skip to Main Content

সঙ্গানুষঙ্গ I অফবিট অক্সিডাইজড

একসময়ের ওভাররেটেড তকমা পাওয়া এই গয়না এখন সাধ করেই গায়ে ওঠাচ্ছেন অনেকে। তালিকায় নাম রয়েছে তারকাদেরও

খানিকটা রুপার মতো দেখতে। কিন্তু আসল রুপায় গড়ানো নয় এই গয়না। চকচকে হয় না একদমই; বরং ম্যাটম্যাটে ভাবটাই সৌন্দর্য বাড়ায়। অক্সিডাইজেশনের ফলে অনেক সময় রুপা রঙের গায়ে তৈরি হয় ধূসর আভা। কোনোটা তো একেবারে কালো করে ফেলা হয় ব্ল্যাক পলিশ করে। অক্সিডাইজড গয়নার এই অ্যান্টিক লুকেই যেন সব সৌন্দর্য। নাম শুনে মনে হতেই পারে, রং পরিবর্তনে অক্সিজেনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তবে ব্যাপারটা একদমই ভ্রান্ত। মূলত সালফার এবং অন্যান্য কেমিক্যালের মাধ্যমে রং পাল্টে ফেলা হয় এ ধরনের গয়নার। অনেকেরই ধারণা, আসল রুপার ওপর এসব প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়। কিন্তু তা নয়। বরং স্টার্লিং সিলভার অর্থাৎ জিঙ্ক, নিকেল, তামাসহ নানান ধাতুমিশ্রিত সিলভারে অক্সিডাইজেশনের কাজ চমৎকারভাবে করা যায়। পিতলের ওপরও সহজে করা যায় অক্সিডাইজেশন। আর ব্ল্যাক পলিশের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড।
হরপ্পা-মহেঞ্জোদারোর সময় থেকে পাওয়া ধাতব ইতিহাসের যুগ থেকে এর শুরু বলে ধারণা অনেকের। তখন তামা আর পিতলের আধিপত্য। পরবর্তীকালে বৈদিক সভ্যতার সময় উদ্ভাবিত হয় লোহা ও সোনা, যা ব্যবহৃত হতে শুরু করে গয়না তৈরির কাজেও। ধারণা করা হয়, ১১০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে অক্সিডাইজেশনের কাজ শুরু হয় গয়নায়। পরবর্তীকালে বিশ্বের বিভিন্ন ট্রাইবাল বেল্ট জুড়ে বিস্তৃত হয় এটি। ভারতের রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ছোট নাগপুর অঞ্চলের ট্রাইবগুলোতে এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। ভিল, সাঁওতাল, গোন্দ আদিবাসীদের মধ্যে। বহু বছর ধরে দেশের ফ্যাশন-সচেতন নারীদের মধ্যেও বহুল চর্চিত অক্সিডাইজড জুয়েলারি। আর হবে নাই-বা কেন? সেলিব্রিটি অ্যাপ্রুভ যে। এ ক্ষেত্রে বলিউড ডিভাদের প্রভাবটাই বেশি। সোনম কাপুর থেকে সারাহ আলি খান, আলিয়া ভাটসহ অনেক অভিনেত্রীকে হরহামেশাই দেখা যায় এসব গয়নায়। অন স্ক্রিন তো বটেই, অফ স্ক্রিনেও। দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন থেকে নাজিফা তুষিকেও প্রায়শই দেখা যায় অক্সিডাইজড জুয়েলারি পরনে।
এথনিক তো বটেই, ওয়েস্টার্ন আউটফিটের সঙ্গেও দারুণ মানিয়ে যায়। একদমই ওভার দ্য টপ দেখায় না বলে পরে নেওয়া যায় অফিসওয়্যার থেকে পার্টিওয়্যারের সঙ্গে। নিত্যদিনে ব্যবহারের জন্য যেমন জুতসই, আয়োজনেও আলো ছড়াতে পারে অনায়াসে এ ধরনের গয়না। অক্সিডাইজড গয়নার মোটিফগুলোও হয় নজরকাড়া। নানা ধরনের পশুপাখির প্রতিকৃতি ছাড়াও চোখে পড়ে খোদাই করা ফুলেল নকশা। প্রকৃতি থেকে নেওয়া নানা অনুষঙ্গের ছাপও সুস্পষ্ট দেখা যায় গয়নাগুলোতে। গাছ, লতা-পাতা ছাড়াও নজর কাড়ে জিওম্যাট্রিক সব প্যাটার্ন। জুয়েলারিতে ফিউশন স্টাইল যোগের জন্য যুক্ত হয় মিরর, জেমস স্টোন, ঘুঙুর এমনকি কাপড়ের টুকরাও। আর কী নেই অক্সিডাইজড জুয়েলারির কালেকশনে? আপাদমস্তক সব ধরনের গয়নাই মিলে যাবে। শুরুটা মাথা দিয়েই করা যাক। একটা টিকলির যোগ পুরো সাজে মুহূর্তেই এনে দিতে পারে ট্র্যাডিশনাল অ্যাপিল। অক্সিডাইজড টিকলি দেশীয় পোশাকের