রসনাবিলাস I দূর মালয়ের স্বাদে
মূলত বার্গার আর কফির চমৎকারিত্ব এখানে। আছে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের নানান মজাদার পদ। ভোজনের পরিবেশও মনোরম। লিখেছেন সামীউর রহমান
ইংরেজি শব্দ জাঙ্ক-এর আভিধানিক অর্থ ফেলনা বা বাতিল। তবে মিরপুর ৬ নম্বরে অবস্থিত জাঙ্ক ক্যাফের খাবার মোটেও ফেলনা নয়, বরং উপাদেয়।
বন্ধুরা মিলে ঘুরতে গিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। পেনাং-এর জাঙ্ক ক্যাফেতে খেতে খেতেই মাথায় আসে ঢাকায় এ রকম কিছু গড়ে তোলার। ব্যাটে-বলে হয়েও গেল। ক্যাফের শেফ আবার বাংলাদেশি, যদিও কর্মসূত্রে মালয়েশিয়াপ্রবাসী, অনেক দিন ধরেই। দেশে এসে তিনিই শিখিয়ে দিলেন জাঙ্ক ক্যাফের উপাদেয় বার্গার বানানোর গোপন সূত্র। ইতালি থেকে এলো কফি মেশিন। কিন্তু তত দিনে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস নামের মহামারি। মানুষ নিজেকে করে ফেলেছে ঘরবন্দি। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মহামারির সময়েই পথচলা শুরু করেছে শাকিল-যোজনদের জাঙ্ক ক্যাফে। এরই মধ্যে মিরপুরের বাসিন্দাদের স্বাদু বার্গার আর মন চাঙা করা কফির চাহিদা পূরণে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ক্যাফেটি।
শুরুর আগে ঢাকার ম্যাডশেফ, টেকআউটসহ অনেক জয়েন্টের বার্গারই চেখে দেখেছেন উদ্যোক্তারা। তারা চাইছিলেন ভিন্ন একটা স্বাদের ছোঁয়া রাখতে নিজেদের এই খাবারে। উপচে পড়া মেয়নেজে মাখামাখি নয়, বরং নিজস্ব সিক্রেট সস আর মাংসের প্যাটিতে স্পেশাল স্পাইসের গোপন সূত্রেই তারা ঢাকার বুকে মালয়েশিয়ার জাঙ্ক ক্যাফের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে ছিলেন আগ্রহী। তাই তাদের ‘ফুল অব জাঙ্ক’ বার্গারের প্যাটিতে খানিকটা মধ্যপ্রাচ্যের শর্মার স্বাদ মেলে। মিহি করা কিমার সঙ্গে শসার পিকেলের যুগলবন্দিকে পরিবেশন করা হয়েছে ছুরির ফলায় গেঁথে। সঙ্গে মুচমুচে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর গার্লিক মেয়ো।
মালয়েশিয়ার জাঙ্ক ক্যাফের অনুমতি নিয়ে তাদের মেনু থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই খাবারের তালিকা সাজিয়েছে ঢাকার ক্যাফেটি। মেনুতে ‘ফুল অব জাঙ্ক’ ছাড়াও আছে শেফ স্পেশাল বার্গার, বিফ চিজ বার্গার, ক্রিসপি চিকেন বার্গারসহ বেশ কিছু বার্গার। দাম ২৩০ থেকে ৩০০ টাকার ভেতরে। সাইডস হিসেবে নেওয়া যেতে পারে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পটেটো ওয়েজেস, অনিয়ন রিংস, বাফেলো উইংস। সব কটির দামই হাতের নাগালে, ১২০ থেকে ১৫০ টাকার ভেতর।
শুরুর দিকে উদ্যোক্তারা রাইস আইটেম রাখতে আগ্রহী ছিলেন না, তবে পরে গ্রাহকের চাহিদায় মেনুতে রাইস আইটেমের সেট মেনুও যোগ করেছে জাঙ্ক ক্যাফে। মালয়ী স্বাদের নাসি গোরেং-এর পাশাপাশি মেক্সিকান, থাই ও ভিয়েতনামি ফ্রায়েড রাইস পাওয়া যাচ্ছে জাঙ্ক ক্যাফেতে। সঙ্গে সেট মেনুতে আছে বিফ বা চিকেনের গ্রেভি আর সটেড ভেজিটেবলস।
ক্যাফেতে কফি থাকবে না, তা কি হয়! এখানে অভিজ্ঞ বারিস্তার হাতে নর্থ এন্ডের কফি বিন হয়ে ওঠে আড্ডার প্রাণ। এসপ্রেসো, আমেরিকানো, মোকা কিংবা লাতে—প্রথাগত সব স্বাদের কফিই পাওয়া যায় জাঙ্ক ক্যাফেতে। তবে তাদের নিজস্ব উদ্ভাবন এসপ্রেসো লেমোনেড।
রেসিপিটা দিয়েছিলেন উদ্যোক্তাদেরই একজন কাছের মানুষ, বার কয়েকের চেষ্টায় বারিস্তাও সফল হয়েছেন কাক্সিক্ষত সেই স্বাদ আনতে। লেবু, সোডা ওয়াটার আর কফির অদ্ভুত এই রসায়ন গরমের এই সময়টায় নিঃসন্দেহে প্রাণ জুড়াবে।
জাঙ্ক ক্যাফে নামের সার্থকতা রক্ষার জন্যই বোধ হয় অন্দরসজ্জায় ব্যবহার করেছে বাতিল হয়ে যাওয়া অনেক কিছুই। দেয়ালঘড়ি, ফিল্ম ক্যামেরা থেকে শুরু করে প্রথম যুগের ম্যাক কম্পিউটার আর আস্ত একটা ভেসপা স্কুটার ঠাঁই পেয়েছে জাঙ্ক ক্যাফের অন্দরমহলে। এলইডি বাতির যুগে সেই পুরোনো হলদে ফিলামেন্ট বাল্বের আলোয় বেশ একটা রেট্রো লুক পেয়েছে ক্যাফেটি, যদিও রসনাবিলাসে তারা কসমোপলিটান।
ডাক্তাররা তাদের উপদেশে যে ‘জাঙ্ক ফুড’ খেতে নিষেধ করেন, এই ক্যাফের মেনুতে সেই সব খাবার অর্থাৎ বার্গার, স্যান্ডউইচ, পাস্তারই ছড়াছড়ি। অবশ্য সেটাই হওয়ার কথা। চিরতার জল, নিমের পাচন আর উচ্ছে সেদ্ধ খেতে খেতে আড্ডা দেওয়ার কথা তো কখনো শোনা যায়নি!
ছবি: শাহরিয়ার আহমেদ সোহান