skip to Main Content

ফিচার I কৌশলে ভোজনসিদ্ধি

শিশুদের স্বাদ, রুচি ও ক্ষুধা পরিপক্ব মানুষের মতো নয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য খাদ্য গ্রহণ চা-ই চাই। তাই এ নিয়ে মায়েদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। কিছু কৌশল খাটিয়ে শিশুকে প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দেওয়া যেতে পারে। দূর হবে মায়েদের চিন্তাও

শিশুদের খাওয়ানো নিয়ে মায়েদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। ‘ও একদম খেতে চায় না’—সব সময় এমন অভিযোগ। তাই আদরের সন্তানকে খাওয়াতে বিভিন্ন কৌশল নেন মায়েরা। যেমন ছোটবেলায় মায়েরা গোল গোল করে ভাতের বল বানিয়ে থালার চারপাশে ছড়িয়ে রেখে বলতেন—‘এটা তোমার দাদু, এটা তোমার বাবা, এটা আম্মু…’ ইত্যাদি। এমন করলে ওই শিশু একে একে ভাতের গোলাগুলো খেত। অনেক পিতামাতাই সন্তানকে খেলনা কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে খাবার খাওয়ান। এটাও একধরনের ট্রিক। কিন্তু এসব কৌশলের কয়েকটি আবার হিতে বিপরীত হতে পারে। শিশুদেরকে অনেক সময় চকোলেটের লোভ দেখিয়ে খাওয়ানো হয়। এতে সেই সময় শিশুটি খায় বটে, কিন্তু তার মননে নৈতিক অবক্ষয়ের বীজ রোপণ হয়ে যায়। শারীরিক উন্নতি ঘটাতে গিয়ে যেন শিশুর মানসিক অবক্ষয় না ঘটে, সে বিষয়ে প্রত্যেক মায়েরই সতর্ক থাকা চাই।
খাবারের প্রতি শিশুদের অনীহা নিয়ে বিশ্বে বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে। সেসব জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের প্রায় ৮৫ শতাংশ বাবা-মা শিশুর খাদ্যাভ্যাসকে নিজেদের মতো নিয়ন্ত্রণ করতে চান। আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকসের মতে, কতটুকু খাবে—তা শিশুর ওপরে ছেড়ে দেওয়াই ভালো। কারণ, শিশুরা নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য গ্রহণের সক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। তবে শিশু কখন খাবে, কী খাবে, কীভাবে খাবে—এ বিষয়গুলো মায়ের হাতে রেখে দেওয়াই ভালো।
হুট করেই শিশুর খাদ্যাভ্যাস তৈরি হয় না। সেটা তৈরির ভার বাবা-মায়ের ওপর। প্রতিদিন শিশুর খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিলে কিছুদিন পর ঠিক ওই সময়েই শিশুর ক্ষুধা পাবে। ফলে স্বেচ্ছায় ওই সময়ে শিশু খাদ্য গ্রহণ করবে। এটা শিশুর খাদ্যাভ্যাস গঠনের একটি কৌশল। কিন্তু অনেকেই সন্তানকে অসময়ে খাবার খাইয়ে রুটিন ব্রেক করেন। এতে শিশুর খাদ্যাভ্যাস গঠিত হয় না। এমনকি অসময়ে অল্প একটু খাবারও শিশুর ক্ষুধা নষ্ট করে দিতে পারে। ওপরে বলা হচ্ছিল চকোলেটের প্রলোভন দেখিয়ে খাওয়ানোর কথা। এমনটা করলে শিশুর ধারণা হতে পারে, শাকসবজি ও ভাতের চেয়ে চকোলেটই ভালো খাবার। এতে ধীরে ধীরে শিশুটি সাধারণ খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। শিশুর প্রতি কৌশল খাটাতে গিয়ে অপকৌশল প্রয়োগ না করার বিষয়ে তাই সাবধান থাকা উত্তম।
