সম্পাদকীয়
শরৎ এলেই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসে বর্ণিত একেকটি দৃশ্য মানসপটে ভেসে ওঠে। কাশবনের শুভ্রতায় বাতাসের ঢেউ, ডিটারজেন্টের ফেনার মতো সাদা খন্ড খন্ড মেঘ, দূরের মন্দির থেকে শ্রুতিতে এসে পড়া ঢাকের আওয়াজ আর শঙ্খের ধ্বনি—এইসব নিয়ে প্রাণমন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। বাংলার প্রকৃতি ও জীবনের এটাই মাধুর্য, যা এই ঋতুতে ধরা পড়ে। আর থাকে মাঠে মাঠে ফসলের প্রস্তুতি। শরৎ তাই বাঙালির আনন্দময় এক ঋতু। শৈশবে আমরা এক মন্ডপ থেকে আরেক মন্ডপে ঘুরে বেড়াতাম। প্রসাদও খেতাম।
মন্ডপের মঞ্চে পরিবেশিত সেই প্রসাদের উপকরণ নিয়েই এবারের কভারস্টোরি। কিন্তু তা কি আছে আগের মতো, শুরুতে যেমন ছিল? শৈশবে আমরা যা দেখেছি, তা-ও কি বদলায়নি? এমনকি প্রতিমাভেদে আর অঞ্চলের পার্থক্যে এর রূপও কি এক রকম থেকে গেছে? এই সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে মূল নিবন্ধটি রচিত হয়েছে।
এত গেল প্রসাদের কথা। বাংলাদেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে নারকেল ছাড়া নৈবেদ্য কল্পনা করা যায় না। মানে, প্রসাদের থালায় এই উপাদানের তৈরি একটা পদ অন্তত থাকবেই। আমরাও এবারের পূজার হেঁশেলসূত্রে ভক্তদের জন্য রাখছি চারটি বিশেষ পদ। তাতে থাকছে পানীয়ও। নিরীক্ষামনস্ক এই আয়োজন উপভোগ্য হবে, আশা করি।
নিরামিষ শব্দটি শুনে অনেক ভোজনরসিক নিজেদের মুখভঙ্গিটাই বদলে ফেলে। কিন্তু তারা কি জানেন, পুরান ঢাকায় এমন একটি রেস্তোরাঁ রয়েছে যেখানে দূরদূরান্ত থেকে আমিষবিমুখ রসিকেরা এসে খেতে বসেন। রহস্য একটাই—বিচিত্র স্বাদে ঘরোয়া আতিথ্যে সেখানকার নিরামিষের পদগুলো অত্যন্ত উপাদেয়। সেই ভোজনালয়ের খোঁজ মিলেছে এবারের রসনাবিলাসে। এ ছাড়া খাদ্যরসিকদের জন্য অন্যান্য উপভোগ্য আয়োজন তো থাকছেই।
পূজার সাজ সনাতনী বাঙালির জন্য সারা বছরের অপেক্ষার বিষয় বটে। আমরাও ভাবি, কীভাবে নারী তার আপন সৌন্দর্যের সঙ্গে ভিন্ন এক রূপে সেজে উঠবে। সে জন্য এই সংখ্যায় সামগ্রী মেকওভারের উৎস হিসেবে পৌরাণিক সৌন্দর্যের প্রেরণাকে গ্রহণ করা হয়েছে। পদ্মিনী, চিত্রিণী, শঙ্খিনী ও হস্তিনী—ভারতীয় পুরাণে বর্ণিত নারীর এই চারটি মৌলিক দেহকাঠামোর ওপর ভিত্তি করে এবারের পোর্টফোলিও।
এ ছাড়া বিভিন্ন বিভাগে নিয়মিত রচনার পাশাপাশি চমকপ্রদ কিছু নিবন্ধ তো থাকছেই। আশা করি শারদীয় উদ্যাপন বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠবে।
সবার জন্য শুভকামনা রইল।