টেকসহি I অ্যান্টার্কটিকার চিরতুষারে
১ ডিসেম্বর। অ্যান্টার্কটিকা দিবস। অপার রহস্য ও অশেষ কৌতূহলের কেন্দ্রে থাকা এই মহাদেশ নিয়ে লিখেছেন আসিফ
‘তারাই যথার্থ যাত্রী যারা চলে যায়/ কেবল যাবারই জন্য, হালকা মন, বেলুনের মতো…’ ওলফ ভিসনিয়াক ছিলেন এমনই একজন অণুজীববিজ্ঞানী। মঙ্গল গ্রহে প্রাণ অনুসন্ধানে সঁপে দিয়েছিলেন নিজেকে। কিন্তু বাজেট কমাতে গিয়ে ১৯৭১ সালে হঠাৎ করে অণুজীববিজ্ঞানের চারটি পরীক্ষণের একটি বন্ধ করে দেয় নাসা। অথচ ওই ‘ওলফ ট্র্যাপ’ পরীক্ষণের উন্নতিসাধনে জীবনের বারোটা বছর খরচ করে ফেলেছেন ভিসনিয়াক। নৈরাশ্যজনক সেই পরিস্থিতিতে অন্য কেউ হলে হয়তো ভাইকিং বায়োলজিক্যাল টিম ছেড়ে চলে আসতেন। কিন্তু ভিসনিয়াক নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন এই গবেষণার জন্য। সেটা করতে গিয়ে অ্যান্টার্কটিকায় অণুজীববিজ্ঞানের নতুন দিক খুলে দেন পৃথিবীর মানুষের কাছে।
১৯৭৩ সালের ৮ নভেম্বর ভিসনিয়াক তার নতুন মাইক্রোবায়োলজি পরীক্ষণ যন্ত্রপাতি এবং একজন ভূতত্ত্ববিদসহ হেলিকপ্টারযোগে ম্যাকমুরডো স্টেশন থেকে আসগার্ড রেঞ্জের শুষ্ক উপত্যকা মাউন্ট ব্লাডারের কাছাকাছি অঞ্চলে চলে যান। পৃথিবীর এই জায়গাটায় অনেকটা মঙ্গল গ্রহের মতো পরিবেশ ছিল। ভিসনিয়াকের কাজ ছিল অ্যান্টার্কটিকার মাটিতে ছোট্ট মাইক্রোবায়োলজি স্টেশনগুলো ইমপ্ল্যান্ট করা, আবার তাদেরকে ফিরে পাওয়ার জন্য এক মাস পরে ফিরে আসা।
১৯৭৩ সালের ১০ ডিসেম্বর তিনি নমুনা সংগ্রহের জন্য যান মাউন্ট ব্লাডারে। ‘মার্স জার’ পরীক্ষার কথা মনে রেখে ভিসনিয়াক বিশ্বাস করতেন, পার্থিব অণুজীবগুলো যদি মঙ্গলের পরিবেশে টিকে থাকতে পারে, অ্যান্টার্কটিকায় কেন পারবে না। কেননা, এখানকার পরিবেশ অপেক্ষাকৃত বেশি উষ্ণ, আর্দ্র ও অধিক অক্সিজেন সম্পৃক্ত; আর এখানে আলট্রাভায়োলেট আলো পড়ে কম। তিনি বিশ্বাস করতেন, অ্যান্টার্কটিকায় সেখানকার নিজস্ব কোনো অণুজীব না পাওয়ার সিদ্ধান্তে পূর্বে ব্যবহৃত পরীক্ষণ কৌশলগুলো ছিল ত্রুটিপূর্ণ। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব গবেষণাগারের আরামপ্রদ যেসব পুষ্টিকর দ্রব্য উপযোগী ছিল, সেগুলো অনুর্বর মেরুর নিষ্ফলা জমির উপযোগী করা হয়নি।
মাউন্ট ব্লাডার থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের এক আলোকচিত্রে শেষবার দেখা গিয়েছিল তাকে। এই গবেষণার কাজ চালাতে গিয়ে তিনি ১৫০ মিটার উঁচু জায়গা থেকে পা পিছলে পড়ে মারা যান। ছোট্ট যে বাদামি নোটবইটা ভিসনিয়াক সব সময় বহন করতেন, সেখানে লেখা শেষ কথাগুলো ছিল, ‘স্টেশন ২০২ রিট্রায়েভড। ১০ ডিসেম্বর। ২২৩০ ঘণ্টা। ভূমি তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি। বায়ু তাপমাত্রা মাইনাস ১৬ ডিগ্রি;’ মঙ্গলের সাধারণ গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রার মতোই।
ভিসনিয়াকের অণুজীব স্টেশনের অনেকগুলো এখনো রয়ে গেছে অ্যান্টার্কটিকায়। তার সংগৃহীত যে নমুনাগুলো নিয়ে আসা হয়েছিল, সহকর্মীরা তার পদ্ধতির মাধ্যমে সেগুলোকে পরীক্ষার মুখোমুখি করেছিলেন। এই অণুজীববিজ্ঞানীর পদ্ধতি প্রয়োগে অণুজীবের এক বিশাল বৈচিত্র্য পাওয়া গিয়েছিল পরীক্ষিত প্রতিটি স্থানে, যেগুলোকে প্রচলিত স্কোরিং পদ্ধতিতে শনাক্ত করা সম্ভব ছিল না। তার সংগ্রহ করা নমুনা থেকে ইয়েস্টের নতুন প্রজাতি আবিষ্কার সম্ভব হয়েছিল। অ্যান্টার্কটিকায় অণুজীববিজ্ঞানের নতুন দিক খুলে যায় তাতে। এভাবে শুধু প্রাচীন জীবন কিংবা প্রাচীন পৃথিবী নিয়ে নয়, বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার আঁতুড়ঘর হয়ে ওঠে অ্যান্টার্কটিকা।