কিছু শিশু পরিবারের সবার সঙ্গে একই খাবার খেতে চায় না। মূলত শিশুর খাদ্যাভ্যাস গঠনে খানিকটা সময় লাগে। কারও কারও ক্ষেত্রে এই সময়টা একটু দীর্ঘ। এই অবস্থায় শিশুর মা আলাদা করে খাবার রান্না করেন। এটা মোটেও ঠিক নয়। কেননা, তা করলে শিশুটির খাদ্যাভ্যাস তৈরির সময়টা আরও দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা থাকে। তত দিনে তার পুষ্টিস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। এই অবস্থায় মায়েদের উচিত পরিবারের বাকি সবার সঙ্গেই শিশুকে খেতে বসানো। তার জন্য আলাদা খাবার তৈরি না করে যা রান্না হয়েছে, সেখান থেকেই পছন্দমতো খাবার তুলে খেতে দেওয়াই শিশুর জন্য ভালো। কোনো শিশু যদি মাংসের তরকারি থেকে শুধু আলুটুকু তুলে খেতে চায়, তাহলে তাকে সেটাই করতে দেওয়া উচিত। যদি না খেতে চায়, তাহলে খুব একটা তোষামোদ না করে ক্ষুধা উপলব্ধি করতে দেওয়া শিশুর জন্য মঙ্গল। এতে করে ক্ষুধা পেলে ঠিকই খাবে এবং না খাওয়ার কুফল সম্পর্কে ধারণা পাবে সে।
শিশুদের অপছন্দের তালিকায় থাকে শাকসবজি। মায়েরা এই পদই শিশুকে জোর করে খাওয়াতে চান। কিন্তু নিয়মিত জোরজবরদস্তির ফলে শাকসবজির ওপর অনীহা আরও বাড়ে। দুটি কৌশলে এই সমস্যা কাটানো যায়। প্রথমত, শাকসবজি থেকে যে পুষ্টি মেলে, তা পাওয়া যেতে পারে অন্য কোনো মজাদার ফলে। শিশুকে সেই ফল খাইয়ে পুষ্টির চাহিদা মেটানো সম্ভব। দ্বিতীয়ত, শাকসবজি দিয়ে মুখরোচক পদ তৈরি করে দেওয়া যেতে পারে। যেমন সবজি দিয়ে ফ্রায়েড রাইস। রেস্তোরাঁর মতো করে রেঁধে দিলে শিশুরা তা খুব আগ্রহ নিয়েই খায়। সঙ্গে দেওয়া যাতে পারে ফ্রায়েড চিকেন, তবে পরিমাণমতো। অনেক শিশু স্মুদি খেতে পছন্দ করে। এ ক্ষেত্রে ফলের সঙ্গে বাঁধাকপি, গাজর, পালংশাক, পেঁপে, শসা ইত্যাদি মিশিয়ে স্মুদি তৈরি করা যেতে পারে।
শিশুর মস্তিষ্ক খাদ্য ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা বোঝার মতো পরিপক্ব নয়। তাই তাকে এসব বিষয়ে বর্ণনা না দিয়ে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করাই শ্রেয়। এ ক্ষেত্রে খাবার তৈরির সময় শিশুকে পাশে রাখা যেতে পারে। এতে শিশুর মনে ওই খাবারের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় এবং নিজ ইচ্ছাতেই তা খাওয়ার চেষ্টা করে। তবে হ্যাঁ, রসুইঘরের আগুন কিংবা বিষাক্ত দ্রব্য থেকে শিশুকে সাবধানে রাখতে হবে। নিজ হাতে খেতে দিলেও শিশুরা সাধারণত আগ্রহ নিয়ে খায়। জামাকাপড় নোংরা হওয়ার আশঙ্কা ঝেড়ে ফেলে মা-বাবার উচিত শিশুকে খাবারের স্বাদ, গন্ধ ও স্পর্শের সঙ্গে পরিচিত হতে দেওয়া। তা ছাড়া শিশুদের খাবারের স্বাদ বাড়াতে ছোটবেলা থেকেই তার রান্নায় বেশি মসলা, তেল ও লবণ মেশানো একদম ঠিক নয়। যদি ছোটবেলাতেই এসবের স্বাদ পেয়ে যায়, তাহলে কম স্বাদের খাদ্য সে খেতে চাইবে না।
শিশুরা বেশ অনুকরণপ্রিয়। বাবা-মায়ের স্বভাব শিশুকে প্রভাবিত করে। তাই শিশুর সামনে কোনো খাবারের বিষয়ে নিন্দা করা ঠিক নয়। এতে ওই খাবারের প্রতি তার অনীহা তৈরি হয়ে তা সারা জীবনই থেকে যেতে পারে। এমনকি ডায়েট ও বেশি খাওয়ার কুফল বিষয়েও শিশুর সামনে আলাপ করা ঠিক হবে না। একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত শিশুকে খাওয়ার স্বাধীনতা দিলেই ভালো।
শিশুদের খাদ্য অনুষঙ্গগুলো শিশুসুলভ হওয়াই উত্তম। তাদের থালা, গ্লাস, চামচ ইত্যাদি পৃথক হওয়া যেমন স্বাস্থ্যসম্মত, তেমনি সেগুলোতে একটু খেলনা-খেলনা ভাব থাকলে, ওসবে খাবার খেতে শিশু বেশ আগ্রহ পায়। তা ছাড়া শিশুকে যা খাওয়াতে চান, সেটি তার সামনে আগে নিজে খেলে ভালো ফল মিলবে। সেটি খাওয়ার সময় নিজের চেহারায় তৃপ্তির ভাব ফুটিয়ে তুলতে পারলেও শিশুটি সেই খাবার খেতে আগ্রহ বোধ করবে।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top