সম্পাদকীয়
নতুন বছর এসেই গেল। কতো ঘটনা পেছনে ফেলে এসেছি। সব আজ স্মৃতি কিংবা অভিজ্ঞতা। এগুলো জীবন সম্পর্কে আমাদের সচেতন করে, পথ চলতে সাহায্য করে। বিগত বছরে আমরা যে ভুলগুলো করেছি, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি নতুন বছরে নিশ্চয়ই হবে না; যে পথে আমাদের অর্জন কিংবা সফলতা, সে পথেই আমরা চলতে চাইবো অবশ্যই।
আপনাদের প্রিয় ম্যাগাজিন এবার নতুন আঙ্গিকে সাজিয়েছি। এই সংখ্যার রঙেই বুঝতে পারবেন, আশা করি। এ বছর ক্যানভাসের বিভাগগুলো উপস্থাপন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক কালার ট্রেন্ড মেনে, কেবল মার্চ, এপ্রিল আর ডিসেম্বর বাদে। এই তিনটি মাসে আমরা নিজেদের রঙে ফিরে যাবো। কিন্তু বিষয়বস্তুতে নতুনত্ব অব্যাহত থাকবে।
ফ্যাশনে কেবল ঢাকার ডিজাইনাররাই নন, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য বিভাগীয় শহরের ডিজাইনাররাও সক্রিয় থেকে এই খাতে শক্তি সঞ্চার করছেন, একে এগিয়ে নিচ্ছেন। তাঁদের নৈপুণ্য ও সৃষ্টিশীলতা উপেক্ষণীয় নয় মোটেই, বরং বিশেষভাবে প্রশংসার দাবিদার। কর্মসূত্রে চট্টগ্রামের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ এবং সেখানকার ডিজাইনারদের কাজ আমি নিবিড়ভাবে লক্ষ করেছি। আমার মনে হয়েছে, তাঁদের কালেকশনগুলো ক্যানভাসের পাঠকদের সামনে তুলে ধরা দরকার, দেশীয় ফ্যাশনশিল্পের বিকাশের স্বার্থেই। তা-ই করেছি এ সংখ্যায়। হাজির করেছি চট্টগ্রামের ৬ জন ডিজাইনারের ২৩টি নতুন পোশাক নিয়ে একটি বুকলেট। মূল ম্যাগাজিনের সঙ্গে। উল্লেখ্য, এই ডিজাইনারদের প্রত্যেকেই নারী। নিজে নারী বলে, উইমেন এম্পাওয়ারমেন্টের প্রতি দুর্বলতা থেকে হয়তো এমনটি ঘটেছে। তবে বলে রাখি, ডিজাইনার হিসেবে এই ৬ জনের যোগ্যতা প্রশ্নাতীত। তাঁদের প্রোফাইল দেখে নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পারবেন।
আশা ও কল্যাণবোধ ছাড়া বেঁচে থাকা কঠিন। হতাশা ও নেতিবাচক আচ্ছন্নতা মানুষকে স্থবির করে দেয়। আমরা চাই, বিফলতায় মুহ্যমান না হয়ে জীবনের পথে এগিয়ে থাকুক সবাই। নতুন উদ্যমে শুরু হোক সব। এই প্রত্যয় থেকে এবার আমাদের কভারস্টোরি ‘ইতিবাচকতার জয়’। বছরের শুরুতে রচনাটি নতুন করে আপনাদের উজ্জীবিত করবে, আশা করি।
আশা নয় কেন? বাংলাদেশের কিশোরীরা সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারতকে হারিয়ে। জেতার পর, লাল-সবুজ পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ওরা যখন মাঠ ঘুরে দর্শকদের অভিনন্দনের জবাব দিচ্ছিল, আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম আমি। ভাবছিলাম, এই মেয়েদের সবাই সচ্ছল নয়, অনেকেই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কিন্তু তারা জয় করেছে সব সীমাবদ্ধতা। দেশের জন্য, আমাদের জন্য। নিজেদের যোগ্যতা, শ্রম আর প্রতিভা দিয়ে। সরকারের কাছে অনুরোধ, কেবল এদের নয়, এদের পরিবারের দিকেও নজর দিন।
বছর শেষে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় মেয়র আনিসুল হককে। একটু আগে যে আশার কথা বলছিলাম, অকালপ্রয়াত এই ব্যক্তিও সেই প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিলেন ঢাকাবাসীর জন্য। স্বপ্ন দিয়ে, কাজ দিয়ে, প্রেরণা দিয়ে তিনি আমাদের এগিয়ে নিচ্ছিলেন। তাঁকে হারানোর বেদনা ভুলে থাকার নয়। আমাদের জীবনে আদর্শ মানুষ হিসেবে তিনি উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন।
স্বাগত ২০১৮। ভালো থাকুন সবাই, সব সময়।