সেলুলয়েড I ছেলেমানুষী
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা : সাকি ফারজানা
প্রযোজনা : ভ্যান গঘ ক্রিয়েশন
সংগীত : পৃথ্বি রাজ
সিনেমাটোগ্রাফি : কিশোর মহমদ
অভিনয় : অরিত্র, তাপসী, মাহবুবা ছায়া, রোকন হোসেন, বাহাউদ্দিন বিশাল, সাকি ফারজানা, নন্দিতা বৈষ্ণব, সুবর্ণ ধর প্রমুখ।
মুক্তি : ৩০ মে ২০২০
দৈর্ঘ্য : ১৮ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে
চলচ্চিত্রের নিজস্ব একটি ভাষা আছে। আইজেনস্টাইন মনে করতেন, নতুন সিনেমার জন্য প্রয়োজন অভিনব চলচ্চিত্রশৈলী। সাকি ফারজানার স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ছেলেমানুষী সম্পর্কে উপর্যুক্ত কথাটি নির্দ্বিধায় বলা না গেলেও, প্রথম ছবিতেই সেই প্রয়াসের ঝোঁকটা লক্ষ করা যায়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প থেকে রচিত হয়েছে এর চিত্রনাট্য। কিন্তু পরিচালক সাধারণ গল্পটিকেই টুকরো টুকরো দৃশ্যশিল্পের সংযোজনায় যেভাবে রূপায়ণ করেছেন, তাতে সেটি হয়ে উঠেছে চলচ্চিত্রের স্বতন্ত্র শৈলী, অন্তত বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সিনেমা-চর্চার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলা যেতেই পারে।
অন্যদিকে, মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনি সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্পর্কে বলেছেন, লিটারারি বা ফিগারেটিভ ফিল্ম বলে কিছু নেই। আছে একমাত্র সিনেমা। ‘ইন্টারনাল ফর্ম অব ফিল্ম মেকিং’-এর দিকে চলচ্চিত্রকে ঝুঁকতেই হবে। ছেলেমানুষী ছবিটিও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প থেকে বেরিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমাশৈলীর নতুনতর ধারায়।
এই চলচ্চিত্রে প্রতিবেশী হিন্দু-মুসলিম দুই পরিবারের দুজন শিশুর বন্ধুত্বকে ঘিরে কাহিনি পল্লবিত। কীভাবে সমাজের তুচ্ছ ঘটনা ও দৃষ্টিভঙ্গি দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ফাটল ধরাতে পারে, তা এখানে ফুটে উঠেছে। দুই পরিবারের ধর্মীয় সংস্কৃতির টুকরো টুকরো ঘটনার সঙ্গে দৃশ্যায়িত হয়েছে সমাজপ্রবাহের নানান গল্প। শিশু হাবিব আর গীতাকে আশপাশে কোথাও খুঁজে না পেয়ে দুই পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা উদ্বিগ্ন এবং শেষ পর্যন্ত তা সাম্প্রদায়িকতায় রূপ নেয়। চূড়ান্ত নাটকীয় মুহূর্তে শিশু দুটিকে নির্জন ছাদে মাটির খেলনা নিয়ে খেলতে দেখা যায়। এই গল্পের মধ্য দিয়ে দুই সম্প্রদায়ের আন্তসম্পর্ক একটি বিশেষ বিন্দুতে প্রতিভাত হয়েছে।
পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলি, চরিত্রের পরিস্ফুটন এবং পরিস্থিতিকে সিনেমাটোগ্রাফিক করে তোলার কৌশলগুলো বেশ সাবলীল ও সামঞ্জস্যপূর্ণ। কোনো দৃশ্যেই উজ্জ্বল রং দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে না। ফেডআউট কালারের কম্পোজিশন চোখকে আরাম দেয়, যা কাহিনি রূপায়ণে চলচ্চিত্রিক ভাষার স্বতন্ত্র উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত।
প্রায় প্রতিটি চরিত্রই বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে অভিনয়ের সাবলীলতায়। যদিও পিসির চরিত্রে রূপদানকারী নন্দিতা বৈষ্ণবের অভিনয় কোথাও কোথাও দুর্বল এবং হাবিবকে বারবার ডাকার সিক্যুয়েন্স আরোপিত মনে হয়েছে। তথাপি কালার, কস্টিউম, প্রপস, মেকআপ, সংলাপ, সংগীতায়োজন এবং সর্বোপরি দৃশ্যধারণের টেকনিকে চলচ্চিত্রটি গতিশীলতা পেয়েছে।
ছেলেমানুষী সিনেমাটি ইতিমধ্যে চীন, রাশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে প্রদর্শিত হয়েছে। অর্জন করেছে পুরস্কার ও বিশেষ সম্মান। বাংলাদেশে এটি ফিল্ম সেক্টর ও ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি দেওয়া হয়।
প্রিয়ঙ্কর অর্ঘ
কুইজ
১। পিসি-চরিত্রে রূপদান করেছেন কে?
[ক] অরিত্র
[খ] নন্দিতা বৈষ্ণব
[গ] সাকি ফারজানা
[ঘ] ওপরের কেউ নন
২। ছেলেমানুষী গল্পের লেখক কে?
[ক] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
[খ] তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
[গ] হুমায়ূন আহমেদ
[ঘ] মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
৩ ছেলেমানুষী সিনেমার ফরমেট কী?
[ক] স্বল্পদৈর্ঘ্য
[খ] পূর্ণদৈর্ঘ্য
[গ] ষোলো মিলিমিটার
[ঘ] ওপরের কোনোটিই নয়
গত পর্বের বিজয়ী
১। সাগর কান্তি, জয়দেবপুর
২। দোলন, নেত্রকোনা
৩। রাব্বি খান, যশোর