skip to Main Content

টেকসহি I সুইচ টু সাসটেইনেবিলিটি

পোশাকের রোজকার পরিচর্যার প্রচলিত পন্থায় প্রয়োজন রূপান্তর। পুরো প্রক্রিয়াকে আরও পরিবেশবান্ধব করে তোলার জন্য। তবেই আসবে পরিবর্তন

লন্ড্রি রুটিন; আবশ্যক নয়, অত্যাবশ্যক। পরনের পোশাক পরিষ্কার রাখতে তা ধোয়ার বিকল্প এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। আর পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হলে সাবান-পানি চাই-ই চাই! কিন্তু নিত্যদিনকার এই লন্ড্রি রুটিনের প্রভাব যে পড়ছে পরিবেশের ওপর, সেটাই শঙ্কা! এই যে আবহাওয়ার রুদ্র রূপ দুনিয়া দেখছে বারবার, খবর মিলছে অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলার কিংবা সি লেভেলের উচ্চতাও বাড়ার। সঙ্গে যোগ হচ্ছে আবহাওয়াবিদদের সতর্কবাণী- ডুববে নিম্নাঞ্চল। এসবের পেছনে বেশ খানিকটা ভূমিকা রয়েছে প্রতিদিনকার লন্ড্রি রুটিনের। এ ভূমিকা নেতিবাচক আর আশঙ্কার।
বিশ্বের মাত্র ১ শতাংশ পানি পানের উপযোগী। উন্নত বিশ্বের ৮৪৪ মিলিয়ন মানুষ ইতিমধ্যে বিশুদ্ধ পানির অভাবে কষ্ট পাচ্ছে। ইউনাইটেড নেশন সতর্কবাণী দিয়েছে বেশ আগেই। যদি ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন না আসে, তবে ২০৫০ সালের মধ্যেই ৫ বিলিয়ন মানুষ পানিসংকটে ভীষণ ভুগবে। লন্ড্রি রুটিনের সঙ্গে এই দুর্যোগের সম্পর্ক হচ্ছে, কাপড় ধুতে অনেক পানির প্রয়োজন হয়। পরিপূর্ণভাবে একটি লোডেড ওয়াশিং মেশিনে সব কার্যক্রম শেষ করতে প্রয়োজন হয় ৫০ থেকে ১০০ লিটার পর্যন্ত পানি, যা পানির অপচয়ই বটে। শুধু তা-ই নয়, কার্বন ফুটপ্রিন্ট পরিবেশে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। আর গার্মেন্টস কার্বন ফুটপ্রিন্টের ২৫ শতাংশ আসে কাপড়ের যতেœর পদ্ধতি থেকে। মাইক্রোপ্লাস্টিক পল্যুশন এভাবেই মিশে যায় পরিবেশে। করে ক্ষতি। টেকসই লন্ড্রি রুটিন তাই জরুরি।
আবহাওয়া এবং জীবনযাপনের ধরনের কারণে এখন অনেকেরই অভ্যাস দিনে একাধিকবার পোশাক পরিবর্তন। তাই স্বাভাবিকভাবে বেশি পোশাক পরিষ্কার করতে হয়। বিশ্বব্যাপী পাল্টে যাওয়া পোশাক প্রথার ফলে ফরমাল-ইনফরমাল-ক্যাজুয়ালের ঘেরাটোপ থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে ফ্যাশনবিশ্ব। করোনাকালের ওয়ার্ক ফ্রম হোম কালচার এ ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা দিয়েছে বেশি। অনেকেই নানা ক্যাটাগরির পোশাক কেনা থেকে বিরতি নিয়েছেন। বহু ব্যবহার আর দামে সাশ্রয়ী তুলনামূলক গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি। এতে কেনাকাটা বাড়ছে। ফলাফল, পোশাক পরিষ্কারের মাত্রাও বাড়ছে। কারণ, ব্যবহার উপযোগী