skip to Main Content

ফিচার I ভেরি কুল ভেস্ট

ফ্যাশন লাইনে দারুণভাবে ফিরে এসেছে এই ট্রেন্ড। তবে শুধু পুরুষদের নয়, নারীদের জন্যও

সোয়েটার ভেস্ট। হিম হিম এই সময়ে শব্দটা কেমন নস্টালজিক! স্কুলের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়, যখন কুয়াশামাখা সকালে বেরিয়ে পড়তে হতো। চলতে চলতে চোখ পড়ত কোনো এক বাড়ির বারান্দা, যেখানে সোয়েটার ভেস্ট গায়ে চা খাচ্ছেন দারুণ স্মার্ট কোনো দাদু। অথবা, শার্টের সঙ্গে লেয়ার করে সোয়েটার ভেস্ট গায়ে কেউ চলেছেন অফিসের পথে।
স্টাইল যখন ফ্যাশনে পরিণত হয়, তখন তা সময়ের সঙ্গে ঘুরে ট্রেন্ডে ফিরে আসে বেশির ভাগ সময়। সোয়েটার ভেস্ট এ দলের নতুন সদস্য। দারুণভাবে ফিরে এসেছে ফ্যাশন লাইনে। ‘গ্র্যান্ডপা’ ফ্যাশন কিন্তু এবার বেশি জনপ্রিয় তরুণদের মাঝে। বলা যায়, গ্র্যান্ডপা থেকে গ্র্যান্ডচাইল্ডে পৌঁছে গেছে সোয়েটার ভেস্ট। নিট ওয়্যারে তৈরি। উইন্টার লাইট ওয়্যার। লেয়ার করে তবেই পরে নিতে হবে। ট্র্যাডিশনালি সোয়েটার ভেস্ট তৈরি হয়েছিল মেনজ ফ্যাশনের জন্য। এটি সেভাবেই প্রতিষ্ঠিত। তবে নতুন করে এবার ফিরে এসে ফিমেল ওয়্যারেও জায়গা করে নিয়েছে।
শুরুর দিকে উইন্টারের পোশাক হিসেবে সোয়েটার ভেস্ট সেভাবে সমাদৃত হয়নি; বরং খানিকটা বিতর্ক ছিল। কারণ, স্লিভ ডিজাইন। উইন্টারের পোশাক অথচ স্লিভ নেই, এখানেই বাধে বিপত্তি। লেয়ারিংয়ের স্টাইলিংয়ে সোয়েটার ভেস্টের পথচলা শুরু। এবারের নতুন যাত্রাতেও এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে না। ফুল স্লিভে লেয়ার করে নেওয়া হচ্ছে সোয়েটার ভেস্ট। কখনো ইনার হচ্ছে টি-শার্ট, কখনো শার্ট, কখনোবা টপস। যা-ই হোক না কেন, স্লিভ হওয়া চাই ভেস্টের স্লিভ থেকে বেশি লেন্থের। ১৯০০ সালের দিকে তৈরি এই সোয়েটার ভেস্টের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিদেবল অ্যাটায়ার হিসেবে ব্যবহার করা। স্পোর্টিং, ওয়েট লস, হেলথ ওয়েলনেস যাদের জীবনধারায় প্রাধান্য পায়, তারা যেন সুবিধাজনক পোশাক হিসেবে এটি পরতে পারেন।
১৯৩০ সালের দিকে ব্যাপকভাবে মেনজওয়্যার হিসেবে জনপ্রিয়তা পায় সোয়েটার ভেস্ট। তারও আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ১৯১০ সালে এবং প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুভার ১৯২০ সালে সোয়েটার ভেস্ট পরেছিলেন। এটির জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে এই দুজনের ভূমিকা রয়েছে। অন্যদিকে, জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘ফ্রেন্ডস’-এর