ফিচার I ফেস টেপিং
টিকটকের ট্রেন্ডিং টেকনিক। বলিরেখা দূরের পাশাপাশি চটজলদি ফেস লিফটিং ইফেক্ট দিতে দারুণ। তবে সামান্য ভুল ত্বকের বারোটা বাজিয়ে দিতে যথেষ্ট
ফেস টেপিং ট্রেন্ড জনপ্রিয়তা পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটক ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে। প্লাস্টিক অ্যাডহেসিভ অথবা ফেস লিফটিং প্যাচ ব্যবহার করে মুখের চামড়া টান টান রাখার প্রক্রিয়া এটি। এই প্যাচ উৎপাদনকারীরা বলছেন, রাতভর এটি ব্যবহারে ফেস থেকে বলিরেখা ও সূক্ষ্মরেখার মতো চামড়ার ভাঁজগুলো দূর করা সম্ভব। সৌন্দর্যসচেতন টিকটকারদের মাঝে এর ব্যবহার বাড়ছে। ফলে #ফেসটেপ হয়ে উঠেছে ট্রেন্ডিং। ইতিমধ্যে ৭ দশমিক ১ মিলিয়ন চোখ খুঁজে দেখেছে এই হ্যাশট্যাগের গল্প। এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সৌন্দর্যসচেতনদের দাবি, বোটক্স না করেও ত্বক টান টান রাখার কৌশল এই ফেস টেপিং।
ড. ইওয়ানিস লিয়াকাস, যুক্তরাজ্যভিত্তিক ভায় এস্থেটিকের মেডিকেল ডিরেক্টর। তার মতে, স্টিকি টেপ ব্যবহার করে মুখের ত্বকের চামড়া টান টানভাবে ধরে রাখার কৌশলকে বলা হয় ফেস টেপিং। এই চিকিৎসকের মাধ্যমে জানা গেল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ফেস টেপিং নতুন কোনো ধারণা নয়। ১৮ শতক থেকে এই পদ্ধতি ব্যবহার করছে মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে জোরেশোরে ফিরেছে এবার।
আরও একজন বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে জানা যায় বিস্তারিত। হানা লন্ডনের মেডিকেল অফিসার এবং এস্থেটেশিয়ান কেওয়ান খানের ভাষ্যমতে, গভীর ঘুমে মানুষ হাসে। এতে মুখের চামড়ায় ভাঁজ তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া পিলো কাভারের কারণে মুখে ভাঁজ পড়তে পারে। যদিও তা ক্ষণস্থায়ী। প্লাস্টিক প্যাচ ব্যবহার করে ত্বকের ভাঁজগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল নিয়ে তাই নিরীক্ষা চলছে। কপাল, গাল, চোখের নিচের অংশ—এ জায়গাগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে প্যাচগুলো। উদ্দেশ্য, চামড়া ও মাংস উভয়েরই অবস্থান ধরে রাখা।
টিকটকের বিউটি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ডানা ওমারি এবং ম্যাক মেকআপ আর্টিস্ট ভিক্টর ক্যাম্বেলিন দেখিয়েছেন ফেশিয়াল প্যাচ ব্যবহারের নানা টেকনিক।
ড. কেওয়ানের মত, রাতভর ত্বকের বিশ্রামকে গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে মনে রাখা চাই, ত্বকের কুঁচকানোর প্রক্রিয়াকে বন্ধ রাখতে হলে টেপের শক্তি বেশি হওয়া প্রয়োজন। নয়তো টেপের পক্ষে ত্বককে ধরে রাখা সম্ভব হবে না।
ডা. লিয়াকাসের মত, টেপ ব্যবহার করে ঘুমের সময়েও ত্বকের মাসলগুলো ঠিক জায়গায় শক্ত করে ধরে রাখা যায়। এই টেপের ফলে ত্বকের টিস্যু বিশ্রাম নিতে পারছে না, বিষয়টা মোটেই এমন নয়; বরং এই টেপের মাধ্যমে ত্বককে নিয়মিত অবস্থানের বিপরীতে ধরে রাখার প্রক্রিয়া করা হচ্ছে; যাতে ত্বকের অবস্থানসংক্রান্ত শিথিলতা ত্বককে ঝুলে পড়া থেকে রক্ষা করতে পারে। শক্ত করে ধরে রাখতে পারে।
ফেস টেপের কার্যকারিতা অ্যাডহেসিভের ওপরে বেশ খানিকটা নির্ভর করে। এই উপাদান ত্বকে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তৈরি করা নয়, এ তথ্য সবারই জানা। তাই ব্যবহারের সময় বিষয়টি মনে রাখতে হবে। ড. কেওয়ান সাবধানতার বাণী শুনিয়েছেন এ বিষয়ে। তার ভাষ্য, সারা রাতের জন্য ত্বকে অ্যাডহেসিভের ব্যবহার মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। ত্বকের ধরনের ওপর নির্ভর করে বেছে নিতে হবে ফেস টেপ। বুঝতে হবে নিজের ত্বককে। চাহিদা বুঝে ফেস টেপ করে টান টান ত্বক পেতে গিয়ে কোনোভাবেই ত্বকের সমস্যা তৈরি করা যাবে না। সংবেদনশীলতা তৈরি হলে সরিয়ে নিতে হবে ফেস টেপ। এর আগে ত্বকের ধরন বুঝে বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে তবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ড. লিয়াকাস এ বিষয়ে বলেন, ফেস টেপকে ত্বকের সঙ্গে আটকে রাখার জন্য ব্যবহৃত গ্লুর ধরন সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। যাতে গ্লুর আঠা কোনোভাবেই ত্বকের বাইরের স্তরে কোনো ক্ষতি করতে না পারে। ত্বক থেকে টান না দিয়ে সময় নিয়ে ধীরে ধীরে তুলে আনতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, ত্বকের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। আবার কিছু আঠা সহজেই খুলে আসে। সে ক্ষেত্রে উপকারিতা কম মেলে।
ত্বকের সঙ্গে আটকে থাকা টেপ তুলে ফেলার সময় সাবধানতা আবশ্যক। টেপ তুলে আনার সময় ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হলে টান টান রাখার এই কৌশল মূল্যহীন হয়ে পড়বে। মুখের ত্বক দেহের অন্যান্য অংশের থেকে পাতলা। তাই যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রেও বিষয়টি মনে রাখতে হবে। ফেস টেপের আঠার কারণে ত্বকের ওপরের অংশ উঠে এলে ট্রমা তৈরি হতে পারে, সঙ্গে আন্ডারলাইনিং পিগমেন্টেশনের ফলেও ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। ত্বকে কোনো প্রকার সংবেদনশীলতা, যেমন জ্বালাপোড়া, লালচে ভাব, রেডনেস অথবা ব্রেক আউট দেখা গেলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ মতামত নিতে হবে।
টিকটক ট্রেন্ডে ফেসে ভিন্নতা আনতে ফেস টেপ একটি ইজি টুলস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি সব থেকে বেশি ব্যবহার করতে দেখা যায় চোখের আশপাশে। বাদ পড়ছে না ভ্রুও। এর পাশাপাশি গলা, জ, চিক বোন ইত্যাদি জায়গায়ও ব্যবহার হচ্ছে এই টেপ।
ট্রেন্ড সেটারদের এই ট্রেন্ডে ভাসতে চাইলে প্রথমে ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে খুব ভালোভাবে। কোনোভাবেই যেন ত্বকের ময়লা ফেস টেপের সংস্পর্শে না আসে। তারপরে টোনার বুলিয়ে নিতে হবে একটি নরম কটন বলের সাহায্যে। ত্বক থেকে দূর করে নিতে হবে তৈলাক্ত ভাব। এরপরে ফেস টেপ বসাতে হবে কাঙ্ক্ষিত স্থানগুলোতে।
ফেস টেপ কতক্ষণ ত্বকে রাখা হবে, সেটা একান্তই ব্যক্তি সিদ্ধান্ত। ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত চাইলে রেখে দেওয়া যায় এটি। ব্যবহৃত অ্যাডহেসিভের বিষয়ে মনোযোগী হলে নিরাপদ হবে পুরো প্রক্রিয়া। যতক্ষণ পর্যন্ত গ্রিপ থাকে টেপের, ততক্ষণ ত্বক ধরে রাখতে পারবে এটি।
সারাহ্ রুশমিতা
মডেল: মিলা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: হাদী উদ্দীন