা পড়ে।
 ক্রিক মেদরানো: ফরাসি সার্কাস কোম্পানি। ফরাসি রয়্যাল ফ্যামিলি ক্রিক মেদরানো ও ভ্রাম্যমাণ ব্রিটিশ সার্কাস ফ্যামিলি রবার্ট অস্টিন ব্রাদার্স মিলে এটি প্রতিষ্ঠা করে। এর নাম শুরুতে ছিল রবার্ট অস্টিনস মেডিটারিয়ান সার্কাস। পরে হয় ক্রিক মেদরানো।
 সার্কাস কনট্র্যাপশন: ওয়াশিংটনের এই সার্কাস মিউজিক ও নৃত্য-উপস্থাপনায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। পারফরম্যান্সের পাশাপাশি এদের মিউজিকের সিডি ও ডিভিডি বাজারে পাওয়া যায়। ১৯৩৮ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
 সার্কাস ক্রোনি: জার্মানির এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠা ১৯০৫ সালে। এটা ইউরোপের প্রথম সারির সার্কাস কোম্পানি। জার্মানির মিউনিখে এই কোম্পানির নামে একটা বড় ভবন রয়েছে।
 সার্কাস ওজ: রক অ্যান্ড রোল থেকে নানা ধরনের স্যাটায়ারে পরিপূর্ণ অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের সার্কাস ওজ। সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার রক্ষার লড়াইয়ের পক্ষে সার্কাস ওজের পারফরম্যান্স বেশ রাজনৈতিক। ১৯৭৮ সালে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।
 সার্কাস ক্রিকোর: সুইডেনের স্টকহোমের এই সার্কাস সংস্থা গড়ে ওঠে ১৯৯৫ সালে। ছোট জায়গায় এরা পারফর্ম করে। হোম অ্যারেনায় এদের উপস্থাপনার নাম সিউটোপিয়া।
 সার্কাস রিডিকিউলাস: পাঙ্ক-রক ঘরানার উপস্থাপনায় পরিপূর্ণ লস অ্যাঞ্জেলেসের এই সার্কাস কোম্পানি তৈরি হয় ১৯৯৫ সালে। এদের গুরুত্বপূর্ণ পারফরম্যান্সগুলোর মধ্যে সেরা তিনটি হলো ‘স্পিড মেটাল ট্যাপ ড্যান্স’, ‘দ্য টকিং মাইম’ এবং ‘অ্যামেজিং জ্যারিকো রিসে- দ্য ট্যালেন্টলেস ম্যাজিশিয়ান’।
 লেনন ব্র-সার্কাস: অস্ট্রেলিয়ার এই সার্কাস কোম্পানির প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৯০ সালে। বুনো বিড়ালের খেলা দেখানোর জন্য এটি বিখ্যাত। মোট ৩৫ জন কলাকুশলী গঠিত এই দল। ১৪টি ট্রাক ও ১৪টি ক্যারাভান নিয়ে নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে সার্কাস প্রদর্শন করে।
 মস্কো স্টেট সার্কাস: এই সার্কাস কোম্পানি, রাশিয়ান সার্কাসের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। মস্কো শহরে এর দুটি ভবন রয়েছে। একটির নাম ‘সার্কাস নিকুলিন’, আরেকটি ‘বলশোই সার্কাস’।
 রিংলিং ব্রাদার্স অ্যান্ড বারনাম এন বেইলে সার্কাস: যুক্তরাজ্যের এই সার্কাস কোম্পানির পত্তন হয় ১৯০৭ সালে। বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় সার্কাস শো এই কোম্পানির। দুটো ট্রেন ও একটি ট্রাকে করে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সার্কাসের টিম ও সরঞ্জাম নিয়ে গিয়ে এই কোম্পানি তাদের পারফরম্যান্স দেখায়।
 সার্কিউবা: কিউবার জাতীয় সার্কাস কোম্পানি প্রতিষ্ঠা ১৯৬৮ সালে। রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানায় চলা এই সার্কাস কোম্পানিতে যোগ দিতে হলে তাদের অধীনে একটি অ্যাকাডেমিক কোর্সের পাঠ নিতে হয়। তারপর রয়েছে চার বছরের প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং।
 দ্য ফ্লাইং ফ্রুট ফ্লাই সার্কাস: অস্ট্রেলিয়ার এই ইয়ুথ সার্কাস কোম্পানির প্রতিষ্ঠা ১৯৭০ সালে। সে দেশে এই কোম্পানির একটি সার্বক্ষণিক সার্কাস স্কুল রয়েছে। সেখানে শিশুশিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। ভিক্টোরিয়া এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের গাইডলাইন মেনে এই স্কুল চালানো হয়।
