skip to Main Content

সঙ্গানুষঙ্গ I লক দ্য লাভ

প্রাচীন বিষদানি থেকে পরবর্তী সময়ে ভালোবাসার বার্তাবাহক, প্রতিশ্রুতির পরিচায়ক। স্মৃতি ধরে রাখতেও তুলনা নেই এর। উপহার হিসেবে মন্দ হবে না কিন্তু

ফটো নেকলেস
‘হ্যাং মাই সিল অ্যারাউন্ড ইওর নেক, ওয়্যার মাই সিল অন ইওর ফিঙ্গার।’ তিন হাজার বছর আগে লেখা বিবলিক্যাল সং অব সলোমনের এ লাইন থেকে পস্ট এর লেখকের আকুতি। প্রেয়সী যেন নিজের গলায় তার স্মৃতিস্মারক বহন করে সে ইচ্ছার প্রকাশই প্রতিফলিত হচ্ছে এ লাইনগুলোতে। এ থেকেই প্রমাণিত, সভ্যতার শুরুর দিনগুলো থেকেই মানুষের মনের সুপ্ত বাসনা প্রিয়জনের স্মৃতি ধরে রাখার। সে সময় প্রিয়জনের চুল কিংবা সুগন্ধি ভেজানো কাপড়ের টুকরা স্থান পেত লকেটের ছোট্ট খোপে। ৮০০ বছর আগে, রেনেসাঁ যুগে যখন পোর্ট্রেচার আর্টের প্রচলন বাড়ে, তখন থেকে লকেটে পোরা শুরু হয় প্রিয় ব্যক্তির পেইন্টেড পোর্ট্রেট। ভালোবাসার প্রতীকস্বরূপ যা গলায় পরার প্রচলন শুরু হয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে কিংস চার্লস ওয়ানের সমর্থকেরা গোপনে তার মিনিয়েচার পোর্ট্রটে পোরা লকেট পরতে শুরু করেন তাকে সম্মান প্রদর্শন করে। কথিত আছে, লকেটগুলোতে রাজার চুলের অংশও রাখতেন কেউ কেউ। ফটো লকেটের জনপ্রিয়তা বেশি বাড়ে ভিক্টোরিয়ান যুগে। পরিণত হয় মাস্ট হ্যাভ ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজে। সে সময় প্রিন্স অ্যালবার্ট তার প্রিয়তমা স্ত্রী ভিক্টোরিয়াকে আটটি লকেটসমেত একটি ব্রেসলেট উপহার দেন। প্রতিটি লকেটে পোরা ছিল তাদের আট ছেলেমেয়ের চুলের অংশ। প্রিন্স অ্যালবার্ট মারা যাওয়ার পর তার স্মরণে লকেট পরতে শুরু করেন ভিক্টোরিয়া। সে সময় ভিক্টোরিয়ান নারীদের মধ্যে চাহিদা বাড়তে শুরু করে ফটো লকেটের, যা ভেলভেটের ফিতা অথবা চেইনের সঙ্গে জুড়ে গলায় পরতেন তারা। মায়েরা তাদের সন্তানদের, প্রেমিক-প্রেমিকারা কিংবা
স্বামী-স্ত্রীরা একে অন্যের পোর্ট্রেট-সংবলিত লকেট পরতে শুরু করেন এ সময়। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে লাভ হার্ট ফটো লকেটের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। এই জুয়েলারি পিস পরিণত হয়ে ওঠে ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম অনুষঙ্গে। যার বর্ণনা রয়েছে সে সময়ের জনপ্রিয় ক্ল্যাসিক নভেল ‘সেন্স অ্যান্ড সেনসিবিলিটি’তে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ফ্রেঞ্চ আর্টিস্ট এবং ফটোগ্রাফার লুই জ্যাক মদি দাগেয়া আবিষ্কার করেন দাগেরোটাইপ। পেপার ফটোগ্রাফির পূর্বসূরি বলা হতো এ প্রক্রিয়াকে। প্রতিটি দাগেরোটাইপ তৈরি হতো সিলভার কপার প্লেটের ওপর প্রিয় মানুষের প্রতিচ্ছবি তৈরি করে। সেটাই পুরে নেওয়া হতো লকেটে। পরবর্তীকালে এ প্রক্রিয়া ধরেই যখন পেপার ফটোগ্রাফির প্রচলন শুরু হয়, তখন পুরো ব্যাপারটা