টেকসহি I দ্য ম্যাজিক ওয়ান্ড
নব আবিষ্কৃত নয়, বরং পাঁচ হাজার বছর পেছনে ফিরে মিলেছে সৌন্দর্যের এ সাধনী। একদম আয়ুর্বেদিক অনুমত
কাঁসা। ভারতীয় ব্রোঞ্জ যুগে এই ধাতুর আবির্ভাব বলে ইতিহাস সাক্ষী। ইন্দুস ভ্যালিতে বসবাসকারীদের হাত ধরে। বেল মেটাল হিসেবেও এর পরিচিতি রয়েছে। কারণ, প্রাচীন আমলে ঘণ্টা আর তিব্বতি গং তৈরি হতো এই একই ধাতু থেকে। আয়ুর্বেদে বরাবরই এই ধাতুর চর্চা হয়েছে। সে সময় ইন্দুস ভ্যালির মানুষ কাঁসার থালায় খাবার খেতেন। কারণ, কাঁসার পিএইচ ভারসাম্য রক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। ফলে এতে তৈরি পাত্রে খাবার খেলে তা হজমে সহায়ক হয়। সেই সঙ্গে খাবারের অ্যাসিডিক মাত্রাও কমাতে সাহায্য করে। কাঁসার গ্লাসে পানি পানেরও নানা উপকারিতা রয়েছে। পরিশোধনের কাজ করে এই ধাতু, সেই সঙ্গে পানির অ্যাসিডিক প্রোপার্টি অপসারণেও দারুণ কার্যকর। ত্বকের যত্নেও খুব উপকারী। তামার সঙ্গে জিঙ্ক ও টিন মিলিয়ে তৈরি এ ধাতু হিলিং মেটাল হিসেবে পরিচিত। যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যালকালাইন প্রোপার্টি আছে। এটি ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে দুর্দান্ত কাজ করে। তাই পরবর্তী সময়ে কাঁসা থেকে তৈরি করা হয় কাঁসার দণ্ড। গুয়াশা, ফেস রোলারের মতো ফেশিয়াল টুলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন এর ইতিহাস। ইনস্টাগ্রাম আর টিকটকের কল্যাণে বর্তমান প্রজন্মের কাছে কাঁসা ওয়ান্ড হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ বিউটি টুল।
কাঁসার কামাল
ত্বকের যত্নে ফেশিয়াল ম্যাসাজ বরাবরই কার্যকর। তা যদি হয় কাঁসা ওয়ান্ড দিয়ে, তাহলে তো কথাই নেই। এই জাদুকরি দণ্ড অভয়ঙ্গা অর্থাৎ সেলফ ম্যাসাজকেও দারুণ উপভোগ্য করে তোলে। ক্লান্তি কাটাতে ফুল বডি ম্যাসাজ ছাড়াও ফুট আর নানাবিধ স্পা ট্রিটমেন্টে কাঁসা ওয়ান্ডের ব্যবহার দিতে পারে কাঙ্ক্ষিত ফল। এ ছাড়া—
ত্বকে হারানো সৌন্দর্য চটজলদি ফিরিয়ে দিয়ে করে তোলে পুনরুজ্জীবিত। সঠিক ফেশিয়াল অয়েল মুখে মেখে নিয়ে তারপর নিয়মিত কাঁসা ওয়ান্ড দিয়ে ম্যাসাজ করলে ত্বক পরিপূর্ণ পুষ্টি পায়। ফলাফল উজ্জ্বল, মসৃণ ত্বক।
প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের মাসলগুলো টোন আপ করে ফেস লিফট করতে চাইলে কাঁসা ওয়ান্ডের চেয়ে ভালো বিউটি টুল আর হয় না। এর নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক কোষের ডিপ টোনিং হয়। কোলাজেন উৎপাদনের হার বাড়ে। ফলে চিবুক আর চোয়াল দেখায় স্কাল্পটেড।
সঠিক উপায়ে ব্যবহার করা গেলে কাঁসা ওয়ান্ড ত্বকের রক্তসঞ্চালন ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। যা ত্বকের লিম্ফেটিক ড্রেইনেজের কার্যকারিতাকে ত্বরান্বিত করে। ত্বকের টক্সিন বের করে দেয়। ফলাফল তারুণ্যোজ্জ্বল ত্বক।
কাঁসা ওয়ান্ডের ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখার জাদুকরি ক্ষমতা রয়েছে। ফলে এর নিয়মিত ব্যবহার ত্বকের অ্যাসিডিক কনটেন্টকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। অ্যাকনে, জ্বালাপোড়া, বলিরেখা আর অকালে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচায় ত্বক।
ত্বককে ডিটক্সিফাই করতে সহায়ক এই ধাতব বিউটি টুল। ভাটা, পিত্তা আর কাপহা দশার ফলে ত্বকে যেসব সমস্যা হতে পারে, সেগুলো সারাতে সহায়ক এটি।
এই বিউটি টুলের নিয়মিত ব্যবহার ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনের হার বাড়ায়। ফলে ত্বক সহজে বুড়িয়ে যায় না। দেখায় পেলব, কোমল।
ব্যবহারবিধি
কাঁসা ওয়ান্ড ব্যবহারের কৌশল মোটেও কঠিন কিছু নয়। কিন্তু সঠিকভাবে ব্যবহার খুব প্রয়োজন। ব্যবহারের আগে ত্বক অবশ্যই পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর মুছে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর পছন্দসই কোনো ফেশিয়াল অয়েল নিয়ে প্রথমে হাতের তালুতে ঘষে নিতে হবে। এতে তেলের কার্যকারিতা বাড়বে। তারপর তা মুখত্বকে মাখিয়ে নিতে হবে। এরপর কাঁসা ওয়ান্ড দিয়ে শুরু করতে হবে ম্যাসাজ। শুরুটা হবে কপালের মাঝখান বরাবর, সার্কুলার মোশনে। তারপর দুচোখের চারপাশে গর্তযুক্ত স্থানে ‘৪’ এর মতো প্যাটার্নে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বুলিয়ে নিতে হবে কাঁসা ওয়ান্ড। ক্লকওয়াইজ এবং কাউন্টার ক্লকওয়াইজ ডিরেকশনে। চোয়ালে আপওয়ার্ড স্ট্রোকে বুলিয়ে নিতে হবে কাঁসা ওয়ান্ড। এতে রক্তসঞ্চালন ত্বরান্বিত হবে। আর কানের পাশে সার্কুলার মোশনে বুলিয়ে নিতে হবে ওয়ান্ড। চিবুক থেকে চোয়ালের হাড়ের দিকে বুলিয়ে নিতে হবে। এতে স্কাল্পটেড দেখাবে চোয়াল। এভাবেই পুরো মুখত্বকে ম্যাসাজ করে নিতে হবে এই ফেশিয়াল টুল। এটি ব্যবহারের সময় ত্বক ধূসর হয়ে উঠতে পারে। এতে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। কারণ, এতে বোঝা যাবে ত্বক কতখানি অ্যাসিডিক হয়ে আছে। পরবর্তী সময়ে ক্লিনজার ব্যবহারে এই ধূসরভাব ধুয়ে ফেলা যাবে।
তবে কাঁসা ওয়ান্ড ব্যবহারের সময় ফেশিয়াল অয়েল মাস্ট। এতে করে বিউটি টুলটি মসৃণভাবে ত্বকে বুলিয়ে নেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদিক গুণসম্পন্ন তেল খুব কাজের। স্যাফরন, চন্দন, মঞ্জিস্টার নির্যাসে তৈরি তেল কাঁসা ওয়ান্ডের কার্যকারিতা যেমন বাড়াবে, তেমনি কমাবে অ্যাকনে, বলিরেখাসহ নানান ত্বক সমস্যা।
সব ধরনের ত্বকে ব্যবহার উপযোগী কাঁসা ওয়ান্ড। হোক তা তৈলাক্ত, শুষ্ক, স্পর্শকাতর কিংবা স্বাভাবিক। শুরুতে সপ্তাহে একবারই এর ব্যবহার যথেষ্ট। পরবর্তীকালে দু-তিনবার অব্দিও ব্যবহার করা যাবে। অনেকেরই মনে হতে পারে, গুয়াশা আর ফেস রোলারের চেয়ে কাঁসা ওয়ান্ডের কার্যকারিতা ভিন্ন। কাঁসা ওয়ান্ডের উৎপত্তি আয়ুর্বেদ থেকে। অন্যদিকে, গুয়াশা আর ফেস রোলার দুটোই ট্র্যাডিশনাল চায়নিজ মেডিসিন থেকে প্রাপ্ত। কাঁসা ওয়ান্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে মূলত দশা এবং চক্রের ওপর নির্ভর করে প্রেসার পয়েন্ট নির্বাচন করে তারপর ম্যাসাজ করা হয়। অন্যদিকে গুয়াশা আর ফেস রোলার দেহের আকুপাংচার পয়েন্টের ওপর বেশি ফোকাস করে। কাঁসা ওয়ান্ড দিয়ে মুখত্বকে সার্কুলার, জিগজ্যাগ, আপওয়ার্ড—সব ধরনের স্ট্রোকে ম্যাসাজ করা যায়। তা ছাড়া গুয়াশা আর ফেস রোলার দিয়ে শুধু আপওয়ার্ড মোশনে ম্যাসাজ করা যায় ত্বক।
অর্চনা সাহা
মডেল: জাকিয়া
মেকওভার: পারসোনা
জুয়েলারি: রঙবতী
ছবি: হাদী উদ্দীন