বাংলাদেশে সার্কাস কোম্পানি বলতেই মনে আসে বিউটি সার্কাসের কথা। এ ছাড়া রয়েল বেঙ্গল সার্কাস, দি নটরাজ সার্কাস, দি লায়ন সার্কাস উল্লেখযোগ্য। ভারতেও বিভিন্ন সার্কাস কোম্পানি জনপ্রিয়। সেগুলোর মধ্যে র‌্যাম্বো সার্কাস, বোম্বে সার্কাস, জেমিনি সার্কাস উত্তর, পশ্চিম ও মধ্য ভারতে জনপ্রিয়। পশ্চিমবঙ্গে রাশিয়ান সার্কাস, অজন্তা সার্কাস, রয়্যাল সার্কাসসহ বেশ কয়েকটি সার্কাস টিম আছে। তবে উপমহাদেশের বিনোদন সংস্কৃতিতে সার্কাসের স্থান এখন অনেকটাই ম্রিয়মাণ।
সিনেমায় সার্কাস
থিয়েট্রিক্যাল উপস্থাপনা, শারীরিক কসরত, অভিনয়, ভাঁড়ামো, স্যাটায়ার, মিউজিক, ব্যালে, ভেলকি, স্টান্ট—এসব মিলিয়ে সার্কাসের আয়োজনের পরিধি যেহেতু ব্যাপক, তাই বিনোদনের এই জগৎ স্বাভাবিকভাবেই চলচ্চিত্রের ইতিহাসে হয়ে উঠেছে ফিল্ম ন্যারেটিভের আধার। কিংবা বলা যায়, অনেক ক্ষেত্রে সিনে-ন্যারেটিভ এগিয়েছে সার্কাসের হাসিকান্না-হীরাপান্নার মায়াজগৎকে কেন্দ্র করে। ১৯২৮ সালে চার্লি চ্যাপলিনের নির্দেশনায় তৈরি হয় ‘দ্য সার্কাস’ ছবিটি। সাইলেন্ট এই ছবির কাহিনি ও চিত্রনাট্য চ্যাপলিনেরই। মুখ্য চরিত্রেও তিনি। ১৯৫৪ সালে ইতালিয়ান পরিচালক ফেদিরিকো ফেলিনি তৈরি করেন ‘লা স্ত্রাদা’ নামক ক্ল্যাসিক সিনেমাটি। এই ছবির ন্যারেটিভের আধার হয়ে ওঠে সার্কাস। ১৯৩৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে তৈরি হয় জর্জেই আলেকজান্দ্রভ ও ইসিদোর সিমকভ নির্দেশিত এক্সেন্ট্রিক কমেডি ফিল্ম ‘সার্কাস’। চ্যাপলিনের ছবি ছাড়াও হলিউডে সার্কাসের ওপর নির্মিত সিনেমার সংখ্যা প্রচুর। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘অ্যাট দ্য সার্কাস’ (১৯৩৯), ‘ফ্রিকস’ (১৯৩২), ‘দ্য সার্কাস ক্লাউন’ (১৯৩৬), ‘কার্নিভাল স্টোরি’ (১৯৫৪), ‘সার্কাস ওয়ার্ল্ড’ (১৯৬৪), ‘থ্রি রিং সার্কাস’ (১৯৫৪), ‘বিগ টপ পি-উয়ি’ (১৯৮৮), ‘আউটরেজ’ (১৯৯২), ‘ওয়াটার ফর এলিফ্যান্টস’ (২০১১) ইত্যাদি। সব মিলিয়ে হলিউডে সার্কাসের ওপর ৩৪টি ছবি তৈরি হয়েছে। বলিউডে ১৯৫৯ সালে তৈরি হয় ‘সার্কাস কুইন’ নামক হিন্দি ছবিটি। পরিচালনায় নসির ইঞ্জিনিয়ার। এ কে আব্বাসের কাহিনি ও চিত্রনাট্যে ১৯৭০ সালে তৈরি হয় বিখ্যাত হিন্দি ছবি ‘মেরা নাম জোকার’। প্রযোজনা ও নির্দেশনায় রাজ কাপুর। মুখ্য চরিত্রে রাজ কাপুর, সিমি গারওয়াল, মনোজ কাপুর, ঋষি কাপুর, ধর্মেন্দ্র, দারা সিং, পদ্মিনী প্রমুখ। মান্না দে, আশা ভোঁসলে, মুকেশ প্রমুখ সংগীতশিল্পীর কণ্ঠে এই ছবির গানগুলো কালজয়ী হয়ে আছে। এ ছাড়া শাহরুখ খান তাঁর অভিনয়জীবনের শুরুতে ‘সার্কাস’ নামে একটি হিন্দি টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন। ইতালিয়ান ফিল্ম মাস্টার রেনোয়াঁর সঙ্গে কাজ করে এসে বাংলায় ‘তেরো নদীর পারে’ বানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্রকার বারীন সাহা। সেই ছবিতেও ছিল সার্কাসের গল্প। ওই ছবিটির প্রিন্ট আর পাওয়া যায় না। কিন্তু যাঁরা ওই ছবিটি দেখেছেন, তাঁরা বলেন, সেই ছবি বিস্ময়কর। ‘লা স্ত্রাদা’র সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে ‘তেরো নদীর পারে’ নামের ছবিটির। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের পরিচালক মাহমুদ দিদার তৈরি করছেন ‘বিউটি সার্কাস’ নামে একটি ছবি। অভিনয়ে জয়া আহসান। সাম্প্রতিক ‘জোকার’ ছবিটিতে সার্কাস বিষয়টি প্রাসঙ্গিক না হলেও দৃশ্যায়িত হয়েছে ক্লাউন কোম্পানির অন্তর্জগৎ।
প্রসেনিয়াম শিল্প অথবা বিনোদনের গ্র্যান্ড ইভেন্ট হিসেবে সার্কাস আমাদের পপলোর বা পপুলার কালচারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সার্কাস মানে বিরাট এক ক্যানভাস। আমাদের জীবনের মতোই।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top