skip to Main Content

ফিচার I ত্রিপুষ্পগুণ

সব ফুলেরই রয়েছে রোগবালাই সারাইয়ের গুণ। তবে পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া- এই তিন দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি স্বাস্থ্যরক্ষায়ও কার্যকর। লিখেছেন রাইসুল রাণা

ভালোবাসা, আনন্দ, সুখ-শান্তি ও শোক প্রকাশের অনুষঙ্গ হিসেবে ফুলের বিবিধ ব্যবহার রয়েছে। শোভা বাড়ানোর পাশাপাশি এর আছে অনেক ঔষধি গুণ। আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা প্রচলনের আগে বিভিন্ন গাছের ফুল-ফল, পাতা, বাকল, মূল ইত্যাদি রোগ সারাইয়ে ব্যবহার করা হতো। শিমুল, পলাশ ও কৃষ্ণচূড়া ফুলের কিছু ঔষধি গুণ তুলে ধরা হলো।
শিমুল
তুলাগাছ নামেও পরিচিত। এর আদি নিবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্রান্তীয় অঞ্চল। শিমুল গাছ দ্রুত বর্ধনশীল লম্বা জাতের বৃক্ষ। এর উচ্চতা ২০/২৫ মিটার এবং বিস্তৃতি ৮/১৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর ডালপালা লম্বা ও সোজা আকৃতির, পাতা করতলাকার যৌগিক। বসন্তে এর ফুল ফোটে। ফুলের রং রক্তিম বর্ণের। ফল মোচাকৃতির। চৈত্র বা বৈশাখ মাসে এর ফল ফেটে তুলা বের হয়। ভেষজ চিকিৎসায় শিমুল গাছের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গাছটির প্রায় সব অংশই ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। গ্যাস্ট্রিক ও যৌন রোগে রয়েছে এর বহুল ব্যবহার।
ঔষধি গুণ
লিউকোরিয়া হলে: অনেক নারী এই রোগে ভুগে থাকে। পরিশোধিত মাখন ও চিনি দিয়ে শিমুল ফল রান্না করে খেলে এই রোগের উপশম হয়।
ক্ষত সারাতে: এই গাছের বাকল বেটে ক্ষতস্থানে প্রলেপ দিলে দ্রুত সেরে ওঠে।
বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে: শিমুল ফুলের গুঁড়া চিনি ও হালকা উষ্ণ গরম পানি দিয়ে প্রত্যহ খেলে বন্ধ্যাত্ব দূর হয়।
টিউমার সারাতে: টিউমারের ওপর শিমুল পাতা বেটে লাগালে সেরে যায়।
রক্ত আমাশয় রোগে: এই গাছের শুকনা ছালের গুঁড়া ছাগলের দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে রক্ত আমাশয় নিরাময় হয়।
যৌন সক্ষমতা বাড়াতে: শিমুল গাছের মূল চূর্ণ করে নিয়মিত খেলে যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
পলাশ
পলাশ Butea প্রজাতির একটি গাছ। ভারত ও এশিয়ার ক্রান্তীয় অঞ্চল এর আদি নিবাস। তবে বেশ আগে থেকেই উত্তর ভারতের গঙ্গা ও যমুনার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দেখা যায়। এটি মধ্যম আকৃতির পাতাঝরা বৃক্ষ। লম্বায় প্রায় ১৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর পাতা গাঢ় সবুজ, ফুল উজ্জ্বল লাল ও কমলা রঙের মিশ্রণে সৃষ্ট। আগুন রঙা ফুলের জন্য একে বনের অগ্নিশিখা বলা হয়। পলাশ গাছের কাঠ আসবাব এবং পাতা ও ফুল প্রাকৃতিক রং তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এর কাঠ থেকে উন্নত মানের কয়লা উৎপন্ন হয়ে থাকে। এ ছাড়া ঔষধি গাছ হিসেবেও এর ব্যবহার রয়েছে। রইল পলাশের ভেষজ গুণাবলি সম্পর্কে কিছু তথ্য।
