কুন্তলকাহন I ভেজা চুলে নিদ্রানীতি
‘পিকচার পারফেক্ট’ পরিস্থিতি চিন্তা করলে কখনোই ভেজা চুল নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া খাপ খায় না। হোক তা চুলের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার কিংবা ভেজা চুলে ঘুমালে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার ভয়ে। তবে যদি ব্যস্ততার কারণে রাতে গোসল করতেই হয়, আর সারা দিন কাজ শেষে চুল ব্লো ড্রাইয়ের কথা ভাবতেই আলসেমি জেঁকে ধরে, সে ক্ষেত্রে স্বস্তির খবর, এখন অনেক বিউটি এক্সপার্ট ভেজা চুলে ঘুমাতে যাওয়ার সঠিক পদ্ধতি কিংবা কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করছেন
বর্তমান যুগে অধিকাংশ মানুষই দিনে গোসল করে নেওয়ার সময়টা বের করতে পারেন না। যান্ত্রিক জীবনে সারা দিনের কাজ শেষে ঘরে ফিরে গোসল করলে শরীরের অর্ধেক ক্লান্তি কমে যায় ঠিকই, তবে আরাম করে ঘুমোতে যাওয়ার কালে সমস্যা তৈরি করে ভেজা চুল। অনেকের ধারণা, ভেজা চুলে ঘুমালে সর্দি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তবে ভেজা চুল সরাসরি সাধারণ সর্দিসহ যেকোনো ধরনের অসুস্থতার কারণ হয়—এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। অবশ্য এই চুল রাতে ঘুমানো অবস্থায় শুকিয়ে যাওয়ার কারণ কিছু বাতাসে বাষ্পীভূত হয় এবং কিছু বালিশ কিংবা বিছানায় শোষিত হয়। ফলে এমন উষ্ণ স্যাঁতসেঁতে পৃষ্ঠে ঘুমালে তা মুখ ও মাথার ত্বকের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এর ফলে শুধু চুলের ক্ষতি নয়, হতে পারে অ্যাকনে কিংবা স্ক্যাল্প ইনফেকশনের মতো সমস্যাও। আবার ভেজা চুলে ঘুমাতে গেলে অনেক সময় সকালে চুলে ঠিক যেই লুক চাচ্ছিলেন, তা আনা মুশকিল হয়ে পড়ে। তবে এসব বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে, যদি ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু কঠোর নিয়ম মেনে চলেন।
শুরুতে মাথায় রাখা চাই, সম্পূর্ণ ভেজা চুলে ঘুমাতে যাওয়া ক্ষতি ডেকে আনবে। কেননা তাতে চুলের ফলিকলের ক্ষতি হয় এবং চুল খুব সহজে ভেঙে যায়। তাই ৫০-৬০ শতাংশ শুকানোর জন্য চুলের ওপর কিছু সময় হেয়ার ড্রায়ার ঘুরিয়ে নিতে পারেন, অথবা একটু সময় নিয়ে স্বাভাবিকভাবে চুল কিছুটা শুকিয়ে নেওয়া যেতে পারে। ভেজা চুলে ঘুমানোর অভ্যাস ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বালিশের কভার পাল্টে নিন। এ ক্ষেত্রে আদর্শ হচ্ছে স্যাটিন বা সিল্কের বালিশের কভার। এগুলো সাধারণ সুতির কভারের তুলনায় চুলের পক্ষে অনেক উপকারী। সুতির কভারে ভেজা চুল একই জায়গায় আটকে থেকে খুব সহজে জট পেকে যেতে পারে, যেখানে স্যাটিন বা সিল্কের কভার চুলগুলোকে সহজে নড়াচড়া করার উপায় করে দেয়। ফলে চুলে জট লাগে না; চুল সহজে শুকিয়েও যায়। আর ভেজা অবস্থায় খোলা চুল নিয়ে ঘুমালে, মাঝরাতে চুল নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ার ভয় থাকলে আলতো করে বেঁধে রাখতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে কোনোভাবেই রাবার ব্যান্ড ব্যবহার ঠিক হবে না। ব্যবহার করতে পারেন স্ক্রানচি। এ ধরনের ব্যান্ডের নিয়মিত ব্যবহার চুল পড়াও কমিয়ে আনতে পারে অনেক গুণ। হাতের কাছে স্ক্রানচি না থাকলে ব্যবহার করতে পারেন পুরোনো ও পরিষ্কার মোজা। মোজার মাথার ওপরটা কেটে নিলেই ব্যবহার করতে পারবেন স্ক্রানচি হিসেবে। তা-ও না হলে যেকোনো পরিষ্কার সিল্ক স্কার্ফ দিয়ে আলতো করে বেঁধে নিতে পারেন চুলগুলো।
