ফিচার I ঈদের ষড়ব্যঞ্জন
উৎসবের ডাইনিংয়ে রাখা যেতে পারে নিরামিষ, রুটি, বিরিয়ানি, দুই ধরনের মাংস এবং একটি মিষ্টি। ঈদের কয়েকটি দিনে আমিষে উদরপূর্তি তো ঘটেই। তবে ভারসাম্যের জন্য চাই নিরামিষের উপাদেয় একটি পদ। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের উপস্থিতি যখন ঘটে, তখন আরও বেড়ে যায় ফেস্টিভ ফুডের আকর্ষণ
মরোক্কান ভেজিটেবল তাজিন
ঈদের দিনে খাবারটি তৈরি হয় মরক্কোর ঘরে ঘরে। আমিষ-নিরামিষ উভয়েরই তাজিন হয়। মেনুতে নিরামিষ হিসেবে রাখা যেতে পারে মরোক্কান পদটি।
উপকরণ: অলিভ অয়েল ৩ টেবিল চামচ, বড় পেঁয়াজ ১টি (কুচি করে কাটা), রসুন ৩ কোয়া (কুচি করা), আদা ১ ইঞ্চি (কুচি করা), দারুচিনি গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, জিরা ১ চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, হারিসা পেস্ট ৩ চা-চামচ, টমেটো ২টি (ছোট করে কেটে নিতে হবে), লেবু ১টি (রস বের করে নিতে হবে), ধনেপাতা ১ মুঠ, ছোট কুমড়া ১টি (খোসা ছাড়িয়ে ২ ইঞ্চি কিউব করে কাটা), মিষ্টিআলু ১টি (খোসা ছাড়িয়ে ২ ইঞ্চি কিউব করে কাটা), গাজর ১টি (খোসা ছাড়িয়ে ২ ইঞ্চি কিউব করে কাটা), জুকিনি ১টি (খোসা ছাড়িয়ে ২ ইঞ্চি কিউব করে কাটা), অ্যাপ্রিকট ১০টি, মটরশুঁটি আধা কাপ, কিশমিশ ১ মুঠ এবং কুসকুস, ভাজা বাদাম, সিলান্ট্রো ও পুদিনাপাতা প্রয়োজনমতো।
প্রণালি: একটি মাটির পাত্রে তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজ সাঁতলে নিন। রসুন, আদাসহ অন্যান্য মসলা দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়তে হবে। তারপর হারিসা, টমেটো, লেবুর রস ও ধনেপাতা যোগ করে নাড়তে থাকুন। এতে টমেটোর সস তৈরি হতে থাকবে। এ সময় চুলার আঁচ কমিয়ে কুমড়া, গাজর, মিষ্টিআলু, জুকিনি, মটরশুঁটি ও অ্যাপ্রিকট যোগ করুন। ভালোভাবে নাড়তে হবে, যাতে টমেটোর সস সব সবজির সঙ্গে মিশে যায়। এক ঘণ্টা ঢেকে রাখতে হবে। মাঝেমধ্যে দু-একবার ঢাকনা সরিয়ে নেড়ে দিন। হয়ে গেলে উপরে কিশমিশ, কুসকুস, ভাজা বাদাম, সিলান্ট্রো ও পুদিনাপাতা ছড়িয়ে দিতে হবে।
পর্দা বিরিয়ানি
নামটি বেশ আকর্ষণীয়। রুটির আবরণে ঢাকা থাকে বলে এমন নাম হয়েছে।
উপকরণ
মাংসের জন্য: গরুর মাংস ২ কেজি, বিরিয়ানি মসলা ৩ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, এলাচি ২টি, বড় এলাচি ২টি, দারুচিনি ২ টুকরা, স্টার অ্যানিস ১টি, শাহি জিরা আধা চা-চামচ, লবঙ্গ ৩টি, টক দই আধা কাপ, ঘি ও তেল আধা কাপ, পেঁয়াজ বেরেস্তা আধা কাপ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, গরমমসলার গুঁড়া ১ চা-চামচ এবং আস্ত কাঁচা মরিচ ১০টি।
পোলাওয়ের জন্য: পোলাও চাল ১ কেজি, ঘি ২ টেবিল চামচ, গুঁড়া দুধ আধা কাপ, এলাচি-দারুচিনি ২টি করে, লবণ স্বাদমতো, পানি ২ লিটার এবং চিনি ২ চা-চামচ।
পর্দার জন্য: ময়দা ৩ কাপ, তেল ৩ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো ও পানি প্রয়োজন অনুযায়ী।
অন্যান্য উপকরণ: আলুবোখারা, বাদামকুচি ও দুধে ভেজানো জাফরান, তরল দুধ, ডিম ও ঘি প্রয়োজনমতো।
প্রণালি: পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ বাদে মাংসের উপকরণের সবকিছু মাংসে মেখে ২০ মিনিট রাখুন। মাঝারি আঁচে মাংস রাঁধতে হবে। সেদ্ধ হওয়ার পর পেঁয়াজ বেরেস্তা ও কাঁচা মরিচ দিয়ে ১৫ মিনিট দমে রাখুন।
পোলাও রান্নার জন্য: একটি কড়াইয়ে পোলাওয়ের উপকরণ থেকে ঘি গরম করে নিন। তাতে আস্ত মসলার ফোড়ন দিয়ে চাল ভেজে নিতে হবে। ভাজা হলে চালের মধ্যে দ্বিগুণ পানি ঢেলে দিন। এবার দুধ, লবণ ও চিনি দিতে হবে। তারপর ঢেকে রান্না করুন।
বিরিয়ানি রান্নার হাঁড়ির মুখ ঢাকার জন্য পর্দা বানাতে হবে। এ উদ্দেশ্যে ময়দার সঙ্গে ময়দার সব উপকরণ মেখে খামির করে বড় একটি রুটি তৈরি করুন। সেটি বড় গোল পাত্রে নিয়ে তার মধ্যে পোলাও ও মাংস লেয়ার করে বিছিয়ে দিতে হবে। প্রতিটি লেয়ারে আলুবোখারা, বাদামকুচি ও দুধে ভেজানো জাফরান দিয়ে রুটির মুখটি বন্ধ করে দিন। এবার একটি বেকিং ট্রেতে নিয়ে রুটির ওপর তরল দুধ, ডিম ও ঘি ব্রাশ করুন। আভেনে ১৮০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ২৫ মিনিট বেক করতে হবে।
সোমালিয়ান কামবাবুর
বেশ জনপ্রিয়। ঈদের দিন এ খাবারের প্রতীক্ষায় থাকে দেশটির শিশু থেকে বুড়োরা। এটি পাতলা রুটির বিশেষ পদ।
উপকরণ: আটা ১ কেজি, পানি ১ লিটার, হলুদগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, কালোজিরা আধা চা-চামচ, জিরাগুঁড়া ১ চিমটি, মৌরিগুঁড়া ২ চা-চামচ, রসুন ১ কোয়া (থেঁতলে নিতে হবে), পেঁয়াজ ছোট ১টি, (কুচি করে কাটা), ইস্ট ১ চা-চামচ, জাফরানগুঁড়া ১ চিমটি, ঘি কিংবা দই, চিনি ও তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি: একটি পাত্রে আটা ও পানি মেশাতে হবে। তাতে মৌরি, পেঁয়াজ ও রসুন যোগ করুন। আলাদা একটি পাত্রে কিছু পানিতে ইস্ট মিশিয়ে আটার মিশ্রণে ঢেলে দিতে হবে। এতে জাফরান, জিরা ও কালোজিরা মেশান। মিশ্রণটি সারা রাত ঢেকে রেখে দিতে হবে। পরদিন লবণ দিয়ে ভালোভাবে নাড়ুন। একটি তাওয়ায় তেল গরম করে নিতে হবে। তাতে সামান্য বাটার গলিয়ে নিন। আটার মিশ্রণ গোলতলাবিশিষ্ট চামচ দিয়ে কিছুটা তুলে তাওয়ায় ঢেলে চামচের তলা দিয়ে ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে সেটি রুটির আকার ধারণ করে। ভালোভাবে ভাজতে হবে। ভাজা শেষ হওয়ার আগে রুটির উপর ঘি ও চিনি ছিটিয়ে দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ভাজুন।
বসনিয়ান তুফাহিজ
বসনিয়ার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। সাধারণত ঈদের দিনই তারা এই বিশেষ খাবার আপেল দিয়ে তৈরি করে। খুব সহজেই বানানো যায়।
উপকরণ: আপেল ৬টি।
সিরাপের জন্য: পানি ২ কাপ, চিনি সাড়ে ৩ কাপ, অর্ধেক লেবু (রস বের করে নিতে হবে), ভেনিলা এক্সট্রাক্ট আধা চা-চামচ।
ফিলিংয়ের জন্য: দুধ আধা কাপ, আখরোট পরিমাণমতো, আনসল্টেড বাটার ৪ টেবিল চামচ, চিনি ২ টেবিল চামচ।
সাজানোর জন্য: হুইপিং ক্রিম ১ কাপ এবং আখরোট কার্নেল ৬টি।
প্রণালি: দুটি আপেলের খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। খোসাগুলো ফেলে না দিয়ে একটি কাপে সংরক্ষণ করুন। অন্য আপেলগুলো ছিলে একটি চা-চামচ দিয়ে গর্ত করে নিতে হবে। এতে আপেলগুলো ছোট ছোট বাটির মতো দেখাবে। লক্ষ রাখতে হবে, ভেতরে যাতে বীজ থেকে না যায়। এবার আপেলগুলো সিরাপে সেদ্ধ করে নিন।
সিরাপ তৈরির জন্য: একটি পাত্র চুলায় বসিয়ে তাতে পানি, চিনি, লেবুর রস দিতে হবে। আপেলের খোসা ও ভেনিলা এক্সট্রাক্ট উচ্চ তাপে জ্বাল দিন। এতে সিরাপ তৈরি হবে। সেটিতেই আপেলগুলো ৭ মিনিট ধরে সেদ্ধ করে নিতে হবে। সিরাপ থেকে আপেল তুলে অন্য একটি পাত্রে রেখে ঠান্ডা হতে দিন। আরেকটি পাত্রে সিরাপ সংরক্ষণ করুন।ফিলিং তৈরির জন্য: একটি পাত্রে দুধ গরম করে তাতে আখরোট ভিজিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। আরেকটি পাত্রে বাটার গলিয়ে তাতে চিনি যোগ করুন। এবার তা আখরোট ভেজানো দুধে মেশাতে হবে। ভালো করে নাড়ুন। ফিলিং তৈরি হবে।
এবার প্রতিটি আপেলের ভেতর ফিলিং পুরে তার উপরে সিরাপ ঢেলে দিন। তারপর ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। জমে গেলে উপরে হুইপিং ক্রিমসহ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে পরিবেশন করুন।
মেথি কালিয়া
মেথির সুবাসে মাংস। স্বাদে গন্ধে অনন্য।
উপকরণ: মাংস ১ কেজি, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, আদাবাটা ২ চা-চামচ, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, পেঁয়াজকুচি ১ টেবিল চামচ, মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ, জিরাগুঁড়া ২ চা-চামচ, ধনেগুঁড়া ২ চা-চামচ, মেথিবাটা ২ চা-চামচ, দারুচিনি ২ টুকরা, তেজপাতা ১টি, সয়াবিন তেল আধা কাপ, রসুনকুচি ২ চা-চামচ, পেঁয়াজ স্লাইস আধা কাপ এবং লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: মাংস টুকরা করে কেটে নিতে হবে। এবার সব গুঁড়া, বাটা মসলা, পেঁয়াজকুচি, তেজপাতা, লবণ ও ২ টেবিল চামচ তেল মাংসে খুব ভালো করে মেখে নিন। তাতে ৪ কাপ পানি দিয়ে চুলায় দিতে হবে। পানি শুকিয়ে মাংস সেদ্ধ হলে নামিয়ে নিন।
আরেকটি হাঁড়ি নিতে হবে। তাতে তেল দিয়ে পেঁয়াজ স্লাইস ও রসুনকুচি বাদামি করে ভেজে নিন। সেখানে মাংস ও দারুচিনি যোগ করে ভুনা করে কষিয়ে নিতে হবে। মাংস সেদ্ধ হয়ে মেথির সুগন্ধ বেরোলে আধা কাপ ফোটানো পানি দিয়ে ঢেকে দিন। একবার ফুটিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
বাদামি কোরমা
মাংসের পদে কিছুটা বৈচিত্র্য আনা যেতে পারে বাদামি কোরমা রেঁধে। যেকোনো মাংস দিয়েই রান্না করা যাবে এটি।
উপকরণ: খাসির মাংস আধা কেজি, ঘি আধা কাপ, পেঁয়াজকুচি ২ টেবিল চামচ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুন মিহি কুচি ১ চা-চামচ, দারুচিনি ২ টুকরা, এলাচি ৩টি, লবঙ্গ ২টি, ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ, জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ, মরিচগুঁড়া আধা চা-চামচ, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, টক ১ টেবিল চামচ, আলুবোখারা ৮টি, বাদামবাটা ১ টেবিল চামচ এবং লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: মাংস বড় টুকরা করে কেটে নিতে হবে। ঘিয়ে পেঁয়াজ ও রসুন হালকা ভেজে নিন। অন্যান্য মসলা যোগ করে মৃদু আঁচে ৫ মিনিট ভাজতে হবে। আঁচ কমিয়ে মাংস, দই ও বাদাম দিয়ে রান্না করুন। মাংস সেদ্ধ হলে এলে আলুবোখারা ও লবণ দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে দিতে হবে। এবার দমে রাখুন। আলুবোখারা নরম হলে এবং মাংস তেল ছাড়লে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
❙ ফুড ডেস্ক