সেলুলয়েড I আ ড্যাঞ্জারাস মেথড
পরিচালনা: ডেভিড ক্রোনেনবার্গ
চিত্রনাট্য: ক্রিস্টোফার হ্যাম্পটন
চিত্রগ্রহণ: পিটার সাচিট্স্কি
সম্পাদনা: রোনাল্ড স্যান্ডার্স
অভিনয়: কিয়ারা নাইটলি, ভিগো মর্টনসন, মাইকেল ফাসবিন্ডার
সময়ব্যাপ্তি: ৯৯ মিনিট
ভাষা: ইংরেজি
দেশ: কানাডা, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র
মুক্তি: ২০১১
সিনেমায় ‘বডি হরর’ জনরার প্রবর্তক হিসেবে খ্যাতি থাকলেও কানাডিয়ান মাস্টার ফিল্মমেকার ডেভিড ক্রোনেনবার্গ অন্যান্য জনরায়ও দেখিয়েছেন মুনশিয়ানা। এরই নজির, সাইকোলজিক্যাল ধারার হিস্টোরিক্যাল ড্রামা ‘আ ড্যাঞ্জারাস মেথড’। বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত আমেরিকান সাইকোলজিস্ট ও লেখক জন কেরের নন-ফিকশন বই ‘আ মোস্ট ড্যাঞ্জারাস মেথড: দ্য স্টোরি অব ইয়ুং, ফ্রয়েড, অ্যান্ড সাবিনা স্পিলরেইন’কে ভিত্তি করে ব্রিটিশ নাট্যকার ক্রিস্টোফার হ্যাম্পটনের মঞ্চনাটক ‘দ্য টকিং কিউর’ থেকে। সিনেমাটির চিত্রনাট্যও হ্যাম্পটনের লেখা।
‘আ ড্যাঞ্জারাস মেথড’-এর কেন্দ্রে রয়েছেন আধুনিক মনোবিজ্ঞানের দুই প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব—অ্যানালাইটিক্যাল সাইকোলজির প্রতিষ্ঠাতা কার্ল ইয়ুং [১৮৭৫-১৯৬১] এবং সাইকোঅ্যানালাইসিসের প্রতিষ্ঠাতা সিগমুন্ড ফ্রয়েড [১৮৫৬-১৯৩৯]; আর রয়েছেন পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম দিকের অন্যতম নারী সাইকোঅ্যানালিস্ট সাবিনা স্পিলরেইন [১৮৮৫-১৯৪২]। প্রেক্ষাপট গত শতকের শুরুর ভাগ। ১৯০৪ সালের আগস্টে, হিস্টেরিয়ায় আক্রান্ত রাশিয়ান তরুণী সাবিনা সুইজারল্যান্ডে আসেন সুইস চিকিৎসক ইয়ুংয়ের কাছে চিকিৎসা নিতে। এই বিশেষ রোগীকে সামনে রেখে মনোচিকিৎসার নতুন দিক উন্মোচনের নিরীক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত করেন ইয়ুং। তাতে পরামর্শ নেন অস্ট্রিয়ান নিউরোলজিস্ট ফ্রয়েডের। ইতিমধ্যে এই তিন চরিত্রের মধ্যে পরস্পর ছড়াতে থাকে জটিল সম্পর্কের ডালপালা। তাতে বিবাহিত ও একাধিক সন্তানের জনক ইয়ুং একসময় শারীরিক সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন কুমারী এবং শিশুকাল থেকে যৌনতা বিষয়ে ভীতসন্ত্রস্ত সাবিনার সঙ্গে। চিকিৎসার অংশ হিসেবেই। তাতে একদিকে সুতীব্র কামনাবোধ, অন্যদিকে দাম্পত্য ও পেশাগত জীবনের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার অনুভূতি কুরে কুরে খেতে থাকে ইয়ুংকে। ঘটনা পরিক্রমায় ফ্রয়েডও জড়িয়ে পড়েন, অনেকটা পরামর্শক, অনেকটা সমালোচকের ভূমিকায়। তাতে তিক্ততা বাড়ে দুই কিংবদন্তির মধ্যে। মাঝখানে সাবিনা। এমন জটিল মনোজাগতিক বাস্তবতায় একসময় তিনি ফিরে যান নিজ দেশে। ইয়ুংয়ের জীবনে এক গভীরতর দাগ কেটে।
