ফিচার I ব্ল্যাক ম্যাজিক
প্রথাপ্রসূত। কিন্তু পরিণত হয়েছে ফ্যাশন প্যারেডে। তাই তো অক্টোবর মাসের শেষ এই দিনকে কেন্দ্র করে বাড়ে কালোর কাটতি। স্বল্প সময় এবং প্রয়াসে কস্টিউম কম্পিটিশন অ্যাপ্রুভড সব অপশনের জন্য
দুই হাজার বছর আগে। স্বাভাবিকের একদম বাইরের একটি দিন হিসেবে উদযাপিত হতো হ্যালোইন। অল হ্যালোস ইভ হিসেবে। ফেস্টিভ্যাল অব সাহ্উইন নামে পালন করত কেলটিক জাতিগোষ্ঠী। তারা মনে করতেন, প্রতিবছরের ৩১ অক্টোবর তাদের দেবদেবী মর্ত্যে নেমে আসেন। তাদের সঙ্গে পৃথিবীর মাটিতে পা রাখে ভূত-প্রেত আর নানা অপশক্তিও। মূলত তাদের চোখ ফাঁকি দিতেই সে সময়কার মানুষ পরে নিতেন পশুদের মাথা আর গায়ে জড়াতেন চামড়া। তাদের বিশ্বাস ছিল, এভাবেই তারা অতিপ্রাকৃত ক্ষতি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন।
এগারো শতকে খ্রিস্টধর্মে ছুটির দিন হিসেবে উদযাপিত হতে শুরু করে হ্যালোইন। নিজেদের মতো করে উদযাপন করলেও তাতে সুস্পষ্ট ছিল সাহ্উইনের নানা রীতি। যার মধ্যে পোশাক অন্যতম। পনেরো শতকের শেষের দিকে হ্যালোইনে পরা শুরু হয় বুক ধুকপুকানি সব পোশাক। প্রেতাত্মা আর শয়তানের বেশে বাড়ি বাড়ি ঘুরে খাবার বিলানোর প্রচলন শুরু তখন। আঠারো শতকে ইউরোপিয়ান এ ট্র্যাডিশনে লাগে আমেরিকান ছোঁয়া। আইরিশ আর স্কটিশ ইমিগ্র্যান্টদের বদৌলতে। খুব জলদি এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকাজুড়ে। রীতিসিদ্ধ প্রথা ক্রমেই পরিণত হয় ফ্যামিলি-ফ্রেন্ডলি পার্টির উপলক্ষে। হ্যালোইন কস্টিউম পরিণত হয় হার্ট অব হ্যালোইনে। প্রথম দিকে বাড়িতে বসে হাতের কাছে থাকা জিনিস দিয়েই তৈরি করা হতো এগুলো। তালিকা থেকে বাদ পড়ত না বিছানার চাদর, কাগজের ব্যাগও। সঙ্গে মেকআপের সংগত। এতেই সবাই সেজে উঠতেন। মাসব্যাপী চলত প্রস্তুতি।
বিংশ শতাব্দীতে হ্যালোইনের বিবর্তনে বাণিজ্যিকীকরণের যোগ পাল্টে দেয় পুরো চিত্র। ১৯২০ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে কস্টিউম ম্যানুফ্যাকচারার আর রিটেইলাররা সুযোগের সদ্ব্যবহার শুরু করেন। ছুটির এ দিনকে পুঁজি করে দাঁড় করিয়ে ফেলেন রমরমা ব্যবসা। সে সময় পপ কালচার দারুণ প্রভাব ফেলে এসব পোশাকে। বই, সিনেমা আর টেলিভিশন শোতে দেখানো ভুতুড়ে সব চরিত্রের অনুকরণে তৈরি হয় কস্টিউম। ডাইনি, ড্রাকুলা আর জম্বি হয়ে ওঠে হ্যালোইন স্টেপল। সাংস্কৃতিক তো বটেই, সামাজিক উদ্যাপনে পরিণত হওয়া এই উপলক্ষ ঘিরে বাড়তে থাকে পার্টি; আরও জমজমাট হতে শুরু করে আসর।
ষাটের দশকে পোশাকে ফের লাগে বদলের হাওয়া। হয়ে ওঠে বিনোদনের অংশ। আত্মপ্রকাশের অভিনব উপায়। সৃষ্টিশীলতা প্রকাশের মোক্ষম সুযোগ। আর এখন তো বিশ্বায়ন আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে হ্যালোইন কস্টিউমের বিকল্প তৈরি হয়েছে মেলা। বছর বছর পাল্টে যাচ্ছে ট্রেন্ড। ব্লক বাস্টার মুভি থেকে ভিডিও গেম কিংবা ভাইরাল ইন্টারনেট ট্রেন্ড হয়ে উঠছে হ্যালোইন কস্টিউমের হটেস্ট চয়েজ। যুগ পুরোনো ইউরোপিয়ান ট্র্যাডিশনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিলিয়ন ডলারের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। ছদ্মবেশ থেকে পরিণত হয়েছে শোস্টপিং সব লুকের ফ্যাশনেবল অপশনে।
তবে অতশত অপশনের মাঝে হ্যালোইনে কালো পোশাকের কদর বরাবরই একটু বেশি। যেকোনো থিমের সঙ্গে অনায়াসে মানিয়ে যায়, সহজে তৈরি করে নেওয়া যায় বুকে ভয় ধরিয়ে দেওয়ার মতো কস্টিউম, ফ্যাশনেবল হয়ে ওঠার ইচ্ছার সঙ্গে সমঝোতা না করেই। এ বছরও ট্রেন্ডে রয়েছে এমন কিছু অপশন।
