ফিচার I প্রেমভার
অনেক দম্পতিই বিয়ের পর মুটিয়ে যায়। কারণ অনেক। সেগুলো জানা হয়ে গেলে প্রতিকারও মেলে
বিয়ের পর অনেকেই মুটিয়ে যায়। স্বামী-স্ত্রীনির্বিশেষে। এমনকি প্রণয়ে আবদ্ধ হলেও ওজন বাড়তে পারে। এর কারণ সন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কিছু জরিপও হয়েছে। তাতে অংশ নিয়েছিলেন দুই হাজারের বেশি যুগল। দেখা গেছে, সম্পর্কে যুক্ত হওয়ার পর ৭৯ শতাংশ নারী-পুরুষের ওজন বেড়েছে গড়ে ১৬ কেজি। গবেষকেরা এর নাম দিয়েছেন লাভ ওয়েট। মানে ভালোবাসাজনিত ওজন। জরিপে দেখা গেছে, নারীর তুলনায় পুরুষের মুটিয়ে যাওয়ার হার বেশি। ৬৯ শতাংশ পুরুষের বিপরীতে মাত্র ৪৫ শতাংশ নারীর মধ্যে স্থূলতা দেখা গেছে। মূলত সম্পর্কে জড়ানোর প্রথম বছরেই ওজন বেশি বাড়ে। বিয়ের পরপরই গড়ে ৭ দশমিক ৭ কেজি হারে ওজন বেড়েছিল উল্লিখিত মার্কিন কাপলদের।
বিয়ের পর অনেক কারণেই ওজন বাড়তে পারে। বাচ্চা নেওয়া ও লালন পালনের জন্য মায়েরা নিজেদের শরীরের প্রতি মনোযোগী হতে পারেন না। এ কারণে ওজন বাড়তে পারে। তা ছাড়া বিয়ের পরপরই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ঘুরে ঘুরে দাওয়াত খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। ফলে দীর্ঘ কয়েক মাস ভারী খাদ্য খেতে খেতেই কাটে। এটিও ওজন বাড়ার কারণ হতে পারে। বিয়ের আগে প্রেম চলাকালেও কাপলকে এদিক-সেদিক ঘুরে ঘুরে রিচ ফুড খেতে দেখা যায়। এতে মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া মনস্তাত্ত্বিক কারণও রয়েছে। অনেকেই মনের মানুষ পাওয়ার পর ভাবে, যাকে পাওয়ার তাকে তো পেয়েই গেছি, এখন ফিট থাকলেই কী আর না থাকলেই কী! ফলে তারা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে জড়িয়ে পড়ে।
বিয়ে বা সম্পর্কে জড়ানোর পর ওজন বাড়ার আরও কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে হরমোনাল পরিবর্তন, কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপের জন্য এলোমেলো লাইফস্টাইল, ঘুমের অপ্রতুলতা, সম্পর্কের টানাপোড়েনকালে স্বাস্থ্যের প্রতি বেখেয়ালি হওয়া এবং বিয়ের পর কিছু খাবারের প্রতি চাহিদা বেড়ে যাওয়া। অনেকেই মনে করে, বিয়ের পর শারীরিক মিলনই ওজন বাড়ার কারণ। কিন্তু চিকিৎসকেরা এই ধারণাকে সমর্থন করেন না। তারা সঙ্গমকে হার্ট ও মনের সুস্থতার নিয়ামক ভাবেন। এমনকি শারীরিক সম্পর্কের ফলে ক্যালরি খরচ হওয়ার কারণে ওজন বাড়ার বদলে কমতে পারে।
যে কারণেই হোক, বিয়ের পর মুটিয়ে যাওয়া নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকে। লাইফস্টাইল ও খাদ্যাভ্যাসে একযোগে কিছু পরিবর্তন আনলে এই স্থূলতা থেকে রেহাই মিলতে পারে। এ জন্য পরিমিত খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি চাই নিয়মিত শরীরচর্চা। প্রতিদিন একই সময়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সাধারণত শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পর মেয়েদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আসে। তা ছাড়া লজ্জায় অনেক নববধূ খাওয়া কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে যে পরিমাণ সুষম খাদ্য গ্রহণ দরকার, তা থেকে সে নিজেকে বিরত রাখে। তারপর ব্যালান্স করতে গিয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে একবারে অনেক খাবার খেয়ে ফেলে। প্রাত্যহিক এই পদ্ধতিতে খাওয়ার ফলে মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। নববধূরা বিবাহোত্তর স্বাস্থ্যের যত্নে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন বি সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন। এটি এনার্জির জোগান দেবে, স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।