অনেক বেশি সাশ্রয়ী আর সহজলভ্য হয়ে ওঠে। জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ফটো লকেটের কাটতিও বাড়তে শুরু করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধে যাওয়ার আগে নারীরা তাদের ছবিসংবলিত লকেট প্রিয়জনদের উপহার দেওয়ার প্রথা চালু করেন। সোনা, রুপা তো বটেই, পার্ল, আইভরি আর কাঠের তৈরি ফটো নেকলেসও তখন বিকোতে শুরু করে। সৈন্যদের বেশির ভাগের কাছেই মিলত তখন ফটো লকেট। নারীরাও তাদের ভালোবাসার স্মরণে গলায় গলিয়ে রাখতেন এমন জুয়েলারি পিসগুলো। বলা হয় গয়না এমনিতেই খুব ব্যক্তিগত ব্যাপার। তার মধ্যে ফটো নেকলেসকে আখ্যায়িত করা হয় সবচেয়ে পার্সোনাল জুয়েলারি পিস হিসেবে। হয়তো এ কারণেই আজ অব্দি এর জনপ্রিয়তা কমেনি। এখনো ভালোবাসার উপহার হিসেবে হার্ট শেপড ফটো লকেটের কাটতি অন্য যেকোনো আইটেমের চেয়ে বেশি। এখন তো তাতে খোদাই করে নেওয়া যায় ভালোবাসার বার্তাও। কোনোটার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় ডানার ডিজাইনও। রাউন্ড বা ওভাল শেপের ফটো লকেট হচ্ছে ক্ল্যাসিক। অনেক ধরনের আউটফিটের সঙ্গে অনায়াসেই মানিয়ে যায়। এ ছাড়া রয়েছে ফ্লোটিং ফটো লকেট। গ্লাস ডোম দেওয়া লকেটগুলোর বাইরে থেকেই এতে পোরা ছবি দেখা যায়। এ ছাড়া রয়েছে ফটো অ্যালবাম লকেট। একটা নয়, অনেকগুলো ছবি তখন পুরে নেওয়া যায় লকেটের ভেতর। সাজিয়ে রাখা যায় অ্যালবামের মতো করে। এখন ফটো লকেট তৈরিতে মেলে নানা রকম কাস্টমাইজেশনের অপশন। আরও পার্সোনাল টাচের জন্য।
ব্রোকেট হার্ট লকেট
টুইন লকেট অথবা ক্র্যাকিং হার্ট লকেট হিসেবেও পরিচিত। মূলত একটি হার্ট শেপের লকেটকে দুটি ভাগ করে নেওয়া যায় এ ক্ষেত্রে। তারপর এই দুটো টুকরো দুজন পরে নেয়। এর প্রতীকী অর্থ হচ্ছে হৃদয় তখনই সম্পূর্ণ হবে, যখন দুজন মানুষ একত্র হবে। এ ছাড়া নিজের হৃদয়ের একটি অংশ প্রিয়জনের কাছে রেখে দেওয়ার যে রোমাঞ্চকর অনুভূতি, তা উপভোগ করতেও অনেকে উপহার হিসেবে পছন্দ করেন এ ধরনের লকেট। এখনকার অনেক ব্রোকেন হার্ট লকেটে আবার নানা রকমের বার্তাও খোদাই করা থাকে। কোনো কোনোটায় আবার পুরে নেওয়া যায় ছবি। লং ডিস্টেন্ট কাপলদের জন্যও উপহার হিসেবে চমৎকার এই ধরনের জুয়েলারি পিসগুলো। সোনা, রুপা, প্লাটিনাম দিয়ে গড়ে নেওয়া যায় এ ধরনের লকেট। অনেক সময় এতে জুড়ে দেওয়া হয় ছোট ছোট হীরকখণ্ড কিংবা রাইনস্টোন। কম বাজেটের মধ্যে তামা, পিতল কিংবা স্টিল দিয়েও গড়ে নেওয়া যায় এগুলো। তবে কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে লকেটের ক্র্যাক অর্থাৎ ফাটল ধরা অংশটা যেন নিখুঁত হয়, যা চাপ দিলে সহজেই ভেঙে যাবে আবার জুড়েও যাবে। কারণ, পুরো লকেটের মধ্যে থাকা এই ফিচারটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অর্থবহ।

i অর্চনা সাহা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top