অথচ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব পুরো বিশ্বের মতো অ্যান্টার্কটিকাতেও পড়েছে। ধীরে ধীরে গলতে শুরু করেছে জমে থাকা বরফ। ফলে পৃথিবীর নিচু এলাকাগুলো সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও প্রভাবশালী দেশগুলো এখানে একের পর এক গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণ করার নামে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। এ তালিকায় যোগ হচ্ছে নতুন নতুন দেশ। কিছু দেশ আবার অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন এবং বিদ্যমান বিধিনিষেধ শিথিল করার পক্ষে নিয়েছে অবস্থান। ফলে অ্যান্টার্কটিকা হয়ে উঠেছে পৃথিবীর জন্য হুমকি। কেননা এর বরফ গলে গেলে পৃথিবীর শহরগুলো তলিয়ে যাবে।
অ্যান্টার্কটিকা হলো তুষারঝড়ের বাসভূমি এবং পৃথিবীর শীতলতম, শুষ্কতম, উচ্চতম ও দুর্গমতম মহাদেশ। পৃথিবীর তলায় লুকিয়ে থাকা এটাই শেষ আবিষ্কৃত মহাদেশ। প্রাচীন গ্রিকরা যে কল্পিত দক্ষিণ দেশের নাম দিয়েছিল অ্যান্টার্কটোকিস অর্থাৎ অ্যান্টার্কটিকা। যার রহস্যময় হাতছানিতে বারবার অভিযাত্রীরা হয়েছেন ঘরছাড়া। কেউবা বছরের পর বছর ধরে খুঁজে বেরিয়েছেন বরফ-জমা সমুদ্রের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত; কেউ বরণ করেছেন গ্রিক ট্র্যাজেডিপ্রতিম বীরের মৃত্যু। কেউ গিয়েছেন পালতোলা জাহাজে; কেউ বরফের টুকরোর ভেলায় ভেসে বেড়িয়েছেন।
পৃথিবীর দুটো মেরু। একটি হলো সুমেরু বা উত্তর মেরু আর দ্বিতীয়টি কুমেরু বা দক্ষিণ মেরু। এটা ভাবতে অবাকই লাগে এই জন্য না যে, এগুলো বরফের লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে! বরং এই জন্য যে, সুমেরুতে অবস্থিত মহাসমুদ্র, আর্কটিক নামের এই সমুদ্রকে ঘিরে রয়েছে পৃথিবীর কতগুলো মহাদেশ; অতএব এক অর্থে একে বলা যায় মহাদেশীয় পুকুর। অর্থাৎ বায়ুপ্রবাহ ও জলপ্রবাহ মহাদেশবেষ্টিত জলরাশির মধ্যে প্রধানত সীমাবদ্ধ। কুমেরুতে অবস্থিত অ্যান্টার্কটিকা, যাকে ঘিরে রয়েছে দক্ষিণ সমুদ্র এবং বায়ুপ্রবাহ-জলপ্রবাহ; আর বাধাহীন, চিরতুষারে ঢাকা এই রহস্যময় মহাদেশ, যেখানে প্রায় দেড় শ বছর আগে মানুষ প্রথম পা রেখেছিল। সপ্তর্ষিমণ্ডলের বিপরীতে, এই কল্পিত দেশই মানুষের পদার্পণে একদিন বাস্তব হয়ে উঠেছিল।
কুমেরু বৃত্ত প্রথম অতিক্রম করেছিলেন ক্যাপ্টেন জেমস কুক, ১৭৭২ সালে। এর নিকটবর্তী দ্বীপগুলো আবিষ্কার করলেও অ্যান্টার্কটিকার মূল ভূখণ্ড দেখতে পাননি। ধারণা করা হয়, মূল ভূখণ্ডের ২৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিলেন তারা। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে অ্যান্টার্কটিকা অভিযানে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনাকাল বলা যেতে পারে। অনেক মৃত্যু ও চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে নরওয়ের রুয়াল অ্যামুন্ডেসেন, ব্রিটেনের রবার্ট ফ্যালকন স্কটের সঙ্গে এক নাটকীয় প্রতিযোগিতার পর ১৩ ডিসেম্বর ১৯১১, অ্যান্টার্কটিকায় পৌঁছান।
পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম এই মহাদেশের আয়তন প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ বর্গকিলোমিটার। শীতলতম মহাদেশটির প্রায় পুরোটাই ঢেকে রয়েছে বরফে। এর পরিবেশ এতটাই প্রতিকূল, কোনো মানুষের পক্ষে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করা সম্ভব নয়। তারপরও মূলত প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের আশায় ১৯০৮ সালে ব্রিটেন সর্বপ্রথম অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের মালিকানা দাবি করে। এরপর থেকে বিভিন্ন দেশ এর ওপর নিজেদের সার্বভৌমত্ব দাবি করতে থাকে।
এরই রেশ ধরে বিভিন্ন দেশ অ্যান্টার্কটিকার বিভিন্ন অংশে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। প্রথম দিকে দেশগুলো সহযোগিতামূলক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে কার্যক্রম শুরু করলেও একসময়ে তা আন্তর্জাতিক উত্তেজনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, চিলি, ফ্রান্স, জাপান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নরওয়ে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সোভিয়েত ইউনিয়ন—এই ১২ দেশের কয়েকটি বৈজ্ঞানিক সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগে যৌথভাবে বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। ফলে এই ১২ দেশ ১৯৫৭ সালের ১ জুলাই থেকে ১৯৫৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘আন্তর্জাতিক ভূ-প্রাকৃতিক’ বর্ষ পালন করে। এভাবে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে নানা দেশের ৫৫টির বেশি গবেষণাকেন্দ্র স্থাপিত হয়। গ্রীষ্মের মাসগুলোতে ৫ হাজার লোক গবেষণা স্টেশনগুলোতে বসবাস করেন, যা শীতকালে নেমে আসে এক হাজারে।
ভারতও তার মধ্যে রয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশটির স্থাপিত গবেষণাগারের নাম দক্ষিণ গঙ্গোত্রী। এখানে প্রথম একজন বাঙালি নারী গবেষক অভিযাত্রী হয়েছিলেন। অ্যান্টার্কটিকার তৃতীয় অভিযানে স্থান পেয়েছিলেন তিনি। বলছি বিজ্ঞানী সুদীপ্তা সেনের কথা। বাংলাদেশ থেকে প্রথম পর্যটক হিসেবে অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণে গিয়েছিলেন ইনাম আল হক।
‘অ্যান্টার্কটিকা’ নামে অসাধারণ একটি গ্রন্থও লিখেছিলেন সুদীপ্তা সেন। তাতে লিখেছেন, ‘হিমালয়ের বিশাল মহিমামণ্ডিত তুষারধবল রূপ দেখেছি, আল্পস আর রকির রাজকীয় চোখঝলসানো সৌন্দর্যও আমার দেখা; আরও দেখেছি উত্তর মেরুবৃত্তের বরফ-ঢাকা ঢেউ খেলানো তুন্দ্রা, গ্রান্ডক্যানিয়নের অতল গহ্বর কিংবা ভারত, আটলান্টিক মহাসমুদ্রের অনন্ত জলরাশি। কিন্তু এই শুভ্র তুষারভূমির বৈচিত্র্যহীন সরল রূপ একেবারেই অকল্পনীয় ছিল। আমার দেখা কোনো অভিজ্ঞতার সঙ্গেই এ রূপের মিল নেই। প্রকৃতি কেবল দুটি রং ব্যবহার করেছে এখানে, আর অতি সরল কয়েকটি রেখা; অথচ তাতেই কী বিচিত্র সুন্দর রূপ প্রকাশ পেয়েছে। অন্তহীন বরফের রাজ্যে সাদা রঙের কত রকমভেদ। কোথাও সূর্যের আলো লেগে রুপোগলা রং গলে পড়ছে, কোথাও জলরঙের মতো স্বচ্ছ ফিকে নীলাভ দ্যুতি, কোথাও একটু ফিরোজার আভা ছোঁয়ানো, আবার কোথাও-বা হালকা ছাইয়ের প্রলেপ কিংবা কচি আপেলের সবুজ…।’
১৯৫৯ সালে ১৫ অক্টোবর মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের আহ্বানে ১২টি দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হয়। সেই সম্মেলনে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সে বছরের ১ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয় ‘অ্যান্টার্কটিকা চুক্তি’। সেই চুক্তির মাধ্যমে দেশগুলো অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশকে কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক বিরোধের বিষয়বস্তুতে পরিণত না করে একে মানবজাতির কল্যাণে ব্যবহারের বিষয়ে অঙ্গীকার করে। একই সঙ্গে অ্যান্টার্কটিকায় কোনো ধরনের সামরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, পারমাণবিক অস্ত্রসহ কোনো ধরনের অস্ত্রের পরীক্ষা চালানো এবং খনিজ সম্পদ আহরণও নিষিদ্ধ করা হয়। অ্যান্টার্কটিকার প্রাণিসম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ এবং পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টিও চুক্তিতে উল্লেখ ছিল। ১৯৬১ সালের ২৩ জুন কার্যকর হওয়া ওই চুক্তিতে ২০২২ সাল নাগাদ আরও ৪৩টি দেশ স্বাক্ষর করে। ওই চুক্তিরই ফসল ‘অ্যান্টার্কটিকা ডে’ উদযাপন।
বলে রাখি, দক্ষিণ মেরুর গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ৮৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি আসলে একটি মেরু মরুভূমি, যেখানে ২০০ মিটার বৃষ্টিপাত হয় উপকূল বরাবর এবং অনেক কম অভ্যন্তরীণ। বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ পানির রিজার্ভ সেখানে হিমায়িত রয়েছে, যা গলে গেলে বৈশ্বিক সামুদ্রিক উচ্চতা ৬০ মিটার বা ২০০ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যাবে। যার গড় পুরুত্ব ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার (১ দশমিক ২ মাইল)। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ কুমেরু বৃত্তের ভেতরে কোনো তুন্দ্রা বা গাছপালা নেই। উদ্ভিদ বলতে প্রধানত মস আর লাইকেন। প্রাণীদের স্থানীয় প্রজাতির মধ্যে রয়েছে মাইট, নেমাটোড, পেঙ্গুইন, সিল এবং টার্ডিগ্রেড। কুমেরুতে রয়েছে ১৯ প্রজাতির পাখি। ৭০ থেকে ৮০ ডিগ্রি অক্ষাংশে পেঙ্গুইন ও স্কুয়া অন্যতম। অন্যদিকে, সুমেরুতে ১০৭ প্রজাতির পাখি থাকলেও পেঙ্গুইন কিংবা স্কুয়া নেই।
জাতিসংঘে মালয়েশিয়া প্রস্তাব এনেছে, অ্যান্টার্কটিকা কোনো বিশেষ দেশ বা গোষ্ঠীর লাভের নয়, এর প্রাকৃতিক সম্পদ সমগ্র মানবজাতির উত্তরাধিকার। যদি অ্যান্টার্কটিকা শোষণ ও দখলের অশুভ দিকগুলো আমরা কাটাতে পারি, এটি হয়ে উঠবে বিজ্ঞানের মহাদেশ। যেখানে বৈজ্ঞানিক ও অনুসন্ধিৎসু মনের মানুষেরা এই পৃথিবী ও মহাকাশের রহস্য উন্মোচনে শুধু নয়, মিলিত শক্তির সন্ধানে মানবমনসমূহের মধ্যকার সাঁকো রচনায়ও কাজ করবে।
অ্যান্টার্কটিকার কথা ভাবলেই বুদ্ধদেব বসু অনূদিত বোদলেয়ারের সেই কবিতা দোলা দিয়ে যায় মনে:
কিন্তু তারাই যথার্থ যাত্রী যারা চলে যায়
কেবল যাবারই জন্য, হালকা মন, বেলুনের মতো
নিশিত নিয়তি না ফেলে একবার ফিরে না তাকায়,
কেন, তা জানে না, শুধু ‘চলো, চলো’ বলে অবিরত।
তাদের বাসনা পায় মেঘপুঞ্জে উজ্জ্বল বিন্যাস…।
লেখক: বিজ্ঞান বক্তা; সম্পাদক, মহাবৃত্ত (বিজ্ঞান সাময়িকী)
ছবি: ইন্টারনেট