ওয়েনসডে অ্যাডামস
গেল বছরের নভেম্বরে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় কমেডি হরর সিরিজ ওয়েনসডে। দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে প্রথম পর্ব থেকেই। মূল চরিত্র ওয়েনসডে অ্যাডামসের গথ স্টাইল অল ব্ল্যাক আউটফিট রীতিমতো ফ্যাশন আইকনে পরিণত করে তাকে। ফিকশনাল এ ক্যারেক্টারের আদলে সাজপোশাকের ভিডিওতে ছেয়ে যায় গোটা বিশ্বের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো। কিন্তু অক্টোবর পেরিয়ে পর্দায় আসায় গেল বছর হ্যালোইনে ওয়েনসডে লুক তেমন একটা দেখা যায়নি। সেই আফসোস মেটানো যাবে এ বছর।
চরিত্রটির কথা চিন্তা করলেই প্রথমে চোখে ভেসে ওঠে দ্য ব্ল্যাক ড্রেস। লং স্লিভ, পিটার প্যান কলারের ফ্লোরাল পোলকা ডট দেওয়া ড্রেসে ওয়েনসডেকে দেখা যায় প্রথম পর্বে। হ্যালোইনের জন্য পারফেক্ট। সংগ্রহে থাকা চাই লম্বা হাতার লিটল ব্ল্যাক ড্রেস। তা হতে পারে সলিড ব্ল্যাক অথবা পোলকা প্রিন্টেড। আর যদি সংগ্রহে থাকে সাদা রঙা পিটার প্যান কলার, তাহলে তো বাজিমাত! না থাকলেও ক্ষতি নেই। একই রকম স্ট্রাকচারড সাদা কলারের টপ ব্ল্যাক ড্রেসের সঙ্গে লেয়ার করে নিলে চলবে। পায়ে থাকুক মেরি জেন স্টাইলের ফুটওয়্যার। চুল বেঁধে নিতে হবে দুটো পিগটেইলে।
আরও গ্ল্যামারাস লুক চাই? ওয়েনসডের ইন্টারনেট ব্রেকিং রেভএন ড্যান্সে দৃশ্যায়িত বল গাউনের অনুপ্রেরণা তো আছেই। মাল্টিপল লেয়ারের স্বচ্ছ শিফন ড্রেস যদি থাকে সংগ্রহে, কাজটা অনেক এগিয়ে যাবে। সঙ্গে শিয়ার বাটন আপ শার্ট যদি লেয়ার করে নেওয়া যায়, দেখাবে পারফেক্ট। কোমরের বেল্ট কিন্তু মাস্ট। শিফন ড্রেস নেই! চলবে টুল ড্রেসও। ড্রেস নেই? তাহলে টুল স্কার্টই সই। শার্ট আর বেল্টের সংগতে কোনো অংশ কম দেখাবে না। চুল বেঁধে নিতে হবে মিল্ক মেইড ব্রেইডেড বানে। ব্যস!
ভালাক- দ্য ডিমন নান
বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছে বহুল জনপ্রিয় হরর ফ্র্যাঞ্চাইজি দ্য কনজ্যুরিং ইউনিভার্সের সাম্প্রতিক সংযোজন ‘দ্য নান টু’। প্রথম সিজন থেকেই দর্শকদের মনে ভয় ধরিয়েছিল সিনেমার ভালাক চরিত্রটি। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। এ বছরের হ্যালোইনে তাই অনেকে এই ডিমন নানের কস্টিউমে সেজে উঠবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ জন্য দরকার পড়বে কালো পোশাকের। কালো রঙা টিউনিক এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অপশন। ফুল স্লিভ, ফ্লোর টাচ। গলার কাছে প্লিটেড ডিটেইল কস্টিউমের সৌন্দর্য বাড়াবে। এর ওপর পরে নেওয়া চাই কালো অ্যাপ্রোন অথবা রোব। আর কোমরে থাকুক চামড়া অথবা উলের বেল্ট। কস্টিউমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, পরে নিতে হবে হেড পিস। প্রথমে সাদা সুতির ক্যাপে মাথা ঢেকে নিতে হবে। এর ওপর বড় সাদা লিনেন অথবা সিল্ক কাপড়ের টুকরা দিয়ে গলা, গাল ও চিবুকের চারপাশ পেঁচিয়ে মাথার ওপর অব্দি নিয়ে আসা চাই। পরে নিতে হবে বুক ঢাকা শর্ট কেপ। তারপর মাথায় স্কার্ফ দিয়ে ঘোমটার মতো করে পিন আটকে নিতে হবে। আর গলায় ক্রস সাইন দেওয়া লকেট। ব্যস, তৈরি ভালাক কস্টিউম। চেহারা ঢেকে নেওয়া যেতে পারে ভালাকের মাস্কে। হাতের কাছে তা না থাকলে মেকআপের মুনশিয়ানায় সারতে হবে কাজ।
জাহেরা শিরীন
মডেল: এফা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল