skip to Main Content

কভারস্টোরি I টিকটকারস ট্রেন্ড

ফ্যাশনের জগৎটাই বদলে দিয়েছে টিকটক। শুধু তা-ই নয়, বৈচিত্র্যপূর্ণ আর সময়োপযোগী করেছে। পুরোনোকে নতুন মাত্রায় হাজির করে, অপ্রচল রঙে রাঙিয়ে। ডিজাইনারদের সৃষ্টিশীলতায়। সেলিব্রিটিরাও এতে বেশ মজেছেন। ফলে স্টাইলিংয়ে টিকটকাররা এখন অপ্রতিরোধ্য। আদ্যোপান্ত জানিয়েছেন ফাহমিদা শিকদার

টিকটকের ভিডিওগুলো এখন বেশ জনপ্রিয়। অতিমারির কারণে সবাই যখন ঘরবন্দি, তখন অ্যাপটি অনেকের আত্মপ্রকাশের আউটলেট হয়ে উঠেছে। এটি ফ্যাশন দুনিয়ায় এনেছে নাটকীয় পরিবর্তন। এই অ্যাপ ফ্যাশন শিল্পকে সম্পূর্ণ নতুন এবং আকর্ষণীয়ভাবে প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, গ্লোবাল ট্রেন্ড সেটেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ফ্যাশন উইকে টিকটক
২০১৯ সাল থেকেই টিকটক তারকারা ফ্যাশন জগতে প্রবেশ শুরু করেন, সে বছরের ডিসেম্বরে নয়িন ইউবাংকস ফেস অব সেলিন নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্যাশন উইকে শারলি ডি’আমেলিও প্রাদার সামনের সারিতে বসার আমন্ত্রণ পান। টিকটকেও তার অনুসারীর সংখ্যা কম করে হলেও ১০৩ মিলিয়ন। এই মুহূর্ত স্মরণ করিয়ে দেয় ২০০৯ সালের কথা, যখন ব্লগার এবং ইউটিউবারদের ফ্যাশন উইকে অভিষেক হয়। এদিকে প্রাদা, লুই ভিতোঁ, সেন্ট লরেন্টের মতো নামকরা ব্র্যান্ডগুলো ফ্যাশন উইক এবং রিসোর্ট শো টিকটক অ্যাপে লাইভ স্ট্রিমিং করা শুরু করেছে। টিকটক কর্তৃপক্ষ বলছে, সেপ্টেম্বরে এগুলোর ভিউ হয়েছে তিন মিলিয়নের বেশি।
মডেল সন্ধানালয়
আইএমজি মডেলস। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মডেলিং এজেন্সি। এই অ্যাপ নতুন মুখের সন্ধান বাড়িয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে উইজডম কায়ে এবং কেনেডি খারডিন নামের টিকটক স্টার এই মডেলিং এজেন্সিতে নাম লিখিয়েছেন। আইজিএমের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেনি রোজ বলেন, ‘নেক্সট জেনারেশন আইএমজি স্টার প্রতিযোগিতার জন্য টিকটক দুর্দান্ত প্ল্যাটফর্ম। এখানের বেশির ভাগ কনটেন্ট আনএডিটেড এবং আনফিল্টার থাকে। এর ভিডিও-বেসড ফরম্যাট থেকে কারও ব্যক্তিত্ব, তারা অন্যের সঙ্গে কীভাবে ইন্টার‌্যাক্ট করে, তাদের আগ্রহের বিষয় সম্পর্কে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে অনেক কিছুই জানা যায়।’
জেনি রোজ আরও বলেন, ‘টিকটকের জন্য মডেলদের আগের তুলনায় আরও সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। এই অ্যাপের মাধ্যমে ভ্রমণ বা পোর্টফোলিও বা টেস্ট শুটে টাকা খরচ করা ছাড়াই নতুন মডেলদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি। টিকটকের সাহায্যে আমরা নিজের ঘরে বসে স্বচ্ছন্দে বিশ্বের প্রতিটি কোণে সন্ধানই শুধু করতে পারছি না, নতুন এবং আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে অনেক প্রতিভার দেখা পাচ্ছি।’
