অনুষ্ঠিত হয়ে গেল মুসলিম কর্মজীবী নারীদের নিয়ে ‘ওয়ারদাহ বাংলাদেশ’-এর আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার। ১০ ও ১১ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম কর্মজীবী নারীদের নিয়ে তা আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানের মডেরেট ছিলেন বাংলাদেশের রোখসানা আক্তার রুপি এবং নাহিলা হেদায়েত। মালয়েশিয়া থেকে স্পিকার হিসেবে ছিলেন ফাতিহা জোহান। তা ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে রোশন আইজ্যাকস, যুক্তরাজ্য থেকে সাইদা আহমেদ, সাফিয়া খান, ফাহমিদ আশিক, মার্টা মেরিয়াম রোজসা, নাদিয়া লিওনা, ইউনিস ও হাজরা খান ছিলেন।
দুদিনের এই সংলাপে আরও অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের নুসরত মোহাম্মদ এবং প্যারিসের আইধা মেহনাজ। ওয়েবিনারে তারা জানান, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে ফিট ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে চলাটাই মূল অনুপ্রেরণা, যা তাদের হালাল ও বিনয়ী জীবনধারার বহিঃপ্রকাশ।
অধিবেশনের প্রথম দিনে সত্যিকার অর্থে ইসলাম বোঝা এবং অনুশীলনে নারী ক্ষমতায়নের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। প্যানেলটিতে আলোচনা করা হয় সঠিক ইসলামী জ্ঞান কতটা জরুরী, সেই বিষয়ে। বিশেষ করে মুসলিম নারীদের সঠিক মূল্যায়ন, সম্ভাবনার পরিসীমা, আত্মবিশ্বাস অর্জন এবং বাচ্চাদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্য নারীদের ইতিবাচক রোল মডেল হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে।
আলোচনায় অতিথি নারীরা মত দেন, কোনো নারী যদি প্রতিদিনের গৃহ অর্থনীতি ও গৃহস্থালির কাজ একসঙ্গে পরিচালনা করতে পারেন, তবে একই দক্ষতার প্রতিফলন তার কর্মক্ষেত্রেও ঘটানো সম্ভব। অধিবেশনটিতে নিজস্ব বিকাশের প্রয়োজনীয়তা, সময় পরিকল্পনা, গবেষণা এবং অন্যের কাছ থেকে শেখার ইতিবাচক মানসিকতার বিষয়ে আলোচনা হয়।
মুসলিম কর্মজীবী নারীরা আরও মত দেন- কেবল প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি বা শিক্ষা জীবনে সাফল্যের জন্য যথেষ্ট নয়। অন্যান্য ও পবিত্র জীবনযাত্রা মেনে চলতে গেলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, যেমন ব্যক্তিত্ব, প্রতিভা দক্ষতা ও স্বতন্ত্রতার ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ জরুরী।
দুদিনের আলোচনায় নৈতিক মূল্যবোধের যে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হলো- প্রশিক্ষণ ও প্রেরণার মধ্যে দিয়ে নিজেকে ফিট, আত্মবিশ্বাসী এবং সর্বক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের উপযোগী করে তোলা। কেন নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে, প্রত্যেকের অন্যন্য প্রতিভা ও দক্ষতা, ঈশ্বরের উপাসনা করা এবং এই দর্শনের সঙ্গে তাদের উদ্দেশ্য একত্রিত করাই তাদের মূল লক্ষ্য বলে উল্লেখ করা হয় ওয়েবিনারে।
আলোচনায় অতিথিরা বলেন, আমরা আমাদের দক্ষতা প্রতিভা ও ক্ষমতা লালন করে নিজেদের আয়ত্তে আনা এবং সেগুলোর পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস অর্জন করে কিছু একটা করে দেখাতে পারি। নারী হিসেবে আমাদের জীবনে ভূমিকা অনেক। কন্যা, স্ত্রী, মা, ক্যারিয়ার কিংবা সচেতন নারী- আমরা প্রতিটি চরিত্রের মধ্যেই নিজেকে হারিয়ে ফেলি এবং আমাদের নিজস্বতা ভুলে যাই। সত্যিকার অর্থে নিজেকে এবং নিজস্বতা জানার জন্য নিজের পরিচর্যা অত্যন্ত জরুরী। আমরা নারীরা নিজেদের সমাবেত করে নিজেদের দায়বদ্ধতা বিকাশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহায়তা করে থাকি। জীবন একটি চলমান প্রক্রিয়া, কোনো গন্তব্য নয়। আমরা আমাদের ব্যর্থতা ও ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি। নিজস্ব সাফল্য অর্জনের উদ্দেশ্যে অন্য কারো সাফল্যের সঙ্গে তুলনা করা উচিত নয়। নারী বিকাশ বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্যারিয়ার কিংবা ব্যক্তিজীবন এগিয়ে নেওয়ার জন্য ভারি ভারি ডিগ্রি অর্জনে ব্যর্থ হলে হতাশ হবেন না। স্বশিক্ষা সর্বত্র অর্জন করা সম্ভব।নিজেকে উন্নত করার জন্য সর্ব শক্তিমানের ওপর ভরসা রেখে ধৈর্য ধারণ করুন। আমাদের সকলের উচিত, উপসনার দিকে মননিবেশ করা এবং যথাযথ অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গুরুত্ব দেওয়া। এখানে একটি তাৎপর্যপূর্ণ বার্তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যা হলো- আল্লাহর বিধান ঐশ্বরিক। একজন নারীর সম্পদ শুধু তার। স্বেচ্ছায় এটি প্রদান না করা পর্যন্ত কারো ওপর তার অধিকার নেই। সুতরাং আমরা মুসলিম নারীরা কীভাবে, কার জন্য নিজেকে তৈরি করছি, তা নিয়ে সতর্ক থাকুন।
HalaCosmetics.com এর ইভেন্টটি পরিচালিত হয়ে দারাজ থেকে এবং ডেইলিস্টারের সহযোগিতায়। মিডিয়া পার্টনার ছিল ক্যানভাস ম্যাগাজিন, চ্যানেল-১, ঢাকা এফ.এম 90.4, হালাল ফোকাস এবং আইস টুডে। বাংলাদেশের ‘ওয়ারদাহ কসমেটিকস’- এর অফিশিয়াল বিজনেস পার্টনার সাইমন ইমরান হালদার সকলের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন; ভবিষ্যতে আরও বড় কোনো প্রকল্পের আশ্বাস দিয়ে অধিবেশন সমাপ্ত করেন তিনি।