skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I মিমফাইড

মোবাইলের স্ক্রিন থেকে সরাসরি পোশাকের ক্যানভাসে। হোক তা হাই স্ট্রিট কিংবা হাই এন্ড। স্টাইলিংয়ের পাশাপাশি স্টেটমেন্ট তৈরির নতুন এ পন্থার পুরোটাই কিন্তু ওয়াইটুকে প্রজন্মের উদ্ভাবন। এখন মাতাচ্ছে জেনজিদের। ফলাফল—আলোড়িত পুরো ফ্যাশন বিশ্ব। সারাহ্ দীনার লেখায় বাকিটা

সংক্ষিপ্ত, সরস সব উক্তি। মতপ্রকাশের রসিক ও বুদ্ধিমান উপায়। মিমের মজাটা তো এখানেই! অন্তর্জাল ঘুরে বেড়াতে নানান ধরনের মিম। কোনোটায় ছবি আর টেক্সটের মেলবন্ধন, কোনোটাতে ছবির কোলাজ আবার কোনোটাতে শুধু কথামালা। মনের অনুভূতিকে নানা রঙে রঙ্গ করে ফুটিয়ে তোলার কাজটাই করছে মিম! আর এখন এতেই তৈরি হচ্ছে ফ্যাশন স্টেটমেন্ট।
ওয়াইটুকে-এর সময় থেকেই রমরমা বাড়ে টেক্সট সমৃদ্ধ টি-শার্টের। যার ক্যানভাসজুড়ে লেখা বিভিন্ন লাইন। কখনো সেগুলো বিদ্রোহের বাণী, কখনো হাসির, কখনো উৎসাহের, কখনো বিরহের, কখনো দর্শনের। জ্ঞানী-গুণীদের গুরুত্বপূর্ণ কথা, চলচ্চিত্রের ডায়ালগ, কবিতার লাইন, লিরিক—কোনো কিছুই বাদ যেতে দেখা যায়নি। এমনকি সেলিব্রিটিদের ওয়্যারড্রোবেও জায়গা করে নিয়েছে মিম ফ্যাশন। বোরা বোরা-তে ঘুরতে গিয়ে এমা চাম্বারলিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি শেয়ার করেন রঙিন ট্যাং টপ পরে। যেখানে লেখা ছিল, ‘নিশ ইন্টারনেট মাইক্রো সেলিব্রিটি’। আবার কোল চেরিকে দেখা গেছে ওয়ান শোল্ডার টি পরা অবস্থায়। সেখানেও নজর কেড়েছে মিম।
মিম স্থান করে নেওয়া পোশাকগুলোর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক বলা যেতে পারে এর নিজস্বতা। প্রতিটি মিম আলাদা করে প্রকাশিত হয়। যেমন মিম ফ্যাশনের পোশাক হিসেবে সহজেই পরে নেওয়া যেতে পারে মেগান ফক্সের মুখাবয়ব। সঙ্গে এক লাইনের শক্তিশালী বাণী—‘আমেরিকা’স নেক্সট টপ গার্ল বস’! বিগ গার্ল ব্র্যান্ডের কালেকশন এটি। মিম ফ্যাশন জায়গা করে নিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলোতেও। এর মধ্যে ইনস্টাগ্রামে নতুন এই ট্রেন্ডের রাজত্ব সব থেকে বেশি। ২০০০ সালে ফ্যাশন দুনিয়া মেতেছিল ব্রিটনি স্পিয়ারসের ‘ডাম্প হিম’ টেক্সট-সংবলিত শার্ট নিয়ে। প্যারিস হিলটনের ‘স্টপ বিং ডেসপারেট’ টেক্সটের ট্যাঙ্ক টপেও মাতোয়ারা হয়েছিল ফ্যাশনিস্তারা। আয়রনিক টি-শার্টের প্রতি আগ্রহের শুরু তখন থেকেই। ফ্যাশনসচেতনেরা এই টপ ওয়্যারগুলোকে পেয়ার আপ করে নিতেন ডেনিম মিনি স্কার্ট, লো রাইস জিনস বটমের সঙ্গে। ফুটওয়্যারে ফাংকি প্ল্যাটফর্ম বুটস বেছে নেওয়ার চল ছিল তখন। সঙ্গে নিউবয়েজ ক্যাপ ও মিনি পার্স।
জেনজিদের বদৌলতে ওয়াইটুকে উদ্ভাবিত এ ফ্যাশনে আবার ফিরেছে এ ট্রেন্ড। এবারেও অনেকে রি-কল করছেন সেসব। ইনস্টাগ্রামে দেখা মিলছে এমন আউটফিটের আপডেট। সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল ইনস্টাগ্রামের ইউরোপ রিজিয়নের দক্ষিণাংশের ফ্যাশন ও বিউটি স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার ম্যানেজার ক্লারা কর্নেট সেভেনটিন ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘টি-শার্টে স্লোগান কয়েক দশক ধরেই দেখেছি আমরা। ব্রিটনি স্পিয়ার্সের উদাহরণ তো মনে গেঁথে আছে এখনো। এর কয়েক দশক পরে ফ্যাশনে যুক্ত হয় মিমফাইড পোশাক। ডিজিটাল আর বাস্তব দুনিয়া যতই মিলেমিশে যাচ্ছে, ততই পোশাকে মিমের চাহিদা বাড়ছে। বলা যায়, স্ক্রিন থেকে মিম নেমে আসছে টি-শার্টের কলারে, স্লিভে, চেস্টে।
মিমফাইড ফ্যাশনের একটি বিশেষ দিক হচ্ছে, এখানে সাধারণত সেসব মিম ব্যবহার করা হয়, যেগুলো তুলনামূলক বেশি জনপ্রিয়তা পায়। ইন্টারনেটের ভাষায়, যেগুলো মূলত ভাইরাল হয়ে থাকে। এখন তো কোনো মিম দেখে ভালো লেগে গেলে, তা অনায়াসেই প্রিন্ট করে নেওয়া যাচ্ছে পোশাকে। এভাবেই মিমফাইড ফ্যাশন মিশে যাচ্ছে নিত্যদিনের জীবনযাপনে। মিম ক্রিয়েটরস এবং তাদের দর্শকদের জন্য এটা একধরনের লুপ বলা যেতে পারে।
এ বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত হয় গ্লোবাল মিম কন। এটি ছিল ইনস্টাগ্রামের মিম ইভেন্ট। সেখানে দেখা যায়, মিম নিয়ে বিচিত্র সব কাজ।
ইনস্টাঅ্যানিমেটেড টেক্সটের ক্যাট ফ্রিজিয়ার সেভেনটিন ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে আমি মিম বানিয়ে আসছি। ব্যবহার করছি থ্রিডি পাওয়ার পয়েন্ট স্টাইল। মানসিক সুস্থতা নিয়ে অনেকগুলো কাজ করেছি। এই কাজগুলোতে আমার ধারা ছিল পরাবাস্তব ও হালকা রসিকতার মাধ্যমে মিমের ভাবটিকে সহজভাবে প্রকাশ করা। আমি চাই এমন আরও অনেক মিম তৈরি করতে, যেগুলো বর্তমান পৃথিবীতে হাস্যরসের মাধ্যমে প্রকাশিত হতে সাহায্য করবে আমাদের।’
অ্যাইডেন অ্যারাটা কাজ করেন মিম ফ্যাশন নিয়ে। অনন্য মিম ফ্যাশনের দুনিয়ায় তার যাত্রা শুরু হয়েছিল ভালো লাগা থেকে। পছন্দের মিম তিনি প্রিন্ট করে নিতে চেয়েছিলেন পোশাকে। তাকে সাহায্য করেছিল তারই বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ড। করে দিয়েছিলেন স্ক্রিন প্রিন্ট, একসঙ্গে ছত্রিশটি শার্ট!
পোশাকে জনপ্রিয় মিম ব্যবহার করা হলে সেই ক্লথিং আইটেমের প্রতি ক্রেতার আগ্রহ তুলনামূলক বেশিই থাকে। কারণ, মিমটি দেখে তার মনে পড়ে যায় বন্ধু এবং একই ধরনের চিন্তার মানুষের সঙ্গে হাস্যরসের মুহূর্তগুলো। তখন যে কেউ দ্রুতই আকৃষ্ট হয় সেই মিম যুক্ত পোশাকের প্রতি।
অ্যাইডেন এ বিষয়ে আরও বলেন, ‘মিমফাইড ফ্যাশনের মাধ্যমে একটি মতবাদ, চিন্তা, অনুভূতি ছড়িয়ে দেওয়া যায় একই ধরনের মনোভাবের মানুষের কাছে। অচেনা মানুষও তখন হয়ে উঠতে পারে কাছের মানুষ!’
মিমের মাধ্যমে সরাসরি কোনো কিছু সেভাবে বলেন না মিম প্রস্তুতকারীরা। একাধিক লেয়ারের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় মূল বিষয়টি। মিম তাই মাথায় গেঁথে যায়। জায়গা করে নেয় মানুষের মনের মাঝে। যে মিম জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়, সে মিম ফ্যাশন আইটেমে জায়গা করে নিলেও ইতিবাচকভাবে বাজারে স্থান করে নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মিমে বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। মিম ফ্যাশনের ক্ষেত্রেও তাই। ফ্যাশনের এই ধারা থেকে পণ্য বেছে নিতে হলে প্রথমে পরিচয় থাকতে হবে অরিজিনাল কনটেন্টের সঙ্গে। জানতে হবে মিমটির আসল মেসেজ। মিমের সঙ্গে ক্রেতার সম্পর্ক যতটা জোরদার হবে, ততটাই কেনার আগ্রহ বাড়বে ক্রেতার। মিম ফ্যাশনে সেজে উঠতে আত্মবিশ্বাস একটু বেশিই জরুরি। এই ফ্যাশন ধারাতে যেহেতু পোশাকটি একটি নির্দিষ্ট বাণী কিংবা ছবিকে কেন্দ্র করে নকশা করা হয়ে থাকে, সেহেতু সেখানেই ফোকাস থাকে। মূল বিষয় এটি। পোশাকে ফুটিয়ে তোলা মিমের মেসেজ নিয়ে সহমত পোষণ করলে স্বাভাবিকভাবে তবেই ক্রেতা সে পোশাক বেছে নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। তাই মূল কনটেন্টের সঙ্গে ক্রেতার সরাসরি যোগাযোগ এখানে গুরুত্ব পায়। একই ধরনের মিম পছন্দ করে যারা, তাদের বলা যেতে পারে একই মিম ক্লাবের সদস্য।
মিম ফ্যাশনের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। জেনজি এবং মিলেনিয়ালদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে ট্রেন্ডি এই লাইন। অন্তর্জালে মিম শেয়ারিং বাড়ছে দ্রুতগতিতে। ধারণা করা হচ্ছে, আইকনিক মিম ও স্লোগান নকশার টি-শার্টের প্রতি আগ্রহী দল ভারী হচ্ছে দিন দিন। নতুন ধারার জোয়ারের সময়টাতে মিম ফ্যাশনের ধারা থেকে পোশাক বেছে নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ পাওয়া গেল ইটস অ্যানিমেটেড টেক্সট অ্যাকাউন্টের ক্যাটের কথাতে। তার মত, ‘ফ্যাশনধারার নতুন সংযোজন মিম ফ্যাশন থেকে পোশাক বেছে নিতে গেলে সেই পোশাক বেছে নেওয়া ভালো, যেটি পরতে আপনার কোনো ধরনের অস্বস্তি কাজ করবে না। আপনি যে মিম নিজের পোশাকে ধারণ করতে সম্পূর্ণভাবে আত্মবিশ্বাসী। মিম যারা তৈরি করেন, তাদের মতো করে ফলোয়ার, লাইক, ফ্যান সংগ্রহের প্রতিযোগিতা আপনার নেই। আবার, জনপ্রিয় মিমের পোশাকটিকেই বেছে নিতে হবে এমন বাঁধনেও নিজেকে বাঁধতে যাবেন না যেন, তার থেকে বরং নিজের মতো করে বেছে নিন। আপনার যে মিম ভালো লেগেছে, সেটি সংবলিত পোশাক রাখুন সংগ্রহে।’
মিম নিয়ে অনুষ্ঠিত মিম কনের প্যানেলে ছিলেন মিম ক্রিয়েটর অ্যাডেন। নতুন এই ট্রেন্ড নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা নতুন একটি যুগে প্রবেশ করছি। ‘গার্ল বস’ এরার থেকে ভিন্ন সে যুগ! এই যুগ আরও বেশি সূক্ষ্মভাবে নির্ধারিত একটি জায়গা। এখানে মহৎ হওয়ার থেকে সুখী হওয়ার গুরুত্ব বেশি।’ চাইলে যে কেউ এখন অ্যাডেনের মতো করে ভাবতে পারে। নিজের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে পছন্দমতো মিমের নকশা করা পোশাক পরে ঘুরে বেড়িয়ে স্বাধীনতাকে উপভোগ এবং তৈরি করতে পারে নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট।
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top