skip to Main Content

বহুরূপী I চা চর্চা

সকালে কিচেন থেকে চায়ের গন্ধ সারা ঘরে যখন ছড়িয়ে পড়ে, অনেকে তখন উপলব্ধি করি সত্যিকার দিন শুরুর মুহূর্ত। চা শুধু পান করার ব্যাপার নয়, এর ঘ্রাণ আস্বাদনও করি। অনেকে মজার ছলে বলেন, চা খাওয়ার জন্য পেটে আলাদা জায়গা থাকতে হয় না। চা নাকি পেটে যায় না, সরাসরি পৌঁছায় হৃদয়ে!
ইতিহাস বলে, চায়ের উৎপত্তি চীনে। বিশ্বব্যাপী এটি ছড়িয়ে পড়তে সময় নিয়েছিল প্রায় পাঁচ হাজার বছর। ভারতীয় উপমহাদেশের চা-বাগানগুলো গড়ে উঠেছিল ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে।
চায়েরও রয়েছে প্রকারভেদ। এগুলোর মধ্যে তুলনামূলক নতুন যেটি, সেই ব্ল্যাক টির সঙ্গেই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পরিচয় ভোক্তাদের। আপনি গ্রোসারি স্টোর অথবা সুপারশপে নামী ব্র্যান্ডের টি-ব্যাগে ব্ল্যাক টি খুঁজে পাবেন খুব সহজে। ইংলিশ ব্রেকফাস্ট ও আইরিশ ব্রেকফাস্টের মতো জনপ্রিয় প্রাতরাশে ব্ল্যাক টি থাকা চাই। এই চায়ে তুলনামূলকভাবে বেশি ক্যাফেইন থাকে, যা এক কাপ কফির তুলনায় প্রায় অর্ধেক। ব্ল্যাক টি একটি গাঢ় তামাটে রং তৈরি করে। সাধারণত অন্যান্য চায়ের তুলনায় এর ঘ্রাণ তীব্র। এই চা মূলত চীন ও ভারতে উৎপাদিত হয়। উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশের মধ্যে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভিয়েতনাম ও কেনিয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ক্যামেলিয়া সিনেনসিস উদ্ভিদ থেকে তৈরি হয় গ্রিন টি। এটি সাধারণত হালকা সবুজ বা হলুদ রং ফুটিয়ে তোলে এবং হালকা স্বাদের হয়ে থাকে। ব্ল্যাক টির তুলনায় প্রায় অর্ধেক ক্যাফেইন থাকে গ্রিন টিতে। মূলত চীন ও জাপানে উৎপাদিত হয়। জনপ্রিয় গ্রিন টিগুলোর মধ্যে রয়েছে গানপাউডার, জেসমিন ইয়িন ক্লাউড এবং মরোক্কান মিন্ট।
হোয়াইট টি ন্যূনতম প্রক্রিয়াজাত চা, যা তরুণদের কাছে বেশ সমাদৃত। এর গন্ধ হালকা। হোয়াইট টিতে ক্যাফেইনের পরিমাণ থাকে সামান্য; যদিও কিছু সিলভার টিপ চায়ে ক্যাফেইনের পরিমাণ কিছুটা বেশি হতে পারে। হোয়াইট টি মূলত চীনে উৎপাদিত হয়, বিশেষ করে ফুজিয়ান প্রদেশে, যেখানে এর রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। এ ছাড়া নেপাল, তাইওয়ান, শ্রীলঙ্কাসহ আরও কয়েকটি দেশের চা-বাগানে চাষ হয় এই চায়ের।
আমরা কোনো আলাপচারিতায় হারবাল টিকে যদিও চা হিসেবেই অভিহিত করি, সত্যি হলো, এটি আসলে ক্যামেলিয়া সিনেনসিস উদ্ভিদ থেকে তৈরি, যা সত্যিকারের চা নয়। বরং বিভিন্ন ভেষজ ও মসলার মিশ্রণে বানানো। সাধারণত হারবাল টিতে কোনো ক্যাফেইন থাকে না। পেপারমিন্ট ও ক্যামোমাইলের মতো একক উপাদানের হারবাল টি ছাড়াও ল্যাভেন্ডার লুলাবি ও অ্যাটমিক গোল্ডের মতো সৃজনশীল মিশ্রণেও এ ধরনের বিভিন্ন চা তৈরি করা হয়। হারবাল টিকে কখনো কখনো হারবাল ইনফিউশনস বা টিসানেসও বলা হয়। জনপ্রিয় হারবাল টির উপাদানের মধ্যে রয়েছে পেপারমিন্ট, ক্যামোমাইল, হিবিসকাস, আদা, ল্যাভেন্ডারসহ আরও অনেক কিছু। ভেষজ মিশ্রণে প্রায়শই ঔষধি গুণ থাকে এবং মিশ্রণের ওপর নির্ভর করে গলাব্যথা থেকে পেট খারাপ পর্যন্ত নানা অসুখের চিকিৎসা করা যেতে পারে এই চা পানের মাধ্যমে।
ওলং একটি আংশিকভাবে অক্সিডাইজড চা। অক্সিডেশনের কারণে ব্ল্যাক টি ও গ্রিন টির একটি মধ্যবর্তী সংস্করণ হিসেবে একে গণ্য করা যায়। ওলং টি ১০ থেকে ৮০ শতাংশ অক্সিডেশন হতে পারে। ফ্যাকাশে হলুদ থেকে সমৃদ্ধ অ্যাম্বার কাপ পর্যন্ত যেকোনোভাবে তৈরি করা যেতে পারে এই চা। এটি মূলত চীন ও তাইওয়ানে উৎপাদিত হয়। চীনে ওলং উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুজিয়ান প্রদেশ, গুয়াংডং প্রদেশের উয়ি পর্বত এবং অ্যানসি।
পু-এরহ হলো আংশিকভাবে গাঁজানো চা, যা বৈশিষ্ট্যগতভাবে ব্ল্যাক টির মতো। পু-এরহ টি একটি বাদামি-কালো রং তৈরি করে এবং এর স্বাদ তৃপ্তিদায়ক। এই চায়ে ব্ল্যাক টির সমপরিমাণ ক্যাফেইন থাকে। পু-এরহ চা চীনের ইউনান প্রদেশের পু-এরহ শহরে উদ্ভূত হয়েছিল এবং আজও ওই অঞ্চলে উৎপাদিত হয়।
অন্যদিকে, পার্পল টি তুলনামূলকভাবে নতুন ধরনের চা এবং কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে। ভারতের আসাম অঞ্চলের বনে থাকা এক বিরল বেগুনি-পাতার চা গাছ থেকে এটি উৎপাদিত হয়। বর্তমানে পার্পল টি কেনিয়াসহ আফ্রিকার কিছু দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। এই চায়ের রয়েছে মৃদু গন্ধ। এতে ক্যাফেইনের পরিমাণ অত্যন্ত কম। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্থোসায়ানিনের পরিমাণ বেশি।
এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য চায়ের মধ্যে রয়েছে ম্যাচা, মেট টি, রুইবোস টি ইত্যাদি।

 ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top