স্বাদশেকড় I দাস্তান-ই-পুলাও
যত বিতর্ক থাকুক, খাবারটি বিকশিত হয়েছে নানাভাবে। বিভিন্ন নামে, স্বাদে আর গন্ধে ঠাঁই নিয়েছে ভোজনরসিকদের মনে। লিখেছেন আল মারুফ রাসেল
আজকের স্বাদশেকড়ের গল্পটা পোলাওয়ের। মধ্যপ্রাচ্যের কায়দায় বলতে পারেন, পিলাফ বা সম্মান দিয়ে খাস উর্দুতে পুলাও, তাতে তাদের মনে বিন্দুমাত্র আঘাত লাগে না। কিন্তু যখন কেবল মসলা দিয়ে রান্না করা সুগন্ধি চালকে এসব নামে অভিহিত করা হয়, তাতে তাদের ‘হৃদযন্ত্রে’ (যদি থাকত) বন্ধ হওয়ার উপক্রমই হতে পারে। আমরা যে খাবারটিকে সাদা পোলাও বলে চিনি, পুরান ঢাকার সাংস্কৃতিক পরিবারগুলোর কাছে চাল, চালসা বা হোগলা পোলাও নামেই পরিচিত।
পেশোয়ার পেরিয়ে পশ্চিমে গেলে বিরিয়ানির অস্তিত্ব নেই। সেখানে যা হয় তার সবই পোলাও, তাই কোনো রেস্টুরেন্ট যদি বলে বসে তারা ইরানি, তুর্কি বা আরব্য বিরিয়ানি পরিবেশন করছে— সেটা স্রেফ ধাপ্পা, গুল।
আচ্ছা, তাহলে এবার খুলেই বলা যাক। ইতিহাস বলে, আব্বাসীয় খিলাফতের সময়কালে পোলাও রান্নার তরিকা প্রথমে স্পেন থেকে আফগানিস্তানে ছড়িয়ে পড়ে, সেখান থেকে আরও অনেক দেশে। নবম-দশম শতাব্দীতে স্পেনের মুসলিমরা পায়েল্লা রান্না করে খেতে শুরু করে, সেটা পোলাওয়েরই ইউরোপীয় ভাই। আর আমাদের এদিকে অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ায় আফগান এলাকা থেকে আসে পোলাও বা পুলাও। অবশ্য পোলাও রান্নার বর্ণনা, অন্তত আমরা যেভাবে বলছি, সেটার মতো আরেকখানা বর্ণনা মেলে কে টি আচায়ার লেখায়। তিনি পুরোনো সংস্কৃত সাহিত্য যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতিতে পেয়েছেন পোলাও রান্নার বর্ণনা। অবশ্য এরও অনেক আগের গল্প-কথায় জানা যায়, মেসিডোনিয়ার আলেকজান্ডার পোলাওয়ের স্বাদে এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে ব্যাকট্রিয়া ও সোগদিয়া এলাকা থেকে এই খাবারের রেসিপি টুকে নিয়ে গিয়েছিলেন তার হেঁশেল-প্রধান। তবে পোলাওয়ের সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ ও পুরোনো রেসিপির বর্ণনা পাই ইবনে সিনার চিকিৎসাশাস্ত্রে। এর আগে দশম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের খাবারের বর্ণনা নিয়ে সাইফ উদ-দৌলা আল-হামদানির লেখা কিতাব আল-তাবিখে পোলাওয়ের আরেকটি বর্ণনা মেলে। তবে সেখানে সেগুলোর নাম পোলাও হিসেবে নেই। অন্য, বিভিন্ন নামে রয়েছে।
পোলাও শব্দটি মধ্যযুগীয় ফার্সি শব্দ। আর এই শব্দের প্রচলন ঘটে মূলত সাফাভিদের দরবারি খাবারের সময়ে। এই খাবার যে তারও অনেক আগে থেকে প্রচলিত ছিল, তার প্রমাণ ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা রয়েছে। আবার শব্দতাত্ত্বিকেরা বেশ বড় একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন এই বলে যে, সংস্কৃত (দ্বিতীয় শতকে যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি) আর তামিল ভাষায় (তৃতীয়-চতুর্থ শতাব্দীতে) পোলাও বা পালাও নামের খাবারটি প্রচলিত ছিল মুসলিমদের আসার আগেও। রামায়ণ ও মহাভারতে রাজাদের পোলাও-সদৃশ খাবারের বিবরণ মেলে। যেমন সীতার পছন্দ ছিল মাংসভূতদানা— হরিণের মাংস, সবজি আর মসলা দিয়ে ভাতের ওয়ান পট মিল। মহাভারতে পিষ্ঠউড়ান নামের এক খাবারের উল্লেখ রয়েছে, যা মাংসের কিমার সঙ্গে চাল যোগ করে রান্না করা হতো। আর রয়েছে দুর্যোধনের মাংসের সঙ্গে চাল মেশানো পদ খাওয়ার কথা। কট্টর নিরামিষাশী সনাতনীরা ক্ষমা করবেন, ইতিহাস তো তাই বলছে! সনাতনী শাস্ত্রের কঠোর খানা-খাদ্যের বিধিতেও মুসলিমেরা যোগ করেছিল বিশুদ্ধ সভ্য শিষ্টাচার, তা সে ঘরের খাওয়া হোক বা অনুষ্ঠানের। ভারতের খাবারে যোগ হতে থাকে বাদাম, কিশমিশ, মসলা ও ঘি। এর ভেতরে ছিল পোলাও নিজেও।
আরব সাগর থেকে আসা বহিরাগতদের কাছে গুজরাত ছিল প্রথম বন্দর। আর সেই কারণেই ফার্সি, আরব, আফ্রিকা আর গুজরাতের নিজস্ব সনাতনী সংস্কৃতির এক মিথস্ক্রিয়া দেখা যায় সেখানে। একাদশ শতাব্দীতে সেখানে এসে বসতি গড়া ইসমাইলি সম্প্রদায়ের মৌলায়ি আবদুল্লাহর বংশধর— বোহরি মুসলিমরা এখনো সেখানে বিশেষ ধরনের মাংসের পোলাও রান্না করে। আর স্থানীয় ধর্মনীতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে সবজি পোলাওয়েরও চল ছিল গুজরাত এলাকায়। সবজির ইয়াখনি তৈরি করে সেখানে চাল, জোয়ার, বাজরা, গোলমরিচ, আদা, হলুদ, আর পিপুল দিয়ে রান্না হতো।
ইবনে বতুতা সুলতান মুহাম্মাদ বিন তুঘলকের দরবারি খাবারের বর্ণনায়ও পোলাওয়ের কথা বলেছেন। গিয়াস উদ-দিন বলবনের সিন্দ এলাকার বকশী ইমাদ-উল-মুলক তার পুরো দপ্তরকে প্রতিদিন দুপুরের খাবারে নান, ছাগলের মাংস, মুরগি আর পোলাও খাওয়াতেন। আকবর নিয়ম করে মাংস খেলেও পোলাও আর ইয়াখনি ছিল তার খাবারে। তার চাল আসত ভারাইজ, গোয়ালিয়র, গাজোরি ও নিমলা থেকে, ঘি আসত হিসার থেকে, বিভিন্ন পাখির মাংস আসত কাশ্মীর থেকে আর ফল আসত উত্তর-পশ্চিমের সীমান্ত পেরিয়ে। খুব সম্ভবত কাশ্মীরের পোলাওয়ের গল্প শুরু হয়েছিল মুসলিম শাসনের শুরু থেকে, আর সেটা সমৃদ্ধ হয়েছিল মোগল আমলে। একইভাবে সরাসরি পারস্যের প্রভাব দেখা যায় দাক্ষিণাত্যের পোলাওয়ে।