ভেজা চুলে ঘুমাতে গেলে চেষ্টা করুন তা বিছানার বাইরে ফেলে রাখার। এতে চুলে সহজে জট লাগবে না, আর শুকাবে জলদি। তা সম্ভব না হলে চেষ্টা করুন উপুড় হয়ে শোয়ার; কেননা মাথার নিচের অংশের চুল শুকাতে সময় লাগে বেশি। আর উপুড় হয়ে ঘুমালে চুলের ভেজা ভাব বালিশ কিংবা বিছানা স্পর্শ করতে পারবে না। তবে উপুড় হয়ে শোয়াতে স্বচ্ছন্দবোধ না করলে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মাথা উল্টো করে মাথার পেছনের চুলগুলো হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে কিছুটা শুকিয়ে নিতে পারেন।
ভেজা চুলে ঘুমাতে যাওয়ার নিয়মে তারতম্য হতে পারে চুলের ধরনের কারণেও। হোক স্ট্রেইট, কার্লি কিংবা ওয়েভি, আলাদা চুল শুকানোর সময়ব্যাপ্তি যেমন আলাদা, তেমনি ভিন্নতা রয়েছে ভেজা চুল নিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার প্রক্রিয়াতেও।
স্ট্রেইট হেয়ার
চুল কিছুটা শুকিয়ে নেওয়ার পরে ঘুমানোর আগে কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখা ভালো। চুলের মাঝখান থেকে শুরু করে আগা পর্যন্ত লাগাতে পারেন হেয়ার সেরাম। এর ব্যবহার বর্তমানে খুবই প্রচলিত হওয়ায় বাজারে সহজলভ্য, সেগুলো থেকে চুলের ধরন অনুযায়ী ভালো ব্র্যান্ডেরটি বেছে নিতে পারেন। চুলের গোছা ছোট ছোট ভাগ করে লাগিয়ে নিতে পারেন সেরাম। এতে সব চুলেই সেরাম পৌঁছে যাবে এবং এটি জট লাগা থেকে সুরক্ষা দেবে চুলকে। পরদিন সকালে নিজের চুল ঠিক কীভাবে চান, তা আগে থেকেই স্থির করে নিন। যদি চুল একটু ওয়েভি কিংবা হালকা কার্লি চান, তাহলে ঘুমানোর আগে আলতোভাবে চুলগুলোকে পেঁচিয়ে মাথার ওপর বেঁধে রাখতে পারেন। এতে সকালে আপনার চুলে প্রাকৃতিকভাবেই কার্লি হবে। আর যদি একেবারে স্ট্রেইট চান, তবে চুল বালিশের ওপর ছড়িয়ে রাখা ভালো। এতে চুলে অতিরিক্ত জট বাঁধবে না কিংবা ভাঁজ পড়বে না।
কার্লি হেয়ার
চুলের সব ধরনের মধ্যে কোঁকড়া চুলই বলা যায় ‘হাই মেইনটেন্যান্স’। এর যত্ন যেমন সময়সাপেক্ষ, তেমনি শুকাতেও সময় নেয় বেশি। কোঁকড়া চুল ভেজা অবস্থায় ঘুমাতে যাওয়ার আগে চেষ্টা করুন প্রায় ৭০ শতাংশ শুকিয়ে নেওয়ার। এরপর চুলে ভাগে ভাগে নিয়ে লাগিয়ে নিতে পারেন কার্ল ক্রিম। বেছে নেওয়ার আগে চেষ্টা করুন এমন কার্ল ক্রিম কিনতে, যার মাঝে মধু কিংবা ভিটামিন ডির মতো উপাদান রয়েছে। এটি স্বাভাবিক কার্ল ধরে রাখার পাশাপাশি চুলকে উষ্কখুষ্ক হওয়া থেকেও রক্ষা করবে। চুলে হালকা বেণি করে রাখতে পারেন। যদি চুলের পরিমাণ বেশি হয় অথবা অতিরিক্ত ভলিউম চান, তাহলে একাধিক বেণি করে নিতে পারেন। তবে কোনোভাবেই খুব শক্ত বেণি করবেন না। কেননা ভেজা অবস্থায় চুল এমনিতেই তুলনামূলক বেশি ভঙ্গুর থাকে, তাই আঁটসাঁট বেণি করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সকালে উঠে মোটা দাঁতের চিরুনি কিংবা আঙুল দিয়ে বেণিগুলো ছাড়িয়ে নিন। এরপর পছন্দমতো স্টাইলিং করে নিতে পারেন।
ফ্রিজি হেয়ার
যদি ইতিমধ্যেই ফ্রিজি চুলের সমস্যায় ভোগেন, তাহলে ভেজা চুলে ঘুমানোর প্রক্রিয়া হবে ভিন্ন। চুলের ফ্রিজিনেস কমিয়ে আনতে, ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্যবহার করতে পারেন ভালো মানের লিভ ইন কন্ডিশনার। চুলে পেঁচিয়ে নিয়ে ওপরে একটি হালকা করে খোঁপা বেঁধে নিন। এবার যেকোনো সিল্ক স্কার্ফ দিয়ে খোঁপাটি এমনভাবে বেঁধে নিন, যেন চুল বালিশে না লাগে। সিল্ক চুলের ফ্রিজিনেস কমাতে সাহায্য করে। ঘুম থেকে উঠে সব চুল সামনের দিকে উল্টো করে আঙুল চালিয়ে নিন। ফ্রিজি চুলে ব্রাশ না চালানোই ভালো। কারণ, চিরুনির ঘষায় চুল আরও বেশি উষ্কখুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
শিরীন অন্যা
মডেল: অন্তরা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল