কভারস্টোরি I ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি
আমাদের ‘বডি ক্লক’ দম নেয় ঘুমে। সেজন্য কতো আয়োজন, যাতে এই জৈবিক বিশ্রাম নির্বিঘ্নে নেয়া যায়। প্রযুক্তিও সে কাজে যুক্ত হয়েছে আজ। একটা নিরুপদ্রব ঘুম থেকে সারাদিনের উদ্যম সংগ্রহের জন্য। লিখেছেন শেখ সাইফুর রহমানআলো-ঝলমলে লোকালয়ের মধ্য দিয়ে একটা ট্রেন চলেছে। আস্তে আস্তে ট্রেনটা ছাড়িয়ে যাচ্ছে জনপদ। কমে আসছে আলো। বাড়ছে আঁধার। নীলাভ অন্ধকার। তারই মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছে সেই ট্রেনটা। চলে যাচ্ছে আমাদের দৃষ্টির আড়ালে।
এমন একটা দৃশ্য কল্পনা করাই যেতে পারে। তা না করে স্মৃতিকে একটু উসকে দিলেও চলে। অন্তত আমরা যারা একটু সিনিয়রদের কাতারে পড়ি। কিংবা নস্টালজিয়ায় ভুগি। আসলে এটা একটা ঘুমের ওষুধের বিজ্ঞাপন। বাংলাদেশের। তাতে লেখা ছিল ‘অ্যান আনইন্টারাপ্টেড স্লিপ’। অর্থ- নিরুপদ্রব ঘুম। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় এমন ঘুমের উল্লেখ আছে। অনেকেই নিশ্চয়ই মনে করতে পেরেছেন। বিশেষত যারা স্বেচ্ছায় বা চিকিৎসকের পরামর্শে সেবন করেছেন ঐ নিদ্রাবটিকা। অন্যরা দেখেছেন খবরের কাগজের পাতায়।
ঘুম শব্দটা বড়ই মায়াবী। আচ্ছন্ন করে তোলে। চাইলেই যারা ঘুমোতে পারেন, তাদের আমরা ঈর্ষা করি বটে। অনেকেই শোয়ামাত্র চলে যেতে পারেন ঘুমের দেশে। যারা অনিদ্রায় ভোগেন, তারা এদের সম্পর্কে গবেষণায় মন ও শ্রম দিতে পারেন, যদি এই ক্লান্তিতে খানিকটা ঘুম হয়!
আবার অনেকেরই চোখের দু’পাতা এক হয়না। তাদের জন্য কবি জীবনানন্দ দাশকে লিখতে হয়: কার যেন দুটো চোখে নাই এ ঘুমের/ কোন সাধ।
ঘুম নিয়ে লিখতে বসলে বা এ নিয়ে কিছু পড়তে বসলে সবার স্মৃতিতে নিশ্চয় ধেয়ে আসে ছেলেবেলা। সেই মায়ের কোল। সেই ঘুমপাড়ানি মাসি পিসিরা। কৈশোর বা যৌবনেও কোনো অলস সময়ে মায়ের কোলে মাথা রাখলে, চুলে বিলি কাটা শুরু করলেই কোথা থেকে যে ঘুম চলে এসেছে তা টেরও পাওয়া যায় না। আমাদের সেই দুচোখ আজ জীবনের নানা জটিলতায় নির্ঘুম। আঁখিপাতে ঘুম না থাকা নিয়ে আক্ষেপ ঝরিয়েছেন পৃথিবীর বহু কবি।
সেই সময়ের ছড়াকারেরাও ছিলেন ভীষণই সতর্ক আর সচেতন। তাই ছেলে ঘুমানোর পর পাড়া জুড়ালে তবেই বর্গীদের নিয়ে এসেছেন। তার আগে নয়। পাছে তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। ভয় পায়। কিংবা ওই ঘুম পাড়ানি মাসি পিসিদের কথাই ধরুন। তাদের কত তোয়াজ করা হচ্ছে শুধু খোকা বা খুকিকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়ার জন্য।
রবীন্দ্রনাথই-বা বাদ যাবেন কেন? দিনের শেষে ঘুমের দেশে ঘোমটা-পরা ওই ছায়া/ ভুলালো রে ভুলালো মোর প্রাণ।
কিন্তু তাঁর ছোটবেলায় এই ছায়াই তো ভয়ের কারণ হয়েছে। ‘জীবনস্মৃতি’তে তাই লিখেছেন, ‘ভূতের ভয় শিরদাঁড়ার উপর চাপিয়ে চলে যেতুম মায়ের ঘরে। মা তখন তাঁর খুড়ীকে নিয়ে তাস খেলছেন… এমন উৎপাত বাধিয়ে দিতুম যে, তিনি হাতের তাস ফেলে দিয়ে বলতেন, জ্বালাতন করলে, খুড়ী ওদের গল্প শোনাও গে। আমরা বাইরের বারান্দার ঘটির জলে পা ধুয়ে দিদিমাকে টেনে নিয়ে বিছানায় উঠতুম। সেখানে শুরু হতো দৈত্যপুরী থেকে রাজকন্যার ঘুম ভাঙিয়ে আনার পালা। মাঝখানে আমারই ঘুম ভাঙায় কে।’
ঘুম নিয়ে স্মৃতি নেই, এমন মানুষ কি পৃথিবীতে আছে? আছে এমন কোনো সাহিত্য, যেখানে দুছত্র লেখা হয়নি মানুষের প্রাত্যহিকীর অতি গুরুত্বপূর্ণ এই অধ্যায় নিয়ে। কবি কিটসের কাছে ঘুম সে তো ঘুম নয় বরং রোমান্স। আর শেক্সপিয়ারের কাছে তা প্রতিদিনের মৃত্যু: ম্যাকবেথেই তো আছে এমন উচ্চারণ। ঘুম তো ক্লান্তিহরা, আহত মনের মরম। জীবন উৎসবের প্রিয় সমব্যথী।
বলতে দ্বিধা নেই ভাবালু বাঙালির অন্য অনেক কিছুর মতো ঘুম নিয়েও রয়েছে যতেক আদিখ্যেতা। হয়তো আবেগ বেশি থাকার কারণে। তাই প্রেয়সীর কথা মনে করে কাটিয়ে দিতে পারে নির্ঘুম রাত। তবে এখন আর প্রেয়সী বা প্রিয়াস্পদ লাগে না। আধুনিক প্রযুক্তি সে জায়গাটা বেশ নিয়েছে। অবশ্য প্রযুক্তিকে বাপান্ত, শাপান্ত করার আগে ঘুম নিয়ে আরও দু-চার কথা বরং কয়ে নেয়া যাক।
ঘুম নিয়েও কিন্তু বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের আগ্রহ কম নয়। ফলে গবেষণাও কম হয়নি। ঘুম বস্তুত আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনচক্রেরই অংশ। অনেকেই এটাকে বলছেন বিশ্রাম। অনেকে আবার বলছেন প্রয়োজনীয় ব্যাহত প্রক্রিয়া। দিনরাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩ ভাগের ১ ভাগ অর্থাৎ ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। কিন্তু আমরা সেটা কি করতে পারি? ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, সেটাকেই আমরা ব্যাহত করি। ঠেকিয়ে রাখি। এটা মানুষ বলেই সম্ভব। কিন্তু অন্য কোনো প্রাণীরা সেটা করতে পারে না। সেই ক্ষমতা তাদের নেই। এ জন্যই তো লন্ডনে আলো জ্বালিয়ে রাখার সময় বাড়িয়ে দেয়ায় পায়রার মড়ক শুরু হয়। তাতে দেখা যায়, আলো বেশিক্ষণ জ্বালিয়ে রাখার ফলে তাদের ঘুম কমে যাওয়াই এই মৃত্যুহার বৃদ্ধির কারণ।
আলোর সঙ্গে ঘুমের সম্পর্ক প্রবল। বিজলি বাতি যখন ছিল না, মানুষ বেশি ঘুমিয়েছে। আসলে আলো কমে এলে মানুষের মস্তিষ্কে একধরনের রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ হতে থাকে। একে বলে মেলাটোনিন। বলতে পারেন ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি। কারণ, এই রাসায়নিক পদার্থ ঘুমকে ত্বরান্বিত করে। আপনাকে ঘুম পাড়ায়। কিন্তু আলোর প্রাবল্য মেলাটোনিনের নিঃসরণ ব্যাহত করে আপনাকে রাখে নির্ঘুম। মোবাইল ফোনের নীল আলো এ ক্ষেত্রে বেশি হানিকর। পাশাপাশি কেবল মেলাটোনিনই নয়, বরং এই সময় নানা ধরনের গ্রোথ হরমোনও নিসৃত হয়ে থাকে। ছোটদের ক্ষেত্রে গ্রোথ হরমোন রাতে নিসৃত হয়, তাদের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। এ জন্য শিশুদের বাড়ে রাতে। অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এসব হরমোন শরীরের নানা ক্ষত নিরাময় বা মেশিন মেরামতির কাজ করে। যা হোক, মানুষ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুটো নির্দিষ্ট সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্লান্ত থাকে। এর ব্যবধান ১২ ঘণ্টা। আর সেই সময় দুটো হলো দুপুর দুটো এবং রাত দুটো। এই দুই সময়ে মানুষের ঘুম সবচেয়ে গভীর হয়। দূরপ্রাচ্যে তাই অফিসে লাঞ্চের পর চেয়ারে হেলান নিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকার রেওয়াজ আছে। অবশ্য বলার অপেক্ষা রাখেনা, ভাতঘুম বাঙালির বড়ই প্রিয়।
