টেকসহি I পোকাপ্রাণিত
প্রাণ জোগাবে ত্বকে। রুখে দেবে বয়স, বাড়াবে উজ্জ্বলতা। কী, বিশ্বাস হচ্ছে না? ফাহমিদা শিকদারের লেখায় বিস্তারিত
বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে যখন নিষ্ঠুরতামুক্ত টেকসই ভেগান পণ্যের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে, ঠিক তখনই আবির্ভাব হলো এন্টোভেগান বিউটির। এন্টোভেগান টার্মটি নতুন না হলেও এ সময়ে খুব একটা প্রচলিত নয়। এন্টোভেগানিজম এমন এক ধরনের ভেগান ডায়েট মুভমেন্ট, যেখানে প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য এর অনুসারীরা পোকামাকড় খেয়ে থাকেন। এই মুভমেন্টের প্রবর্তক জশ গাল্ট। তার মতে, পোকামাকড় প্রাণী হলেও এটি খাওয়া পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। নৈতিকভাবে পোকামাকড় চাষাবাদে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যের পর্যায়ে। পৃথিবীতে এমন কিছু পোকামাকড় আছে, যা পুষ্টির দিক দিয়ে অনেক মাছ, মাংস, শাকসবজিকেও হার মানায়। জশ গাল্ট কম্বোডিয়াভিত্তিক ইনসেক্ট স্ন্যাক কোম্পানি বাগ বেকনের প্রতিষ্ঠাতা। পাশাপাশি তিনি অ্যাভান্ট-গার্ড স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড ইনসেক্ট বিউটি এলএলসির প্রধান উদ্যোক্তাও।
সম্প্রতি ইনসেক্ট বিউটি এলএলসি, সিবু সি বেরি থেরাপি নামের আমেরিকান ন্যাচারাল স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ডের সঙ্গে কোলাবরেশন করে বাজারে এনেছে একটি এন্টোভেগান স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট। পয়েন্টসিক্সএইট ফেস অয়েল। এটি পৃথিবীর প্রথম স্কিন অয়েল, যাতে ব্যবহার করা হয়েছে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের লার্ভা থেকে নিঃসৃত তেল। অনেকেই এখন পরিবেশবান্ধব ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের লার্ভা বা সোলজার গ্রাব তেলকে স্কিনকেয়ার দুনিয়ার নতুন সুপারস্টার ইনগ্রেডিয়েন্ট বলে অ্যাখায়িত করেছেন।
সত্যি বলতে ত্বকের যত্নে ফেস অয়েল ব্যবহার করাটা বাধ্যতামূলক নয়। যারা ম্যাক্সিমালিস্ট স্কিনকেয়ার রুটিন অনুসরণ করেন, তাদের এটি ব্যবহার করতে দেখা যায়। অনেক ডার্মাটোলজিস্ট ও এস্থেটেশিয়ানের মতে ময়শ্চারাইজারের বিকল্প হিসেবে এটি ব্যবহার করা যায়। ত্বকের বিশেষ যত্নের জন্য ফেস অয়েল বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এটি স্কিনকেয়ার রুটিনের একদম শেষ ধাপে ব্যবহার করা হয়। এর নানা ধরনের উপকারিতা আছে। ফেস অয়েল ত্বকের ময়শ্চার লক করার পাশাপাশি ত্বককে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলে। বলিরেখা প্রতিরোধ ও দূর করতে সহায়তা করে। যাদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক, তাদের জন্য এটি আদর্শ স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট। ক্ষতিগ্রস্ত স্কিন ব্যারিয়ার সারিয়ে তুলতে ফেস অয়েলের জুড়ি মেলা ভার। এ ছাড়া এটি রোমকূপ ছোট করতে সহায়ক (জোজোবা, ম্যাকাডেমিয়া, ক্যামেলিয়া)। কিছু ফেস অয়েল (ট্রি টি অয়েল) ব্রণ সারাতে পারে। পয়েন্টসিক্সএইট ফেস অয়েলকে অল ইন ওয়ান স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। এই বিশেষ তেল একই সঙ্গে ময়শ্চারাইজিং ক্রিম, অ্যান্টি এজিং ক্রিম, অ্যান্টি এজিং ও স্কিন ব্যারিয়ার রিপেয়ার ফর্মুলাযুক্ত সেরাম, এসেন্স বা টোনারের কাজ করতে পারে বলে দাবি এর প্রস্তুতকারকদের। মাল্টিটাস্কিং এই ফেস অয়েলকে একটি সাসটেইনেবল স্কিনকেয়ার প্রডাক্টও বলা যেতে পারে।
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এত কিছু থাকতে কেন পোকামাকড় দিয়ে তেল বানাতে হবে? পোকামাকড়, বিশেষ করে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের লার্ভা হচ্ছে প্রকৃতির সবচেয়ে দক্ষ রিসাইক্লার। এটি নষ্ট জৈব পদার্থকে প্রোটিন, খনিজ ও ওমেগা ৩, ৬, ৯সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডে আপসাইকেল করতে সক্ষম। অনেক এন্টোভেগান শরীরে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সোলজার গ্রাব খেয়ে থাকেন। বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইসহ অন্যান্য পোকামাকড়ের তেল মানবদেহের জন্য পুষ্টিগত দিক দিয়ে অধিক কার্যকর। এ ছাড়া এর স্কিন বেনিফিটের কথা বলে শেষ করা যাবে না।
বিশ্বে লরিক অ্যাসিডের অন্যতম সমৃদ্ধ উৎস হচ্ছে সোলজার গ্রাব তেল। এই মিডিয়াম চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে গভীর থেকে একই সঙ্গে ময়শ্চারাইজ ও হাইড্রেট করে। ফলে ত্বক উজ্জ্বল ও সতেজ থাকে। সোলজার গ্রাব তেল সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ও পরিবেশদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে স্কিন ব্যারিয়ারকে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখে। এর ভেতর আরও আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদান, যা ত্বককে ব্রণ বা অন্য কোনো ইনফেকশন থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। সোলজার গ্রাব তেল ত্বকের কোষকে কোমলভাবে পুনরুজ্জীবিত করে এবং ত্বকের যেকোনো ধরনের ইনফ্ল্যামেশন দূর করে।
পয়েন্টসিক্সএইট ফেস অয়েল শতভাগ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি। এমনকি প্রিজারভেশনের জন্য কোনো রাসায়নিক উপাদান এতে ব্যবহার করা হয়নি। সোলজার গ্রাব এক্সট্রাক্ট অয়েল এর মুখ্য উপদান হলেও এতে আছে আরও কিছু শক্তিশালী উদ্ভিজ্জ তেল, যেমন—আরগান কার্নেল, সূর্যমুখী বীজ, রোজহিপ বীজ, সি বাকথর্ন বীজ, সি বাকথর্ন ফল, বাকুচি, ল্যাভেন্ডার, পাচুলি পাতা, ফ্র্যানকিনসেন্স বা লোবান থেকে সংগৃহীত তেল এবং ভিটামিন ই অয়েল। পুষ্টির সর্বোচ্চ কার্যক্ষমতা নিশ্চিত করতে পয়েন্টসিক্সএইট ফেস অয়েলের প্রতিটি উপাদান ইনডিপেনডেন্ট ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ব্যবহার করা সব কয়টি উপাদানই স্পেশাল অর্গানিক সার্টিফায়েড, জিএমও (জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অর্গানিজম) ও গ্লুটেনমুক্ত।
বাজারে থাকা অন্য সব অর্গানিক, ন্যাচারাল স্কিনকেয়ার প্রডাক্টের চেয়ে পয়েন্টসিক্সএইট ফেস অয়েল একদম আলাদা; কারণ, এটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে সুপারক্রিটিক্যাল কার্বন ডাই-অক্সাইড নিষ্কাশনপ্রক্রিয়া। সাধারণত বোটানিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট দিয়ে যখন কোনো প্রডাক্ট বানানো হয়, তখন ওই উপাদানের পুষ্টির মান নানা রকম পদ্ধতির মাঝে পড়ে কমে আসে। কিন্তু এই সুপারক্রিটিক্যাল কার্বন ডাই-অক্সাইড নিষ্কাশনপ্রক্রিয়ায় উপাদানগুলোর পুষ্টিমান সর্বোচ্চ মাত্রায় অক্ষুণ্ন থাকে। সি বাকথর্ন ফল ও বীজের তেল এভাবে সংরক্ষণ করা হয়। তাই এই তেলে আছে সর্বোচ্চ স্তরের ওমেগা-৭, যা ত্বকে কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে।
এই অভিনব ফেস অয়েল দূরপ্রাচ্যের বাজার মাতিয়ে বেড়াচ্ছে। মেইনল্যান্ড চীন ও হংকংয়ে এর চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলছে। জশ গাল্ট বলেন, ‘পয়েন্টসিক্সএইট সম্পর্কে কনজ্যুমারদের কাছ থেকে আমরা সব সময় ভালো ফিডব্যাক পেয়ে এসেছি। যেহেতু এটি বিশ্বের প্রথম ইনসেক্ট অয়েল, তাই প্রথম প্রথম অনেকে ব্যবহার করতে দ্বিধাবোধ করছিল। এই তেল ‘কী এবং কেন’, তা সবাইকে রোড শোর মাধ্যমে বোঝাতে হয়েছে। এরপর যখন সবাই নিজেদের ত্বকে পয়েন্টসিক্সএইট ব্যবহার করল, তখন অন্তত ৭৫ শতাংশ মানুষ এটি পছন্দ করে।’ সম্প্রতি পয়েন্টসিক্সএইট সেরা স্কিনকেয়ার পণ্যের জন্য লাইফস্টাইলস অব হেলথ অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি (খঙঐঅঝ হংকং ২০২১) অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। এই অর্জন পয়েন্টসিক্সএইটের জনপ্রিয়তাই কেবল বাড়িয়ে দেয়নি, বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে এন্টোভেগান পণ্যের জন্য এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
মডেল: বর্ণ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দীন