ডিজাইনারদের আত্মপ্রকাশের জায়গা
ফ্যাশন ডিজাইনাররা তাদের লেটেস্ট কালেকশন তৈরিতে ব্যস্ত থাকতে পারেন, কিন্তু তারা সেই প্রক্রিয়াটি টিকটকে শেয়ার করার জন্য আরও বেশি সময় খুঁজে নিচ্ছেন। টিকটকের ক্রিয়েটর কমিউনিটির ডিরেক্টর কুডজি চিকুম্বু বলেন, ‘ফ্যাশন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই মাধ্যমে নিজেদের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করছেন।’ সাইমন পোর্টে জ্যাকেমাস, বালমেইনের অলিভিয়ের রুস্টিংয়ের মতো ডিজাইনাররা টিকটকে আছেন। চিকুম্বু বলেন, ‘রুস্টিং নিজের পোশাক-আশাক দেখানোর পাশাপাশি নতুন স্কেচ, টিমের সঙ্গে মিলে নতুন কালেকশন তৈরি, ঘরে বসে করা তার কাজকর্ম—সবকিছুই শেয়ার করেন। এদিকে জ্যাকেমাস এই অ্যাপ সৃজনশীলভাবে ব্যবহার করে ড্রিমি, বিচি পোস্টগুলো তৈরি করেন, যা তার ব্র্যান্ডের নান্দনিকতার সঙ্গে খাপ খেয়ে যায়।
সবচেয়ে স্মার্ট ব্র্যান্ডগুলো টিকটককে আপন করে নিয়েছে। ফেন্ডি, নাইকি, গুচি, বুহু, ক্রকস, সেলিন, এসোস, প্রিটিলিটিলথিং—এই ব্র্যান্ডগুলোর রয়েছে অফিশিয়াল টিকটক অ্যাকাউন্ট। প্রায়শই এ প্রতিষ্ঠানগুলো এই অ্যাপে নানা রকম ক্যাম্পেইন করে থাকে। যেমন কিছুদিন আগে গুচি করেছিল #গুচিমডেলচ্যালেঞ্জ, যা পেয়েছিল ২১০ মিলিয়নের মতো ভিউ। এদিকে জেডব্লিউ আন্ডারসন হ্যারি স্টাইলের পরা তাদের ব্র্যান্ডের কালার ব্লকিং প্যাচওয়ার্ক কার্ডিগান কীভাবে ক্রোশেটিং করা যায়, তার একটা টিউটোরিয়াল পোস্ট করেছিল। পোস্টটি খুব অল্প সময়ে ভাইরাল হয়েছিল।
সাসটেইনেবল ফ্যাশন ব্র্যান্ডের জন্মস্থান
টিকটক শুধু কনটেন্ট বানানোর জায়গা নয়, এটি এখন নতুন অনেক ব্যবসার জন্মস্থানও বটে। বিশেষ করে, সাসটেইনেবল ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো টিকটকে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আপসাইক্লিং এবং ভিনটেজ #হ্যাশট্যাগের মিলিত ভিউ আট মিলিয়নের মতো। এই #হ্যাশট্যাগগুলো স্ক্রল করলে বোঝা যায় যে, জেন জেড থ্রিফটিং বা সাসটেইনেবল পোশাকের প্রতি কতটা আচ্ছন্ন।
টিকটকের একটি বৃহত্তম পরিবেশবান্ধব ব্র্যান্ড হলো @ভিন্টেজস্টোকরিজার্ভ। লেবেলটি ভিন্টেজ পোশাকগুলোকে ডাইয়িং, স্পøাইসিং বা মেন্ডিংয়ের মাধ্যমে নতুন জীবন দেয়। ফ্লোরিডার ল্যান্ড ও’লেকসে বসবাসরত দুই বন্ধু ২১ বছর বয়সী টমি গ্রোয়েনেনডাইক এবং ২২ বছর বয়সী জর্ডান ডেরি দ্বারা পরিচালিত ব্র্যান্ডটির ফলোয়ার ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন। উইয়ার্থ লন্ডন- আরেকটি ব্র্যান্ড। যেটি পরিবেশবান্ধব উপাদান দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে। এদের অনুসারী প্রায় সাতচল্লিশ হাজার। এ ছাড়া কীভাবে সাসটেইনেবল জীবন যাপন করা যায়, এ-বিষয়ক সহজ টিপস দিয়ে এই হাউজটি টিকটকে ভিডিও পোস্ট করে।
