skip to Main Content

ফিচার I দূষণরোধী ত্বকচর্চা

বিশ্বে এখন অ্যান্টি-পলিউট্যান্ট সৌন্দর্যপণ্যের জয়-জয়কার। কেননা, এতে কেবল ত্বকের সুরক্ষা হচ্ছে না, বুড়িয়ে যাওয়াও বিলম্বিত করা যাচ্ছে

বাড়তি পরিবেশদূষণ যতটা আমাদের শরীরের ক্ষতি সাধন করে, ঠিক ততটাই প্রভাব ফেলে ত্বকে। তাই চিরাচরিত স্কিনকেয়ার রুটিন থেকে বের হয়ে এসে বিউটি ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান ফোকাস অ্যান্টি-পলিউট্যান্ট স্কিনকেয়ার।
ক্লিনিক্যাল কসমেটোলজি ইনভেস্টিগেটিভ ডার্মাটোলজি জার্নালের একটি পরিসংখ্যানমতে, বলিরেখা, হাইপার পিগমেন্টেশন, ইলাস্টিসিটির অভাবসহ ৮০ ভাগের বেশি ত্বকসমস্যার কারণ সূর্যের ইউভি রশ্মি। এমনকি দীর্ঘক্ষণ ল্যাপটপ কিংবা পিসির সামনে বসে কাজ করার ফলে এগুলো থেকে নির্গত নীল রশ্মিও স্কিনের যথেষ্ট ক্ষতি করে। গত বছরের আরেকটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, মানুষের ত্বকের ব্রাউন স্পটের মূল কারণ প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা বায়ুদূষণ। রেডনেস, অ্যাকনে কিংবা ড্রাইনেস- সবকিছুর পেছনেই রয়েছে ইউভি রে। পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন, ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ডস এবং পার্টিকুলেট ম্যাটার- এগুলো হচ্ছে সবচেয়ে দূষণকারী প্রচলিত উপাদান। এদিকে দূষণ ত্বকের ইমিউন সিস্টেমকে বাধ্য করে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মেলানিন তৈরি করতে, ফলে পিগমেন্টেশন, স্কিন ডার্কেনিং, ইনফ্লেমেশনের মতো সমস্যা দেখা দেয়। তা ছাড়া এই মেলানিন ত্বকের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে, যা ফাইন লাইন কিংবা রিঙ্কেলসের মূল কারণ। তাই স্বাস্থ্যোজ্জ্বল সুন্দর ত্বকের জন্য প্রয়োজন এমন কোনো স্কিন ব্যারিয়ার অথবা এমন কোনো প্রডাক্ট, যা নিজের কেমিক্যাল উপাদান দিয়ে ক্ষতি না করে ত্বককে সুরক্ষিত করবে। দূষণ ত্বকের প্রাকৃতিক কোলেস্টেরল ধ্বংস করে। এই পরিস্থিতিতে স্বভাবতই বিউটি ইন্ডাস্ট্রি কাজ শুরু করে অ্যান্টি-পলিউট্যান্ট স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট নিয়ে। ২০১৬ সালে এশিয়ার বাজারে আসে এ ধরনের পণ্য। এবং ক্রমশ এর চাহিদা ও ব্যবহার বেড়েছে ৩০ শতাংশ হারে। এগুলো মূলত চাহিদা তৈরি করছে আরবান ইয়ং প্রফেশনালদের মধ্যে। কারণ, এসব প্রডাক্ট তাদের লাইফস্টাইলকে নিরাপদ ও সমৃদ্ধ করে। বার্ধক্যের আগমন রোধ করা না গেলেও এর গতি কমিয়ে আনা যায়। অ্যান্টি-পলিউট্যান্ট স্কিনকেয়ার তা সম্ভব করে তোলে।
এসব প্রডাক্ট তৈরির মূল উপাদান লিভিং ব্যাকটেরিয়া। মাইক্রোবায়োম এমন একটি প্রক্রিয়া, যাতে কিছু ব্যাকটেরিয়ার সমষ্টি শরীরের ডাইজেশন সিস্টেম ঠিক রেখে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়া রোধ করতে বাধ্য হয়। শরীরের সবচেয়ে বড় অর্গান ত্বকও এর অন্তর্ভুক্ত। এমনকি আমাদের ত্বক একই সময়ে ১০০০০-এর মতো মাইক্রোবায়াল স্পিসিসকে জায়গা দিয়ে থাকে। কেননা এই ব্যাকটেরিয়াগুলো ত্বকের কমপ্লেকশন ক্লিয়ার এবং গ্লোয়িংয়ে সাহায্য করে। এ ছাড়া লিপিডস, কেরামাইডস, এডাপ্টোজেন্সের মতো প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। এগুলো ত্বকের প্রাকৃতিক অবস্থা বজায় রাখতে এবং অন্যান্য পরিবেশদূষণ কিংবা প্রযুক্তিজাত ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে। এ ছাড়া গ্রিন টি, আর্টিচোক, অ্যাসাই বেরি কিংবা মরিঙ্গা ব্যবহার করা যেতে পারে অ্যান্টি-পলিউট্যান্ট হিসেবে।
কোন উপাদান কোন পণ্যে ব্যবহার করা হবে এবং তা কতটুকু, তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এসব ক্ষেত্রে একটা ‘নেভার এন্ডিং প্রসেস’। তাই এক্সপার্ট সাজেশন অনুযায়ী অ্যান্টি-পলিউট্যান্ট স্কিনকেয়ারের ক্ষেত্রে কিছু প্রডাক্ট আমাদের স্কিনকেয়ার রুটিনে অপরিহার্য।
ক্লিনজার
ত্বকে যেকোনো সমস্যা বাসা বাঁধতে শুরু করবে, যদি তা প্রতিদিন এবং নিয়মিত পরিষ্কার করা না হয়। তবে তার মানে এই নয় যে, রোজই ক্লিনজার বেশি মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। ক্লিনজারে অ্যান্টি-পলিউট্যান্ট উপাদান থাকলে পরিষ্কারের পাশাপাশি এটি ত্বক সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় শিল্ডও তৈরি করবে। এমন ক্লিনজারও ডিটক্সিফাইয়িং মাস্ক হিসেবে কাজ করে কিছুক্ষণ ত্বকে রেখে ধুয়ে ফেললেই হয়। ক্লিনজিংয়ের পাশাপাশি তা ময়শ্চারও ধরে রাখে ত্বকে।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট
দূষণের ভয় থাকুক কিংবা না থাকুক, সবার স্কিনকেয়ার রুটিনে পর্যাপ্ত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অত্যন্ত জরুরি। হোক সেটা ভিটামিন সি যুক্ত সিরাম কিংবা স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট, যাতে থাকে পরিমিত রিসভেরাট্রল অথবা ফেরুলিক অ্যাসিড, ব্যবহারে ত্বকের উন্নতিটা ধরতে পারবেন নিজেই। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ইউভি রেসহ পরিবেশের সব দূষণকারী উপাদান থেকে হওয়া র‌্যাডিক্যাল ড্যামেজ থেকে আমাদের ত্বক সুরক্ষিত করে। যদিও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকে এসপিএফের মতো সুরক্ষা দিতে পারে না, ভালো কোনো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সিরাম সানস্ক্রিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দিতে পারে কয়েক গুণ।
এসপিএফ
দূষণরোধী পণ্যের বেশির ভাগ এসপিএফের ওপর জোর দেয়। কেননা ত্বক সমস্যার প্রধান কারণ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ। তাই ব্যবহার্য পণ্যে এসপিএফের উপস্থিতি এবং সঠিক মাত্রা সম্পর্কে জানতে হবে।
পিএইচ ফ্যাক্টর
যেকোনো প্রডাক্ট ব্যবহারের আগে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে এর উপাদানগুলোর মধ্যে এমন কিছু আছে কি না, যা পণ্যটির পিএইচ ভ্যালু নিশ্চিত করে। এটা স্কিনের নরমাল হাইড্রেশন বজায় রাখতে জরুরি।
অর্থাৎ কিছু অ্যান্টি-পলিউট্যান্ট প্রডাক্টের সমন্বয়ে তৈরি করে নেয়া যায় নিজের স্কিনকেয়ার রুটিন
 অয়েল বেসড ক্লিনজিং প্রডাক্ট
 ব্যালান্সিং টনিক
 নিয়মিত ব্যবহারের জন্য মাইল্ড ক্লিনজার
 পিএইচ ফ্যাক্টরযুক্ত ডিপ ক্লিনজিং প্রডাক্ট
 অ্যাবসরবেন্ট ক্লে যুক্ত ক্লিনজিং মাস্ক
 এসপিএফ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বেসড সানস্ক্রিন
 আই এবং লিপ এরিয়ার জন্য নির্দিষ্ট বাম
দূষণরোধী ত্বকচর্চার সামগ্রী খুব কম সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিশ্বজুড়ে। এর কারণ যে শুধু বাইরের দূষণ থেকে ত্বকরক্ষা, তা নয়। ইনডোর পলিউশন যেমন এয়ারকন্ডিশনিং, রান্নার সময়কার তাপ কিংবা ক্লিনজিং প্রডাক্টের কেমিক্যাল- এসবই আউটডোর পলিউশনের মতো টক্সিক হতে পারে। প্রাকৃতিক এবং ভেষজ পণ্য এ ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে। বড় ব্র্যান্ডের মধ্যে ল’রিয়েল এবং প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বেলের রয়েছে অ্যান্টি-পলিউশন প্রডাক্টের রেঞ্জ। ‘ক্ল্যারিন্স’ নামের বিউটি ব্র্যান্ডটি নিজেদের স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট লাইনে ন্যাচারাল প্রডাক্ট যুক্ত করার জন্য তৈরি করছে অ্যান্টি-পলিউশন প্ল্যান্ট। যেহেতু এখন এটি স্কিনকেয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে একটি বুমিং মার্কেট তৈরি করে তুলেছে, তাই কমবেশি সব বিউটি ব্র্যান্ডই রিসার্চ করছে তাদের প্রডাক্ট লাইনে দূষণরোধী পণ্য যুক্ত করার। আর তা না হলেও কমবেশি প্রয়োজনীয় সামগ্রীতে দূষণরোধী উপাদান যুক্ত করছে। তাই যেকোনো বিউটি প্রডাক্ট কিনতে গেলে সব সময় এতে ব্যবহৃত উপাদানগুলো মাত্রাসহ দেখে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

 শিরীন অন্যা
মডেল: প্রিয়াম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top