ত্বকতত্ত্ব I পরিবৃত্তির পালা
বৈশাখ শুরু হতে না হতেই গরম পড়তে শুরু করেছে পুরোদমে। তাই পাল্টে নেওয়া চাই পরিচর্যা আর মেকআপ পণ্য। প্রস্তুতি সারতে হবে এখনই
ঠা ঠা রোদ্দুর আর প্যাচপ্যাচে ঘাম, গরমে বেহাল! ত্বক-চুলের বারোটা বাজাতেও যথেষ্ট। তাই বাড়তি পরিচর্যা তো প্রয়োজন পড়বেই। এ ক্ষেত্রে প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ ধাপ আবহাওয়া বুঝে বিউটি বক্সের সরঞ্জাম পরিবর্তন। গনগনে গরমে, কনকনে ঠান্ডার সময়ে ব্যবহার করা বিউটি প্রডাক্ট কিন্তু চলবে না!
হালকা ময়শ্চারাইজারের ব্যবহার
ভারী ক্রিম শুষ্ক শীতের সময়ে ত্বকের যত্নে বেশি উপযোগী। গরমে এগুলোর ব্যবহারে ত্বকে আঠালো ও চটচটে হয়ে উঠতে পারে। ঘামের মাত্রাও বেড়ে যাবে। যখন আবহাওয়া ঠান্ডা ও শুষ্ক থাকে, তখন ভারী ময়শ্চারাইজার ত্বকের ট্রান্সপিডার্মাল স্তরের ক্ষতি কমাতে ভালো ইমোলিয়েন্টের কাজ করে। তাপমাত্রার সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতার পারদ যখন বাড়ে, তখন ত্বক ময়শ্চারাইজড রাখার জন্য এগুলোর প্রয়োজন না-ও হতে পারে। এ সময় হিউমেক্ট্যান্ট, ইমোলিয়েন্টসহ হালকা ময়শ্চারাইজারগুলো ব্যবহারের জন্য বেশি ভালো হবে। জেল বেসড ময়শ্চারাইজারগুলো এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে; যা ত্বককে চটচটে না করেই জরুরি আর্দ্রতার জোগান দেবে দিনভর।
ক্লিনজার পরিবর্তন
গরমে ওয়াটার বা জেল বেসড ক্লিনজার ব্যবহার করা চাই। এগুলো লাইটওয়েট, নন-গ্রিজি ফর্মুলার হয়, যা ত্বকে ভারী অনুভূত হয় না। ভিটামিন সি, কোকোয়া, অ্যালোভেরা ও নিমের মতো উপাদানে তৈরি ক্লিনজার ত্বকে শীতল, আরামদায়ক অনুভূতি দেবে। ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতার ক্ষতি করবে না। পিউরিফায়িং ফর্মুলার ক্লিনজারগুলো গরমে খুব কাজে দেয়। কারণ, এগুলো ত্বকের গভীর থেকে ধুলা-ময়লা আর জমে থাকা তেল তো দূর করেই, সঙ্গে ত্বকের উপরিস্তরকেও পরিপূর্ণভাবে পরিষ্কার করে তোলে।
সুরক্ষায় সানস্ক্রিন
আমেরিকার প্রথম সারির ডার্মাটোলজিস্ট ড. লেইনের মতে, পৃথিবী উষ্ণ মাসগুলোতে সূর্যের কাছাকাছি চলে যায়। তখন স্বাভাবিকভাবেই অতিবেগুনি রশ্মিগুলো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে ভালো একটি সানস্ক্রিন ত্বকে বিশেষ সুরক্ষা দিতে পারে। নিদেনপক্ষে এসপিএফ-৫০ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা চাই এ সময়। তেলে ত্বকের জন্য ওয়াটারপ্রুফ জেল বেসড সানস্ক্রিন দারুণ কাজে দেবে গরমে। ত্বক মিশ্র অথবা শুষ্ক হলে সানস্ক্রিন বেসড ময়শ্চারাইজার ভালো অপশন। ম্যাট ফিনিশ হলে তো কথাই নেই। আর স্পর্শকাতর ত্বক হলে সানস্ক্রিন ব্যবহারের আগে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া জরুরি।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
পিগমেন্টেশন কারও কাছেই পছন্দনীয় নয়। আর তা যদি হয় সূর্য থেকে সৃষ্ট, তাহলে তো বিপদ! ত্বক থেকে এগুলো মুছে ফেলা খুব কঠিন। বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো সারা বছর ব্যবহার করা যেতে পারে এবং করা উচিত। তবে গ্রীষ্মের মাসগুলোতে সূর্যের ক্ষতি এড়াতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিশেষভাবে সহায়ক। ত্বক যখন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে আসে, তখন ফ্রি র্যাডিক্যাল তৈরি হয়, যা ডিএনএর ক্ষতির পাশাপাশি কোলাজেন ও ইলাস্টিনের ভাঙনকেও ত্বরান্বিত করতে পারে। ভিটামিন সি-এর মতো টপিক্যাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো এ ক্ষেত্রে ইলেকট্রনের মাধ্যমে ফ্রি র্যাডিক্যালগুলোকে স্থিতিশীল করে দেয়। ফলাফল, সূর্যের ফলে সৃষ্ট ক্ষতির পরিমাণ কমে আসে।
গরমে ক্লিনজার, টোনার, ময়শ্চারাইজার অথবা সানস্ক্রিন—যা-ই ব্যবহার করা হোক না কেন, তা যেন ত্বকের ধরন অনুযায়ী হয়। এ সময় নতুন যেকোনো প্রসাধন ব্যবহারের আগে ত্বক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। সৌন্দর্যচর্চার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। ওমেগা-থ্রি এবং সিক্সের মতো ফ্যাটি অ্যাসিড পাল্টে যাওয়া এ মৌসুমে ত্বক সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
এ সময় ত্বক পরিচর্যার সব যন্ত্রপাতি আর মেকআপ টুলগুলোও পরিষ্কার করে নিতে হবে। যেমন ওয়াশক্লথ, স্পঞ্জ, মেকআপ ব্রাশ এবং অ্যাপ্লিকেটর। প্রয়োজনে অদলবদলও করে নেওয়া যায়। অপরিষ্কার টুল ব্যাকটেরিয়া আর ইস্টের প্রজননক্ষেত্র; যা ত্বকে ব্রেকআউট ও সংক্রমণ সৃষ্টি করে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। আর ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবর্তিত সৌন্দর্যপণ্য ত্বকে মানিয়ে যেতে খানিকটা সময় লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরতেই হবে।
স্বর্ণা রায়
মডেল: দোয়েল
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান