skip to Main Content

ফিচার I আয়ুবর্ধক আহার

কিছু খাবার আয়ু বাড়ায়। তবে সেগুলো খেলেই যে শতবর্ষী হওয়া যাবে, তা নয়। ওসব খাদ্য পরিমিত খাওয়ার পাশাপাশি করা চাই ব্যায়াম

মানুষমাত্র সাধারণত দীর্ঘায়ুপ্রত্যাশী। তবে অসুস্থতা ও বার্ধক্য এই আকাঙ্ক্ষা পূরণের অন্তরায়। ফলে দেহকোষ যত সুস্থ রাখা যাবে, পৃথিবীর আলো-বাতাস তত বেশি ভোগ করা যাবে বলে ধারণা অনেকের। শরীরের সুস্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে খাদ্যাভ্যাসের ওপর। তা ছাড়া ব্যায়াম, ঘুম ও মেডিটেশনও কাজ করতে পারে নিয়ামক হিসেবে।
দীর্ঘায়ু লাভে খাদ্যাভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অভ্যাস শুধু ‘কী খাব’-এর ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে না; বরং কীভাবে, কখন খেতে হবে, রন্ধনপদ্ধতি কী হবে—এসবের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। খাবারের পরিমিতি এবং ফলাফলে দীর্ঘায়ু লাভ—এই আলাপে উদাহরণ হিসেবে আসতে পারেন জাপানিরা। তাদের খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে হয়তো আমাদের দেশের লোকেরাও দীর্ঘায়ু প্রত্যাশা করতে পারবেন। তা ছাড়া কিছু খাবার আয়ু বাড়ায়, কিছু আবার কমায়ও।
গড়ে একজন জাপানি সুস্থ শরীর নিয়ে বেঁচে থাকেন প্রায় ৮৪ বছর। এ সময় তাদের হাড়ও থাকে মজবুত। খেয়াল করলে দেখা যায়, বেশির ভাগ জাপানির শরীরে বাড়তি মেদ নেই। এই ফিটনেস ধরে রাখতে বেশ কষ্ট করতে হয় তাদের। মানতে হয় নানান নিয়মকানুন। অনেক হাঁটাহাঁটি করেন জাপানিরা। কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাইকেলের ব্যবহার বেশি তাদের মধ্যে। ছুটির দিনে পাহাড় ডিঙানো কিংবা হাইকিং করে স্বাস্থ্য ঠিক রাখেন তারা। খাবারে দেখান বেশ পরিমিতির পরিচয়। কখনোই উদর পূর্তি করে খান না। ২০ শতাংশ খালি জায়গা রাখেন পেটে, তা ক্ষুধা যতই লাগুক। পেট খালি রেখে এভাবে খাওয়াকে সে দেশে বলে ‘হারা হাচি বু’। ভুল করেও যেন বেশি খাওয়া হয়ে না যায়, তাই তারা খাবার পরিবেশন করেন ছোট পাত্রে। এর মানে কিন্তু এই নয়, জাপানিরা নানান স্বাদের খাবার চাখেন না; বরং তারা এই পরিমিতির মধ্যেও দৈনিক প্রায় ৩০ পদের খাদ্য সাবাড় করে ফেলেন! তবে অল্প অল্প খান।
এসব পদের মধ্যে থাকে টাটকা শাকসবজি, ভাত-মাছ ও ফার্মেন্টেড সয়া। এসবের ফাইটোকেমিক্যালস, ভিটামিন ও মিনারেল দীর্ঘায়ু পেতে সহায়তা করে। রন্ধনশৈলীতেও নজর রাখেন জাপানিরা। তাদের পদগুলো সাধারণত ভাপা, ফার্মেন্টিং, স্লো কুকিং, প্যান গ্রিলিং ও স্টির ফ্রায়িং হয়। এসব পদ্ধতিতে রান্নার ফলে খাবারের পুষ্টিমান অক্ষুণ্ন থাকে। পুষ্টির সবটুকুই তখন শরীরে লাগে।
কিছু কিছু খাবারের সঙ্গে দীর্ঘায়ুর সংযোগ খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা। যেমন বিনস। তা ছাড়া রাজমা ও লেবিয়া খেলেও আয়ু লম্বা হয় বলে দাবি। মূলত বৈজ্ঞানিক জরিপের মাধ্যমে বিনের এই গুণের হদিস পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্বের যেসব স্থানের মানুষের গড় আয়ু ১০০ বছরের বেশি, সেখানে সমীক্ষা চালিয়ে তাদের খাদ্যতালিকায় বিনসের উপস্থিতি দেখা গেছে। মানে শতবর্ষী এসব মানুষের প্রায় সবার মধ্যেই বিনস খাওয়ার অভ্যাস দেখা গেছে। গবেষকেরা দেখেছেন, দীর্ঘায়ু লাভ করা এসব ব্যক্তি দৈনিক প্রায় ১ কাপ বিনস খান। এতে প্রচুর ফাইবার থাকে। জেরোন্টোলজিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকার তথ্য অনুসারে, পর্যাপ্ত ফাইবার দীর্ঘায়ু লাভের সঙ্গে সম্পর্কিত। ফাইবার