skip to Main Content

অ্যাডভার্টোরিয়াল I ‘মা সঙ্গে থাকলেই নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মনে হয়’—ডা. কাশফিয়া আমিনা

ডিজাইনার, উদ্যোক্তা, চিকিৎসক ও সমাজসেবী। কাশফিয়া জুয়েলারি ডিজাইনার এবং কে-ড্রব— এই দুটি ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্বাধিকারী। নিজের প্রতিষ্ঠানের তৈরি ও আমদানি করা জুয়েলারি এবং পোশাক নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ক্যানভাসের সঙ্গে

ক্যানভাস: চিকিৎসক হওয়াটাই কি ছোটবেলার ‘এইম ইন লাইফ’ ছিল?
কাশফিয়া: ছোটবেলায় কখনোই ইচ্ছে ছিল না ডাক্তার হওয়ার। আমার মা আর নানা চেয়েছিলেন। আর মাঝে মাঝে টিভি সিরিজ দেখতাম ডাক্তারদের, যেটা একধরনের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। মনে করতাম, ডাক্তাররা তো একধরনের যোদ্ধা। এখন যখন কোভিডের সময় চারপাশে সবকিছু দেখছি, নিজেকে আসলেই একজন যোদ্ধা মনে হচ্ছে; আর পরিবারের নেওয়া সিদ্ধান্তে গর্ববোধ করছি। এই সম্মানজনক পেশায় আসতে পেরে আমি অনেক খুশি।
ক্যানভাস: চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি হঠাৎ জুয়েলারির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠার কারণ কী?
কাশফিয়া: ডিজাইনের প্রতি অনেক আগে থেকে একটা আগ্রহ কাজ করত। ছোটবেলায় গান, আবৃত্তি করতাম আর মেহেদি দিতে পছন্দ করতাম। তাই ডিজাইনের সেন্সটা চলে এসেছিল। এরপরে নিজের কাজের পাশাপাশি শুরু করলাম জুয়েলারি নিয়ে কাজ। শুধু ডাক্তার হিসেবে আমি পরিচিত হতে চাইনি। তাই ফ্যামিলি বিজনেসে না গিয়ে নিজে শুরু করলাম জুয়েলারি হ্যান্ড পিক করে সেল করা। আমাদের একটা ট্রাস্ট আছে, যেটা ১৫০-এর বেশি শিশুর দেখাশোনা করে, তাদের খরচ আমার এই বিজনেস থেকে যায়। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ যে আমি এই কাজ করতে পারছি।
ক্যানভাস: কাশফিয়া জুয়েলারি ডিজাইনের শুরুর গল্পটা জানতে চাই।
কাশফিয়া: এটি শুরু হয়েছিল যখন, আমি অনেক ডিপ্রেশনে ছিলাম। ডাক্তার হয়েও অন্য কিছু করতে চাওয়ার প্রবল ইচ্ছে ছিল। আমার বিয়েতে পাওয়া দুটি হাতের বালা বিক্রি করে সেই টাকা মূলধন হিসেবে কাজে লাগিয়েছিলাম। জুয়েলারি বিক্রি করে কাস্টমারদের কাছ থেকে রিভিউ নিয়ে তার ওপর আরও ভালো করার চেষ্টা করি। আমার হাজবেন্ড আর আমি প্রথম দিকে ডেলিভারি দিতাম। একসময় অনেক অর্ডার আসা শুরু করল, সারা রাত জেগে কাজ করতাম আবার সকালে নিজেদের কাজে বের হয়ে গেছি। এভাবেই শুরু হয়েছিল।
ক্যানভাস: জুয়েলারি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কী কী প্রাধান্য দিয়ে থাকেন?
কাশফিয়া: আমি সব সময় এটা দেখতাম যে, কোন জুয়েলারি পরলে আমাকে ভালো লাগবে। যদি আমার পছন্দ হয়, সেটা আমি পিক করতাম আমার কাস্টমারদের জন্য। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার সব জুয়েলারি সবাই অনেক পছন্দ করে। কারণ, আমি কোয়ালিটিতে কখনো কম্প্রোমাইজ করিনি। এমনকি দাম নিয়েও বেশি মাথা ঘামাইনি। শুধু জুয়েলারির ডিজাইনের ওপর বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। কোনো জুয়েলারিতে চোখ পড়ে গেলে তা আমার সংগ্রহে চলে আসে। আমি চাই না, কেউ আমার কাছ থেকে খারাপ জিনিস কিনুক। তাই দায়িত্বটা একটু বেশি। নিজে যেমন ব্যবহার করতে চাই, ঠিক তেমনটাই আমি আমার কাস্টমারদের জন্য নিয়ে আসি।
ক্যানভাস: কাশফিয়া জুয়েলারি ডিজাইনের কালেকশনে কী কী গয়না যায়?
কাশফিয়া: আমাদের কালেকশনে ফিংগার রিং, ব্রেসলেট, পেনডেন্ট, নেকলেসসহ আরও কিছু জুয়েলারি রয়েছে। সিলভার, গোল্ড প্লেটেড, ঝাড়খন্ডের পাথরের গয়নাসহ অনেক মূল্যবান মেটালের গয়না আছে। নারীদের পরিপূর্ণ করে এমন গয়না কালেকশনে আমাদের কমতি নেই।
ক্যানভাস: আপনার পছন্দের জুয়েলারি পিস?
কাশফিয়া: এই জুয়েলারির সবকিছুই আমার পছন্দ; কারণ, নিজ হাতে সব কালেক্ট করি। ছোট ইয়াররিং থেকে শুরু করে জড়োয়া সেট আমার পছন্দ। জুয়েলারির ছোটখাটো সব জিনিস আমার পছন্দের, তাই স্পেসিফিক কিছুই বলতে পারছি না।
ক্যানভাস: সম্প্রতি নতুন ভেঞ্চার কে-ড্রব লঞ্চ হয়েছে। পেছনের গল্প বলুন।
কাশফিয়া: বাংলাদেশের মানুষের আকর্ষণটা বুঝি, তাদের জন্য অপরিহার্য জিনিস যেটা তারা কিনবে— এই ভাবনা থেকে কে-ড্রবের যাত্রা শুরু। জুয়েলারি মানুষ অকেশনালি বা শখের বশে কিনতে আসে। আপাতত কে-ড্রবের ম্যাটেরিয়াল সব ইম্পোর্টেড, কিন্তু পোশাক দেশে বানানো। আমার ইচ্ছে আছে নিজের ডিজাইনের কিছু এলিট কালেকশন রাখা। ভবিষ্যতে কে-কেয়ার, কে-প্রিন্টস আর কে-ল্যাশেশ আনব।
ক্যানভাস: কে-ড্রবের কালেকশন কী দিয়ে সাজানো হয়েছে?
কাশফিয়া: কে-ড্রবের কালেকশনে রয়েছে অনেক শাড়ি, সেমি ব্রাইডাল ড্রেস, থ্রি-পিস, ইন্দো এশিয়ান আউটফিট, ইন্দো ওয়েস্টার্ন আউটফিটসহ আরও ভার্সেটাইল কালেকশন। ম্যাটেরিয়াল হিসেবে গুরুত্ব দিয়েছি কটন, লিনেন, ডুপিয়ান আর সিল্কের ওপরে। সবাই এখন ফ্যাশন-সচেতন, তাই আমি সব সময় লক্ষ রাখি, যেন ট্রেন্ড মেইনটেইন করে চলতে পারি।
ক্যানভাস: ব্র্যান্ডটির জন্য পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোন স্টাইলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়?
কাশফিয়া: আমি শাড়িকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। ইম্পোর্টেড ফ্যাব্রিকের শাড়ি বেশি রয়েছে আমার কালেকশনে। বাঙালি নারীদের কথা চিন্তা করেই আমার এই কাজ।
ক্যানভাস: কে-ড্রবের ডিজাইন টিম সম্পর্কে কিছু বলবেন?
কাশফিয়া: কে-ড্রবের কাপড়ের ডিজাইন আমিই করে থাকি। কারিগরের কাছে গিয়ে হাতেকলমে বুঝিয়ে আসি। ১৫/১৬ দিন পরে রিভাইস করতে যাই। আমার সহকর্মীরা অনেক হেল্পফুল। ম্যানেজারিয়াল কাজকর্মে তাদের পর্যবেক্ষণ বেশ ভালো।
ক্যানভাস: চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবেও কাজ করছেন— নিশ্চয়ই আপনার নিজস্ব লাইফস্টাইল আছে। সেটা কেমন?
কাশফিয়া: চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করাটা অনেক চ্যালেঞ্জিং। আমার বাসার সবার সাপোর্ট রয়েছে বলেই এত দূর আসতে পেরেছি। অনেক অকুপাইড থাকি সারা দিন, তার মাঝেই চেষ্টা করি ফ্যামিলিকে সময় দেওয়া আর সঙ্গে নিজের কিছুটা যত্ন নেওয়ার। পরিবারকে ঘিরেই আমার সবকিছু। লাইফস্টাইলের অনেকখানি অংশজুড়ে তারাই রয়েছে।
ক্যানভাস: আপনার জীবনের ইন্সপিরেশন কে?
কাশফিয়া: আমার মা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ইন্সপিরেশন, পাওয়ার আর সাপোর্টার। আমার মা সঙ্গে থাকলেই নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ মনে হয়। তার অনুপ্রেরণায় আমার সব কাজের শুরু। এভাবেই তাকে নিয়ে পথ চলতে চাই।
ক্যানভাস: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
কাশফিয়া: ভবিষ্যতে আমি গোল্ড, ডায়মন্ড আর সিলভার নিয়ে কাজ করতে চাই। মানুষ যেন আমাকে কাশফিয়া জুয়েলারির কাশফিয়া হিসেবে চিনতে পারে, এটাই আমার চাওয়া। দেশের মাঝে কে-ড্রবকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেন মানুষ একবার দেখলেই বুঝে যায় যে এটা কে-ড্রবের পোশাক। সব্যসাচীকে আমরা যেভাবে চিনি বা তার কাপড় আমরা কিনি, আমি চাই সব্যসাচী একদিন আমাকে চিনবে আর আমার কাছ থেকে জুয়েলারি আর কাপড় কিনবে। স্বপ্ন অনেক বড় আর এই পথেই হাঁটতে চাই।

ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top