অ্যাডভার্টোরিয়াল I আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পথচলা
‘ক্লোদেন’। জার্মান শব্দটির বাংলা দাঁড়ায় ‘বস্ত্র’। এমন সোজাসাপটা নাম নিয়ে বনানী ১১-তে যাত্রা শুরু করেছে ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (টিএডি) গ্রুপের এই লাইফস্টাইল পণ্যের ব্র্যান্ড। ২৬ মার্চ উদ্বোধন হয়েছে রিটেইল শপটির। এ নিয়েই আলাপ হলো প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মো. আশিকুর রহমান তুহিনের সঙ্গে। জানা গেল, তিনি ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্টগ্র্যাজুয়েশন শেষ করেই ঝাঁপিয়ে পড়েন লক্ষ্যপূরণে। নিজের ব্যবসা দাঁড় করানোর জেদ পেয়ে বসে তাকে। ব্যবসা শুরু ১৯৯৮ সালে। সেটি ছিল একটি সোর্সিং হাউস। অধ্যবসায়, পরিশ্রম ও ধৈর্যের মিশেলে তার কোম্পানি ২০১৯ সালে পরিণত হয় গ্রুপে। সেটিই আজকের টিএডি গ্রুপ। ম্যানুফ্যাকচারিং, অটোমোবাইলস, শিপিং, অ্যাভিয়েশন, অ্যান্টিমাসকিউটোস—বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করে এখন পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ক্লোদেন নিয়ে।
আশিকুর রহমান বলেন, ‘২০১৪ সালে আমি হোটেল সোনারগাঁয়ে জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে গল্প করছিলাম। তারা সদ্যই জিম্বাবুয়ে থেকে ফিরেছেন। গল্পে গল্পে তারা জানালেন, জিম্বাবুয়েতে ম্যাচ খেলতে গিয়ে রাতে গার্মেন্টস ওয়াশ করতে দিয়েছেন। সকালে দেখেন, ফুলস্লিভ শর্টস্লিভ হয়ে গেছে! আক্ষেপ নিয়ে তারা বলেন, “আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এক্সপোর্টার, আমাদের কাছ থেকে নাইকি প্রডাক্ট বানিয়ে নিয়ে যায়। বিশ্বের অনেক খেলোয়াড় আমাদের ড্রেস পরে।” আমি বললাম, ঠিক আছে, একটু ট্রাই করি। ২০১৫ সালে আমরা জাতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি করে দিলাম। “বার্নিং সান” নামের একটা থিমের ওপর ওই জার্সি। ব্যাপক সাড়া পেলাম। এরপর ২০১৬-তে আবারও জার্সি করে দিলাম আমরা। নাম দিলাম “সেইভ দ্য সুন্দরবন”। আমরা প্রডাক্টের ওপর প্রচুর আরঅ্যান্ডডি করলাম। এমনকি প্লেয়ার মাশরাফি কতটুকু পা লম্বা করে বল করেন, সেটা পর্যন্ত আরঅ্যান্ডডি করলাম। কারণ, প্লেয়ারদের ট্রাউজার ছিঁড়ে যায়। তারা রোদে ঘামতে থাকেন। তা ছাড়া খেয়াল রাখলাম, কোথায় খেলা হচ্ছে, সেই জায়গার টেম্পারেচার কত। জার্সির কারণে প্লেয়ারদের শরীর যেন না চুলকায়, সে আরঅ্যান্ডডি করে থিম বেইজড জার্সি বানালাম। প্লেয়াররা খুশি হলেন। ক্রিকইনফোতে চার মাস টপ র্যাঙ্কিংয়ে ছিল বাংলাদেশের জার্সি।’
মূলত জার্সি তৈরির পর থেকেই পোশাকবিষয়ক ব্র্যান্ড নির্মাণের চিন্তা করেন আশিকুর রহমান। আরও একটি তাড়না ছিল তার মধ্যে। মূলত দেশের মধ্যেই আন্তর্জাতিক মানের পোশাকপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে চান তিনি। বললেন, ‘বিশ্ব এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। এখন অন্যান্য দেশের সঙ্গে নিজেদের পোশাকের তুলনা করছি আমরা। বিদেশি পোশাক পরার জায়গা থেকে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আমরা যারা ম্যানুফেকচার করি, সেইম এক্সপোর্ট কোয়ালিটি, সেইম প্রডাক্ট, সেই স্ট্যান্ডার্ড লোকাল মার্কেটে দিতে চাই।’