নয় বলে বাতিল কাপড় বিলিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি এখনো সেভাবে তৈরি হয়নি দেশে; বরং জমিয়ে রাখাতেই অভ্যস্ত বেশির ভাগ মানুষ। পুনর্ব্যবহারের ফলে কাপড় নিয়মিত পরিষ্কার আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। সে ক্ষেত্রে লন্ড্রি রুটির সাসটেইনেবল করে তোলায় গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
সাসটেইনেবল লন্ড্রি রুটিনের প্রথম ধাপ হিসেবে প্রথমেই চেষ্টা করতে হবে লন্ড্রির পরিমাণ কমিয়ে আনতে। বারবার কাপড় না ধুয়ে যত কম সম্ভব ধোয়ার চেষ্টা করতে হবে। এতে পানি ব্যবহারের পরিমাণ কমবে। আর ওয়াশিং মেশিন ইউজার হয়ে থাকলে এতে সাশ্রয় হবে বিদ্যুৎও। পানির পাশাপাশি বাঁচবে জ্বালানিও। এ ক্ষেত্রে ওয়াশিং মেশিনের বয়স কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পুরোনো ওয়াশিং মেশিন, বছরের পর বছর ধরে চলছে বলে চালিয়েই গেলে কিন্তু উপকারের থেকে ক্ষতিটাই বেশি। তাই মেশিনের বয়স বেশি হয়ে গেলে আপডেট করে নিলেই ভালো। ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়ার সময় আরও একটি বিষয় মাথায় রাখা যেতে পারে। কুইক ওয়াশ। দ্রুত কাপড় ধুয়ে নেওয়ার এ পদ্ধতিতে তুলনামূলক কম পানি খরচ হয় কিন্তু।
জানতে হবে কখন কোন পোশাক ধোয়া চাই। ‘ফিউচার’-এ প্রকাশিত একটি লেখায় জানা যায়, ইন্টিমেট এবং সুইম স্যুট এক বছর পরপর ধুয়ে নিলেও চলবে। ঘন ঘন ধোয়ার দরকার নেই। প্রতিদিন তো নয়ই। অন্তর্বাস অন্তরালে থাকে বলে তার যত্ন নিতে হবে বেশি। ভালোভাবে না ধুয়ে কোনোভাবেই গায়ে জড়ানো যাবে না। শার্টের ক্ষেত্রেও রুটিন খানিকটা এমন। যদিও তা নির্ভর করে কোন উপাদানে শার্টটি তৈরি তার ওপর। এ ছাড়া গায়ের সঙ্গে এটি কতটা আঁটসাঁট, তার ওপরেও নির্ভর করবে লন্ড্রি রুটিন। ডেনিম প্যান্ট ৫-৭ বার পরে ধুয়ে নিলে ভালো। লেগিংস এবং ইয়োগা প্যান্ট দেহের ত্বক ঘেঁষে থাকে বলে ঘাম শুষে নেয়। তাই অন্তত তিনবার ব্যবহারের পর তা ধুয়ে পরলেই ভালো। অনেকেরই অভ্যাস থাকে প্রতিদিন স্লিপওয়্যার ধুয়ে নেওয়ার। ফলে প্রতিদিন প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। এটা কিন্তু আবশ্যক নয়। তিন থেকে চারবার ব্যবহারের পরে ধুয়ে নিলেই চলবে। শীতের সময় ব্যবহৃত উইন্টার আউটারওয়্যার সিজনে একবার ধুলেই চলে। হ্যাট, স্কার্ফ, গ্লাভসের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। এ ধরনের পোশাক সাধারণত উলে তৈরি। ধুয়ে নিতে বেশি পানির প্রয়োজন হয়। তাই বেশি বেশি ধুয়ে অপচয় না করাই ভালো।
