skip to Main Content

ফিচার I চেক ইন

রেস্তোরাঁ, হোটেল কিংবা রিসোর্টে যাওয়ার পর বন্ধু কিংবা স্বজনদের না জানালে কি চলে! ইন্টারনেটের যুগে নিজের অবস্থান চাউর করার সবচেয়ে সহজ উপায় চেক ইন। এটি হোটেল ও রেস্তোরাঁর প্রচার-প্রসারে ভূমিকা রাখে কি?

আনন্দ গ্রহণের পদ্ধতি একেকজনের একেক রকম। কেউ নির্জনতায় আবার কেউ কোলাহলে তা খুঁজে পান। কারও আবার উদরপূর্তিতেই সুখ; বিশেষ করে ভোজনরসিকদের। একটা সময় ইন্টারনেট এত সহজলভ্য ছিল না। তখন মানুষ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বাড়ি ফিরে লোকমুখে সেসব স্থানের সৌন্দর্য ও সুবিধার বয়ান করত। যারা সেখানে যাননি, তারা মুগ্ধ হয়ে শুনতেন। মনে মনে সেই স্থানের একটি কল্পিত পরিবেশ তৈরি করে নিতেন। পরে সেখানে গিয়ে হয়তো সেই পরিবেশের সঙ্গে মিল পেতেন না, কিংবা কল্পনার চেয়ে বেশিই পেতেন।
আগে কোনো হোটেল বা রেস্তোরাঁর খাবার ও আপ্যায়নের ব্যবস্থা কেমন, সেসব বিষয়ে জানার উপায় ছিল খুব কম। কোনো হোটেল সম্পর্কে জানতে হলে, সেখানে ইতিপূর্বে গিয়েছেন এমন লোকের সঙ্গে পরিচয় থাকা ছিল জরুরি। আবার সেখানকার খাবারের স্বাদের বিষয়েও সেই অর্থে জানার সুযোগ ছিল না। তা ছাড়া একের সঙ্গে অন্যের রুচির পার্থক্য আছে। ফলে অন্যের কাছে যা মুখরোচক, তা নিজের কাছে ভালো না-ও লাগতে পারে। তাই কোনো হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁর পরিবেশ, আপ্যায়ন ব্যবস্থা ও খাবারের মানের বিষয়ে অন্যদের মতামত পরখ করে দেখে নেওয়াই ভালো। আগে সে সুযোগ না থাকলেও ইন্টারনেটের বদৌলতে এখন তা সম্ভব।
বর্তমানে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া আনন্দেরই অংশ। উৎসবে কিংবা ব্যক্তিগত দিনকে সুন্দরভাবে যাপনের জন্য রেস্তোরাঁয় যাওয়াকেই বেছে নেন অনেকে; বিশেষ করে শহুরে তরুণ-তরুণীরা। তাদের দম ফেলার জায়গা হয়ে উঠেছে এসব স্থান। তা ছাড়া ব্যস্ত মানুষেরা দুদ- শান্তির আশায় ঢুঁ দেন এসব ভোজনালয়ে।
আনন্দের প্রদর্শন মানুষের স্বভাব। তাই পাঁচ তারকা হোটেল-রেস্তোরাঁয় গিয়ে সেখানে দু-একটি সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট না করলে পুরো আনন্দটাই যেন ফিকে হয়ে যায়। তা ছাড়া সেখানে যে যাওয়া হয়েছে, তা চাউর করতে চেক ইন তো আছেই। নানা কারণে চেক ইন দেওয়া হয়। স্মৃতি ধরে রাখতে, বন্ধুকে একটু জ্বালাতে কিংবা নিজের স্ট্যান্ডার্ড শো করতে। যে উদ্দেশ্যেই হোক না কেন, ভালো কোনো হোটেল, রেস্তোরাঁ কিংবা রিসোর্টে যাওয়ার পর চেক ইন দেওয়া যেন চা-ই চাই।
চেক ইনের দ্বিপক্ষীয় লাভ থাকতে পারে। ফাইভ স্টারে যাওয়া অনেকের জন্যই ‘প্রেস্টিজিয়াস’। ফলে তাদের সামাজিক অবস্থান জানান দেওয়ার মাধ্যম হয়ে ওঠে চেক ইন। আবার কর্তৃপক্ষেরও কিছু লাভ হতে পারে এটা থেকে। বর্তমানে অনলাইন মার্কেট অনেকটাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমনির্ভর। তাতে আসা রিভিউ, রেটিং ও চেক ইন মার্কেটিংয়ে প্রভাব ফেলতে পারে। ভোক্তার দেওয়া এসব চেক ইন থেকে হোটেল ও রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ কীভাবে লাভবান হয়, তা জানতে ঢাকার কিছু হোটেল ও রেস্তোরাঁর বিপণন বিভাগের সঙ্গে ফোনালাপ করেছে ক্যানভাস। তাদেরই একজন জোশিতা সানজানা। রেনেসেন্স ঢাকা গুলশান হোটেলের মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ম্যানেজার। তিনি বলেন, ‘কথা বলার জন্য চেক ইন এখন সময়োপযোগী একটি টপিক। হোটেল অথবা রেস্টুরেন্টের মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে অফলাইন, অনলাইন—দুটি ক্ষেত্রেই কাজ করতে হয়। এই চেক ইন অবশ্যই পজিটিভ ইমপ্যাক্ট ফেলছে। যেমন ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের বিষয়ে এখন আমরা পরিচিত। তাদের কাছে আমাদের অনেকগুলো আশার মধ্যে এটাও থাকে যে তারা এসে চেক ইন দেবেন। এতে পেজে ভিউ আসে, মানুষ বেশি দেখে। আমার মনে হয় চেক ইন অনলাইন মার্কেটিংয়ে খুব পজিটিভ ইফেক্ট ফেলছে। আমরা এটাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করি।’
প্রায় একই কথা ইরার। তিনি ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের এক্সিকিউটিভ, পিআর অ্যান্ড কমিউনিকেশন। বলেছেন, ‘কোনো হোটেল বা রেস্টুরেন্টের সার্ভিস ভালো পেলে নিজেদের মনে অটোমেটিক্যালি একটা পজিটিভ ভাইব আসে। রিভিউ কিংবা রিকমেন্ড করলে হোটেলের পেজের রেটিং ৪ কিংবা ৫-এ চলে আসে। তা ছাড়া যখন কেউ হোটেল সার্চ দেন, তখন বেশি বেশি চেক ইন পাওয়া হোটেলের নামটা সার্চ ইঞ্জিনে শুরুর দিকে আসার সম্ভাবনা বাড়ে। তখন তারা রেটিং দেখেন। রেটিং ৫ থাকলে ভোক্তারা সেই হোটেলকে ভালো ভাবেন, যা হোটেল-রেস্টুরেন্টের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্যই আমরা মার্কেটিংয়ে যারা আছি, তারা চাই অতিথিরা রিভিউ কিংবা চেক ইন দিক।’
তবে একটু দ্বিমত ‘আমারি ঢাকা’র অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশনস সাবরিনা মৃধার। বললেন, ‘চেক ইনটা পুরোপুরি বিজনেস রিলেভেন্ট না। ফাইভ স্টার হোটেলের জন্য এটা খুব একটা ম্যাটার করে না। অনেকে শুধু চেক ইন দিতেই আসেন, কিন্তু হোটেলের প্রডাক্ট ও সার্ভিস অ্যাভেইল করেন না। আমাদের টার্গেটেড মার্কেটের কাছে চেক ইনটা প্রায়োরিটি নয়, তাদের কাছে আমাদের সার্ভিস, প্রাইভেসি ও হোটেলের পরিবেশ গুরুত্ব পায়। হোটেলের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে আমি বলব, একটা সময় চেক ইন দেওয়াটা বড় ব্যাপার ছিল। এখন হোটেলে যাওয়া খুব ডিফিকাল্ট কিছু নয়। এখন অনেক ফুড ব্লগারই যাচ্ছেন হোটেলে, সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সাররাও যাচ্ছেন। তারা অটোমেটিক্যালিই চেক ইন দিচ্ছেন। কিন্তু সেটা যে বিজনেসটা ব্রাইট করেছে, তা হয়তো নয়। কিছু ক্ষেত্রে চেক ইন উইথ আ প্রমোশনাল কনসেপ্ট, যেমন চেক ইনের সঙ্গে যদি প্রডাক্টের হাইলাইটের কোনো বিষয় থাকে, সেটা একটা প্রচার হয় বটে। এটা কাউকে কাউকে ইনফ্লুয়েন্স করে।’
লাভ-লোকসান যা-ই হোক, চেক ইন দেওয়া এখন তরুণদের একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব চেক ইনের মাধ্যমে কারও নিয়মিত যাতায়াতের স্থান, এমনকি তার রুচি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

 শিবলী আহমেদ
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top