ক্লোদেনের পোশাকের বিশেষত্ব তাদের আরঅ্যান্ডডি। আলাপের মাঝেই ক্লোদেনের একটি পাঞ্জাবি আনিয়ে নিলেন আশিকুর রহমান। দেখালেন পকেটের গভীরতা। জানালেন, অন্যান্য পাঞ্জাবির পকেট ঠিক কোন জায়গায় ছিঁড়ে যায়। সেই জায়গা নিয়ে গবেষণা করেছে ক্লোদেন। ছিঁড়ে যাওয়া রোধে ছোট একটি ধাতব টুকরাও যুক্ত হয়েছে পাঞ্জাবির পকেটে। ‘একটি পোশাকের যেসব জায়গায় স্ট্রাগল পয়েন্ট, আমরা সেখানে পয়েন্ট আউট করি; যাতে সে জায়গায় ওই সমস্যাটা না হয়। আমাদের প্রতিটি পণ্য ল্যাবে পরীক্ষিত। আমাদের স্ট্যান্ডার্ড লেভেলটা সেখানে নিতে চাচ্ছি, যেটা হবে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড’, বললেন তিনি।
কো¬দেন আউটলেটে মিলবে বাহারি লাইফস্টাইল পণ্য। পারফিউম, ওয়ালেট, সুজ ইত্যাদি। মূলত পোশাকের অনুষঙ্গ বলতে যা বোঝায়, সেগুলোই থাকবে বেশি। সাধারণ ব্যবসায়ীদের মতো কেবল বেনিয়াবৃত্তি নয়, বরং আশিকুর রহমান দেশপ্রেমের ঠাঁই দিচ্ছেন নিজের বাণিজ্যে। দেশি তাঁতিদের কথাও ভোলেননি। বললেন, ‘আমরা বিবি রাসেলের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তিনি আমাদের দেশের তাঁতিদের প্রমোট করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা ইয়াং জেনারেশনের কাছে তাঁতকে পৌঁছে দিতে চাই। সেটা ফিউশনের মাধ্যমে।’
ডিজাইন কপির বাতিক থেকে বেরিয়ে সৃজনশীল ডিজাইনারদের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে ক্লোদনের ডিজাইন সেকশন। কাস্টমারদের প্রথমত ডিজাইন দিয়ে আকৃষ্ট করতে চায় ব্র্যান্ডটি। প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় লক্ষ্য রিপিটেড কাস্টমার বাড়ানো। আশিকুর রহমান বলেন, ‘কেউ যদি দ্বিতীয়বার আমার শপে আসেন, তাহলে তিনিই আমার কাস্টমার। সেটা কী দিয়ে হবে? কোয়ালিটি অ্যান্ড প্রাইস। আপনি যখন দুটির ম্যাচআপ পাবেন, অ্যাজ আ রিটেল কাস্টমার আবার আমার কাছে আসবেন। আমরা এই কম্বিনেশনে যাব। তবে আমরা লো প্রাইস বলতে চাই না। আমরা এটিকে কমপিটিটিভ প্রাইস বলতে চাচ্ছি।’
টিএডি গ্রুপে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জন স্টাফ কাজ করছেন। কর্মসুযোগ তৈরিতেও নজর রাখে ক্লোদেন। এর কর্ণধার বলেন, ‘আমাদের শপগুলোতে ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টদের আওয়ার বেসিসে কাজ করার সুযোগ দিতে চাই। তা ছাড়া প্রোডাক্ট বিক্রির একটা অংশ সমাজসেবামূলক কাজে খরচ করার পরিকল্পনা করছি। আমরা শুধু বিজনেস করব না, দেশের জন্যও কাজ করব। আমরা দেশের প্রমোশনে কাজ করব। এমপ্লয়মেন্টে কাজ করব। এটার ভেতর থেকে আমরা বিজনেস করব।’
ব্যক্তিজীবনে খুব সংসারমুখী আশিকুর রহমান। অবসর সময়টা কাটান পরিবারের সঙ্গে। ভালোবাসেন সন্তানকে নিয়ে স্টিমে বসে আড্ডা দিতে। জাংক ফুড ছাড়া মোটামুটি সব ধরনের খাবারই পছন্দ তার। সুস্থ থাকতে সপ্তাহে চার দিন করেন জিম, সঙ্গে সুইমিং। বিপুল উদ্যমী এই ব্যক্তি মনে করেন, শর্টকাট বলতে কিছু নেই। প্রতিটি জিনিস হয়ে ওঠার জন্য একটা সাসটেইনেবল সময় দিতে হয়। সৎভাবে লক্ষ্য সেট করে এগিয়ে গেলে সাকসেস আসতে বাধ্য।
ফ্যাশন ডেস্ক
ছবি: ক্যানভাস