ঘুমের সময় মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায়। তখন আমাদের মেরুদন্ডই কাজ চালায়। কিডনি কাজের গতি কমিয়ে বিশ্রাম নেয়। আসলে আমাদের শরীর যন্ত্র বৈ তো নয়, তাই সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই বিশ্রাম পায়।
কিন্তু আমরা, মানে আজকের সভ্যতাগর্বী বিশ্বগ্রামের বাসিন্দারা বড়ই অস্থির। ব্যস্তবাগীশ জীবনের নানা জটিলতা আমাদের অনেক কিছুই কেড়ে নিয়েছে। এমনকি ঘুমও। এ জন্য অবশ্য হালের প্রযুক্তিকেই মূলত নন্দ ঘোষ বানানো হচ্ছে। তবে যাই ভাবি না কেন, জেগে থেকে আমরা আসলে নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করছি। কারণ অনিদ্রা বিষণœতার অনুঘটক। স্মৃতিভ্রংশের কারণ। ব্যাহত করে আপনার সৃজনশীলতা। কমায় কর্মক্ষমতা। আপনাকে অস্থির আর অস্থিতিশীল করে তোলে। মেজাজ হয় খিটখিটে। এ তো গেল মানসিক সমস্যা। সমান্তরালে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের শরীরও। হার্ট, কিডনি, ফুসফুসের নানা ক্ষতি হয়। ক্ষুধামান্দ্য দেখা যায়। হজমে গন্ডগোল হয়। অ্যাসিডিটি বাড়ে। হ্রাস পায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
আমাদের বর্তমান জীবনাচরণও কিন্তু ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। জীবনের জটিলতা, সম্পর্কের টানাপোড়েন, কর্মক্ষেত্রের চাপ কিংবা অসন্তুষ্টির পাশাপাশি আমাদের খাদ্যাভ্যাসও এ ক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী। এর সঙ্গে অবশ্যই বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়েছে প্রযুক্তি। আমরা ঘুমাতে যাওয়ার আগেও ফেসবুক চেক করি। স্টেটাস দিই। কিংবা শুয়েই চ্যাট করতে করতে ঘুম ব্যাহত করি। মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের নীল আলো আপনার চোখ হয়ে মাথায় যে বার্তা পাঠায়, তাতে থমকে যায় মেলাটোনিনের নিঃসরণ। আপনার খেয়ালই থাকে কখন রাত ৩টা বেজে গেছে। ফলে তখন আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লেও পুরো ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম আপনার হয় না। কারণ, সকালে উঠেই ছুটতে হয় কাজে। সারা দিন থাকে এর প্রভাব।
তাই উন্নত বিশ্বে নতুন করে ঘুমের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। কাজের জন্য জীবন নয়, বরং জীবনের জন্য কাজ- এই মনোভাব নিয়েই জীবন পরিচালনার দিকে ঝুঁকছেন সবাই। ঘুমের প্রতি যত্নবান হচ্ছেন। খুঁজছেন বিরামের উপলক্ষ।
এদিকে এই ঘুমকে ত্বরান্বিত করার জন্য প্রযুক্তিবিদেরাও লেগেছেন উঠেপড়ে। এ যেন একধরনের প্রায়শ্চিত্ত। কারণ, প্রযুক্তিকেই তো সবচেয়ে বেশি দোষারোপ করা হচ্ছে। প্রযুক্তিবিদরা তাই উদ্ভাবন করেছেন নতুন নতুন সব অ্যাপ। এগুলোর নাম দিয়েছি ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি। আমাদের এবারের প্রচ্ছদ প্রতিপাদ্যও এই ঘুমপাড়ানি মাসি পিসিদের নিয়ে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যনিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান এদের স্বীকৃতি দিয়েছে। সমর্থন আছে চিকিৎসকদেরও। তাই এসব অ্যাপের সাহায্য নিয়ে নিজেদের ঘুম পূরণে মেতে উঠেছেন উন্নত বিশ্বের আধুনিক টেকস্যাভিরা। অচিরে আমরাও হয়তো সে পথে হাঁটবো। কারণ, এসব অ্যাপ এখন সুলভ ও সাশ্রয়ী। কেনা যায় ঘরে বসে। কিংবা ডাউনলোড করে নেয়া যায় অ্যাপস্টোর থেকে। সমূল্যে কিংবা বিনামূল্যে। তাই এরপর মায়েরা আর বাচ্চাদের ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমীদের গল্প না শুনিয়ে, ছড়া না বলে বরং এসব অ্যাপের সাহায্য নেবেন। আর কিছুদিন পর মায়ের জায়গায় চুলে বিলি কাটার দায়িত্ব বর্তাবে যন্ত্রমানবের ওপর। সেদিন বোধ হয় খুব বেশি দূরে নয়।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীতে, বিশেষত উন্নত বিশ্বে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে অন্তত ৬ জন ঘুম-বঞ্চনার শিকার। ফিলিপস গ্লোবাল স্লিপ সার্ভে ২০১৮ অনুযায়ী, ৭৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কের ঘুম কম হওয়ার প্রভাব পড়ছে তাদের শরীর ও মনে। এই প্রভাব এতটাই মারাত্মক যে তাদের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য, প্রয়োজনীয় ডায়েট অনুসরণ আর ব্যায়ামও কোনো কাজে আসছে না। ফলে এই নির্ঘুম জনগোষ্ঠী থাকছে ভীষণভাবে ক্লান্ত। তা সে শারীরিকভাবে যেমন, মানসিকভাবেও। র্যান্ড ইউরোপের জরিপ অনুযায়ী আমেরিকায় ক্লান্ত কর্মীদের কারণে প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে ১২ লাখ কর্মঘণ্টা।
ভালো ও কার্যকর ঘুম যাতে হয়, সে জন্য নানা পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হচ্ছে। ফিলিপস সম্প্রতি চালু করেছে ওয়্যারেবল স্লিপ টেকনোলজি। এটাকেই বলা হচ্ছে স্মার্ট স্লিপ। জীবনাচরণের জন্য যাদের ঘুম কম হয়, তাদের জন্য এই প্রযুক্তিগত সমাধান। এই ডিভাইস কেবল স্লিপ ট্র্যাকারের মতো ঘুমের প্যাটার্ন মনিটর করবে না, বরং এই পরিধানযোগ্য ঘুমপ্রযুক্তি কেন কম ঘুমাচ্ছে, তার কারণ বের করে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে সহায়তা করবে। আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে সঠিকভাবে ঘুমাতে সহায়তা করবে। এটা এমন এক ব্যবস্থা, যাতে ঘুম গভীর আর উদ্বেগহীন হয়।
এবার চোখ রাখা যাক সেই সব অ্যাপের দিকে, যেগুলো পরীক্ষিত ও অনুমোদিত। তবে সমসময়ের সবচেয়ে আলোচিত অ্যাপটির নাম অরা। অনেক কাজই এই যন্ত্র করে দিচ্ছে। এটাকে আপনার বেডসাইড টেবিলে রাখলেই হলো। সে আপনাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবে। দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনা ও মানসিক চাপ কমাবে। আপনার মেজাজ ভালো রাখবে। কাজে মনোযোগী হতে সাহায্য করবে। মাত্র তিন মিনিটের মেডিটেশনে আপনাকে ঝরঝরে করে তুলবে। আপনার মন খারাপ কেন হচ্ছে, তা খোঁজ করে নিদান বাতলাবে। কিছু ভুলে গেলে তা মনে করিয়ে দেবে। নিয়মিত বার্তা পাঠিয়ে করণীয় স্মরণ করাবে। আপনার পাশে থাকবে বন্ধুর মতো, প্রেয়সীর মতো। স্ত্রীর মতোও বটে। কারণ, ঘুম পাড়িয়ে দিয়েই তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে না। বরং সঠিক সময়ে আপনাকে জাগিয়েও দেবে।
বলা হচ্ছে, মেয়েরা ফোন হাতে নিয়ে শুয়ে থাকতে পছন্দ করে। আর তা কি কেবল হাতে থাকে? বরং কাজ চলতে থাকে। তাই ব্যাঘাত ঘটায় ঘুমে। এ জন্য তাতে যোগ করা হয়েছে স্লিপঅ্যাপ। যা তাকে অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুমাতে সহায়তা করবে। এমন বেশ কয়েকটি অ্যাপের কথা এই প্রসঙ্গে জানিয়ে দেয়া যেতে পারে। যেগুলো আপনার ঘুমে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
রিল্যাক্স মেলোডিজ। এটা অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোন প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারযোগ্য। মিলবে কোনো দর্শনী ছাড়া। বর্তমানে এটা ব্যবহার করছে অন্তত সাড়ে ৩ কোটি মানুষ। এর বিভিন্ন ধরনের ফিচার রয়েছে। সেখান থেকে যেমন বেছে নেয়া যাবে, তেমনি কাস্টমাইজ করেও নেয়া যাবে।
রিল্যাক্স মেলোডিজের মতো উভয় প্ল্যাটফর্মে বিনা মূল্যে ব্যবহারযোগ্য আরেকটি অ্যাপ হলো স্লিপ সাইকেল। এর প্রথম কাজ হলো আপনার ঘুমের ধরন বিশ্লেষণ করা। সেই অনুযায়ী আপনি সময় নির্ধারণ করে দিলে এই অ্যাপ আপনাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে এবং আস্তে আস্তে ঘুম থেকে ডেকে তুলবে। ঘুম থেকে ওঠার পর আপনার ক্লান্ত মনে হবে না। মিলবে সতেজ অনুভব।
রিকালারও আগের দুটোর মতো। উভয় প্ল্যাটফর্মে বিনা মূল্যে ব্যবহারযোগ্য। এটাকে বলতে পারেন বুড়ো খোকাদের ছবির বই। হাজারখানেক ছবি আছে। যেটা আপনি আবার রঙ করবেন। আর তা করতে করতেই আপনার অজান্তেই মন ভালো হয়ে যাবে। প্রতিদিনই নতুন নতুন ছবি আপনি পাবেন। এটা একধরনের মেডিটেটিভ অ্যাপ।
স্লিপ টাইম। এটা আরেকটি অ্যাপ। যেখানে ব্যবহার করা হয় নিখুঁত স্টে-অব-দ্য-আর্ট অ্যালগরিদম। এর কাজও আপনার ঘুমের প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করা। অনেকটা স্লিপ সাইকেলের মতো।
এ ছাড়া আছে রিল্যাক্স অ্যান্ড স্লিপ ওয়েল, ডিজিপিল, জিজ, নয়জলি ইত্যাদি। সবই মূলত আপনার উদ্বেগ কমাবে। দেবে সুখানুভূতি। ভালো লাগার আবেশে ভরিয়ে রাখবে, যাতে করে আপনি নানা ধরনের দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে পারেন। আর সবশেষে নিশ্চিন্ত নিরুপদ্রব ঘুমে সহায়তা যেমন করবে, তেমনি আপনাকে যথাসময়ে জাগিয়ে দিয়ে রুটিনমাফিক দিন শুরু করতে সাহায্য করবে।
এভাবেই আমরা দিন দিন স্মার্ট হয়ে পড়ছি। বাঁধা পড়ছি প্রযুক্তির নিগড়ে। কারণ, এখন প্রযুক্তি মানেই তো স্মার্ট প্রযুক্তি। তাই আমাদের ঘুমও হবে স্মার্ট। গেল মাসে চীনে একটি ব্যাংকের শাখা চালু করা হয়েছে যন্ত্রমানব দিয়ে। কোনো রক্তমাংসের মানুষ নেই। অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে তথ্য প্রদান, মায় ঋণ প্রদান- সবই করছে এই রোবটরা। তাই আর কিছুদিন পর আপনার ঘুমপাড়ানি মাসি পিসিও হবে এই যন্ত্রমানব। ছড়া শোনাবে। গান শোনাবে। আপনাকে এবং আপনার বাচ্চাকেও।
ঘুমের জন্য এত আয়োজনের হেতু কী? আসলে আমরা এমন এক টনিকসম ঘুম চাই, যাতে আমাদের জাগরণটা কাজে আসে। কারণ চিরনিদ্রার আগে আমাদের আরও কিছু দূর যেতে হবে। জীবনকে সুন্দর আর অর্থপূর্ণ করে তোলার জন্য। মার্কিন কবি বরার্ট ফ্রস্ট যেমন লিখেছেন:
The woods we are lovely, dark and deep
But I have promises to keep,
And miles to go before I sleep.
And miles to go before I sleep.
মডেল: মাইশা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: ক্যানভাস
ছবি: আবির হোসেন নোমান ও সংগ্রহ