skip to Main Content

ফিচার I পাতিচখা

চা-পাতা খেয়েছেন, এমন ব্যক্তি খুব কমই মেলে। আমরা যা খাই তা প্রক্রিয়াজাত। দুটি পাতা একটি কুঁড়ি প্ল্যাক করে শুকিয়ে রোলিং, অক্সিডেশন, শিফটিং ইত্যাদি প্রক্রিয়া শেষ করে আমাদের কাছে যে গুঁড়া এসে পৌঁছায়, সেটাই গরম পানিতে জ্বাল দিয়ে পান করি। তবে চা-গাছের টাটকা কাঁচা পাতা ছিঁড়ে সেটিও সরাসরি খাওয়া যায়। এমনকি তরকারিও হয়। এটি নতুন কিছু নয়। ওলন্দাজ পর্যটক হিউগেন ১৫৯৮ সালে আসাম ভ্রমণ করেন। তার লিখিত সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা থেকে জানা যায়, আসামের আদিবাসীরা একধরনের বুনো চা-গাছের পাতা রান্না করে খায়। সেটির পূর্ণাঙ্গ রেসিপি না মিললেও জানা গেছে, সেই পদে রসুন ও পেঁয়াজের ব্যবহার ছিল। রান্না হতো তেলযোগে।
বাংলাদেশেও চায়ের পাতা খাওয়া হয়। তবে সেটা শখ করে নয়। ঠেকে, ক্ষুধার তাড়নায়, বিশেষ করে চা-বাগানের শ্রমিকেরা এটি খেয়ে থাকে। কর্মীদের বিশ্রামের জন্য থাকে গুমটিঘর। কাজের গতি আনতে চাই পেটপূর্তি। তবে খাওয়া শেষ করতে হবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই। তাই সেই গুমটিঘরে অল্প সময়ের মধ্যেই কর্মীরা চা-পাতা দিয়ে তৈরি করে সহজ এক পদ। নাম ‘পাতিচখা’।
চা-পাতা কচলে তৈরি হয় এটি। মুখরোচক করতে এর সঙ্গে মেশানো হয় অন্যান্য উপাদান। তবে খুব সহজ নয় এটি তৈরি করা। রীতি মেনে বানানো হয় পদটি। এটি মূলত একধরনের আচার। শ্রমিকদের মধ্যে যিনি বয়স্ক কিংবা জাত-পাতে উচ্চ, তিনিই এটি তৈরি করেন। কেউ কেউ নিয়ে আসেন আলু পোড়া, চাল ভাজা, রসুন, পেঁয়াজ ও মরিচ। সেগুলোই মেখে দেওয়া হয় চা-পাতার সঙ্গে। যদিও সময় বদলের সঙ্গে রেসিপিতেও কিছু পরিবর্তন এসেছে। এখন তাতে যুক্ত হয় চানাচুর আর চিপসও। মুড়ি এবং টমেটোও যোগ হয় ক্ষেত্রবিশেষে।
পাতিচখা বেশ উপাদেয় খাবার। পুষ্টি ও শক্তি মেলে এতে। নারীরা চা-পাতা প্ল্যাকিং ছাড়াও বাড়ি ফিরে গেরস্থালি কাজ করে। ফলে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত একটানা কাজ করতে হয় তাদের। এত শ্রমের জন্য চাই পর্যাপ্ত ক্যালরি। পাতিচখা সেটির জোগান দেয়। বর্তমানে লক্ষাধিক চা-শ্রমিকের ক্ষুধা নিবারণে ও কর্মোদ্দীপনা ধরে রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার হয়ে উঠেছে।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top