সাবান, পাউডার, লিকুইড- তিন ধরনের ডিটারজেন্ট পোশাক ধোয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। উপযুক্তটি বেছে নেওয়ার আগে কিছু বিষয়ে ভাবা প্রয়োজন। যেমন পাউডার ডিটারজেন্ট কেনার সময় খেয়াল করতে হবে প্যাকেজিংয়ের দিকে। প্লাস্টিক প্যাকেজিং যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা চাই। এতে পরিবেশের ক্ষতি কম হবে। কাগজের প্যাকেটের ডিটারজেন্ট এ ক্ষেত্রে বেশি গ্রহণযোগ্য; পরিবেশবান্ধবও বটে।
পাউডার ডিটারজেন্ট ব্যবহার সহজ করার জন্য অনেকেই প্যাকেটের সঙ্গে দেওয়া প্লাস্টিক কাপে প্রথমে তা পরিমাণমতো ঢেলে নিয়ে তারপরে ব্যবহার করেন। এতে আরও একটি প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বাড়ে। কাপটি ব্যবহার না করেও ডিটারজেন্ট সরাসরি প্যাকেট থেকে ব্যবহার করা সম্ভব। তাই চাইলেই এই প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বাদ দেওয়া যায়। কমানো যায় পরিবেশদূষণ।
লিকুইড ডিটারজেন্ট কেনার ক্ষেত্রে রিফিল মেশিনের ব্যবহার লন্ড্রি রুটিনকে সাসটেইনেবল করে তুলতে পারে। দেশের বাজারে ইউনিলিভারের পণ্য রিন শুরু করেছিল ডিটারজেন্ট রিফিল সেবা। নাম ছিল ইউরিফিল। এ ধরনের সুবিধা থাকলে প্রতিবার ডিটারজেন্ট রিফিল করার সময়ে প্লাস্টিকের প্যাকেট কেনা আবশ্যক হয় না। চাইলেই রিফিল করে নেওয়া যায়। এতে বাড়তি ব্যয় কমে, পরিবেশও কিছুটা রক্ষা পায়।
সাসটেইনেবল লন্ড্রি রুটিনের মাধ্যমে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনা যেতে পারে আরও কয়েকটি উপায়ে:
 বায়োডিগ্রেডেবল ডিটারজেন্ট স্ট্রিপসের ব্যবহার পরিবেশদূষণ কমাবে।
 জিরো- ওয়েস্ট লন্ড্রি সোপ বার ব্যবহারে সাবানের ক্ষয় কমে আসবে। এতে পানি, বাতাসসহ আমাদের চারপাশ কিছুটা হলেও কম দূষিত হবে।
 সোপ নাটস ব্যবহার করা যেতে পারে।
 রিফিলেবেল লন্ড্রি লিকুইড ব্যবহারে কম পানি দিয়েই পোশাক ধুয়ে নেওয়া যায়। প্লাস্টিকের ব্যবহারও থাকে নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে প্লাস্টিকের প্যাকেটে পোরা পাউডার ডিটারজেন্ট দিয়ে কাপড় ধুলে তা পরিষ্কারে পানি বেশ খরচ হয়। সেই সঙ্গে প্লাস্টিক প্যাকেটের ফলে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। বাতাস ও পানিও দূষিত হয়ে পড়ে।
 হোম মেড ডিটারজেন্ট ব্যবহার করলে কমে আসবে পরিবেশে ক্ষতির পরিমাণ।
 রিসাইকেলড এবং রিসাইকেলেবল প্লাস্টিক থেকে তৈরি কোরা বল লন্ড্রি রুটিনে ব্যবহার করলে দ্রুত কাপড় ধুয়ে পরিষ্কার করা যাবে। কাপড় দ্রুত শুকাবে, আবার ভাঁজও পড়বে না। সেই সঙ্গে মাইক্রোফাইবার পল্যুশন থেকে রক্ষা পাবে পানি। তাই টেকসই হবে লন্ড্রি রুটিন।

 সারাহ্ দীনা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top