skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I কোর কালচার

অ্যাসথেটিক, মুডবোর্ড- এরপর একই ধারায় ফ্যাশন বিশ্বের নতুন সংযোজন কোর। টিকটকের কল্যাণে ট্রেন্ডিং। ইয়ুথ অরিয়েন্টেড কনসেপ্ট, তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অবস্থান জানান দেওয়ার অন্যতর কৌশল

তরুণদের মাঝে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটককে কেন্দ্র করে স্টাবলিশ হচ্ছে ফ্যাশন কোর ট্রেন্ডটি। যার মাধ্যমে বিভিন্ন ফ্যাশন ইন্সপিরেশনে নিজেকে সাজিয়ে তুলছে মানুষ। তারপরে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছে ক্যাপশনে থিমের নামটি লিখে। সঙ্গে যোগ করছে কোর শব্দটি। উদাহরণে বলা যেতে পারে নরমাল কোর, বারবি কোর, অ্যাঞ্জেল কোর, ডেভিল কোর ইত্যাদি।
তাহলে কোর কী? সহজ ভাষায় কোর হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সৃষ্ট একধরনের বিশেষ ফ্যাশন প্রবণতা, যা নির্দিষ্ট ধরনের ভিজ্যুয়াল অ্যাসথেটিককে সংজ্ঞায়িত করে। উপস্থাপিত হয় ব্যক্তির পার্সোনাল স্টাইল। জেনজিদের আগের প্রজন্মের কাছে এ কনসেপ্টটা স্টাইলিং নামে ব্যবহৃত হলেও এখন কোর টার্মেই বেশি পরিচিত। জেনজিদের ইনস্টা ফিড, স্ন্যাপচ্যাট আর টিকটকে এই নামেই এর প্রচার বেশি। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় বর্তমানে ‘বাজিয়েস্ট ওয়ার্ড’-এর তকমা কোরের দখলে।
নরমাল কোরের বিস্তারিত বয়ানে আসা যাক প্রথমে। সচেতনভাবে অসচেতন থাকার একটি প্রচলিত লাইন রয়েছে। ‘কেয়ারফুলি কেয়ারলেস!’ নরমাল কোরের বিষয় অনেকটা সে রকম। এই কনসেপ্টে খুব সাধারণ পোশাক পরা হয়। প্রতিনিয়ত আশপাশেই চোখে পড়ে যেসব পোশাক, তাতেই দেখা যায় এই ট্যাগলাইন ব্যবহারকারীদের। দুই মিলেনিয়ালের ব্রেইন চাইল্ড এই ধারণা। তারা হচ্ছেন গ্রেগ ফং এবং এমিলি সেগাল। ফ্যাশন কোরের মূলে রয়েছে এতটুকুই! বেশ খানিকটা শব্দনির্ভর ফ্যাশনের এই নতুন ধারা। এর কারণ, বর্তমানে ফ্যাশন প্রকাশের সবচেয়ে বড় মাধ্যম ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল। যেখানে যথাযথ ক্যাপশনে লিখে ছবি অথবা ভিডিও পোস্ট করা বর্তমান ফ্যাশনিস্তাদের টু-ডু লিস্টে মাস্ট! শব্দকে ভিত্তি করে ফ্যাশনের এই অন্তর্জাল যাত্রার গ্রন্থিক নাম লেক্সোলজিক্যাল।
ফ্যাশন কোরে আছে নানান রকম টার্ম। জেনজিরা ঝুঁঁকেছে এতে। আট সেকেন্ড অ্যাটেনশন স্প্যান এদের, এমনটাই জানা যায় গবেষণাপত্র থেকে। ভিডিও কনটেন্ট তৈরিতে হাত পাকা জেনারেশনের বেশির ভাগেরই। টিকটক কনটেন্টে আগ্রহ বেশ ভালোই বলা যেতে পারে। অন্তত ব্যবহারকারীর পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে তেমনটাই মনে হয়। জেনজিদের কোর ফ্যাশনের বাহারে টিকটক নিউজফিড হয়ে উঠছে ড্রামাটিক!
সামাজিক যোগাযোগভিত্তিক নতুন ট্রেন্ড ফ্যাশন কোরের কথা বললে প্রথমেই আসবে ক্রাফট কোরের চর্চা। কেন? কারণ, এই ট্যাগে খুঁজে পাওয়া যায় পুরোনো গল্পকে নতুন করে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা। নিট, ক্রোশে, এমব্রয়ডারি- হাতে তৈরি যা কিছু আছে, সেসবের পোস্টে ব্যবহার করা হয় এই ট্যাগ। নস্টালজিক এসব পণ্যকে পুনরায় জনপ্রিয় করে তোলার এক চেষ্টা যেন! দেখে-শিখে নিজে করাকে উৎসাহিত করা হয় এই ট্যাগলাইন ব্যবহারের মাধ্যমে। এটাই ক্রাফট কোর। সুই-সুতা দিয়ে হাতে সেলাই করে দারুণ সব নকশা ফুটিয়ে তোলার এই পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় ছিল আগে থেকেই। এখন শুধু আধুনিক পোশাকি নাম পেয়েছে ক্রাফট কোর।
অ্যাঞ্জেল কোর-ডেভিল কোর
অ্যাঞ্জেল কোরের ব্যাখ্যা নামেই প্রকাশিত। এর কাউন্টারপার্ট ডেভিল কোরের ক্ষেত্রেও তাই। মেঘ, পাখা, কিউপিডের ছবি, গোলাপ, হারপস, আলো-ছায়ার খেলায় অ্যাঞ্জেল কোরের সাজসজ্জা সম্পন্ন হয়। প্রচেষ্টা পবিত্র সৌন্দর্য প্রকাশের।
আর ডেভিল কোরের ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্যাটানিক মোটিফ, কাঁটাতার, লাল-কালোর আধিপত্য, আগুনের শিখা, চোকার, ব্ল্যাক পলিশড মেটালের অ্যাকসেসরিজ। সব মিলিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি ইমেজ তৈরি করা হয়। আর এই কোর মেনে যারা সাজেন, তাদের সাজে দেখা যায় ডার্ক মেকআপ। প্রকাশিত হয় একধরনের স্যাডিস্টিক প্লেজার।
বারবি কোর
জনপ্রিয় পুতুল চরিত্র বারবি। এখানে বেসিক কালার একটি। সেটি গোলাপি। ঝলমলে চটকদার বডি ফিটিং পোশাক। গারলি শব্দটির দারুণ প্রতিফলন দেখা যায় এই ঘরানায়। জেনজিদের কাছে হট ট্রেন্ড হিসেবে সমাদর পেয়েছে, পাচ্ছে। গ্রেটা গেরওইয়ির মুক্তি প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র ‘বারবি’-এর সেট থেকে পাপারাজ্জির তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার কারণে এই ট্রেন্ডের পালে প্রথম হাওয়া লাগে।
কটেজ কোর
এক দশক আগের গল্পে ফিরে দেখা যাক! ২০১০ সালের কথা! তখন থেকেই জনপ্রিয় এই ভিন্টেজ লুকের ফ্যাশন ধারাটি। প্রথম দেখায় যেন মনে হয় গল্পের বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসেছে পোশাকগুলো। উডসি-টার্মটি এই কোরের জন্য জরুরি। জঙ্গলের গাছের নিজস্ব রং আছে একটি। ছায়া আর রোদের আবেশ মাখা, একটু শেওলা ধরা, স্যাঁতস্যাঁতে আস্তরণে ঢেকে থাকা গাছের প্রভাব কটেজ কোরের পোশাকে দেখা যায়। হালকা, মোলায়েম, আর্দি টোনের ব্যবহারে ব্যাপকতা দেখা যায় এখানে। পোশাকের গঠনগত বিশেষত্বের প্রধান দিক হচ্ছে এর ফিটিং। পোশাকগুলো