ট্রেন্ডসেটার
এ বছর হঠাৎ করে ওয়াইটুকে ফ্যাশনের প্রত্যাবর্তন সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে। এ জন্য টিকটককে ধন্যবাদ দেওয়া যেতে পারে। এই অ্যাপ আর্লি অট ফ্যাশনের প্রতি ভীষণ রকমের অবসেসড। টিকটকের মতে, #ওয়াইটুকেফ্যাশন হ্যাশট্যাগটি ৫৮ মিলিয়ন হিট করেছে। এর পাশাপাশি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে সেই সময়ের বিখ্যাত কিছু ব্র্যান্ড। এর ভেতর জুসি কতুর, ভন ডাচ অন্যতম। প্রচুর চাহিদার জন্য তারা তাদের অনেক প্রডাক্ট রি-লঞ্চ করছে। অবশ্য, শীর্ষস্থানীয় মডেল এবং রানওয়ে ওয়াইটুকের ফ্যাশনকে বিশেষভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করলেও যখন কোনো একটা লুক টিকটকে ভাইরাল হয়েছে, তখনই সেটা নিয়ে মেতে উঠেছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। স্ট্রবেরি ড্রেসের কথাই ধরা যাক। হঠাৎ করে সবার এমন একটা পোশাক দরকার হয়ে পড়ল। টিকটক ব্যবহারকারীরা এর জনপ্রিয়তায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। এরপর আরও অনেক ট্রেন্ড এসেছে এই অ্যাপের মাধ্যমে এবং ভবিষ্যতেও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে।
টিকটক ফ্যাশন ২০২১
এ বছর টিকটক থেকে ভাইরাল হয়েছে নব্বই এবং ওয়াইটুকে-এর অনেক ফ্যাশন ধারা। দেখে নেওয়া যাক সেগুলো কী—
ক্রোশে/ক্রুশ কাঁটা
নিঃসন্দেহে এ বছরের সবচেয়ে বড় ট্রেন্ড। শুধু টিকটক নয়, ইনস্টাগ্রামজুড়েও ক্রুশ কাঁটা পোশাকের ছড়াছড়ি। ষাট ও সত্তরের দশকে হিপি এবং বোহিমিয়ান সংস্কৃতির উত্থানের সময় ফ্যাশনে প্রথম এর আবির্ভাব ঘটে। সে সময় পোশাক থেকে শুরু করে হোম ডেকরের আইটেম—সবকিছুতে ক্রুশ কাঁটার ব্যবহার দেখা গেছে। কয়েক বছর ধরে ফ্যাশনে সত্তরের অনেক ট্রেন্ড ফিরে আসছে। সেই সঙ্গে ফিরেছে ক্রুশ কাঁটা পোশাক। ডিওর, ভ্যালেন্টিনো, আলেক্সান্ডার ম্যাককুইন, অস্কার ডে লা রেন্টার মতো বড় লেবেলগুলো এর পুনরুত্থানে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এগুলোর পথ অনুসরণ করেছে অনেক ছোট রেডি টু ওয়্যার ব্র্যান্ড। গত বছরের লকডাউনের সময়, মানুষ ঘরে বসে নিটিং এবং ক্রোশেটিং করে সময় কাটিয়েছে। আর সবাই তাদের বানানো ক্রাফট আইটেমগুলো শোকেস করেছে টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে। ক্রুশ কাঁটা পোশাক একই সঙ্গে নান্দনিক এবং অনেক আরামদায়ক। শর্ট ড্রেস, মিডি ড্রেস, স্কার্ট, ট্রাউজার, কার্ডি টপস, হল্টার টপস, ওয়েস্টকোট, বিকিনি, শর্ট সেট ছাড়াও এখন এর নানা রকমের অ্যাকসেসরিজ পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে আছে ব্যাগ, ওভার দ্য টপ বিচ হ্যাট, স্ক্রাঞ্চি ইত্যাদি।
আইল্যান্ড প্রিন্টস