সঙ্গে যেমন মানানসই, ইন্দো ওয়েস্টার্ন আউটফিটের সঙ্গে এর জোড় তুলনাহীন। অক্সিডাইজড টিকলিতে পোলকি ওয়ার্ক থাকলে তো কথাই নেই। আরও বোল্ড লুক চাই? মাথা পট্টি জুতসই অপশন। ট্র্র্যাডিশন এবং ট্রেন্ডের মিশেলে তৈরি এ জুয়েলারি পিস লুকে এনে দেবে আভিজাত্য। কানের জন্য সংগ্রহে রাখা যেতে পারে অক্সিডাইসড চান্দবালি। চাঙ্কি এসব কানের দুল সাজে একাই এক শ। শাড়ি, কামিজ, কুর্তা, স্কার্ট কিংবা লেহেঙ্গা—সবকিছুর সঙ্গেই জুতসই। ট্র্যাডিশনাল টেম্পল স্টাইল ঝুমকাও দেখাবে দুর্দান্ত। আর এতে যদি জড়ানো থাকে পার্ল, রুবি কিংবা এমারেল্ড, তাহলে সোনায় সোহাগা। লাইটওয়েট ঝুমকিও রাখা যায় কালেকশনে। এগুলো সাধারণ ঝুমকার চেয়ে আকারে খানিকটা বড় হলেও ওজনে পলকা হওয়ায় পরে নেওয়া যায় সহজে। এথনিকের পাশাপাশি ওয়েস্টার্ন ওয়্যারের সঙ্গেও। নাকের জন্য মিলবে অক্সিডাইজড নোজ পিনও। সূক্ষ্ম কারুকাজমণ্ডিত। গলা সাজাতে বোল্ড চোকার থেকে রানি হার, এমনকি ডেন্টিচেইন থেকে মিড লেন্থ অক্সিডাইজড নেকলেস মিলবে। লেয়ারড কয়েন নেকলেসও এখন দারুণ জনপ্রিয়। অক্সিডাইজের চুড়ি, বালা বা ব্রেসলেটও পাওয়া যাবে হাত সাজানোর জন্য। তবে সে ক্ষেত্রে একটা বা দুটো না পরে একসঙ্গে অনেকগুলো পরলে স্টেটমেন্ট লুক তৈরি হয় সাজে। স্টেটমেন্ট অ্যাকসেসরিজ হিসেবে অক্সিডাইজড আংটিও দারুণ জনপ্রিয়। ড্রামাটিক কিংবা মিনিমালিস্টিক লুক তৈরিতে। এ ছাড়া পায়ের জন্য অ্যাঙ্কলেট, পায়েল আর টো রিংও হতে পারে অক্সিডাইজড।
এসব গয়না দিয়ে স্টাইলিং কিন্তু মোটেও কঠিন কিছু নয়। সাজে এথনিক টুইস্ট যেমন সম্ভব, ফিউশন ফিল পেতে চাইলে তৈরি করে নেওয়া যাবে তা-ও। যেমন অফিসে অক্সিডাইজড জুয়েলারি পরতে চাইলে সৌন্দর্যের পাশাপাশি মাথায় রাখতে হবে আরাম আর শালীনতার ব্যাপারটা। সে ক্ষেত্রে ছোট স্টাড, নেকপিস আর দু-একটা রিং—ব্যস, এ-ই যথেষ্ট। সাদা শার্ট আর ট্রাউজারের সঙ্গে যেমন মানাবে, তেমনি সাদামাটা এথনিক ওয়্যারের সঙ্গে দেখাবে দুর্দান্ত। লুকে এথনিক ভাইব চাইলে এগুলো দিয়ে এক্সপেরিমেন্টেশনের সুযোগ মেলা। বোল্ড নেকপিস, ঝুমকা, শ্যান্ডেলিয়ার ইয়াররিং—মানিয়ে পরে নেওয়া যাবে সবই। তবে সে ক্ষেত্রে মোটিফ আর নকশাটা হওয়া চাই এথনিক। সুতি শাড়ির সঙ্গে এর ম্যাচ যেন মেইড ইন হেভেন। লুকে ফিউশন ভাইব চাইলে তা-ও সম্ভব। ওভারসাইজড শার্ট বা টি-শার্ট আর জিনসের জোড়ের সঙ্গে লেয়ারড অক্সিডাইজড চেইন বা বড় স্টেটমেন্ট নেকপিস দুর্দান্ত দেখাবে। এ ছাড়া পরে নেওয়া যায় হাতভর্তি অ্যান্টিক চুড়ি। আংটিও মন্দ দেখাবে না। সঙ্গে পায়ে পরে নেওয়া যাবে টো রিংও। বোহিমিয়ান লুক যাদের আকর্ষণ করে, তাদের জন্যও রয়েছে মেলা অপশন। ফ্লেয়ারড স্কার্ট, টাইড আপ শার্ট কিংবা কাফতানের সঙ্গে চাঙ্কি অক্সিডাইজড জুয়েলারি চমৎকার দেখাবে। সঙ্গে স্ট্যাকেবল রিং সাজে যোগ করবে এক্সট্রা গ্ল্যাম।
অক্সিডাইজড জুয়েলারি রোদ থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অভিজ্ঞরা। এমনকি ফ্লুরোসেন্ট লাইট আর বাল্বের কাছাকাছি রাখতেও রয়েছে বারণ; বরং তুলায় পেঁচিয়ে জুয়েলারি বক্সে সংরক্ষণ করাই সবচেয়ে ভালো। আর ধোয়ার সময় গরম পানি কিংবা স্টিমার ব্যবহার করা যাবে না একদমই।

i অর্চনা সাহা
মডেল: প্রমা
ওয়্যারড্রোব: মাহমুদা শাড়ি হাউজ
জুয়েলারি: গ্লুড টুগেদার
ছবি: আহনাফ আকিব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top