ঔষধি গুণ
চোখের ছানি হলে: প্রথমে পলাশ ফুল দিয়ে জুস তৈরি করতে হবে। কিছু বীজ নিয়ে ৪৮ ঘণ্টা এই জুসের মধ্যে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর বীজগুলো অল্প পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করে চোখে কাজলের মতো লাগাতে হবে। এতে চোখের ছানি সারবে।
কিডনির পাথর গলাতে: চিনি দিয়ে পলাশ ফুলের শরবত তৈরি করতে হবে। সেটা দিনে দুবার ১০০ মিলি করে খেলে কিডনির পাথর গলে যায়। চিনি ছাড়া এই শরবত খেলে লিভার দূষণ থেকে মুক্তি মেলে।
বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে: শুকনো পলাশ ফুলের গুঁড়া মিছরি ও দুধের সঙ্গে ৩ গ্রাম পরিমাণ প্রতিদিন সকাল-বিকেল খেলে বন্ধ্যাত্ব দূর হয়।
অতিরিক্ত ঘাম ও পুরাতন জ্বরে: চিনি ও দুধসহযোগে পলাশ ফুল মিশিয়ে দৈনিক ৩/৪ চা-চামচ ১ মাস খেলে ঘাম ও পুরাতন জ্বরের উপশম হয়।
কৃমি হলে: ফিতা বা সুতা কৃমি রোগে এক চামচ পলাশ গাছের বাকলের রসের সঙ্গে আধা কাপ পানিযোগে বা এক গ্রাম বীজের গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে খেলে যেকোনো কৃমির উপদ্রব দূর হয়।
বীর্য গাঢ় করতে: পলাশের ক্বাথ ঘিয়ে ভেজে গুঁড়া করে এক গ্রাম সকাল-বিকেল ৩/৪ সপ্তাহ একনাগাড়ে খেলে বীর্য গাঢ় হয়।
ঘন প্রসাব বন্ধে: অনেকের ঘন ঘন প্রসাব হয়। এ ক্ষেত্রে পলাশ পাতার এক চামচ রস ৭/৮ চামচ পানি মিশিয়ে সকাল-বিকেল খেলে উপকার পাওয়া যায়।
কৃষ্ণচূড়া
এটিকে ময়ূরী ফুল বা স্বর্গের লালপাখিও বলা হয়। রাধাচূড়াও বলে। এর আদি নিবাস সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ অঞ্চলে গাছটির প্রথম খোঁজ মেলে। এটি চিরসবুজ গুল্মজাতীয় বৃক্ষ। বসন্তকালে ফুল ফোটে। দৃষ্টিনন্দন এই ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। শোভা বাড়ানো ছাড়াও এর রয়েছে বিভিন্ন রকম ঔষধি গুণ।
ঔষধি গুণ
খুশকি দূর করতে: গোসলের আগে কৃষ্ণচূড়ার ফুল বেটে মাথায় লাগালে খুশকি দূর হয়।
জ্বর, ব্যথা ও ক্ষত সারাতে: কৃষ্ণচূড়া পাতার জুস জ্বর সারাতে সাহায্য করে। ক্ষতস্থানে এর ফুলের রসের প্রলেপ দিলে দ্রুত ঘা শুকায়। বুক ব্যথা ও শ্বাস রোগে এর বীজ ব্যবহার করা হয়।
কলেরা সারাতে: কৃষ্ণচূড়া গাছের মূল বেটে খেলে কলেরা সেরে যায়।
কাশি হলে: কৃষ্ণচূড়া ফুল ক্বাথ করে খেলে কাশি নিরাময় হয়।
মুখ ও ঠোঁটের ঘা সারাতে: এই ফুলের চা পান করলে মুখ ও ঠোঁটের ঘা সেরে যায়।
গর্ভপাত করতে: দিনে দুবার এই গাছের মূলের ক্বাথ খেলে গর্ভপাত হয়।
সন্ধিবাতে: পানির সঙ্গে কৃষ্ণচূড়া গাছের পাতা গরম করে পান করলে সন্ধিবাত দূর হয়।
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top