‘দ্য কোকোনাট গার্ল অ্যাসথেটিক’ গ্রীষ্মের প্রধান একটি ট্রেন্ড, যার সূত্রপাত হয়েছে টিকটকে। এই কনসেপ্টের ভিত্তি রেট্রো স্টাইল বিচ ভাইভ। কোকোনাট গার্ল অ্যাসথেটিক লুকের হলমার্ক হিসেবে আছে আইল্যান্ড প্রিন্টস যেমন, হাওয়াইয়ান-প্রাণিত ফ্লোরাল হিবিস্কাস প্রিন্ট, ট্রপিক্যাল প্রিন্ট। অন্যান্য সময় গরমে প্রিন্টের পোশাক মোটামুটি ট্রেন্ডে থাকলেও এ বছর টিকটকাররা একে উচ্চতার অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে।
ম্যাচিং শর্টস এবং সোয়েট সেটস
সিক্সটিস, সেভেন্টিস, নাইন্টিস এবং ওয়াইটুকে—এসব দশকে ফ্যাশনে ছিল ম্যাচিং আউটফিট। তবে এগুলোর লুক সময়ের সঙ্গে মোড় নেয়। যেমন সত্তরে প্রিন্ট টপ আর ম্যাচিং বটম, নব্বইয়ের ম্যাচিং টিউনিকস এবং স্লিপ স্কার্টস। ২০২১-এ ম্যাচিং শর্টস এবং সোয়েট সেট। গত বছরের লকডাউনের সময় জনপ্রিয় হয়েছে কোম্ফি সোয়েট স্যুট। ট্রেন্ডে এখনো আছে এটি। আর এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সোয়েট স্যুটের চেয়েও আরামদায়ক ম্যাচিং শর্টস সেটস। টু পিস সেটে আছে লিনেন ও পপলিনের মতো হালকা ফ্যাব্রিকের বাটন ডাউন শার্ট এবং বক্সার প্যান্ট। সবার আগে এই ট্রেন্ডটি ভাইরাল হয়েছে টিকটকে। নানা রকম প্রিন্ট বা মনোক্রোমাটিক কালারের শর্টস সেট পাওয়া যাচ্ছে। শার্টের নিচে ব্রালেট, ক্রপ টপ পেয়ারিং করে পরা যায়; ঘরে-বাইরে—সবখানেই।
হল্টার টপ
টাইম মেশিন চেপে নব্বই দশকের শেষ আর আর্লি অটস (২০০০-২০০৯) থেকে ট্রেন্ডে ফিরে এসেছে হল্টার টপ। আর একে সবখানে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে টিকটক। এ সময়ে বেশ কয়েক ধরনের হল্টার টপ দেখা যাচ্ছে। যেমন টুইস্টেড বা ক্রিসক্রস, ফ্ল্যাটারিং কাট, লং বা ক্রপ। এক হল্টার টপ দিয়ে মিনিমাল এবং ম্যাক্সিমাল—দু ধরনের স্টাইলিং করা যায়। টিকটকাররা এর সঙ্গে পেয়ার করে পরছে স্ট্রেইট জিনস, মিনি বা মিডি স্কার্ট, ওয়াইড লেগ প্যান্ট।
ডিটাচড স্লিভ
প্রতিবছর ফ্যাশনে নতুন নতুন স্লিভ ট্রেন্ড আসে। এ বছর সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ডিটাচড স্লিভ। এ ট্রেন্ড হুট করে উদয় হয়নি। শ্যানেলের স্প্রিং/সামার ২১ এবং মাগলারের ফল/উইন্টার ২১ কালেকশনে এর উপস্থিতি দেখা গেছে। পাফি এবং বেলুন স্লিভের এ যুগে ডিটাচড স্লিভ খুব একটা পাত্তা পাবে কি না, এ নিয়ে একটা সন্দেহ ছিল। কিন্তু টিকটকারদের জন্যই এ স্লিভের পোশাকগুলো এখন ট্রেন্ডের শীর্ষে অবস্থান করছে। এমনকি গ্লাভস স্টাইল ডিটাচড স্লিভ আলাদা করে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। যে যার পছন্দমতো স্লিভ মিক্স ম্যাচ করে বিভিন্ন পোশাকের সঙ্গে পরতে পারে।
ট্র্যাকার হ্যাট
টিকটকারদের পাল্লায় পড়ে ওয়াইটুকে-এর বিখ্যাত ট্র্যাকার হ্যাট যে এভাবে ফিরে আসবে, তা অনেকে ভাবতেও পারেনি। বাকেট হ্যাটের বদলে এখন টিকটক ফিডজুড়ে শুধুই ট্র্যাকার হ্যাটের বিচরণ। আর্লি অটের সময়ে সবার পছন্দের ছিল ভন ডাচ ট্র্যাকার হ্যাট। এখন জেনারেশন জেড টিকটকারদের হাত ধরে ভিন্টেজ ক্যাপের পুনরুত্থান হয়েছে। আর এর সঙ্গে ফ্যাশন সার্কেলে কাল্ট আইটেম হয়েছে নাইজেরিয়ান তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনার মাওলোলা ওগুনলেসি লোগোর ট্র্যাকার হ্যাট।
ভার্সিটি জ্যাকেট
টিকটকারদের বদৌলতে এ গরমেও ট্রেন্ডি জেন্ডার নিউট্রাল ভার্সিটি জ্যাকেট। একে লেটারম্যান জ্যাকেট, বেসবল বা কলেজ জ্যাকেটও বলা হয়। মিলেনিয়াল থেকে শুরু করে জেন জেড—সবার ওয়্যারড্রোব ঘাঁটলে অন্তত একটা হলেও নব্বইয়ের এই নস্টালজিক পিস পাওয়া যাবেই। টাইমলেস এবং বৈচিত্র্যময় ভার্সিটি জ্যাকেট যেকোনো পোশাকের ওপর লেয়ারিং করে পরা যায়।
গিংহাম ড্রেস
আইল্যান্ড প্রিন্টের পর টিকটক থেকে হিট হয়েছে গিংহাম প্রিন্ট। তবে গিংহাম নিছক প্রিন্ট নয়, এটি খুব হালকা সুতি চেক ফ্যাব্রিক। এ কাপড় দেখলে মনে হবে সাদা ক্যানভাসের ওপর একই রঙের হালকা ও গাঢ় শেড দিয়ে ছক কাঁটা হয়েছে। গরমের সময় এই ফ্যাব্রিক খুবই আরামদায়ক। টিকটকারদের পাশাপাশি ভিক্টোরিয়া বেকহাম, রিজ উইদারস্পুন, আমান্ডা হোল্ডেনের মতো সেলিব্রিটিদের গিংহাম ফ্রকে ক্যামেরাবন্দি হতে দেখা গেছে। যত দিন গরম থাকবে, তত দিন এ ক্ল্যাসিক প্রিন্ট ফ্যাব্রিকের ড্রেস ট্র্রেন্ড মাতিয়ে বেড়াবে—এমনটাই ধারণা স্টাইলিশদের।
স্ট্রেইট অ্যাংকেল জিনস
ভিন্টেজ-প্রাণিত স্ট্রেইট অ্যাংকেল জিনস ট্রেন্ডটি টিকটক থেকে এসেছে, ব্যাপারটা এমন নয়। তবে টিকটকারদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে আছে এটি। এই নন-স্কিনি জিনস অনেক বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ। এ সময়ে হাই ওয়েস্টেড লো কাট স্ট্রেইট অ্যাংকেল জিনস সবচেয়ে বেশি চলছে। এ ধরনের প্যান্টের সঙ্গে ক্রপ টপ, টাক ইন প্লেইন টি আর শার্ট বেশি মানায়।
ক্রসব্যান্ড স্লাইড স্যান্ডেল
গরমে এর চেয়ে আরামদায়ক আর কিছু হতে পারে না। টিকটকারদের পায়ে পায়ে পুরো নিউজ ফিড ঘুরে বেড়াচ্ছে এ স্যান্ডেল। তবে এ নিউ ডে ডেইজি ব্র্যান্ডের ক্রসব্যান্ড স্লাইড স্যান্ডেল সবচেয়ে বেশি পরতে দেখা যাচ্ছে। টিকটকারদের মতে, এই স্যান্ডেল আর নরম তুলার বালিশের মধ্যে পার্থক্য খুব সামান্য। যেকোনো পোশাকের সঙ্গেই এটি খুব দারুণভাবে মানিয়ে যায়।
ওভারসাইজ সোয়েটশার্ট
ফ্যাশনে ‘ওভারসাইজ ইজ অলওয়েজ আ গুড চয়েজ’। এখন সবখানেই ওভারসাইজ পোশাকের জয়জয়কার। আর টিকটক ফিডে শুধু গুড ওল্ড ওভারসাইজড সোয়েটশার্ট। সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ফ্লুরোসেন্ট নিয়ন রঙের সোয়েটশার্ট। আর এর সঙ্গে জোড় বেঁধেছে একই রং বা বিপরীত রঙের বাইকার শর্টস।
গ্লিটজি চেইন
এ বছরের অ্যাকসেসরিজ ট্রেন্ডে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে কালারফুল চার্ম জুয়েলারি। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে গ্লিটজি চেইন নেকলেস। ট্রেন্ডে এসেছে টিকটকে ভাইরাল হয়ে। মিনিমাল বা ম্যাক্সিমাল—সব সংস্করণে এই চেইন নেকলেস দিয়ে স্টাইল করা যায়। তবে টিকটকে পারসোনালাইজড নেইম নেকলেসও দেখা যাচ্ছে। আর এ ধরনের গোল্ডেন গ্লিটজি চেইন মানিয়ে যায় সব রঙের সব পোশাকের সঙ্গে।
নাইন্টিস সানগ্লাস
টিকটক ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সারদের অবসেশনে পরিণত হয়েছে নাইন্টিস ফাংকি সানগ্লাস। যেকোনো এক রকমের নয়। বলতে গেলে নব্বই দশকের বিখ্যাত সব সানগ্লাসই এখন ট্রেন্ড দখল করেছে। এগুলোর মধ্যে আছে র‌্যাকট্যাংগুলার, ওভাল, ফ্রেমলেস, টিন্টেড, ক্যাট-আই। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, স্লিম এবং স্লিক।
স্কার্ফ বা ব্যান্ডানা টপ
গত বছরের মতো এ বছরও টিকটক ভাইরাল ট্রেন্ড স্কার্ফ বা ব্যান্ডানা টপ। এটিও এসেছে ওয়াইটুকে থেকে। আর্লি অটে বিয়ন্সে, ব্রিটনি স্পিয়ারস, ক্রিস্টিনা অ্যাগেইলেরার মতো পপস্টারদের ব্যান্ডানা টপে দেখা যেত। গত বছর লকডাউনের সময় ঘরে থাকা স্কার্ফ দিয়ে কীভাবে কতভাবে টপ বানানো যায়, তার অনেক ভিডিওতে ভরে যায় টিকটক ফিড। এভাবেই জেন জেডরা ট্রেন্ডে ফিরিয়ে আনে ব্যান্ডানা টপ। একটা স্কার্ফ অন্তত পনেরোটা পদ্ধতিতে টপ বানিয়ে পরা যায়। এগুলোর ভেতর বেশি চলছে ক্ল্যাসিক ব্যাক টাই টপ, ফ্রন্ট টাই টপ, ব্যাকলেস স্ট্রিং টপ, ব্রালেট স্কার্ফ টপ।
এয়ারফোর্স ওয়ান স্নিকার
প্রায় চল্লিশ বছর আগে বিখ্যাত স্পোর্টস ব্র্যান্ড নাইকি বাজারে নিয়ে এসেছিল এয়ারফোর্স ওয়ান স্নিকার। প্রথম দিকে বাস্কেটবল খেলোয়াড়েরা এটি বেশি ব্যবহার করত। কিন্তু এর বৈচিত্র্যময় ক্যানভাসের জন্য খুব তাড়াতাড়ি এটি লাইফস্টাইল সিলুয়েটে পরিণত হয়। আর ২০০১ সালে নাইকি প্রথম মেয়েদের জন্য এয়ারফোর্স ওয়ান স্নিকার লঞ্চ করে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত এই স্নিকারকে ধরা হয় সর্বকালের সেরা জুতা। অনেক ধরনের এয়ারফোর্স ওয়ান স্নিকার আছে। এ বছর টিকটকের অন্যতম জনপ্রিয় ভাইরাল ট্রেন্ড শ্যাডো স্নিকার। জিনস-ভার্সিটি জ্যাকেট বা সামার ড্রেস—যেকোনো পোশাকের সঙ্গে এটি মানিয়ে যায়।
শ্যাকেট
শার্ট এবং জ্যাকেটের হাইব্রিড শ্যাকেট। জ্যাকেটের চেয়ে হালকা আর শার্টের চেয়ে একটু পুরো শ্যাকেট গরমের জন্য বেশ আরামদায়ক। ক্রপ টপ, টি-শার্ট, শর্ট ড্রেসের ওপর লেয়ার করে পরা যায়। এখন অনেক রকমের শ্যাকেট বেরিয়েছে। তবে টিকটকের জন্য এখন বেশি চলছে ব্রাশড ফ্লানেল শার্ট জ্যাকেট। এরপরই টিকটকার স্টাইলিশদের পছন্দের তালিকায় স্থান পেয়েছে পিস্টোলা কামিলো ইউটিলিটি শ্যাকেট আর করড্রয় ফ্যাব্রিক শ্যাকেট।

মডেল: অনামিকা ঐশী
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: আইকনিক
ছবি: জিয়া উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top