skip to Main Content

কভারস্টোরি I মেথড মাল্টিব্র্যান্ড

এককথায় বিপ্লবই বটে। অস্তিত্ব ছিল আগে থেকে, কিন্তু কোভিড এসে দৃশ্যপট অনেকটা পাল্টে দেয়। করোনা-পরবর্তী সময়ে পরিবর্তিত হয় ক্রেতাদের ক্রয়কৌশল। ফ্যাশন বেসড ই-কমার্স সাইটগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে; পরিণত হয় ট্রেন্ডসেটারে। রিটেইল শপিং স্পেসগুলোর জৌলুশ কমতে থাকে। ক্রেতাদের ফেরাতে আর অনলাইন প্রতিযোগীদের সঙ্গে পাল্লা দিতে অনেকেই হাঁটতে শুরু করেন পুরোনো পথে। মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল রুটে। ব্যস, তাতেই কেল্লা ফতে! ক্রেতারা ফিরতে শুরু করেন। বিক্রেতারাও যেন প্রাণ ফিরে পান। পুরোই উইন-উইন সিচুয়েশন। আবার চাঙা হয়ে ওঠে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। শপিং ইকোসিস্টেমে এর যোগ যেন রিটেইল মার্কেটিংয়ে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। যাতে ঝুঁকছেন এ প্রজন্মের ক্রেতা-বিক্রেতারাও। সংখ্যায় বাড়ছে মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোর। কিন্তু ধারণার পুরোটাই কি ইতিবাচক? চ্যালেঞ্জগুলোই-বা কী? মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের চুলচেরা বিশ্লেষণ জাহেরা শিরীনের লেখায়

অতীত ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ এর। একই সঙ্গে সমন্বয়, তত্ত্বাবধান এবং সংযোগের সুযোগ সৃষ্টিতে সক্ষম এই রিটেইল ফ্রেমওয়ার্কের ভূমিকা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই ফ্যাশন বিশ্বের। ওয়ান-স্টপ সলিউশন—ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্যই। সময়োপযোগী হয়ে উঠেছে আবার। মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোরগুলো দখল করে নিতে শুরু করেছে স্থানীয় বাজার। হয়ে উঠছে গ্লোবাল গেমচেঞ্জার।

মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোর কী
নামেই এর উত্তর। মাল্টি অর্থাৎ বহু ব্র্যান্ড নিয়ে কার্যকলাপ এই স্টোরগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সিঙ্গেল ব্র্যান্ড রিটেইলের একদম বিপরীত। মোনো ব্র্র্যান্ড রিটেইলে সাধারণত একটি ব্র্যান্ড উপভোগের সুযোগ মেলে ক্রেতাদের। মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোরগুলোতে একই ছাদের নিচে মেলে একাধিক ব্র্যান্ডের সমারোহ। যেখানে ক্রেতারা পণ্যের বৈশিষ্ট্য ও দামের তুলনামূলক যাচাইয়ের মাধ্যমে পছন্দসই পণ্য সংগ্রহ করতে পারেন। অনেক বিকল্প থেকে প্রয়োজন বুঝে বেছে নেওয়া যায় সবচেয়ে জুতসইটা। এ ক্ষেত্রে ডিপার্টমেন্ট স্টোর বা আউটলেট হচ্ছে মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইলের সবচেয়ে পুরোনো রূপ। যেখানে ক্রেতারা দোকান ভর্তি জিনিসের মধ্য থেকে সহজে নিজের পছন্দের আইটেম বেছে নিতে পারেন। এখনকার দিনে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল হিসেবে মানা হয় ওয়ালমার্ট, আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে। বিশ্বব্যাপী লাখো ভোক্তার কেনাকাটার প্রক্রিয়াকে সহজ করে দিয়েছে এ কোম্পানিগুলো। ফ্যাশন বিশ্বেও রয়েছে এর প্রভাব। বিশ্বায়নের ফলে পুরো পৃথিবী যখন এক আঙুলের আয়ত্তে, তখন একই ছাদের নিচে একাধিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডের একক উপস্থাপন ছিল সময়ের দাবি মাত্র। আর কোভিড-পরবর্তী সময়ে এটি পরিণত হয় ‘দ্য নিউ রুল অব রিটেইল’-এ। প্রতিকূলতার মাঝে দেখায় আশার আলো।
মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোরের সুবিধা
শুধু চীনেই গেল দশ বছরে হাজারখানেক মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোরের পর্দা উঠেছে। কয়েক দশকজুড়ে কলেটো, 10 করসো কোমো আর ব্রাউন’স-এর মতো মাল্টিব্র্যান্ড স্টোরগুলো পথ দেখিয়েছে। প্রভাবিত করেছে ফ্যাশন সিটি প্যারিস, মিলান আর লন্ডনের ইন্ডাস্ট্রিকে। ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা থেকে এশিয়া—এই ধরনের ফ্যাশন স্টোর লোকাল ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে ভরসার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্লোবাল ফ্যাশন সিস্টেমেও দখল করে নিচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এর পেছনে নিশ্চয়ই জোরালো কারণ রয়েছে।
পণ্যে বৈচিত্র্য
এক ছাদের নিচে একসঙ্গে এতগুলো ব্র্যান্ডের রিটেইল স্টোর। শপাহলিকদের কাছে শপিং প্যারাডাইস থেকে কম নয়। ক্রেতারা সহজেই সেরে নিতে পারেন কেনাকাটা। একই জায়গায় অনেকগুলো ব্র্র্যান্ড উপস্থিত থাকায় কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি বেছে নিতেও ঝক্কি কম। দাম ও মান যাচাইয়ের সুযোগ থাকে। যারা প্রতিনিয়ত ব্র্যান্ড বদল করে নিত্যনতুন পণ্য ট্রাই করতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য চমৎকার বিকল্প এ মাল্টিব্র্যান্ড স্টোরগুলো। নানা ধরনের ক্যাটাগরি থাকায় ফ্যাশন-সচেতনদের চাহিদা পূরণ করতে পারে সফলভাবে। এ ধরনের স্টোরে লেটেস্ট ট্রেন্ডগুলোর দেখা মেলে সবার আগে। ফলে স্থানীয় বাজার তো বটেই, প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপরও আধিপত্য বিস্তার করে। ফাস্ট আপগ্রেট আর হাই মার্কেট অ্যাডাপটেশনের মতো বৈশিষ্ট্যের কারণে ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ এই ধরনের রিটেইল স্টোর।
ক্রেতাবৈচিত্র্য
ব্র্যান্ডভেদে টার্গেট কাস্টমার আলাদা হবে, সেটাই স্বাভাবিক। একই ছাদের নিচে ভিন্ন ভিন্ন রিটেইল ব্র্যান্ড থাকায় মাল্টিব্র্যান্ড স্টোরগুলো নানা স্তরের ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পারে সহজে। হাই-এন্ড, লাক্সারি লাভার, স্ট্রিট শপার থেকে থ্রিফটি বাজেট বায়ার—সবার আনাগোনায় মুখর থাকে এই ধরনের শপিং স্পেস। আর বেশি ক্রেতা মানেই বেশি কাটতি!
প্রচারেই প্রসার
এই রিটেইল স্টোরগুলোর মাধ্যমে বিক্রেতারা তাদের ফ্যাশন ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানানোর যথাযথ সুযোগ পান। স্টোরে থাকা অন্য ব্র্যান্ডগুলোর মার্কেটিং পলিসিও এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া এতগুলো ব্র্যান্ডের অংশীদারত্বে তৈরি এ স্টোর ক্রেতাদের মনে দৃঢ় বিশ্বাস তৈরি করে। বিক্রেতারা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আকর্ষণীয় সব মার্কেটিং ক্যাম্পেইন ডিজাইনের মাধ্যমে নিজ নিজ পণ্য নিয়ে ক্রেতাদের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারেন। এতে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে; কনজিউমারদের আগ্রহ হয় ঊর্ধ্বমুখী।
প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন
সিঙ্গেল ব্র্যান্ড রিটেইল স্টোর কিংবা অনলাইন বেসড ই-কমার্স সাইটগুলোর চেয়ে একদমই আলাদা মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোরের মডেল। একসঙ্গে একাধিক ব্র্র্যান্ডের উপস্থিতি এই স্পেসগুলোর মূল বৈশিষ্ট্য, যা বাজারে অন্য প্রতিযোগীদের চেয়ে এগুলোকে আলাদা করে দিতে যথেষ্ট। আরেকটু অন্য রকম কিছু মানেই তাতে ক্রেতার ঝোঁক। এ ছাড়া মাল্টিব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করায় এ স্টোরগুলো মার্কেটে বিদ্যমান প্রতিযোগিতা এড়িয়ে অনায়াসে আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম।
বাজেট ফ্রেন্ডলি
এই ধরনের স্টোরে একই স্পেসে অনেকগুলো ব্র্র্যান্ডকে জায়গা করে দেওয়া হয়। যার ভাড়া ভাগ-বাঁটোয়ারা করে দেয় প্রতিটি ব্র্র্যান্ড। যেখানে সিঙ্গেল ব্র্যান্ড হলে স্টোরের বিশাল অঙ্কের ভাড়ার পুরোটার ভার একাই বহন করতে হয়। মাল্টিব্র্যান্ড স্টোরগুলোর বিক্রেতার ওপর চাপ কম পড়ে। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি স্কেলের ব্র্র্যান্ডগুলো যাদের মূলধন ও বিনিয়োগ কম, তারাও অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারে মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোরগুলোতে।
হাই ফুটফল
মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোরগুলোতে পণ্যের বিকল্প স্বাভাবিকভাবে বেশি থাকে। ফলে সিঙ্গেল, ডেডিকেটেড ব্র্যান্ড স্টোরের বদলে ফ্যাশনিস্তারা মাল্টিব্র্যান্ড স্টোরে যেতেই বেশি পছন্দ করেন। ফলাফল, হাই ফুটফল, অর্থাৎ ক্রেতা পদচারণা তুলনামূলক বেশি। সাধারণত ওয়াক-ইন এবং উইন্ডো শপারদের থেকেও একটা বড় অংশের মুনাফা আসে মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোরগুলোর। সিঙ্গেল ব্র্যান্ডেড রিটেইল স্টোরের ক্রেতাদের থেকে তারা একদম আলাদা। ডেডিকেটেড ব্র্যান্ড স্টোরে যারা কেনাকাটা করতে যান, তারা সেখানকার পণ্য সম্পর্কে সুপরিচিত। অনেকে দোকানে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারেন, কোনটা তার চাই। কিন্তু মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোরে থাকে নানা চমক। তাই ইমপালসিভ বায়িংয়ের ঘটনা এ ধরনের স্টোরে বেশি ঘটে।
ওয়াক-ইন ট্রাফিকের আনাগোনা
রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হুট করে কোনো একটা স্টোরে ঢোকার ঘটনা কমবেশি সব ধরনের ক্রেতার জীবনেই ঘটে। সে ক্ষেত্রে সিঙ্গেল ব্র্যান্ডেড রিটেইল স্টোরের চেয়ে মাল্টিব্র্র্যান্ডের স্টোর বেশি পছন্দনীয়। কারণ, একটার বদলে অনেকগুলো ব্র্র্যান্ডের পণ্য দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। সময়ও বাঁচে। তাই এ ধরনের স্টোরগুলোতে ভিড় লেগেই থাকে। ফলে বেচাবিক্রিও থাকে বাড়তি।
মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল পরিচালনায় সীমাবদ্ধতা
এক ছাদের নিচে একাধিক ব্র্র্যান্ড পরিচালনায় বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। সঠিক সমাধানের অভাবে অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে প্রতিদিন। এতে বাধাগ্রস্ত হয় ব্র্যান্ডের বিকাশ। কারণগুলো কী? যার ফলে বিক্রেতা ব্র্র্যান্ডগুলো মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেন।
ব্র্যান্ড সত্তা আলাদা রাখায় জটিলতা
ব্যাপারটা মোটেই সহজ নয়। স্টোরের প্রতিটি ব্র্র্যান্ডকে আলাদা পরিচয়ে পরিচিত করানো, স্বচ্ছ সত্তা তৈরি। যদি ক্রেতার কাছে পণ্যগুলো বিনিময়যোগ্য মনে হতে শুরু করে, মাল্টিব্র্যান্ড স্টোরের ব্র্র্যান্ডগুলোর মধ্যেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। তাই প্রতিটি ব্র্যান্ডকে তার আলাদা পরিচয় তৈরির জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যেতে হয়।
পণ্যের মান ধরে রাখায় ব্যর্থতা
বাজারে আসা নতুন যেকোনো পণ্যের ব্যাপারে ক্রেতারা কঠোর হতে পারেন। কারণ, কেনাকাটার সময় পণ্যের মান নিয়ে তাদের নির্দিষ্ট চাহিদা থাকে। নতুন পণ্য তা পূরণে ব্যর্থ হলে ক্রেতারা সেটি বাতিলের তালিকায় ফেলে দিতে অতটুকু দ্বিধা করেন না। মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোরে পণ্যের মান ধরে রাখার ব্যাপারটি বেশ কষ্টসাধ্য।
পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ে স্থায়িত্বের অভাব
একসঙ্গে এত পণ্য বিক্রির সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, ব্র্যান্ডিংয়ের সময় একটি ব্র্যান্ডের তুলনায় আরেকটি বেশি লোভনীয় দেখাতে পারে। এ ক্ষেত্রে যাচাই করে দেখতে হবে, যেসব ব্র্যান্ডের অর্জন তুলনামূলক কম, তাদের জন্য বাড়তি সময় ও মার্কেটিং রিসোর্স কতটুকু ফলপ্রদ হবে। এ ছাড়া মাল্টিব্র্র্যান্ড স্টোরে থাকা ব্র্যান্ডগুলোও একটি অন্যটি দিয়ে ওভারল্যাপড হয়ে যেতে পারে। অতশত বিকল্পের মাঝে ক্রেতাদের বিভ্রান্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। কোনটা ছেড়ে কোনটা নেওয়া হবে, সেই দোটানায় অনেক সময় কিছুই না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন কোনো কোনো ক্রেতা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন বিক্রেতারা।
ত্রুটিপূর্ণ ইনভেনটরি ম্যানেজমেন্ট
ওভার অথবা আন্ডারস্টক, পণ্য ফেরতে ঝামেলা, বণ্টনে বাধাসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে এ ধরনের স্টোরগুলোতে। মজুত ব্যবস্থাপনা স্বচ্ছ ও সহজ না হলে স্টোরে পণ্যের সংখ্যা বেড়ে যায়, পরবর্তীকালে যা বিক্রিতে ঝক্কি বাড়ে। অথবা মজুত এত কম থাকে, ক্রেতা চাহিদা মেটানো যায় না; খালি হাতেই ফিরিয়ে দিতে হয়।
কর্মীদের নিয়ে উদ্বেগ
মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোরে কর্মীর সংখ্যা স্বাভাবিকভাবে বেশি। তাদের আদর্শ, কর্মক্ষেত্রে সন্তুষ্টি—এগুলো প্রায়ই অবহেলিত হয়। ফলাফল কাজ ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেন কর্মীরা। নতুন কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এ ক্ষেত্রে কার্যকর হয় না। সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় হয়।
সমস্যা উতরানোর উপায়