ইংরেজিতে পোলাওয়ের প্রথম বিবরণ মেলে মোগল দরবারে আসা ইংরেজ দূত স্যার টমাস রো-এর যাজক এডওয়ার্ড টেরির লেখায়, ১৬১৬ খ্রিস্টাব্দে: ‘কখনো সখনো তারা গোশত বা মুরগি বা অন্য কোনো পাখির মাংস সেদ্ধ করে, ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করে— যেটাকে তারা পোলাও বলে।’ কলিন টেইলর সেন বলছেন, ‘চাল, মাংস আর মসলা একত্র করে রান্না করার তরিকা বহু পুরোনো, আদিকাল থেকে চলে আসছে, চাল আগে ঘিয়ে হালকা ভেজে তারপর আলতো আঁচে দানাগুলো যেন লেগে না যায়— এভাবে রান্নাটা মোগলদের সঙ্গেই আসা।’
পোলাও ছিল ধনী ব্যক্তিদের খাবার। ধনী রুচিবাগীশেরা তাদের মুরগিকে কস্তুরী আর জাফরান খাওয়াত, যেন সেই মাংস সুগন্ধি হয়ে ওঠে। সেই মাংসের ‘ইয়াখনি’তে রান্না হতো চাল, যা পোলাওয়ের স্বাদ ও সুগন্ধ বহুগুণে বাড়িয়ে তুলত। এখানে বলে রাখা ভালো, দিল্লিতে বিরিয়ানির সমঝদার বেশি হলেও লক্ষ্ণৌয়ে ছিল পোলাওয়ের প্রেমিক। এই দুই খাবারের ভেতরের যে সূক্ষ্মতর রেখা সেটা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক রয়েছে। আমাদের এখানে যেমন ঢাকার খানদানি ও মোগল যুগের কৃষ্টি সভ্যতার শেষ নমুনা হিসেবে ছিলেন হাকিম হাবিবুর রহমান, লিখে গেছেন ঢাকার শেষ মোগল ঐতিহ্য নিয়ে— ঢাকা পাচাস্ বারস্ পহেলে তেমনি লক্ষেèৗয়ে ছিলেন সেখানকার আওধি নবাবদের শেষ সময়ের গল্পকার আবদুল হালীম ‘শর্র’, লিখে গেছেন— গুযিশ্তা লখনঊ। সেখানে তিনি পোলাও নিয়ে বহু কথা লিখেছেন, তবে বিরিয়ানি আর পোলাওয়ের ফারাক তুলে ধরেছেন এভাবে: ‘বিরিয়ানির রেওয়াজ দিল্লিতেই বেশি ছিল, এবং এখনো আছে। লক্ষ্ণৌয়ে তৈরি হতো ‘পোলাও’- এত সুন্দর করে যে, বিরিয়ানিকেও ডিঙিয়ে গিয়েছিল। সাধারণ লোকের চোখে দুটোই এক জিনিস। কিন্তু বিরিয়ানিতে চালকে অলংকৃত করা হয় অনেক মসলাসহযোগে; তুলনায় পোলাও খুব সাদাসিধে তবু এত স্বাদ যে, তার সামনে বিরিয়ানিকে মনে হয় যেন ‘মলগোবা’, ঘ্যাঁটের মত…সূক্ষ্ম সৌন্দর্যপ্রিয় ব্যক্তির দৃষ্টিতে বড় জাতের পোলাওয়ের কাছে বিরিয়ানি অতিশয় কুৎসিত ও নোংরা।’ অর্থাৎ ছোট জাতের পোলাও কিন্তু ছিল। সে সম্পর্কেও তিনি বলেছেন, ‘…মামুলি ধরনের পোলাওয়ের চেয়ে বিরিয়ানি ভালো। এ ধরনের পোলাওকে বলা হয় খুশকা— সেদ্ধ করা চাল মাত্র; এই দোষ বিরিয়ানিতে হয় না।’
আগেই বলা হয়েছে, পোলাও আর বিরিয়ানির পার্থক্য নিয়ে কড়াই সব সময়ই গরম থাকে। ভারতে দুটো খাবারেই লম্বা ধরনের চালের আর লাল মাংস বা সাদা মাংস ব্যবহার করা হয়, মাঝেমধ্যে দুটোর মধ্যকার পার্থক্য বের করা মুশকিল হয়ে পড়ে। তার ওপর আবার এগুলো ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বিভিন্ন রূপ পেয়েছে। তবে মূল কিছু পার্থক্য