ই-সোসাইটি I এসএমই ভাই হাজির!
যদিও ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সুযোগ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, তবু কিছু গবেষণা বলছে, আমাদের দেশে এমন শিল্পের সম্ভাবনা এখনো পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ও ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সালেহ জহুর পরিচালিত এক গবেষণা থেকে জানা যায়, দেশের জিডিপিতে এসএমইর অবদান মাত্র ২০ দশমিক ২৫ শতাংশ। সেই তুলনায় ভারতে এটি ৪০, চীনে ৬০ ও জাপানে ৬৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। এন্টারপ্রাইজের সমষ্টিগত সংখ্যার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন নয়। সকল উদ্যোগে এসএমইর অংশ বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ, যেখানে ভারতে ৯৭ দশমিক ৬০, চীনে ৯৯ ও জাপানে ৯৯ দশমিক ৭০ শতাংশ।
আমাদের দেশে এসএমইর সামনে ধারাবাহিক চ্যালেঞ্জগুলো দীর্ঘ। তালিকায় রয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ ও বিকাশকে প্রভাবিত করা আর্থিক ব্যবস্থাপনার সমস্যা, ব্যবসা ও বিপণন জ্ঞানের অভাব, দক্ষ জনশক্তির অভাব প্রভৃতি। এখানেই এসএমইগুলোর জন্য একটি ওয়ান-স্টপ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নিয়ে এসেছে এসএমই ভাই [SME Vai]। দেশে এসএমইর সাফল্যকে বাধাগ্রস্তকারী বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য একটি ক্লাউডভিত্তিক স্ব-পরিষেবা প্ল্যাটফর্ম এটি। যেমন ধরুন, এসএমই ভাই ব্যবহার করে একটি এসএমই প্রতিষ্ঠান সহজেই তাদের হিসাবের বই এবং আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করতে পারবে। এটি গ্রাহকদের ডিজিটাল চালান পাঠাতে সক্ষম। এ ছাড়া ব্যবসার রিয়েল-টাইমে বিভিন্ন মেট্রিকস মনিটরেও সক্ষমতা রয়েছে এর। এই প্ল্যাটফর্ম এমন সব বিপণন সমাধান অফার করে, যা এসএমই প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বাজারজাতকরণ এবং ব্যবসা বৃদ্ধিতে ব্যবহার করতে পারে। একটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের জন্য ব্যবসার স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ থেকে শুরু করে আর্থিক ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত একাধিক সমস্যার সমাধান করতে পারে এসএমই ভাই।
২০১৯ সালে ডেইলি স্টার পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৫৫ দশমিক ৭১ শতাংশ এসএমই পণ্য কীভাবে বাজারজাত করতে হবে, সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের রয়েছে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব। এই পটভূমিতে এবং ৫ বছরের বেশি সময় ধরে ছোট ব্যবসার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতায়, নেতৃস্থানীয় ডিজিটাল যোগাযোগ সংস্থা গিকি সোশ্যাল লিমিটেডের দুই সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাহাদী হাসান সাগর এবং মো. সাইমুম হোসেন নীরবে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন, যা প্রযুক্তির আশীর্বাদ ব্যবহার করে সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে এসএমই খাতের সমস্যাগুলোর বেশির ভাগ সমাধান দিতে সক্ষম। ২০১৫ সালে যখন গ্রিকি সোশ্যাল বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় এফ-কমার্স সামিট চালু করে, সেখান থেকেই এ বিষয়ে আরঅ্যান্ডডি শুরু হয়। তারা অনুমান করেন, দেশের ৫০ লাখের বেশি এসএমই ব্যবসার জন্য অ্যাকাউন্টিং, বিপণন, বিজ্ঞাপন এবং আইনি পরিষেবা ইত্যাদির মতো ব্যবসায়িক সহায়তামূলক পরিষেবাগুলোর জন্য কোনো ওয়ান-স্টপ সমাধান নেই। দেশের প্রায় ৮২ শতাংশ এসএমই ব্যবসায় কোনো অ্যাকাউন্টিং রেকর্ড রাখা হয় না। আর তা তাদের স্থায়িত্ব ও বিকাশ—উভয়ের ওপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এসএমইগুলো প্রায়শই বিপণন, অ্যাকাউন্টিং, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিক্রয় এবং এর বাইরেও বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে উপযুক্ত ব্যবসায়িক পরিষেবা প্রদানকারী খুঁজে পেতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। এসব অদক্ষতা বাংলাদেশে এসএমইর ব্যবসার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়। এসএমই ভাই একটি পরিষেবা বাজারও তৈরি করছে, যা এক জায়গায় পরিষেবা প্রদানকারীদের তালিকা দিয়ে থাকে; এগুলোর মধ্যে রয়েছে মুদ্রণ ও প্যাকেজিং পরিষেবা, আইনি পরিষেবা প্রভৃতি।
এসএমই ভাইয়ের উল্লেখযোগ্য পরিষেবাগুলোতে একটু গভীরভাবে নজর দেওয়া যাক—
এসএমই হিসাব: এসএমই ভাই একটি স্বয়ংক্রিয় চালান এবং অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম তৈরি করেছে, যা এসএমইগুলোর জন্য অ্যাকাউন্ট পরিচালনার মাথাব্যথা দূর করতে সক্ষম। এসএমই হিসাব ব্যবহার করে যে কেউ ডিজিটাল চালান তৈরি করতে এবং ই-মেইল কিংবা টেক্সটের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহকদের কাছে তা পাঠাতে পারবে। এসএমই হিসাব ব্যবসাগুলোকে তাদের সব লেনদেন রেকর্ড ও ট্র্যাক করতে এবং রিয়েল-টাইম সেলস গ্রাফ তৈরিতে সহায়তা করে। এটি সময়ের সঙ্গে গড় বিক্রয়, বৃদ্ধি ও তুলনামূলক প্রতিবেদন হাজির করে।
এসএমই মার্কেটিং: এসএমইগুলোর জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে বিপণন। এসব উদ্যোগের জন্য একাধিক বিপণন পরিষেবা তৈরি করেছে এসএমই ভাই। যুক্তিসঙ্গত খরচে ডিজিটাল মার্কেটিং সলিউশন, যেমন ফেসবুক বুস্ট, ইউটিউব বিজ্ঞাপন, এসএমএস মার্কেটিং, প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং সলিউশন প্রভৃতি দিয়ে থাকে এটি।
দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলোর জন্য একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রস্তুত রয়েছে এসএমই ভাই। এর পরিষেবা গ্রহণ করবে কি না, সেই বিবেচনার ভার উদ্যোক্তাদের।
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