skip to Main Content

কুন্তলকাহন I হেয়ার স্লাগিং

তত্ত্বটা গেল বছরের ত্বকচর্চা থেকে অনুপ্রাণিত। ওভারনাইট ট্রিটমেন্ট হিসেবে টিকটকেও ট্রেন্ডিং এই কে-বিউটি টেকনিক

স্লাগিং কোনো নতুন কনসেপ্ট নয়। অন্তত যারা সৌন্দর্যবিশ্বের খবরাখবর রাখেন, তাদের কাছে তো নয়ই। গেল বছর টিকটক বিউটি ট্রেন্ডে শীর্ষে ছিল এর অবস্থান। তবে পুরোটাই ছিল ত্বকসংক্রান্ত। অর্থাৎ স্কিন স্লাগিং। আর্দ্রতাকে আটকে রাখতে পারে এমন কোনো উপাদান ত্বকে মেখে রেখে দেওয়া হতো রাতভর। এতে ঘুমের সময় ত্বক তা শুষে নেওয়ার সুযোগ পেত। এ ক্ষেত্রে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহারের চলটাই ছিল সবচেয়ে বেশি। ভাইরাল এ ট্রেন্ড ত্বকের ওভার এক্সফোলিয়েটিং ছাড়াও পণ্যের সংক্রমণ আর ঋতুভিত্তিক শুষ্কতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করেছিল সৌন্দর্যসচেতনদের। পরবর্তীকালে নতুন ধরনের স্লাগিং টেকনিক সোশ্যাল মিডিয়ায় চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে। তৈরি হয় নতুন হেয়ার কেয়ার ট্রেন্ড। #হেয়ারস্লাগিংয়ের ভিডিওর ভিউ ছাড়িয়ে যায় ৭০ লাখ। এ ক্ষেত্রে টিকটক কনটেন্ট ক্রিয়েটর মনিক র‌্যাপিয়ারের কৃতিত্বই বেশি। চুলকে শক্ত ও উজ্জ্বল করে তোলার এক ডিটেইল ভিডিওতে তাকে হেয়ার স্লাগিং করতে দেখা যায়। মূলত একটি লাইটওয়েট তেল নিয়ে চুলের গোড়ায় মেখে মোটা মোজায় চুল পুরে সিল্ক স্ক্রাঞ্চি দিয়ে আটকে রাখেন রাতভর। আর এই ভিডিও ভাইরাল হয় বিশ্বজুড়ে। হেয়ার স্লাগিং পায় নব্য হেয়ার কেয়ার ট্রেন্ডের তকমা।
র‌্যাপিয়ারের মত, হেয়ার স্লাগিংয়ে ব্যবহৃত মোজা চুলকে ফ্রিকশনাল ড্যামেজের হাত থেকে বাঁচায়। রাতভর বিছানা এবং সুতির বালিশের কাভারে গড়াগড়ির কারণে চুলে এ ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তাই স্লাগিং প্রক্রিয়ায় চুল শুধু সুরক্ষিতই থাকবে না। থাকবে আর্দ্র এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। সেই সঙ্গে চুলের উজ্জ্বলতাও বাড়বে।
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই উপমহাদেশে হেয়ার অয়েলিংয়ের টেকনিক মোটেই নতুন কিছু নয়। নানি-দাদিদের আমল থেকেই মাথায় তেল মেখে রাতভর রেখে দেওয়ার প্রথা প্রচলিত। তবে হেয়ার স্লাগিং পুরোনো প্রক্রিয়া থেকে সামান্য পরিবর্তিত।
হেয়ার স্লাগিং কী
স্কিন স্লাগিংয়ের একদম বেসিক ফর্মুলা থেকে অনুপ্রাণিত প্রক্রিয়া এটি। হেয়ার অয়েল বা কন্ডিশনার ভারী করে মেখে রেখে দিতে হবে রাতভর। কিন্তু খোলা নয়, ঢেকে নিতে হবে মোজা আর সিল্কের স্ক্রাঞ্চি দিয়ে। দুইভাবে করে নেওয়া যায় হেয়ার স্লাগিং। প্রথমত, একদম হালকা হেয়ার অয়েল নিয়ে তা শুধু চুলের গোড়ায় মাখিয়ে নিতে হবে। তারপর তেল মাখা অংশটুকু ফোলা, ফাজি মোজায় জড়িয়ে সিল্কের স্ক্রাঞ্চি দিয়ে আটকে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাতভর রাখার পর সকালে না ধুলেও চলবে তেল। আর দ্বিতীয় প্রক্রিয়ায় ভারী তেল বা মাস্ক মেখে নিতে হবে চুলের আগা থেকে গোড়া অব্দি। তারপর মোজায় পেঁচিয়ে হেয়ার টাই দিয়ে বেঁধে রাখতে হবে রাতভর। পরদিন সকালে ধুয়ে নিতে হবে ভালো করে।