বিয়ের পর বিভিন্ন পার্টিতে গিয়ে খাবার খাওয়ার ব্যাপারে কিছুটা পরিমিতি বোধের চর্চা থাকা ভালো। তা ছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ না খেয়ে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করাই উত্তম। কেননা, এ ধরনের ওষুধ শরীরকে স্থূল করে দিতে পারে। নববধূ বলে লজ্জায় ঘরে বসে থাকলে শরীরে বাড়তি চর্বি জমে। তাই কাজকর্ম করলে মুটিয়ে যাওয়া রোধ হতে পারে। এ ছাড়া কিছু খাবার আছে, যা খেলে চর্বি জমা থেকে মুক্ত থাকা যাবে। যেমন গ্রিন টি। নতুন দম্পতিরা এ ধরনের চা পান করে উপকৃত হতে পারে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত। এই চা মেটাবলিজমকে ত্বরান্বিত করে। ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ওজন কমে। বাড়তি চর্বি অপসারণেও এই চায়ের সুনাম রয়েছে। বিয়ের পরের মেদ থেকে নিস্তার চাইলে দৈনিক তিন কাপ করে গ্রিন টি পান করা যেতে পারে। সঙ্গে আদা ও লেবু কিংবা পুদিনার রস যোগ করলে বাড়তি উপকার মিলবে। বিয়ের এই সময়টাতে বাহারি নাশতা না খেয়ে ওটস খাওয়া যেতে পারে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ফলে পেটের চারপাশে জমা চর্বি দূর হয়। দাম্পত্যের প্রথম দিনগুলোতে খাওয়া যেতে পারে কাজুবাদাম। যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম থাকায় এটি কোলেস্টেরল কমিয়ে মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। উপকারী হতে পারে জলপাই তেলও। মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় এটিও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে, যা ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে। বিয়ের পরপর রান্নায় এই তেল ব্যবহার করলে স্থূলতা এড়ানো যেতে পারে। বিন ও ডালজাতীয় খাবারও এ সময়ে উপাদেয়। এগুলো ডায়েটে রাখলে বাড়তি ওজন খুব সহজেই কমে। কেননা এই সব খাদ্য ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের আধার। দুপুর ও রাতে এক বাটি করে ডাল খেলে পেটে মেদ জমবে না। শরীরের সঞ্চিত চর্বিকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই বিয়ের পরবর্তী স্থূলতা এড়িয়ে চলা যাবে। অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার দেহে ফ্যাট জমতে বাধা দেয়; পাশাপাশি চর্বি দূর করার ক্ষমতা বাড়ায়। এ উদ্দেশ্যে দিনে দুই চামচ করে তা খাওয়া যেতে পারে। স্থূলতা কমাতে এসব এসবের পাশাপাশি কিছু খাবার এড়িয়েও যেতে হবে। বিয়ের পর মিষ্টি মুখের নামে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি গিয়ে অনেক অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হয়। কিন্তু এ সময় রিফাইন্ড চিনি ও রিফাইন্ড ময়দায় বানানো ডোনাট, মিষ্টি কিংবা ক্যান্ডি মোটেই খাওয়া উচিত হবে না। তবে বিয়ের পর মুটিয়ে যাওয়া থেকে রেহাই পেতে কী খাওয়া যাবে, আর কোনটি খাওয়া যাবে না, সে ব্যাপারে ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।
ু ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট