সেলুলয়েড I লস্ট হাইওয়ে
পরিচালক: ডেভিড লিঞ্চ
চিত্রনাট্য: ডেভিড লিঞ্চ, ব্যারি জিফোর্ড
অভিনয়: বিল পুলম্যান, প্যাট্রিসিয়া আর্কুয়েট, বালথাজার গেটি, রবার্ট ব্ল্যাক
সিনেমাটোগ্রাফার: পিটার ডেমিং
সময়ব্যাপ্তি: ১৩৪ মিনিট
ভাষা: ইংরেজি
দেশ: যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স
মুক্তি: ১৫ জানুয়ারি ১৯৯৭
লোকটির নাম ফ্রেড। একদিন কালো স্যুট ও ভুতুড়ে সাদা মেকআপের এক আগন্তুকের সঙ্গে পার্টিতে দেখা হয় তার। আগন্তুক জানায়, আগেও দেখা হয়েছিল তাদের, স্বয়ং ফ্রেডের বাড়িতে। কিন্তু সেই দাবি উড়িয়ে দেয় ফ্রেড। তার মনে শিহরণ জাগিয়ে রহস্যময় লোকটি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে থাকে, সে এখনো ফ্রেডের বাড়িতেই রয়েছে! সেই উদ্ভট দাবির পক্ষে প্রমাণ দিতে ফ্রেডের হাতে সেলফোন তুলে দেয় সে। বাড়িতে ফোন করে ফ্রেড বুঝতে পারে, মিথ্যে বলেনি আগন্তুক! কিন্তু একই সঙ্গে একই সময়ে দুটি জায়গায় একই লোকের অবস্থান কীভাবে সম্ভব?
এমনই রহস্যজাগানিয়া, অনভ্যস্ত প্রেক্ষাপটের হরর সিনেমা ‘লস্ট হাইওয়ে’। আমেরিকান মাস্টার ফিল্মমেকার ডেভিড লিঞ্চ এই সিনেমা বানিয়েছেন অনেকটাই নিও-নোয়্যা ভঙ্গিমায়। এর পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে বাস্তব-অবাস্তবের অন্ধকারাচ্ছন্ন আবহ ঘেরা এক প্যারাডক্স। সেই রহস্যের ভাঁজ শেষাবধি খোলেননি লিঞ্চ। দায়ভার রেখে দিয়েছেন দর্শকের একান্ত মনোজগতের ওপর।
এখানে ফ্রেড চরিত্রটি পেশায় একজন জ্যাজ স্যাক্সোফোনিস্ট। শারীরিক সম্পর্কে যথেষ্ট সক্ষম নয় সে। স্ত্রী পরকীয়ায় মত্ত—এই সন্দেহ তার মনে প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে। তারা যখন তাদের বাড়িতেই ধারণ করা অজ্ঞাত সূত্র থেকে আসা ভিডিও টেপ পেতে শুরু করে, ফ্রেডের মনে ভীতি জাগে—নিশ্চয়ই কেউ তাকে অনুসরণ করছে। এদিকে ফ্রেডের স্ত্রীর পাশাপাশি গ্যাংস্টার মিস্টার এডির প্রেমিকা—উভয় চরিত্রেই একই অভিনেত্রীকে ব্যবহার করে লিঞ্চ এই সিনেমার টুইস্টে রহস্যের কুয়াশা আরও কয়েক স্তর বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে সিনেমাটির চরিত্রগুলোর সঙ্গে, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় চরিত্রের জীবন ঘিরে যত কান্ড ঘটতে থাকে, তাতে বাস্তবতা আর দুঃস্বপ্নময় অবাস্তব যেন একাকার হয়ে যায়।
সিনেমাটির আসল তাৎপর্য অবশ্য কিংবদন্তি স্নায়ুবিশারদ সিগমুন্ড ফ্রয়েডের সাইকোলজিক্যাল থিওরিতে নিহিত: বাস্তবতার সঙ্গে সংযোগ খুইয়ে ফেলে স্ত্রীকে খুন করা, তারপর কারাগার থেকে পালিয়ে নিজ জীবনের এক অবচেতন প্রজেকশনের ভেতর ঢুকে পড়া এক সিজোফ্রেনিক পুরুষের কাহিনি এটি। এখানে প্রধান তিন চরিত্র পিট, রহস্যময় লোক ও মিস্টার এডি—ফ্রয়েডের তত্ত্ব অনুসারে মানুষের মনোজগতের তিনটি অংশ ইগো, আইডি ও সুপার-ইগোর প্রতিনিধিত্ব করে।
নান্দনিকতা ও পারিপার্শ্বিক স্বরের প্রশ্নে ‘লস্ট হাইওয়ে’কে একটি মাস্টারপিস সিনেমা হিসেবে গণ্য করেন অনেক চলচ্চিত্র বোদ্ধা। এখানে এমন দুর্দান্তভাবে কয়েলের মতো পেঁচিয়ে উঠতে থাকে টেনশনের মাত্রা, তাতে দর্শক নিজেকে যেন অনুভব করেন একা রুমে আটকে পড়া চরম ভীতিকর পরিস্থিতিতে। প্রতিটি দৃশ্য থেকেই চুইয়ে পড়তে থাকে অস্বস্তি ও আতঙ্কের বিবিধ বোধ। আর সেই ডিস্টার্বিং প্রেক্ষাপটে বাড়তি মাত্রা জোগায় একটি সার্বিক ভীতসন্ত্রস্ত অভিজ্ঞতা। ফলে সাসপেন্স ও আতঙ্ক ছড়ানো মুহূর্তজাগানিয়া ‘লস্ট হাইওয়ে’ দর্শককে জীবন-রাস্তার অশেষ ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় প্রান্তরে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়।
আরিফুল ইসলাম
কুইজ
১। ‘লস্ট হাইওয়ে’তে কার তত্ত্বের আবহ রয়েছে?
[ক] কার্ল ইয়ুং
[খ] সিগমুন্ড ফ্রয়েড
[গ] ইমানুয়েল কান্ট
[ঘ] চার্লস ডারউইন
২। ফ্রেডের বাসায় অজ্ঞাত সূত্র থেকে আসা ভিডিও টেপ কোথায় ধারণ করা হয়েছে?
[ক] নির্জন প্রান্তরে
[খ] সমুদ্রসৈকতে
[গ] আবাসিক হোটেলে
[ঘ] নিজের বাড়িতে
৩। ডেভিড লিঞ্চ কোন দেশি ফিল্মমেকার?
[ক] যুক্তরাষ্ট্র
[খ] যুক্তরাজ্য
[গ] ফ্রান্স
[ঘ] অস্ট্রেলিয়া
গত পর্বের বিজয়ী
১. মেহেদি হাসান, বাড্ডা, ঢাকা,
২. রাইসা ইসলাম, মোহাম্মদপুর, ঢাকা,
৩. নাফিজা দৌলা, হালিশহর, চট্টগ্রাম।