রয়েছে: প্রথমত, পোলাও অন্য কোনো খাবারের সঙ্গে খাওয়া হয়, যেখানে বিরিয়ানি নিজেই একটা পূর্ণাঙ্গ খাবার। দ্বিতীয়ত, পোলাও সিঙ্গল-পট ডিশ, প্রথমে মসলা ভেজে তাতে মাংস দিয়ে পানিতে সেদ্ধ করে ইয়াখনি তৈরি করা হয়, তাতে চাল ঢেলে পানি পুরোপুরি টেনে ঝরঝরে না হওয়া পর্যন্ত রান্না করা হয়। বিরিয়ানিতে মাংস আর চাল আলাদাভাবে প্রস্তুত করে মিশিয়ে ফেলা হয় (পাক্কি বিরিয়ানিতে, কাচ্চি বিরিয়ানির পথ ও গল্প আলাদা)। বিরিয়ানিতে বিভিন্ন মসলা স্বাদ এনে দিলেও সাধারণত পোলাওয়ে মসলা পড়ে অনেক কম— এতে মাংসের স্বাদই গুরুত্বপূর্ণ।
পোলাওকে ভারতে অন্য স্তরে নিয়ে গিয়েছিল আওধি নবাবেরা। বক্সারের যুদ্ধের পর লক্ষ্ণৌর নবাবেরা সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যয় অনেকটাই কমে আসায় হয়ে উঠেছিলেন খাবার আর সংস্কৃতির সমঝদার। নবাব শুজাউদদৌলার সময়ে লক্ষ্ণৌর দরবারি খাবারের ব্যবস্থাপক বা মুনতাযিম হিসেবে আসেন দিল্লির অভিজাত হাসান রেজা খান বা মির্জা হাসনু। নবাব সালার জংয়ের জন্য তার শাহি রসুইখানায় এমন ভারি পোলাও বানানো হতো যে, সেটা খাওয়ার সাধ্য নবাব ছাড়া আর কারও ছিল না। নবাব শুজাউদদৌলা একদিন জোর করে খেতে গিয়ে নাকাল হয়েছিলেন। আবার মির্জা আজিম-উশ-শান এক অনুষ্ঠানে ওয়াজিদ আলী শাহকে আমন্ত্রণ করেছিলেন, যেখানে দস্তরখানে রাখা হয়েছিল ৭০ ধরনের পোলাও। নবাব সালার জংয়ের বংশের রইস নবাব হুসেন আলী খান ছিলেন পোলাওয়ের সমঝদার; লোকমুখে ‘চাওয়লওয়ালে নওয়াব’-এ পরিণত হওয়া এই নবাবকে স্বয়ং দিল্লির বাদশাহও খাবারের ব্যাপারে নাকি ঈর্ষা করতেন।
পোলাওয়ের কাব্যিক নামকরণের ব্যাপারেও এগিয়ে ছিল লক্ষ্ণৌ—গুলযার (বাগান), নূর (আলো), কোকো (কোকিল), মোতি (মুক্তা), চাম্বেলি (বেলি) ইত্যাদি। তারা দানার অর্ধেক লাল আর অর্ধেক রংহীন রেখে পোলাও রান্না করতেন, যার নাম ছিল আনারদানা। আরেকটি ছিল নওরতন পোলাও, নয় রঙের চালের অপূর্ব কীর্তি। মোতি পোলাও ছিল আরেক বিস্ময়— রুপালি পাত আর সোনালি পাত ডিমের কুসুমে মিশিয়ে মুরগির খাদ্যনালির ভেতরে ঢুকিয়ে হালকা তাপে রান্না করে যখন চামড়া কেটে ফেলা হতো, সেগুলো জ্বলজ্বলে মুক্তোর মতো দানা হয়ে বেরিয়ে আসত; সেগুলো প্রথমে মাংসের সঙ্গে এরপর চালে মিশিয়ে পরিবেশন করা হতো। অন্য অনেক বাবুর্চি আবার মাংসকে ছোট ছোট পাখির রূপ দিতেন, যেন তারা প্লেটের পাশে বসে চালের দানা খুঁটে নিচ্ছে। নবাব আবুল কাসেম খানের ঘরে তৈরি হতো ভারি পোলাও, ৩৪ সের মাংসের আখনিতে দম দিয়ে চাল ফুটিয়ে তৈরি হতো সেই পোলাও।
