সম্পাদকীয়
নোবেল বিজয়ী কথাসাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে তার ‘দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ উপন্যাসের শেষে যখন বৃদ্ধ জেলে সান্টিয়াগো শ্রান্ত শরীর ও মাছের কঙ্কাল নিয়ে ফিরে আসে, লিখেছিলেন, ‘মানুষ ধ্বংস হতে পারে, কিন্তু পরাজিত হয় না।’ আর আমি বলি, মানুষ অফুরন্ত, কেননা তার সম্ভাবনা অসীম। তার ধ্বংস সম্ভবত নেই। সুতরাং পরাজয়ের প্রশ্নটিও এখানে অসমীচীন। কেবল মানুষের ইতিহাস নয়, তার বর্তমানের দিকে তাকালেও এই উপলব্ধি জাগে। প্যানডেমিকের মধ্যেও দেখি, অর্থনৈতিক বা জীবনধারণের জন্য যা কিছু প্রয়োজন, সবই মিটিয়ে নিচ্ছে মানুষ। চিত্তবিনোদন, এমনকি খেলাধুলাও থেমে নেই। কেননা, প্রয়োজনে সে যেমন বাঁচে, তেমনি আবেগ ও চিত্তের স্ফূর্তিতেও সে বিকাশমান। এই যেমন আমরা ক্যানভাসের বর্তমান সংখ্যাটি পাঠকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি ভালোবাসার ঐশ্বর্য, বসন্তের প্রাণস্পন্দন আর ভাষার গৌরব নিয়ে। সঙ্গে সিনেমার জন্য আলাদা একটি ইস্যুও থাকছে।
ভাষা কি শুধু মানুষের মুখের বুলিতে থাকে? তার দেহভঙ্গিও তো কথা বলে। তেমনি পোশাকের রঙে, প্যাটার্নে আর অলংকরণেও অভিব্যক্ত হয় ব্যক্তির নিজস্বতা, অবস্থান, দৃষ্টিভঙ্গি। মুখের ভাষার মতো, লেখ্য রূপে বর্ণমালা হয়ে পোশাকও একধরনের উচ্চারণ, যা আমরা নানাভাবে করে থাকি। কখনো তা আটপৌরে দেখায়, কখনো বিশেষ। এই নিয়ে আমাদের কভারস্টোরি- পোশাকের ভাষা। আশা করি, এই রচনায় নতুন এক ভাবনার আকাশ খুঁজে পাবেন।
ভাষার এই বৈচিত্র্যের কথা মনে রেখে এ সংখ্যায় রয়েছে প্রাণীর ভাষাসম্পর্কিত একটি রচনা। অক্ষরশোভিত অলংকার নিয়েও থাকছে ছোট লেখা। ফাল্গুন ভাষার মাস। বসন্তের সঙ্গে মানুষের আবেগ, ফ্যাশন ও প্রেমের রয়েছে নিবিড় যোগ। এই ঋতু কীভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবন ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে, সেই অনুভব থেকে এ সংখ্যায় স্থান পেয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন বসন্ত উৎসব, বসন্তের অভিধান, পৃথিবীর সুন্দর কিছু পার্ক, প্রেম নিবেদনের অনুষঙ্গ, লাভস্পট, আমাদের ধ্রুপদি প্রেম ইত্যাদি নিয়ে রচনা। আবার বসন্তের ফুল কৃষ্ণচূড়া, পলাশ ও শিমুলের খাদ্যগুণ, বিলুপ্তপ্রায় পিঠার খোঁজখবর যেমন আছে, অন্যদিকে ফ্যাশন বিভাগে রাখা হয়েছে স্প্রিং এমবেলিশমেন্ট, ফ্যাশনে স্প্রিং ট্রানজিশন ইত্যাদি লেখা। ক্যানভাসের সঙ্গে আলাপনে আমরা পেয়েছি অভিনয়শিল্পী আফজাল হোসেনকে। ভাষা, বসন্ত এবং প্রেমসম্পর্কিত বিষয়-আশয় নিয়েই এবারের সংখ্যা সাজানো হয়েছে।
প্রেমের জয় হোক। বিকশিত হোক পৃথিবীর সব ভাষা।