সাবধানতার সঙ্গে প্রস্তুতি আর স্মার্ট মুভের মাধ্যমে মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোরে উদ্ভূত সমস্যাগুলোরও সহজ সমাধান সম্ভব।
যদি লক্ষ্য থাকে অটুট
প্রতিটি ব্যবসার উদ্দেশ্য একটাই—ক্রেতাদের দিয়ে পণ্য কেনানো এবং তা থেকে মুনাফা অর্জন। তাই ক্রেতাদের বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ; নয়তো সাফল্য অসম্ভব। মাল্টিব্র্যান্ড স্টোরের জন্য ব্যাপারটা আরও জটিল। অনেক ধরনের পণ্য বিক্রি করা হলেও যদি তা কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এ নিয়ে বেশি দূর যাওয়া যাবে না। তাই প্রডাক্ট ও মার্কেট রিসার্চ করে নেওয়া খুব জরুরি।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার
যেকোনো ব্র্যান্ডের ফ্যাশন আইটেম প্রদর্শনের জন্য মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোর শীর্ষস্থানীয় প্ল্যাটফর্ম; তবে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এর পারফরম্যান্সকে আরও শক্তিশালী করবে। এ ক্ষেত্রে অমনিচ্যানেল প্রেজেন্স খুব কাজের। এর মাধ্যমে স্টোরের প্রতিটি ব্র্যান্ড এবং সেসবের পণ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্য দিয়ে পৌঁছে যাবে ক্রেতাদের কাছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ইউটিউব, লিঙ্কডইন, পিন্টারেস্ট থেকে হালের টিকটক—সর্বত্র শক্তিশালী উপস্থিতি তৈরি করবে ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি। জুড়ে দেবে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতাদের সঙ্গে।
সুবিন্যস্ত ও আদর্শ প্রক্রিয়া নিশ্চিতকরণ
মাল্টিব্র্যান্ড স্টোর পরিচালনায় এটি খুব জরুরি। গবেষণা মোতাবেক, ৭৪ শতাংশ ক্রেতা ব্র্র্যান্ড থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন শুধু ত্রুটিপূর্ণ গ্রাহকসেবা আর কেনাকাটার জটিল প্রক্রিয়ার কারণে। উল্টো দিকে এই একই পার্সেন্টেজ ক্রেতা ব্র্র্যান্ডের প্রেমে পড়ে যান শুধু সঠিক সহযোগিতায়। তাই মাল্টিব্র্যান্ড স্টোরগুলোর তাদের গ্রাহকসেবার মান ধরে রাখার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। প্রক্রিয়ার পুরোটা সহজ হওয়া চাই। সেই সঙ্গে সিকিউর ও স্মার্ট পেমেন্ট সিস্টেম ক্রেতাদের কেনাকাটাকে ঝামেলামুক্ত রাখবে; উদ্বুদ্ধও করবে।
নিয়মিত নিরীক্ষা
একের অধিক ব্র্যান্ড পরিচালনা ক্লান্তিদায়ক বটে, কিন্তু নিয়মিত আপ-টু-ডেট না থাকলেই সর্বনাশ। স্টকে নির্দিষ্ট পণ্যটি আছে কি না কিংবা একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের এ মাসের পারফরম্যান্স—সব তথ্য থাকতে হবে নখদর্পণে। এতে ভবিষ্যতে কী কৌশল বেছে নিতে হবে, তা নির্ধারণ করা যাবে। আর নিয়মিত চেকআপে থাকলে প্রতিনিয়ত পাল্টে যাওয়া আধুনিক বিশ্বের সঙ্গেও তাল মেলানো সহজ হবে।
মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোরের ভবিষ্যৎ
ডিজিটালাইজেশন। এমন প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোম্পানির সব অ্যানালগ অপারেটিং সিস্টেম আর পলিসির জায়গা দখল করে নেবে ডিজিটাল সব সলিউশন। উন্নত আইটি অবকাঠামো সমর্থিত সমাধান যেমন অ্যাপ অথবা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম লঞ্চ মাল্টিব্র্যান্ড স্টোরকে নেক্সট স্টেজে নিয়ে যাবে। এর সঙ্গে যোগ হবে আরও আধুনিক সব প্রযুক্তি। যেমন—
 ওয়্যারহাউস রোবটিকস
 আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স
 অটোমেশন
 চ্যাটবট
 কাস্টমার বিহেভিয়ার ডিটেকশন
 ভয়েস রিকগনিশন
 মেশিন লার্নিং
 ক্লাউড সার্ভিস