চ্যান্ডলারকে দেখা যায় ঢিলেঢালা সোয়েটার ভেস্ট পরতে। পছন্দের এই অভিনেতাও সোয়েটার ভেস্টের জনপ্রিয়তাকে এগিয়ে নিয়েছেন। কারণ, এই পোশাকে দেখলেই বোঝা যায়, আরামের এই সোয়েটার ভেস্ট দারুণ স্বস্তি দিচ্ছে। মেনজওয়্যার থেকে, ইউনিসেক্স লাইনে চলে আসার পথ শুরু হয় নব্বইয়ের দশকে। দিওর, জিভাঁশি, প্রাদার মতো আন্তর্জাতিক লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড সোয়েটার ভেস্টকে ওমেনওয়্যার হিসেবে নিয়ে আসে রানওয়েতে।
২০২০-এর রানওয়েতে সদর্পে সোয়েটার ভেস্ট ফিরে আসে ফিমেলওয়্যার হিসেবে। সেবারে ডমিনেটিং রোল প্লে করে ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবে পরিচিত এই নিটওয়্যার। সুপার মডেল বেলা হাদিদের গায়ে চেপে সবার দৃষ্টি নতুন করে আকর্ষণ করে আরামের পোশাক সোয়েটার ভেস্ট। পপ সিঙ্গার হ্যারি স্টাইলসকেও দেখা যায় এ পোশাকে। হ্যারি স্টাইলস ও ফিবি ওয়ালা ব্রিজ তাদের নতুন মিউজিক ভিডিও ‘ট্রিট পিপল উইথ কাইন্ডনেস’- নজর কাড়ে লেয়ার করে পরা সোয়েটার ভেস্ট। বোঝা যাচ্ছে, বেশ হইচই করে ফিরে আসছে এ পোশাক। ব্যবহারের দিক থেকে কলেবরেও বেড়েছে; কেননা, এখন আর জেন্ডারে আটকে নেই এটি।
বর্তমান সময়ে স্টাইল থেকে ফ্যাশনে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অন্তর্জালে দেখা যাচ্ছে, সোয়েটার ভেস্টে সেলিব্রিটিরা বেশ মাতিয়ে রেখেছেন শীত শীত এই সময়। হ্যাশট্যাগ সোয়েটারভেস্টে ফ্যাশনিস্তাদের পোস্ট দেখা যাচ্ছে। তারকাদের ফ্যাশনে যেহেতু গুরুত্ব পাচ্ছে, তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব দেখা যেতে পারে তরুণ ও ফ্যাশন-সচেতনদের মাঝেও।
স্ট্রিট স্টাইলে জেঁকে বসবে এটি ভেস্ট, এমনটাই ধারণা। গ্রাফিক্যাল প্রিন্ট দেখা যাচ্ছে সোয়েটার ভেস্টে। এ ধরনের ভেস্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে লেয়ার করা চাই ওয়ান কালার টি-শার্টের সঙ্গে। সাদা বেশ মানিয়ে যাবে। সঙ্গে বটমে ওয়াইড লেগ জিনস পরে নেওয়া যায়। ফুটওয়্যারের ক্ষেত্রে স্নিকার মানাবে। মিউজিশিয়ান দুয়া লিপাকে এভাবেই স্টাইলিং করতে দেখা গেছে।
মনোক্রোমে মুগ্ধ, এমন লোক কিন্তু কম নেই ফ্যাশন-সচেতনদের দলে। সোয়েটার ভেস্টের ক্ষেত্রেও তারা আগ্রহ দেখাবেন, ধরেই নেওয়া যায়। হাউন্ডসটুথ টেক্সটাইল প্যাটার্নের ভেস্ট ক্ল্যাসিক মনোক্রোমাটিক লুক তৈরি করে। বাটন ডাউন ফুলস্লিভ সাদা শার্টের সঙ্গে এমন প্যাটার্নের সোয়েটার ভেস্ট লেয়ার করে পরা যায় অনায়াসে। ক্ল্যাসিক লুকে দারুণ লাগবে। সঙ্গে হ্যাট থাকলে অল ডান!
কেন্ডাল জেনারের সোয়েটার ভেস্ট স্টাইলিং ফলো করলে দেখা যায় ওভারসাইজড বাটন ডাউন শার্টের সঙ্গে উজ্জ্বল রঙের সোয়েটার ভেস্টের সমন্বয়। বটমে ওয়াইড লেগ ট্রাউজার আর লোফার। কম্ফি লুকেই স্টাইলিশ কেনি।
অন্যদিকে, ফ্যাশনেবল রিয়ানা সোয়েটার ভেস্টকে নিয়ে গেছেন পার্টিতে। ওভারসাইজড সোয়েটার ভেস্ট, ঢিলেঢালা ট্রাউজার, হিলস, জুতসই গয়না আর টোট ব্যাগ—এতেই চমকে দিয়েছেন কুইন রিরি। ফলে ক্যাজুয়াল, স্ট্রিট ফ্যাশন—সব ছাড়িয়ে পার্টিওয়্যার হিসেবেও সমাদর পাচ্ছে প্রিয় সোয়েটার ভেস্ট।
এই সিজনে ওল্ড স্কুল ফ্যাশন মাতিয়ে রাখছে সবাইকে, সোয়েটার ভেস্টের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে আগ্রহের পারদের ঊর্ধ্বগতি। ওয়ার্ক ফ্রম হোম, নিউ নরমাল অফিস, পার্টি কিংবা ক্যাজুয়াল ওয়্যার—সোয়েটার ভেস্ট এখন ফ্যাশনিস্তাদের পরিচায়ক। স্টাইলিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু একটু খেয়াল রাখতে হবে। সোয়েটার ভেস্ট হচ্ছে টপওয়্যার। এর সঙ্গে বটমের যুগলবন্দিতে পোশাকে পূর্ণতা আসবে। এই ম্যাচের ক্ষেত্রে প্রপোরশনের দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
টপ হিসেবে সোয়েটার ভেস্ট বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে নজর রাখা চাই বাস্টের মাপে। বাস্টি বডি শেপের ক্ষেত্রে ডিপ ভি নেক সোয়েটার ভেস্ট ভালো মানাবে। এতে বাস্টের অংশে সোয়েটার ভেস্ট আটকে থাকবে না। বডিতে থাকবে সঠিকভাবে।
বডি শেপের ওপরের অংশের মাপের দিকে নজর দিতে হবে। এই পার্ট যদি বডির পুরো অংশের তুলনায় কম দৈর্ঘ্যরে হয়, তাহলে বাকি সোয়েটার ভেস্টের মাপ এমন হতে হবে, যাতে তা শেষের অংশে, অর্থাৎ কোমরের থেকে খানিকটা নিচে শেষ হয়। এর ফলে সোয়েটারটি দেহের মাপমতো ফিট হয়েছে বলে মনে হবে।
সম্প্রতি সোয়েটার ভেস্ট লেয়ারিংয়েরও চল দেখা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ফুলস্লিভ শার্ট পরে, বাটন ডাউন করে রেখে পরে নেওয়া যায় ভেস্ট। আবার চাইলে হাফস্লিভ কিংবা ফুলস্লিভ পরে নেওয়া যায় ইনার হিসেবে। লেয়ারিংয়ে ইনার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আরাম ও স্বস্তিকে গুরুত্ব দিলে পোশাকের আরাম বেড়ে যাবে। বটমের ক্ষেত্রে রেগুলার, ক্যাজুয়াল আর স্ট্রিট ফ্যাশনে ওয়াইড লেগ ট্রাউজার বেশ চলছে। স্টাইলিংয়ে এগুলো ব্যবহার করে দেখা যায়।
পার্টিওয়্যার হিসেবেও কিন্তু গ্রহণযোগ্যতা আছে সোয়েটার ভেস্টের। রোমান্টিক ডেটেও যাওয়া যায় এটি পরে। ফ্রিলি প্যাটার্নের কোনো পোশাকের সঙ্গে পেয়ার আপ করে নিতে চাইলে ক্রপ সোয়েটার ভেস্ট ভালো অপশন। এর সঙ্গে পায়ে বুট থাকলে, ডিভা লুক রেডি!
অফিস ওয়্যার হিসেবে সোয়েটার ভেস্ট পরতে চাইলে লেয়ারিংয়ে ইনারে রাখা যায় ওয়ান কালার হোয়াইট বেসিক শার্ট অথবা টপ। এর সঙ্গে ওয়াইড লেগ ট্রাউজার আর কিটেন হিলে পাওয়া যাবে পারফেক্ট প্রফেশনাল লুক। অফিসে ক্ল্যাসিক প্রেপি লুক চাইলে ব্লেজার পরে নেওয়া যায় ভেস্টের সঙ্গে। আর বটমে স্কিনি ট্রাউজার। এর সঙ্গে গয়না পরতে চাইলে পার্ল বেশ মানিয়ে যাবে। অফিস-রেডি লুকে বাটন আপ শার্ট আর ডেনিমের সঙ্গে সোয়েটার ভেস্ট মানাবে। ক্লজেটে বেসিক কালার টারটেল নেক থাকলে লেয়ারিংয়ের কাজটা সহজ হবে। এর সঙ্গে ডেনিম আর অ্যাংকেল বুটে অতুলনীয়। ডেনিমের জায়গায় লেগিংসের মেলবন্ধন করতে চাইলে বেছে নেওয়া যায় ওভারসাইজড শার্টের লেয়ারিং।

 সারাহ্ দীনা
মডেল: মারিয়াম
ওয়্যারড্রোব: আইকনিক
ছবি: জিয়া উদ্দীন
লোকেশন: উনান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top