‘আ ড্যাঞ্জারাস মেথড’ শুধু কার্ল ইয়ুং, সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও সাবিনা স্পিলরেইনের মধ্যকার ত্রিমুখী সম্পর্ক ঘিরেই নয়, বরং ফ্রয়েডের ক্ষেত্রে মানুষের মনোজগৎ বিশ্লেষণের একটি শ্বাসরুদ্ধকর নমুনা হিসেবেও ভূমিকা রেখেছে। বলে রাখা ভালো, ফ্রয়েডের সঙ্গে ইয়ুংয়ের প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে ১৯০৭ সালে, আর ১৯১৩ সালে তাদের মধ্যকার পেশাগত সম্পর্কে ভাঙন ধরে, যার মূলে ছিল সাবিনার ঘটনা।
ইতিহাসকে পাশে সরিয়ে, সিনেমার পর্দায় মানব-মানবী সম্পর্কের জটিল মনোবিশ্লেষণের নিদারুণ উদাহরণ হিসেবেও ‘আ ড্যাঞ্জারাস মেথড’কে দেখা সম্ভব। আর তা এমন এক নিরানন্দ কাব্যিক ভঙ্গিমায় ক্রোনেনবার্গ চিত্রণ করেছেন, ফলে ডকুমেন্টারি ভিত্তি থাকা সত্ত্বেও এটি পরিণত হয়েছে এক মাস্টারপিস ফিকশনে। যেখানে সম্ভ্রান্ত একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, যার ঘরে রয়েছে স্ত্রী-সন্তানসমেত আপাতদৃষ্টে সুখী পরিবার, বাইরে ব্যাপক সুনাম, তিনি নিজেরই এক রোগীর সঙ্গে চিকিৎসার ফাঁকে জড়িয়ে পড়েছেন অযাচিত সম্পর্কে। নৈতিকতার প্রশ্নে সেই সম্পর্কের বিষ তাকে প্রতিনিয়ত ভোগাতে থাকে। তাতে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভাব ঘটে এই পেশার আরেক পরাক্রমশালী চরিত্রের। যার আগমন তার মনোজগৎকে করে তোলে তিক্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ। যদিও একসময় তিনটি প্রধান চরিত্রই পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়; কিন্তু সেই বিচ্ছেদে যতটা বেদনা থাকে, তার চেয়েও বেশি থাকে নৈতিক স্খলনের কালিমা মাখা মেঘ।
আরিফুল ইসলাম
কুইজ
১। ‘আ ড্যাঞ্জারাস মেথড’-এর তিন কেন্দ্রীয় চরিত্র কোন ধরনের চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট?
[ক] দন্তবিষয়ক
[খ] হাড়ভাঙা
[গ] জাদুবিদ্যা
[ঘ] মনোরোগ
২। সিনেমাটি কোন মঞ্চনাটক অবলম্বনে বানানো?
[ক] দ্য টকিং কিউর
[খ] ওয়েটিং ফর গডো
[গ] রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট
[ঘ] ডেথ অব আ সেলসম্যান
৩। ডেভিড ক্রোনেনবার্গ কোন ফিল্ম জনরার প্রবর্তক?
[ক] হরর
[খ] ওয়েস্টার্ন
[গ] বডি হরর
[ঘ] অ্যাডভেঞ্চার
গত পর্বের বিজয়ী
১. রূপা দত্ত, বাড্ডা, ঢাকা।
২. নাজিয়া আক্তার, হালিশহর, চট্টগ্রাম।
৩. আনিকা মাহমুদ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।