স্লাগিংয়ে সুবিধা
বিশেষজ্ঞদের মত, শুষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত চুলে প্রাণ সঞ্চারে স্লাগিং দারুণ। এটি জরুরি আর্দ্রতার জোগান দিয়ে শুষ্ক চুলের উষ্কখুষ্ক ভাব দূর করে। কমায় ভঙ্গুরতা আর নিষ্প্রাণতা। নিয়মিত হেয়ার স্লাগিংয়ের ফলে চুলের নেতিয়ে পড়া ভাবটাও কমে আসে। ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা কমে যায়, আরও উজ্জ্বল দেখায় চুল। তবে সাবধানতারও প্রয়োজন আছে। ভারী তেল মাখার পর ভালো করে ধুয়ে না নিলে প্রডাক্ট বিল্ডআপের সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া তেল দেওয়ার পর মাথা ঢেকে রাখলে তাপ সৃষ্টি হতে পারে এবং তা মাথার ত্বকের অর্থাৎ স্ক্যাল্পের লোমকূপগুলোর মুখ বন্ধ করে দিতে পারে। ফলাফল মাথায় ছোট ছোট ব্রণের সংক্রমণ, যা স্ক্যাল্প ফলিকিউলাইটিস নামে পরিচিত। তাই মাথায় তেল মেখে কোনোভাবেই আট ঘণ্টার বেশি তা রাখা যাবে না। ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে স্ক্যাল্পের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য।
স্লাগিংয়ের কৌশল
ধরন, দৈর্ঘ্য আর টেক্সচার ভেদে সব ধরনের চুলেই স্লাগিং সম্ভব। মাঝারি থেকে ঘন টেক্সচারের চুলের জন্য স্লাগিং বেশ উপকারী। ঘন ঘন এ প্রক্রিয়ায় যত্ন নিলে এ ধরনের চুলের চেহারা বদলে যাবে। ক্যাস্টর অথবা কোকোনাট অয়েলই এ ধরনের চুলের জন্য বেশি জুতসই। চুল যদি কোঁকড়া হয়, সে ক্ষেত্রে স্লাগিংয়ের সুবিধা মিলবে সবচেয়ে বেশি। কারণ, স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের চুল বেশি ঘন ও শুষ্ক হয়ে থাকে। তাই ডিপ হাইড্রেশন খুব জরুরি এ ধরনের চুলের। ঘন ঘন হেয়ার স্লাগিংয়ে তাই কোঁকড়া চুল সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল থাকবে। এ ধরনের চুলে ভারী তেল দিয়ে স্ক্যাল্প থেকে অর্থাৎ গোড়া থেকে ডগা অব্দি স্লাগিং করে নিলেই উপকার মিলবে বেশি। কিন্তু চুল পাতলা হলে সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে এক দিন স্লাগিংই যথেষ্ট। হালকা তেল দিয়ে শুধু চুলের গোড়ায় মাখিয়ে নিয়ে সারতে হবে বাকি প্রক্রিয়া। একদম সহজ কৌশল এর। ধাপে ধাপে করে নিলেই চলবে।
হালকা তেলে স্লাগিং চাইলে শুধু চুলের গোড়ার দিকে মাখিয়ে নিতে হবে। তারপর একটি পরিষ্কার ফাজি মোজা দিয়ে মুড়িয়ে নিতে হবে তেলে মাখা অংশ। সিল্ক স্ক্রাঞ্চি দিয়ে আটকে নিতে হবে। রাতভর রেখে সকালে উঠে আঁচড়ে নিলেই টের পাওয়া যাবে পরিবর্তন।
ভারী তেলে স্লাগিংয়ের প্রক্রিয়া সামান্য ব্যতিক্রম। গোড়া থেকে ডগা অব্দি তেল মাখাতে হবে। এর ওপর মাখতে হবে হেয়ার মাস্ক। তারপর একটা পরিষ্কার ফাজি মোজায় মুড়িয়ে নিতে হবে চুল। সিল্ক স্ক্রাঞ্চিতে আটকে নিতে হবে। রাতভর রেখে দেওয়ার পর ঘুম থেকে উঠে ধুয়ে নিতে হবে চুল। খেয়াল রাখতে হবে, মাস্ক আর তেল যেন ভালোভাবে পরিষ্কার হয়।

 অর্চনা সাহা
মডেল: বর্ণা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top