ঢাকা সব সময়েই কসমোপলিটান শহর ছিল। এখানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষেরা ব্যবসার জন্য যেমন এসেছে, তেমনি এখানকার শাসকও হয়েছেন, হয়ে গেছেন এলাকার সাধারণ অধিবাসী। তাই ঢাকা অনেকটাই মেল্টিং পট ছিল পৃথিবীর নানা ধরনের খাবারের। ঢাকার খাবারে ইরানের খোশবাস সংস্কৃতির যেমন রোশনাই ছিল, তেমনই দিল্লির দরবারি কেতা আর লক্ষেèৗর আদব।
ঢাকার পোলাও মূলত দুভাবে রান্না হতো— পাশানো আর লেপিটা। তবে পাশানো পোলাও, অর্থাৎ চাল প্রায় সেদ্ধ হয়ে এলে মসলা দিয়ে দম দেওয়া, ঢাকার অধিবাসীদের তেমন পছন্দের ছিল না। আর লেপিটা প্রকৃতপক্ষেই খাবার রান্নার পদ্ধতি ছিল। ঢাকায় রান্না হতো নানা পদের পোলাও— খাচ্ছা পোলাও নামের খাঁটি মোরগ পোলাও ছিল, যেখানে মুরগির গোশতের টুকরা আস্ত রাখা হতো না। প্রতি সের চালে তিনটি মোরগ দেওয়া এই পোলাও ঢাকার বাইরে কোথাও হতো না। ঢাকার ঘরোয়া পোলাও ছিল বুন্দিয়া পোলাও, মাছ পোলাও, ডিম পোলাও। বুন্দিয়া পোলাওয়ে মটরদানার সঙ্গে একই আকৃতির কোফতা কাবাব যোগ করা হতো। মাছের পোলাওয়ের ভেতর তৈরি হতো রুই আর ইলিশের পোলাও। ঢাকায় একজন ইলিশ পোলাও তৈরি করেছিলেন বুন্দিয়া পোলাওয়ের মতো করে। তেহারিও প্রাচীন ধরনের পোলাও, যেটা মসলাদার গোশত আর চাল একই সঙ্গে দমে রান্না হয়। ঢাকায় আশি^ন মাসে সোইয়া শাক উঠলে তৈরি হতো শেবেত পোলাও, যেটাকে সোইয়া পোলাও বলে অনেকে। মজমুয়া পোলাও ছিল তিন-চার রকম রঙের চালের মিশ্রণ। মাগলুবা পোলাও ছিল মোগল ও আর্মেনীয় পরিবারের খাস পোলাও। খাসির চর্বিহীন মাংস আর চালের অনুপাত সমান হতো আর কপি, গাজর, শালগম, বিট ভেজে দমের সঙ্গে দেওয়া হতো, পরে টমেটোও যোগ হয়েছিল। মাঝেমধ্যে এর সঙ্গে যোগ হতো পালংশাক আর ডিম। কেবল শাক আর ডিম ঘিয়ে লাল করে ভেজে করা হতো নার্গিসি পোলাও। এখন তো ডিম পোলাও হয় ¯্রফে মসলার আখনি অর্থাৎ চালসার সঙ্গে ঘিয়ে ভাজা ডিমের কোরমা দিয়ে। ঢাকায় প্রচলন ছিল আফগান দোগোশা পোলাওয়ের। মুরগির কোফতা আর খাসির ইয়াখনি— দুই ধরনের গোশত দিয়ে তৈরি হতো। এর প্রচলন এখনো রয়েছে উত্তর প্রদেশের রামপুর এলাকায়। মুতানজান নামের একধরনের টক-মিষ্টি স্বাদের পোলাওয়ের কথাও জানা যায়।
সৌভাগ্যের অবনতি আর দুর্ভাগ্যের আগমনে ঢাকার পোলাও রান্না করার প্রক্রিয়াগুলো হারিয়ে গেছে পুরোনো খাবারের সমঝদারদের সঙ্গেই।
তথ্যসূত্র:
আচায়া, কে টি; ইন্ডিয়ান ফুড: আ হিস্ট্রিক্যাল কম্প্যানিয়ন।
সেন, কে টি; ফিস্টস অ্যান্ড ফাস্টস: আ হিস্ট্রি অব ফুড ইন ইন্ডিয়া।
‘শর্র’, আবদুল হালীম; গুযিশ্তা লখনঊ।
রহমান, হাকীম হাবীবুর; ঢাকা পাচাশ্ বারস্ পহেলে।
ছবি: ইন্টারনেট