ফিচার I এথনিক এসেনশিয়াল
লুক এথনিসিটি তৈরির জন্য ওয়্যারড্রোবে কিছু পোশাক আর অনুষঙ্গ তো চাই-ই। তবেই না সেসব নিয়ে একেক সময়ে একেক রকমের এক্সপেরিমেন্ট
ফ্যাশনে প্রায় সব নতুন ট্রেন্ড আসে আর যায়। ট্রেন্ডি হওয়ার জন্য অনেকেই পশ্চিমা পোশাককে একটু বেশি আশকারা দিয়ে থাকে। কিন্তু এটা যতই উপভোগ্য হোক না কেন, ফ্যাশনেবলদের মনে এথনিক পোশাকের জন্য একটা বিশেষ জায়গা সব সময় থেকে যায়। এ পোশাক সবখানেই ব্যবহার করা যায়। আর উৎসবের সময় অন্য কিছু চিন্তাই করা যায় না! আগে এথনিক পোশাকের সংজ্ঞা কেবল শাড়ি আর সালোয়ার-কামিজের ভেতর সীমাবদ্ধ ছিল। এখন এর মানে আরও কিছু! যে ধরনের পোশাক বানাতে ঐতিহ্যবাহী ফ্যাব্রিক, প্যাটার্ন বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ বুনন পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়, সেগুলোই এথনিক পোশাক। সেটি হতে পারে ফিউশনধর্মী কুর্তা, স্কার্ট বা প্যান্ট, এমনকি হালের পালাজো শাড়িও। চাইলেই এগুলোর যেকোনোটি দিয়ে মজার সব ফ্যাশন এক্সপেরিমেন্ট করা যায়। দেখা যাক একটি পূর্ণাঙ্গ এথনিক ওয়্যার কালেকশনের ‘মাস্ট হ্যাভ’গুলো কী।
কুর্তা
কুর্তা আমাদের দেশে বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় একটি পোশাক। ফরমাল, ক্যাজুয়াল, ফেস্টিভ- সব ধরনের লুক তৈরিতে এর জুড়ি মেলা ভার। ফরমাল কুর্তা সাধারণত প্লেইন কাট, লাইট ফ্যাব্রিকের হয়। ক্যাজুয়াল কুর্তার কাটে ভিন্নতা থাকে। যেমন অ্যাসিমেট্রিক কাট, কাউল হেমলাইন, লেয়ার, ফ্রক কাট ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের উৎসব উপলক্ষে বেছে নেওয়া যেতে পারে ভারী কাপড়ের এমব্রয়ডারি বা কারচুপি দেওয়া কুর্তা। মিনিমালিস্ট ফেস্টিভ লুকের জন্য বেছে নেওয়া যায় লাইট ফ্যাব্রিকের ওপর ফয়েল প্রিন্ট, উজ্জ্বল ব্লক প্রিন্ট বা বোল্ড প্রিন্ট। কুর্তার বটম হিসেবে ম্যাচিং পালাজো, লেগিংস, স্ট্রেইট প্যান্ট- যেকোনোটি জুতসই।
প্রিন্টেড কুর্তা
আলাদা করে এ নিয়ে কথা বলার কারণ হচ্ছে, এর মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ পোশাক খুব কমই আছে। এটি মানিয়ে যায় সর্বত্র। অফিস, ক্লাস, উৎসব- সবখানেই! একটু মাথা খাটালে একটা প্রিন্টেড কুর্তা দিয়েই অনেক লুক তৈরি করা যায়। যেমন অফিসে কুর্তার সঙ্গে বটম হিসেবে পরা যেতে পারে স্ট্রেইট কাট প্যান্ট নয়তো একই রঙ বা বিপরীত রঙের লেগিংস। ক্লাসে স্কিনি জিনস বা লেগিংস। আর কোনো উৎসবে পালাজো বা ধুতি সালোয়ার। সঙ্গে এক রঙের ওড়না। চাইলে এর ওপরে চাপিয়ে নেওয়া যেতে পারে কালারফুল বা সলিড কালার শর্ট নয়তো লং জ্যাকেট। সঙ্গে মানানসই গয়না আর মেকআপ। ব্যস! ফেস্টিভ লুক কমপ্লিট। তাই ওয়্যারড্রোবে একটা বা দুইটা প্রিন্টেড কুর্তা থাকা চাই-ই চাই।
এথনিক ক্রপ টপ
খুব আকর্ষণীয়। ট্রেন্ডিও বটে। কালেকশনে যদি একটি ক্রপ টপ থাকে, তাহলে তা নানাভাবে ব্যবহার করা যায়। সিল্ক, বেনারসি, কাতান, ডুপিয়ান, ভেলভেট ইত্যাদির লং স্লিভ, হাফ স্লিভ বা স্লিভলেস সবচেয়ে ভালো মানায় ম্যাক্সি স্কার্টের সঙ্গে। বোল্ড বা কোয়ার্কি লুক চাইলে জোড় হতে পারে জিনস, পালাজো বা ধুতি প্যান্টের সঙ্গে। ইচ্ছে হলে পরা যায় লং বা শর্ট জ্যাকেট হতে পারে। আর হ্যাঁ, ক্রপ টপ কিন্তু শাড়ির ব্লাউজ হিসেবেও দারুণ।
জ্যাকেট
শাড়ি, কুর্তা, টপস-স্কার্ট সব ধরনের পোশাকের সঙ্গেই পরা যায় যেকোনো সাইজের এথনিক জ্যাকেট। তবে বাছাই করতে হবে মাথা খাটিয়ে। শাড়ি, ক্রপ টপ-প্যান্টের সঙ্গে লং বা মিডিয়াম লেন্থের জ্যাকেট ভালো মানায়। লং কুর্তার সঙ্গে শর্ট বা মিডিয়াম লেন্থ আর শর্ট কুর্তায় লং জ্যাকেট বেছে নিতে হয়। যদি ড্রেসের ফ্যাব্রিক ভারী এবং বেশি কারুকার্যময় হয়, তাহলে জ্যাকেটের ফ্যাব্রিক হালকা রাখতে হবে। আর হালকা কাজ এবং ফ্যাব্রিকের ড্রেসের জন্য ভারী উজ্জ্বল কাপড়ের জ্যাকেট। একটা সাধারণ লুককে অনায়াসে আকর্ষণীয় করতে পারে এটি। তাই কালেকশনে একটি এথনিক জ্যাকেট রাখা যেতেই পারে।
সিগারেট প্যান্ট
কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে এটা ভালোই চলছে। বিশেষ করে ক্যাপ্রি স্টাইল সিগারেট প্যান্ট। সিল্ক, চিকেনকারি, লিনেন, সুতি কাপড়ের এই পরিধেয় যেকোনো কুর্তি, টপসের সঙ্গে বেশ মানিয়ে যায়। কাপড় কিনে বানিয়ে নিলে লেস, পুতি এমনকি চিকন চেইন লাগিয়ে অ্যাকসেসরাইজ করা যায়। সাদা, কালো বা মাল্টিকালার সিগারেট প্যান্ট অনেক ডিজাইনের কুর্তা-কামিজের সঙ্গেই মানানসই।
পালাজো
এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কারণ, পালাজো প্যান্ট খুবই ফ্যাশনেবল এবং আরামদায়ক। ক্যাজুয়াল বা ফেস্টিভ লুকের জন্য যেকোনো ডিজাইনের কুর্তা, টপস, জ্যাকেটের সঙ্গে অনায়াসে পরা যাবে।
ধুতি
এথনিক ওয়্যার কালেকশনে একে রাখতেই হবে। ফেস্টিভ বা বোল্ড কোয়ার্কি লুকের জন্য ধুতি প্যান্ট। যেকোনো কাপড়ের ধুতি প্যান্টের সঙ্গে কুর্তা, লং টপ, ক্রপ টপ, শার্ট পরা যেতে পারে। বেশি লং কুর্তার থেকে শর্ট বা সেমি লেন্থ কুর্তার ধুতি প্যান্ট ভালো মানায়।
ম্যাক্সি স্কার্ট
স্টাইলিংয়ের অবাধ সুযোগের জন্য কয়েকটা ম্যাক্সি স্কার্ট যথেষ্ট। কালারফুল ম্যাক্সি স্কার্ট বন্ধুদের আড্ডা থেকে বিয়ের দাওয়াত বা অন্য কোনো উৎসবে অনায়াসে পরা যায়। ক্রপ টপের পাশাপাশি লং বা সেমি লেন্থ কুর্তার সঙ্গেও দারুণ মানায় এটি।
ব্রোকেড প্যান্ট
আমাদের দেশে এখনো খুব একটা দেখা না গেলেও পাশের দেশে বেশ ভালোই নাম কামিয়েছে পোশাকটি। বেনারসি, কাতান, সিল্ক ফ্যাব্রিকের এই প্যান্ট একটি পারফেক্ট এথনিক ওয়্যার। পালাজো, সিগারেট, চুড়িদার কিংবা পাতিয়ালা- যেকোনো কাটের হতে পারে। পরা যেতে পারে এক কালারের কুর্তা, টপস, টি-শার্ট ও শার্টের সঙ্গে।
দোপাট্টা
এটি ছাড়া এথনিক কালেকশন ভাবাই যায় না। সলিড কালার, মাল্টিকালার, প্রিন্টের দোপাট্টা- সব পোশাকের সঙ্গেই মানায়। তাই ওয়্যারড্রোবে যা থাকে তার সঙ্গে মিলিয়ে বেছে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কালেকশনে যদি কয়েকটি মনোক্রম পোশাক থাকে, তাহলে একটি ভালো কাপড়ের মাল্টিকালার দোপাট্টাই যথেষ্ট।
অ্যাকসেসরিজ
গয়না ছাড়া এথনিক স্টাইল প্রায় অসম্পূর্ণ। ভারী বা হালকা অ্যান্টিক কানের দুল (সিলভার বা গোল্ড বেসড) যেকোনো পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। নেকলেসের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। চুড়ির কথা ভুললে চলবে না। সেটা হোক রেশমি, অ্যান্টিক বা পাথরের। মাল্টিকালার বিডেড গয়নাও যুক্ত হতে পারে। আর পায়ের জন্য একটি সুন্দর নাগরা বা জুত্তি।
ফাহমিদা শিকদার
মডেল: হীরা, আঁখি, রূপম, স্পৃহা ও মাইশা
ছবি: ক্যানভাস
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: ইয়েলো, সিকোসো ও আলমিরা