ডিপ্রেশন, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমায়। বিনসে পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও আছে, যা আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে। মানুষের আয়ু বাড়ানোর বিষয়ে বিশ্বের নানান বিদ্যাপীঠে হয়েছে গবেষণা। লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দৈনিক ৮০০ গ্রাম ফল ও সবজি খেলে দীর্ঘজীবী হওয়া যায়। ৬০ বছর পর খাদ্যাভ্যাসে কিছু বদল আনলে আয়ু নারীদের ক্ষেত্রে ৮ বছর এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৯ বছর বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি খাদ্যতালিকায় শাকসবজি রাখলে ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধের আয়ুও আরও ৩ বছর বাড়তে পারে।
এবার এমন কিছু নির্দিষ্ট খাবার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক, যেগুলো খেলে আয়ু দীর্ঘ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
 আমলকী: ফলটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ফলে দেহকোষ বারবার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। আমলকীতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানুষের বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে আয়ু বাড়ায়।
 আদা: এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বড় ধরনের রোগ থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়। এটি নিয়মিত খেলে মারণ রোগগুলো শরীরের ধারেকাছে সহজে ঘেঁষতে পারে না। ফলে একটি সুস্থ শরীর নিয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ে।
 এলাচি: চীনা ঐতিহ্য অনুসারে বলা যায়, এলাচি চা পান করলে দীর্ঘায়ু মেলে। এটি দেহকে বিষমুক্ত করতে পারে। তা ছাড়া শরীরের ভেতরের বিভিন্ন তন্ত্র পরিষ্কার রাখে। নানান বিপাক প্রক্রিয়া সুষ্ঠু রাখার মাধ্যমে এটি শরীর চাঙা রাখে। ফলে রোগবালাই সহজে কাছে ঘেঁষতে পারে না। এতে আয়ু বাড়ে।
 আজওয়াইন: এর বীজ হার্টের জন্য ভালো। হার্ট ভালো থাকলে অকাল মৃত্যুর আশঙ্কা অনেকটাই কমে।
 জিরা: পাকস্থলীর সমস্যা সারাইয়ে এটি কাজে লাগে। খাবার পরিপাক হয় বলে অঙ্গটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অঙ্গ ভালো রাখা গেলে রোগবালাই দূরে থাকবে। দীর্ঘায়ুর সম্ভাবনা বাড়বে।
 মধু: এই মিষ্টি তরল নিয়ে রাশিয়ার অধ্যাপক নিকোলাস ভ্যাসলিয়েভিচ একটি গবেষণায় চালিয়েছেন। তাতে দেখা গেছে, রাশিয়ার ককেশাস পার্বত্যাঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে যারা ১২৫ বছরের বেশি বছর আয়ু পেয়েছেন, তারা নিয়মিত টাটকা মধু খেতেন। ফলে মধুকে আয়ুবর্ধক খাবার বলা যেতে পারে।
কিছু খাবার আবার আয়ু বাড়ানোর বদলে কমিয়ে ফেলতে পারে। যেমন হট ডগ ও স্যান্ডউইচ। এগুলোতে যদি ৬১ গ্রাম প্রক্রিয়াজাত মাংস থাকে, তাহলে তা খেলে জীবন থেকে ৩৬ মিনিট কমে যেতে পারে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। পিৎজাসহ বেকন ও বার্গার খেলেও কমতে পারে আয়ু। বিশেষজ্ঞদের দাবি, পিৎজা খেলে আয়ু কমতে পারে ১০ মিনিট। তা ছাড়া কোমল পানীয় পানে আয়ু কমে ১২ মিনিট ৪ সেকেন্ড। তবে এসব খাবার এড়িয়ে শুধু আয়ু বাড়ানোর খাবার খেলেই যে দীর্ঘায়ু মিলবে, তা নয়। জাপানিদের মতো খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি খাওয়ার সময়, রান্নার যথাযথ ধরন অনুসরণ এবং প্রাত্যহিক ব্যায়াম করা চাই।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top