এগুলোর কার্যকর ব্যবহারে আজকের মাল্টিব্র্র্যান্ড রিটেইল স্টোর ভবিষ্যতে আরও মুনাফাজনক হয়ে উঠবে। এতে পুরো ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া ঝামেলামুক্ত হবে; ক্রেতা ধরে রাখার হার বাড়বে। ফলাফল—বাড়বে মুনাফা। আর লাভজনক হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানিগুলো তার ক্রেতাদের কেনাকাটার অভিজ্ঞতাকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারবে।

দেশীয় প্রেক্ষাপট
মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোরগুলো যে শুধু পণ্যের নয়, প্রচার করে জীবনধারার। ফলে বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন-সচেতন মানুষদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে ডিজাইনার ওত কতুর, হাই-এন্ড ব্র্র্যান্ড থেকে স্ট্রিট স্টাইল, আর থ্রিফটেড ফ্যাশনের মাল্টিব্র্যান্ড স্টোরের হরদম ওপেনিংয়েই তার প্রমাণ। পিছিয়ে নেই দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিও। বিশ্বের সঙ্গে তার মিলিয়ে দেশেও এর প্রভাব পড়েছে। শুরুটা হয়েছিল দেশী দশ দিয়ে। ২০০৯ সালে এক ছাদের নিচে জনপ্রিয় দশটি দেশীয় ব্র্যান্ডের এই মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোর ফ্যাশন-সচেতনদের জন্য চমকের চেয়ে কম ছিল না। যার প্রভাব রয়েছে আজ অব্দি।
ফ্যাশনকে শিল্পের সত্তা দিয়ে কাজ করা ব্র্যান্ড যাত্রা। যাদের প্রতিটি পণ্য দেশীয় লোকগাথার গল্প বলে, ফুটিয়ে তোলে দেশীয় কৃষ্টি আর সংস্কৃতি। ২০১৮ তে চালু হয় তাদের মাল্টিব্র্যান্ড রিটেইল স্টোর ‘যাত্রা মেলা’। একই ছাদের নিচে তারা নিয়ে আসে আরও নয়টি সমমনা দেশীয় ব্র্যান্ড। দিনে দিনে পরিধি বেড়েছে। তালিকায় যুক্ত হয়েছে ত্রিশটির বেশি নাম।
২০১৯ সালে পর্দা ওঠে অ্যাভেঞ্জার। মাল্টিব্র্যান্ড এ রিটেইল স্টোর যাত্রা শুরু করে ডিজাইনার ওয়্যার আর কাস্টম মেইড জুয়েলারি ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে। একই রকম উদ্যোগ ফ্ল্যাগশিপ 138 । শুরুটা এ বছরই। বিলাসবহুল পাঁচটি ব্র্যান্ডের দেখা মিলবে এই মাল্টিব্র্যান্ড স্টোরে। তালিকায় আরও আছে স্টিচেস বাংলাদেশের নাম। এখানে একই ছাদের নিচে মিলবে প্রায় ত্রিশটি ব্র্যান্ড। ব্রাইডাল কতুর ওয়্যার কিংবা ফ্যাশনেবল ডেইলি আউটফিট—সবই আছে এখানে ক্রেতাদের জন্য। আছে ফুটওয়্যার, জুয়েলারিসহ অ্যাকসেসরিজের হরেক রকম বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ। এত দিন অব্দি মাল্টি ব্র্যান্ড স্টোরগুলো গুলশান ও বনানীকেন্দ্রিক হলেও সুখের খবর হচ্ছে, ধীরে ধীরে ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, উত্তরাসহ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ডালপালা মেলতে শুরু করেছে মাল্টিব্র্র্যান্ড রিটেইল স্টোর।
ফিজিক্যাল রিটেইল আর ই-কমার্সের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার এ যুগে ব্র্যান্ডগুলোর এভাবে একই ছাদের নিচে ‘ব্রিক অ্যান্ড মর্টার’ স্পেস তৈরির যে ট্রেন্ড চালু হয়েছে, তা ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির রিটেইল মার্কেটিংয়ের জন্য যুগান্তকারীই বটে। এতে ক্রেতাদের জন্যও তৈরি হচ্ছে কেনাকাটার স্বস্তিদায়ক পরিবেশ; যা ব্র্র্যান্ডের ব্যবসা ও গ্রাহক—উভয়ের জন্যই লাভজনক।

মডেল: জেসিয়া, বর্ণ, মাইশা ও আজিম

ওয়্যারড্রোব : ক্লাবহাউস (জেসিয়া),আড়ং (বর্ণ), লা রিভ (মাইশা), রাইজ (আজিম)

মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top