বডি হাগিং হবে না। হবে খানিকটা ঢিলেঢালা, ওভারসাইজড। প্রাধান্য পায় লং এবং পাফড স্লিভ। পিটার প্যান কলার। এই হচ্ছে কটেজ কোরের টপের বেসিক ডিজাইন। আর বটমে লুজ ফিটিং লিনেন প্যান্টস। ভিনটেজ লুকের ফ্লোয়ি ফ্রক এই কোরের পোশাক। প্রিন্ট হিসেবে প্রাধান্য পাবে ফুলেল এবং গিংহাম চেক। শীতের সময়ে এ ট্রেন্ডে যুক্ত হয় কোজি ধরনের কার্ডিগান। প্রেইরি ড্রেস এই কোরেরই পোশাক।
কাউ বয় কোর
কাউ বয় হ্যাট আর বুট এই কোরের মাস্ট হ্যাভ। সঙ্গে ফ্রিঞ্জি জ্যাকেট আর ডেনিম। এতেই সই! এই ধরনকে কোথাও কোথাও ওয়েস্টার্ন কোর বলেও সম্বোধন করা হয়।
ফেইরি কোর
ফেইরি- এই একটি শব্দেই ফিরে আসে ছোটবেলার হাজার স্মৃতি। যেন ঘুমুতে যাওয়ার আগে গল্প শোনাচ্ছেন মা। ফ্যাশন দুনিয়ায় ফেইরি কোর এমনটাই। মিথলজি আর প্রকৃতির মিশেল যেন। ডানা, প্রজাপতি, শিমারি মেকআপ, লম্বা বেণি, ফুলের মুকুট, ফিঙ্গারলেস গ্লাভস, করসেট আর পাফড স্লিভে সম্পন্ন হয় ফেইরি কোরের সাজ।
গবলিন কোর
ফেইরি কোরের বিপরীত বলা যেতে পারে একে। মিথ আর নেচারের মেলবন্ধন এখানে দেখা যায়। তবে সঙ্গে মিশে থাকে অপশক্তি, কুৎসিতের নেতিবাচকতার প্রভাব। বাদামি আর গাঢ় সবুজের ব্যবহার এই কোরে দৃষ্টি কেড়ে নেয়।
ফেটিশ কোর
ল্যাটেক্স ফেভারিট এই কোরে। ক্লথিং আইটেমের ক্ষেত্রে মূলত এই ম্যাটেরিয়ালই ব্যবহার করা হয়। এটি মূলত বিডিএসএম (বন্ডেজ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন, ডমিনেশন অ্যান্ড সাবমিশন, স্যাডিজম অ্যান্ড ম্যাসোসিজম) কালচার থেকে প্রভাবিত। বডি ফিটেড শাইনি ল্যাটেক্স পোশাক, চোকার এই কোরের পোশাক এবং অনুষঙ্গের মধ্যে অন্যতম।
গোর্প কোর
আরাম এবং স্টাইলের মিশেল এই কোরকে বিশেষ করেছে। ফাংশনাল আউটডোর ওয়্যার যেমন কার্গো প্যান্ট, ট্রেইল রানিং শুজ, হাইকিং শুজ মূলত এই কোরের অন্তর্ভুক্ত। এর সঙ্গে জ্যাকেটেরও আবেদন রয়েছে। হাইকিং এবং ট্রেকিং ফ্যাশনের জন্য দারুণ উপযোগী এ কোর।
গথ কোর
গথিক ফ্যাশনে প্রাধান্য পায় কালো রং। সাজসজ্জা যেন লুকিয়ে থাকে রহস্যের আঁধারের চাদরে। চুলও কালো রঙের ছোঁয়ায় কুচকুচে কালো করে নেওয়া হয়। হেয়ারস্টাইল সম্পন্ন হয় নানান অনুষঙ্গে। পিভিসি আর ভিনাইল ব্যবহার করা হয় এই কোরের পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে। মেকআপে ডার্ক লিপস্টিক ব্যবহার করা হয়। এমনকি কালো রঙেও অনেকে সেরে নেন ঠোঁটের সাজ। আই মেকআপ করা হয় ডার্ক টোনে। গয়নার ক্ষেত্রে চোকারের ব্যবহার বেশি।
লাভ কোর
এই কোরের ফলোয়ারদের সব দিনই ভ্যালেন্টাইন ডে! কারণ? গোলাপি আর লাল রঙের ব্যবহারের ব্যাপকতা। হার্ট, লিপ আর কিউপিডের নানান ধরনের আকর্ষণীয় মোটিফের ব্যবহারও রয়েছে।
