ফিচার I মৌলিকতায় নতুনতর
এবার ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্যের স্পন্দন। শুধু তা-ই নয়, প্রাচ্য-প্রতীচ্যের মেলবন্ধনও ঘটছে পোশাকে
স্বকীয়তা এখন ট্রেন্ডি। জাতিগত ফ্যাশন নিয়ে তাই আগ্রহী মানুষ। নিজের দেশ, জাতিসত্তা, ঐতিহ্যকে সামনে আনতে ব্যবহৃত হচ্ছে পোশাক। বৈশ্বিক ফ্যাশনের এই সময়ে ঘটে চলেছে নিজস্বতার প্রকাশ।
এথনিক ফ্যাশন লাইনের প্রতি মানুষের ঝোঁক বাড়ছে। এ বছরের ফ্যাশনে ওয়েস্ট কোট থাকবে তালিকার ওপরের দিকে। বেশ কয়েক বছর ধরেই জমকালো আয়োজনে দেখা যাচ্ছে ওয়েস্ট কোটের ব্যবহার। বরসহ কাছের আত্মীয়দের দেখা গেছে এই আউটফিট বেছে নিতে। এসব অনুষ্ঠানে স্যুটের পাশাপাশি থাকত পাঞ্জাবি। ওয়েস্ট কোট নতুন সংযোজন। মূলত কুর্তা এবং পাঞ্জাবির সঙ্গে এর টুইনিং। কম্বিনেশনে থাকতে পারে ধুতি অথবা চুড়িদার। ধুতি এই অঞ্চলের আদি বস্ত্র। আজও তা মলিন নয়; বরং ফিরে আসছে নতুন রূপে। এটা ফ্যাশনের প্রধান একটি প্রবণতা। ফিরে আসবেই। ওয়েস্ট কোটের সঙ্গে ধুতিতে সম্পূর্ণ স্বস্তি খুঁজে না পেলে চুড়িদার তো রয়েছেই। কুর্তা কিংবা পাঞ্জাবির সঙ্গে চুড়িদার-ওয়েস্ট কোট মানিয়ে যাবে।
ফিউশন এমন একটি ফ্যাশন টার্ম, যা কখনোই পুরোনো হয় না। সব ফ্যাশন-এরাতেই হিট। কিন্তু তা হতে হবে যথোপযুক্ত। এই সময়ের ট্রেন্ডে আছে ইন্দো-ওয়েস্টার্ন ফিউশন। এখানে দেখা যায় ভারতীয় ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির একটি মিশ্রণ। ডিনার ইনভাইটেশনের জন্য ফিউশন লুক বেছে নেওয়া যায়। সবার মাঝে ওহ-সো-কুল মন্তব্য পাওয়া যেতে পারে এমন লুকে। শেরওয়ানির সঙ্গে ধুতির মিঙ্গেলিং এবার থাকবে ট্রেন্ডে। প্রিন্স কোটের সঙ্গেও হতে পারে ফিউশন। এখন সময় সিগনেচার স্টাইলিংয়ের। পছন্দমতো নিজেকে প্রকাশে ফিউশন সব থেকে বেশি সহায়ক হতে পারে।
ট্রেন্ডি প্যাটার্নের পরে এবারের হট কালার কী হবে, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, স্টাইলিশ পোশাক মানেই প্যাটার্ন আর কালারের সার্থক মেলবন্ধন। রঙের জেন্ডার ধারণা তৈরি হয়ে গেছে মানুষের মনে। একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে পরিবর্তন। ডার্ক কালারেই মেইল ফ্যাশন, এ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা শুরু হয়েছে আরও আগে। প্যাস্টেলের জয়জয়কার চলছে এখন। মেইল ওয়্যারে তাই প্যাস্টেল শেড এবার মাতিয়ে রাখবে ফ্যাশনসচেতনদের। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার কারণে আমাদের দেশে কালার হুইল নিয়ে কাজ করার দুর্দান্ত সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে, দেশের ফ্যাশনসচেতনদের মধ্যেও রয়েছে নতুনত্বকে গ্রহণের মানসিকতা। বেশ কয়েক বছর ধরেই গুটিগুটি পায়ে প্যাস্টেল জায়গা করে নিয়েছে প্রাইমারি শেডের পাশে। এবার স্বমহিমায় এটি উজ্জ্বলতা ছড়াবে আরও বেশি।
যোধপুর স্যুট ভারতীয় উপমহাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী পোশাক। যুগের পর যুগ স্বমহিমায় ভাস্বর হয়ে আছে এটি। গলাবন্ধ এই স্যুট এ বছর থাকছে ফ্যাশনসচেতনদের পোশাক-তালিকার ওপরের দিকে। সঙ্গে ফরমাল ট্রাউজারে রাজকীয় সাজ বেছে নেবে ফ্যাশনিস্তারা।
পাজামা আর পাঞ্জাবি- কবিতার মাধুর্য পুরোটাই খুঁজে পাওয়া যায় এই ফ্যাশন কম্বোতে। যেকোনো রঙের এই পোশাক বেছে নেওয়া যায়। সঙ্গে সাদা পাজামা। ব্যস! এতেই হিট! পাঞ্জাবি অথবা কুর্তাও চলতে পারে। আপনজনের ঘরোয়া দাওয়াত কিংবা পার্টি- সবখানেই এমন লুক স্বমহিমায় উজ্জ্বল।
কুর্তা-পাজামার সঙ্গে উড়নি দিতে পারে ফেস্টিভ লুক। সাধারণ পোশাকের সঙ্গে এটি আলাদা স্টেটমেন্ট তৈরি করবে। ধুতি, পাজামা, চুড়িদার- যেকোনোটার সঙ্গেই মানাবে। দাওয়াতে অভিজাত সাজে লাগবে অতুলনীয়।
ফ্যাব্রিক প্যাটার্নে আভিজাত্য সব সময়েই ইন ট্রেন্ড। জ্যাকারড বুননের কুর্তা গর্জাস লুক এনে দিতে পারে। ওভেন ফ্যাব্রিকের এই ধারা স্বমহিমায় সবার থেকে আলাদা। জ্যাকারডের কুর্তা, পাজামা কিংবা চুড়িদার উভয়ের সঙ্গেই মানাবে। জুতার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। তাহলেই তৈরি হবে নজরকাড়া লুক।
উৎসব হোক কিংবা ঘরোয়া দাওয়াত- নিজেকে সাজিয়েই বেরোতে হয় ঘরের বাইরে। হুটহাট আলমিরা থেকে পোশাক নামিয়ে নেওয়া যেতেই পারে, তবে একটু সময় নিয়ে নিজেকে সুন্দর করে সাজানোর আনন্দও কম নয়।
সারাহ্ দীনা
মডেল: রাব্বি
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: হাউজ অব আহমেদ
ছবি: জিয়া উদ্দীন