রয়্যাল কোর
যুক্তরাজ্যের রাজকীয়তাকে ফ্যাশনে তুলে এনেছে এই রয়্যাল কোর। মূলত পশ্চিম যুক্তরাজ্যের রাজকীয় সংস্কৃতি দেখতে পাওয়া যায় এই কোরে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে শুরু করে উনিশ শতক সময়কালের ফ্যাশনকে পুনরায় সাবলীলভাবে প্রকাশ করেছে রয়্যাল কোর টার্মটি। এর রয়েছে তিনটি সাব-ক্যাটাগরি। প্রিন্সেস কোর, কুইন কোর, নাইট কোর। পোশাকের নকশা, রং, গয়না, অনুষঙ্গ- সবকিছুতেই দেখা যায় রাজকীয় স্পর্শ।
ভ্যাকেশন কোর
ট্যুরে গেলে বেশির ভাগ মানুষের পোশাক-আশাকেই বদল আসে। মন যেমন ফুর্তি নিয়ে স্বাধীনতা উপভোগ করে, পোশাকেও যেন সেই আনন্দের ছোঁয়া লাগে। ভ্যাকেশন কোর হেসেখেলে বেড়ানোর পোশাকেরই কোড। কিন্তু এটি পরতে নিজের শহর ছেড়ে অনেক দূরে যেতেই হবে- এমন কিন্তু আবশ্যক নয় মোটেই। চাইলে ছুটির দিনে বন্ধু কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে অনায়াসে বেরিয়ে পড়া যায় ভ্যাকেশন কোরের পোশাক পরে।
ব্যালে কোর
ফ্যাশন দুনিয়া ব্যালে থেকে অনুপ্রাণিত আগে থেকে। এক-দু দিনের গল্প নয় সেটি। আঁটসাঁট পোশাক লিওটারডস, ফোলানো স্কার্ট টুটুস, ফ্লোটি স্কার্ট, র‌্যাপ সোয়েটার, ব্যালে ফ্লাটস, টি লেংথ ড্রেস অর্থাৎ পায়ের গোড়ালি অবধি ফ্রক- প্রতিটিই এ কোরের পরিচায়ক।
কিড কোর
ছোটবেলায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে এই কোড। মূলত বেবি ওয়্যারের মোটিফগুলো ব্যবহার করা হয়। রংগুলো হয় প্রাইমারি শেডের। ফুটওয়্যার হিসেবে দেখা যায় লাইটআপ স্নিকারস। স্টিকারস, ফ্রেন্ডশিপ ব্রেসলেটে সম্পন্ন হয় এই কোরের সাজসজ্জা।
কে কোর
কোরিয়ান চলচ্চিত্র, মিউজিক আর স্কিন কেয়ার- কয়েক বছর ধরেই এই তিনটি বিষয়ের প্রতি দারুণ ঝুঁকছে মানুষ। তারই ধারাবাহিকতায় এসেছে কে কোর। কোরিয়ান কোরের সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে কে কোর। এর দিকেই এখন আগ্রহ দেখাচ্ছে উঠতি বয়সীরা। তাই কে কোরের জনপ্রিয়তা বাড়ছেই।
ফ্যাশন কোর এখন ইন ট্রেন্ড। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরও বেশ কিছু কোর জাঁকিয়ে বসেছে। যেমন মেটাল কোর, টুয়াইলাইট কোর, ডেল কোর, পাইরেট কোর, ফিউচারিস্টিক ফ্যাশন কোর, রেইনবো হাই কোর, মারমেইড কোর, বেলা হাদিদ কোর, ব্লোক কোর, স্টোরি বুক কোর- এমন বেশ কিছু কোরে মেতে আছে মিলেনিয়াল আর জেনজিরা! ফ্যাশনের নতুন এই দিক বেশ ড্রামাটিক। তাই সব বয়সী ফ্যাশন-সচেতনদের মাঝে কোর সিরিজ হয়ে উঠেছে উপভোগ্য।

 সারাহ্ দীনা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top